সিকিম ভ্রমণের প্রধান বিষয়বস্তু কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ রহস্য সন্ধান। আর এই রহস্য উন্মোচনের সঙ্গে একাত্ব হয়ে আছে মনেস্ট্রি, স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা, মোমোর স্বাদ আহরণ এবং অবশ্যই হিমালয় দর্শন। এমন একটি রাজ্য যেখানে আপনি অনায়াসেই তুষারশুভ্র হিমালয়ের সঙ্গে সাদা মেঘের একাত্ব হওয়ার বাস্তব দৃশ্যপটের সাক্ষী থাকতে পারেন; যেখানে পাহাড়ের সর্পিল রাস্তা পেরিয়ে দূরে শৃঙ্গের হাতছানিকে আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টা অবিরত মনের মধ্যে বাড়তে থাকে।
সিকিম বলতেই প্রথমেই যে নামটি অনায়াসেই মনে এসে যায় সেটি অবশ্যই শৈল শহর গ্যাংটক। তাই তো? কিন্তু আজকের ব্লগে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে সিকিমের কয়েকটি অফবিট এবং মন ভাল করা ডেস্টিনেশনের কথা।
সিকিম রাজ্যের এমন কয়েকটি স্থান আছে যেগুলো এখনও তেমনভাবে পর্যটকদের নজরবন্দি হতে পারেনি। আবার এই অচেনা স্থানগুলোতে হয়তো তেমন কোনও ফাইভষ্টার হোটেলে রাত্রিবাসের সুযোগও নেই কিংবা খাদ্যের দিক থেকেও আড়ম্বরের ব্যবস্থা নেই। তবে, উত্তর থেকে দক্ষিণ সিকিম বা পশ্চিম সিকিমের প্রকৃতির প্রজ্জ্বলিত প্রতিচ্ছবির বাস্তব উদাহরণ আপনার চোখে ধরা দেবে প্রতিমুহূর্তেই। তাছাড়াও সিকিমের প্রাচীন ঐতিহ্য, স্থানীয় মানুষের নিজগৃহে সম্ভাষণ, মিষ্ট স্বভাব এবং সারল্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এই সমস্ত গন্তব্যগুলোতে আপনি গ্যাংটক, পেলিং, নিউ জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং বাগডোগরা থেকে পৌঁছতে পারেন।
উত্তর সিকিম: লাচুং, দজোঙ্গু, এবং দারাপ
লাচুং
তিব্বতীয় সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত লাচুং হল একটি পাহাড়ি গ্রাম । তাছাড়াও এই গ্রামটি রডোডেনড্রন ভ্যালি ট্রেকের বেস ক্যাম্প হিসেবেও পরিচিত । লাচুং এর দর্শনীয় স্থানগুলো হল - বৌদ্ধ ধর্মের প্রাণকেন্দ্র একটি মনেস্ট্রি, ইয়ামথাং ভ্যালি সংলগ্ন সিংবা রডোডেনড্রন অভয়ারণ্য, পাইনের ঘন অরণ্যের মধ্যে প্রবহমান জলপ্রপাত, আর রয়েছে একটি প্রাকৃতিক ভাবে নির্মিত একটি উষ্ণ প্রস্রবণ । গ্যাংটক থেকে মাত্র ৬ ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন লাচুং। ইয়ামথাং ভ্যালি থেকে যাত্রা শুরু করে লাচেন পর্যন্ত সম্পূর্ণ জায়গাটি প্রকৃতিপ্রেমী অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষের কাছে কিন্তু বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। লাচুং থেকেই প্রায় ১৪,৫০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না। এই জায়গাটিতে অক্সিজেন কম থাকে, তাই সমস্ত রকম সতর্কতা অবলম্বন করে এখানে যাওয়াই শ্রেয়।
বাসস্থান -
১. আওয়ার গেস্ট হোমস্টে - উত্তর সিকিম অঞ্চলের লাচুং-এ ভ্রমণকালীন বাসস্থান হিসেবে এই হোমস্টেটিকে বেছে নিতে পারেন। এই বাড়ির গৃহিনীর হাতের তৈরি বিশুদ্ধ সিকিমের খাবার খুব সহজেই আপনার পেট এবং মন দুইই ভরাতে পারে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই হোমস্টেটি লাচুং-এর লোকালয় থেকে অনেকটাই উঁচুতে অবস্থিত।
২. লাচুঙপা হোমস্টে - সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লাচুঙপা হোমস্টে। ইয়ামথাং ভ্যালি এবং জিরো পয়েন্ট পৌঁছনোর জন্য এই হোমস্টেটি এক্কেবারে আদৰ্শ। আর হ্যাঁ, এখানে স্যুপ এবং মোমোর স্বাদ চেখে দেখতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
৩. তাশী গাখিল লজ - হিমালয়ের নিবিড় সান্নিধ্য পেতে তাশী গাখিল লজকে বেছে নিতে পারেন । সিকিমের এই সব অঞ্চলের হোটেলেগুলোতে সাধারণত আধুনিক সরঞ্জামের সুযোগ সুবিধা তেমন পাওয়া যায় না, কিন্তু এই লজে অথিতিদের আরাম এবং আপ্যায়নের জন্য সমস্ত রকম সুবিধা রয়েছে।
দজোঙ্গু
এই গ্রামটি মূলত লেপচা সম্প্রদায়ের জন্য সীমাবদ্ধ, তবে প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করার জন্য দজোঙ্গু এক্কেবারে আদর্শ। এই গ্রামে তেমন কোনও বিলাসবহুল হোটেলে নেই, স্বভাবতই আধুনিকতার প্রভাব চোখে পড়বে না। কিন্তু এখানে আপনি কোনও রকম বাঁধা ছাড়াই প্রকৃতির কোলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন। প্রথমবার এই স্থানে পৌঁছতে যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে হোমস্টের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। মঙ্গন থেকে গাড়ি নিয়ে দজোঙ্গু পৌঁছতে আপনার খরচ পড়বে ১২০০ টাকা ।
বিঃ দ্রঃ - যেহেতু দজোঙ্গু গ্রামটি লেপচা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত, তাই এই গ্রামে পৌঁছনোর জন্য মঙ্গনের ডিসি অফিস থেকে একটি অনুমোদন পত্রের প্রয়োজন। হোমস্টের মালিককে বৈধ ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র, এবং ছবি সহ আপনার সঠিক ঠিকানার স্ক্যানকপি আগে থেকে পাঠিয়ে দিলে, তিনি আপনার এই গ্রাম পরিদর্শনের অনুমতিপত্রটি তৈরি করে রাখতে পারেন।
বাসস্থান-
১. রয়েল দজোঙ্গু হোমস্টে - প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং খাদ্যকে উপভোগ করতে চাইলে রয়েল দজোঙ্গু হোমস্টেকে বেছে নিতে পারেন । এখানে থেকে আপনি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা উপভোগ করতে পারেন কিংবা ট্রেক করে দূরের পাহাড়ের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়তে পারেন; আবার হোমস্টের ব্যালকনিতে বসে এক কাপ চা-এর সঙ্গে একান্তে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারেন ।
২. লিঙ্গথেম ল্যায়াং হোমস্টে - চারিদিকে ধানখেত এবং এলাচের বাগানে পরিপূর্ণ এই হোমস্টে থেকে দূরের ঝর্ণাধারার দৃশ্যটা অনেকটা ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো। কাঠ দ্বারা নির্মিত এই হোমস্টের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী লেপচা সভ্যতার কোমল ছোঁয়া রয়েছে। শহুরে কংক্রিটের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে এই ইকো ফ্রেইন্ডলি ট্যুরটিকে অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন।
দারাপ
সিকিমের অচেনা জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দারাপ। তুষারাবৃত হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গ ছাড়াও দারাপের সুব্বা গ্রামটিও এই অঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। পাহাড়ের পাদদেশের এই ছোট্ট গ্রামটি পেলিং-এর নিকটে অবস্থিত, যা বর্তমানে লিম্বো সম্প্রদায়ের একমাত্র বাসস্থান। প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং নির্জনতাকে উপভোগ করার জন্য দারাপে আপনাকে আসতেই হবে।
বাসস্থান -
১. দাঁড়াগাও ভিলেজ রিট্রিট - দারাপে অবস্থিত দাঁড়াগাও ভিলেজ রিট্রিট হোমস্টেটি গুরুং হোমস্টে হিসেবেও পরিচিত। পাহাড়ি গ্রামের নজরকাড়া সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পেলিং থেকে মাত্র ৮কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতেই পারেন এই হোমস্টেতে। সবুজে মোড়া হোমস্টে থেকে হিমালয়ের রূপ প্রত্যক্ষ করার প্ল্যানটা কিন্তু বেশ লোভনীয় হবে।
২. চেরি ভিলেজ হোমস্টে রিসোর্ট - পেলিং-এর এই উচ্চতম অঞ্চল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন চেরি ভ্যালি রিসোর্ট। হেঁটে স্থানীয় পাহাড়ি গ্রাম পরিদর্শন করতে পারেন, ট্রেক করে দূরের পাহাড় ছোঁয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়তে পারেন, মাউন্টেন বাইকিং-এর স্বাদ নিতে পারেন কিংবা অজানা পাখির কলকাকলি প্রাণভরে উপভোগ করতে পারেন। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এই জায়গাটা আদর্শ।
দক্ষিণ সিকিম -রাভাংলা -
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত রাভাংলা বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এই পাহাড়ি গ্রামটি মূলত মেনাম এবং তেডং পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। আলপাইন গাছের সমাহারে এই গ্রাম থেকে দূরে হিমালয়ের মোহনীয় রূপটা যে কোনও পাহাড়প্রেমী মানুষকে এক নিমেষেই মোহিত করে দিতে পারে। এখানে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, সিনিয়ালচু, কাবরু ইত্যাদি প্রসিদ্ধ শৃঙের দর্শন পাবেন। আর আপনি যদি এপ্রিল বা মে মাসে এখানে ভ্রমণে যান তাহলে অনেক নাম-না-জানা ফুলের সন্ধান পেতে পারেন। গ্যাংটক বা পেলিং এর মতো রাভাংলা এখনও তেমন ভাবে পর্যটকদের নজরের আওতাভুক্ত হতে পারেনি।
বাসস্থান -
1. দ্য বাড়ফুঁঙ রিট্রিট - দক্ষিণ সিকিমের রাভাঙলা অঞ্চলের এবং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দ্য বাড়ফুঁঙ রিট্রিট হোটেলেটি। সপ্তাহশেষে প্রকৃতির কোলে ছুটি কাটানোর জন্য এবং স্থানীয় ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর অজানা তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্য এই হোটেলেটিকে ভ্রমণকালীন বাসস্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আপনি যদি হোটেলের মধ্যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা চান তাহলে রাভাংলা অঞ্চলের অদূরে এই হোটেলে রাত্রিবাস করতে পারেন।
২. হিল টপ রাবং রিসোর্ট - পাহাড়ের উপরে পাইনের জঙ্গলে ঘেরা হোটেলে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন করতে চাইলে হিল টপ রাবং রিসোর্টকে ভ্রমণকালীন বাসস্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন। এই রিসোর্টটি রাভাঙলার মেইন মার্কেট থেকে ৪কিমি দূরে অবস্থিত।
৩. লুঙচক ফার্মস - কেউজিং অঞ্চলে অবস্থিত এই হোমস্টে থেকেও হিমালয়ের দর্শন পাওয়া যায়। লুঙচক ফার্মস এও অথিতিদের আপ্যায়নের জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে প্রকৃতির নানান শোভার সঙ্গে অনেক অজানা পাখিদের সঙ্গেও আলাপ জমাতে পারেন।
পশ্চিম সিকিম: ছায়া তাল, কালুক, ওখরে, যুক্সোম, এবং দজোঙড়ি
ছায়াতাল
সিকিমের অফ বিট গন্তব্যের মধ্যে ছায়া তাল অন্যতম প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত ছায়াতাল প্রধানত অনেকগুলো পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। ছায়াতালের বিখ্যাত পর্যটন স্থান হলো পাহাড়ি অঞ্চলের ঘন জঙ্গল, মনেস্ট্রি, রেড পান্ডা, এবং প্রায় ৬৫টি আলাদা প্রজাতির পাখির সাক্ষাৎ দর্শন।
বাসস্থান -
১. ছায়াতাল হেরিটেজ হোম - এই হেরিটেজ হোমে রাত্রিবাসের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘার সম্মুখ দর্শন। আর এই হোটেলেটি পাহাড়ের কেন্দ্রে অবস্থিত, তাই এখানে এলে আপনাকে হেঁটে অনেকটা উঁচুতে উঠতে হবে, এই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসাই ভাল।
কালুক, ওখরে এবং উত্তারে
সমতল অঞ্চল থেকে ১,৬২০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত কালুক গ্রামটিও ভ্রমণের জন্য আদৰ্শ স্থান। এখানে এসে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে ভ্রমণকালীন সময়ে স্থানীয় মানুষের মতো সাধারণ সুযোগ সুবিধাকে আশ্রয় করেই আপনাকে দিন অতিবাহন করতে হবে।
ওখরে এই রাজ্যের আরেকটি ছোট পাহাড়ি গ্রাম, যা ভ্যালি অফ রডোডেনড্রন আখ্যায় ভূষিত। মার্চ বা এপ্রিল মাসে এখানে বেড়াতে গেলে বর্ণময় রডোডেনড্রন ফুলের সঙ্গে আলাপ করে আসতে পারেন।
নেপাল সীমান্তে অবস্থিত উত্তারেও একটি ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। আর এই গ্রামটিকে সিঙ্গালীলা রেঞ্জের উদ্দেশ্যে ট্রেকিং এর সূচনা স্থল বলা যায়। উত্তারে থেকে পাহাড় ও প্রকৃতির অসামান্য লীলাখেলাকে একান্তে উপভোগ করা যায়। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, পেলিং, গ্যাংটক, নিউ জলপাইগুড়ি, রাভাঙলা, রিনচেপং এবং দেন্তাম থেকে ট্যাক্সি বা বাস ধরে খুব সহজেই এখানে পৌঁছনো যায়।
বাসস্থান -
১. ম্যান্ডারিম ভিলেজ রিসোর্ট - কুলুকের ম্যান্ডারিম ভিলেজ রিসোর্ট-এর ব্যাবস্থাপনা খুবই ভাল। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করতে করতে এখানকার সুস্বাদু খাবারও টেস্ট করে দেখতে পারেন। শীতের দেশে সূর্যের মিঠে আলো গায়ে মেখে থুকপা খাওয়ার মজাটা কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। তাছাড়াও, হোটেলে বিছানায় শুয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার সাথে একাকী কথোপকথনের পরিকল্পনাটা বেশ রোমান্টিক হবে।
২. দ্য গ্যাল্টসেন হোমস্টে - সিকিম অঞ্চলের চিরাচরিত গৃহের আদলে নির্মিত দ্য গ্যাল্টসেন হোমস্টে। এই হোমস্টেটি কালুক থেকে ১০মিনিট এবং পেলিং থেকে ৩০মিনিট অদূরে অবস্থিত। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত হওয়ায় গাড়ি থেকে নেমে প্রায় ১০মিনিট ট্রেক করে আপনাকে এই হোমস্টেতে পৌঁছতে হবে।
যুক্সোম এবং দজোঙড়ি
পশ্চিম সিকিমে অবস্থিত যুক্সোম শহরটি মূলত একটি ঐতিহাসিক শহর হিসেবে পরিচিত ১৬৪২ সালে প্রথম চজ্ঞাল এই স্থানে প্রথমবার রাজা হিসেবে সম্মানিত হয়েছিলেন। আর সেই কারণেই পশ্চিম সিকিমের এই অঞ্চলটি আজও মানুষের কাছে সমানভাবে প্রসিদ্ধ। যুক্সোম থেকে মাত্র ২কিমি ট্রেক করে পৌঁছে যেতে পারেন সিকিমের প্রাচীন দুবদি মনেস্ট্রিতে। তাছাড়াও দূরের ট্রেকেগুলোর যাত্রার সূচনা হয় এই স্থান থেকেই। এখানে স্থানীয় বাজার পরিদর্শন করে, তিব্বতীয় খাদ্যের স্বাদ আহরণ করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
ভারতের শ্রেষ্ঠ ট্রেকিং ডেস্টিনেশন গুলির মধ্যে দজোঙড়ি অন্যতম। এই গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,২০০মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। আপনি যদি ক্রমাগত ৮দিন ধরে ট্রেক করেন, তাহলে রাত্রিবাসের জন্য দজোঙড়ি গ্রামটিকে বেছে নিতে পারেন। আর সকাল সকাল প্রথমেই হিমালয়ের থেকে শুভসকালের অভিবাদন পাওয়ার জন্য এই স্থানটি আদর্শ। পরিশেষে স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটি ও সেরে ফেলতে পারেন। দার্জিলিং, গ্যাংটক, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে খুব সহজেই যুক্সোম এবং দজোঙড়ি পৌঁছতে পারেন।
বাসস্থান -
১. লিম্বো হোমস্টে - সিকিমের পাহাড়ি জীবনধারা কে উপভোগ করার জন্য লিম্বো হোমস্টেকে বেছে নিতে পারেন। স্থানীয় পরিবার দ্বারা পরিচালিত এই হোমস্টে থেকে পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন সমস্ত গ্রামটি, প্রকৃতির রূপমাধুর্য্য আহরণ করে আসতে পারেন; আর সব শেষে স্থানীয় অঞ্চলের খাবারের স্বাদ চেখে দেখতে পারেন।
২. সিকিম লেক হাউস - সিকিমের বিখ্যাত খেঁচেওপালড়ি লেক থেকে মাত্র ১০মিনিট অদূরে সিকিম লেক হাউস হোটেলেটি অবস্থিত। পাথর আর কাঠ দ্বারা নির্মিত এই হোটেলের মধ্যে সিকিমের প্রথাগত গৃহ নির্মাণের আঙ্গিক ধরা দেয়। হোটেলের ব্যালকনি থেকে লেকের একটা সুন্দর ভিউ পরিলক্ষিত হয়। এখান থেকে গুরু রিন্পছে গুহা এবং গ্রীন তারাদেবী গুহা পর্যবেক্ষণ করতে কিন্তু একদম মিস করবেন না।
তাহলে আর দেরি না করে সিকিমের উদ্দেশ্যে চটজলদি একটা অ্যাডভেঞ্চার অফ বিট ট্রিপের প্ল্যান করেই ফেলুন । প্রকৃতির অমোঘ রহস্যের অন্বেষণ করতে পারলেন কী? আমাদের অবশ্যই লিখে জানান ।