আছি গ্যাংটকে, তবে না, এম.জি.মার্গে নয়। আপামর বাঙালি কিন্তু গ্যাংটকে থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে একটা ছোট্ট ভুল করে, হয় তারা থাকে মহাত্মা গান্ধী মার্গের ট্যুরিস্ট ভর্তি হইচই কোলাহলের মধ্যে, নয় তারা একটু নিরিবিলি খুঁজতে গিয়ে নিজেদেরকে খুঁজে পান শহরের প্রাণকেন্দ্রের অনেকটা দূরে। কিন্তু রোজ সকালে আমার ঘুম ভাঙছে পাখির কলতানে, আর মিঠে শীতের আমেজে। জায়গাটা এম.জি মার্গ থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে, কিন্তু এখানে না আছে হই হট্টগোল, না আছে একগাদা দোকানপত্রে মানুষের ভিড়। তার বদলে বাড়িটির একতলায় আছে একটি ক্যাফে, যেখানে আপনি পাবেন নানান রকম দেশি এবং বিদেশি স্টাইলে কফি, আর দু'তলায় আছে আস্ত একটি বইয়ের দোকান, যেখানে বই কেনা আর নাড়াচাড়া করার পাশাপাশি ক্যাফে থেকে অনানো কফিতে চুমুক দিয়ে বই পড়তে পড়তে কাটিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
আসুন, জেনে নি গ্যাংটকের কোথায় আপনি পাবেন একসঙ্গে এতকিছু
ক্যাফে ফিকশন + রচনা বুকস্টোর + বুকম্যানস বি.এন.বি
গ্যাংটকের ডেভেলপমেন্ট এরিয়া নামক অঞ্চলে অবস্থিত সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংটি। ঠিক তার উল্টোদিকেই সবুজ রঙের বাড়িটি। বাড়ির মালিক হলেন রামান শ্রেষ্ঠা। এই একই বাড়িতে রমরমিয়ে চলছে ক্যাফে, বইয়ের দোকান এর কিছু লাকি পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা। রামানের বাবার আমলে রচনা বুকস্টোর-এর যাত্রা শুরু। গ্যাংটক, তথা পূর্ব এবং উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের দোকান হিসেবে রচনা বুকস্টোর বিখ্যাত। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের লেখার মাধ্যমে তাদের গল্প, তাদের মনোভাব বাকি ভারতবর্ষের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ দেওয়ার পিছনে অগ্রণী ভূমিকা রচনা বুকস্টোর এবং রামানের।
কালক্রমে বইয়ের দোকানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে একটি ক্যাফে - যার নাম ক্যাফে ফিকশন। পছন্দ সুন্দর এবং ইনস্টাগ্রাম ফ্রেন্ডলি এই ক্যাফেটিতে পাওয়া যায় নানান রকম চা, কফি এবং ছোটখাটো স্ন্যাক্স থেকে শুরু করে বড়সড় লাঞ্চ বা ডিনার মিল পর্যন্ত। এখানকার ব্ল্যাক কফি বা ভিয়েতনামিজ কফি প্রচন্ড সুস্বাদু এবং আমি এখানে থাকাকালীন প্রতিদিন একের পর এক কফি লোভে পরে খেতে বাধ্য হয়েছি। শুধু কফি না, স্যান্ডউইচ, পাস্তা থেকে শুরু করে সসেজ কারি বা পর্ক ফ্রায়েড রাইস, প্রতিটি খাবারই অসাধারণ। আর সবথেকে মজার ব্যাপার আপনি কফি নিয়ে চলে যেতে পারেন দো-তলার বইয়ের দোকানে। সেখানে খুঁজে পেতে পারেন দেশ বিদেশের রেয়ার ক্লাসিক থেকে শুরু করে একদম আধুনিক ভারতীয় লেখকদের নবতম লেখা পর্যন্ত।
বাড়ীর তিনতলার ৪টি ঘর নিয়ে রামান শুরু করেছেন বুকম্যানস বেড এন্ড ব্রেকফাস্ট। নিশ্চিন্তে নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর জন্য গ্যাংটকে এসে থাকলে বুকম্যানস-এর ঘরগুলো একেবারে আপনার মতো বইপ্রেমিকদের জন্যই যেন তৈরি। রেড, ইয়েলো, ব্লু এবং গ্রিন, চারটি ঘরের প্রতিটিই সুবিশাল, এবং গড়পড়তা হোটেলের থেকে ঘরগুলো অনেকটাই বেশি বড় এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রতিটি ঘরে রয়েছে ছোট ছোট বই-এর শো কেস, যেখান থেকে আপনি বই নিয়ে পড়তে পারেন। বাইরের দিকের রাস্তামুখী ঘরদুটির সঙ্গে আছে একটি করে ব্যালকনি, যেখান থেকে সূর্যোদয়ের পাশাপাশি দেখতে পাবেন সারি মেলে সবুজে ঢাকা সিকিমের পর্বতমালার অনন্য সৌন্দর্যকে।
লকডাউন পরবর্তী কালে, করোনা পরিস্থিতির মাঝে গ্যাংটক ছিল আমার প্রথম ট্রিপ। তাই আমি খুঁজে নিয়েছিলাম এমন এক জায়গা যেখানে হাইজিন, নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার কোনো অভাব না ঘটে। স্যানিটাইজার, ফেস মাস্ক, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং এ জোড় দেওয়ার পাশাপাশি ভেপোরাইজারের মাধ্যমেও জীবাণুনাশ করা হয় বুকম্যানস-এ।
এক ঝলকে বুকম্যানস
রুমস : ৪
খরচ : ঘর হিসেবে দিন প্রতি ১৬০০-১৮০০ টাকা, লং স্টে অপশন ও পাবেন, সেক্ষেত্রে থাকার সময়কালের ভিত্তিতে ঘরভাড়ার পরিবর্তন হতে পারে।
সুযোগসুবিধা : বিনামূল্যে ওয়াই ফাই, গিজার, বেড ওয়ারমার, ইন রুম লাইব্রেরি।
রচনা বুকস্টোর : এখান থেকে বই কিনলে পাবেন মুদ্রিত মূল্যের উপর ১০% ছাড়। সকাল ৯টা/১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
ক্যাফে ফিকশন : পাবেন চা, কফি, কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ এবং সিকিমের কিছু স্থানীয় খাবার। আগে থেকে অর্ডার দিলে তৈরি করে দেওয়া হয় জাপানিজ চিজকেক। ইংলিশ ব্রেকফাস্ট-ও সারাদিন পাওয়া যায়। এটিও সকাল ৯টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।