ট্রেকিং বলতেই আমরা কল্পনা করি কোনও খাদের ধারের আনকোরা আঁকা-বাঁকা গতিপথ পেড়িয়ে কোনও সুউচ্চ তুষারাবৃত পর্বতের উদ্দেশ্যে যাত্রা। পাহাড় ছাড়াও বিকল্পিত ভ্রমণস্থান হিসেবে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল বিশেষত সমুদ্র দর্শনকেই নেওয়া হয়। স্বভাবতই, জঙ্গলের আদিম সৌন্দর্য এবং রহস্যকে উপলব্ধি করার সুযোগটা ভারতীয় পর্যটকদের কাছে খানিকটা অধরাই থেকে যায়। তবে বর্তমানে, জঙ্গল ট্রেকিং, ফরেস্ট ক্যাম্পিং ইত্যাদি কার্যক্রমের জন্য জঙ্গল পরিদর্শনও মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আর সেই কারণেই পর্যটকরা পার্বত্য অঞ্চল ট্রেকিং এর পরিবর্তে জঙ্গল ট্রেকিংকেই বেছে নিচ্ছেন। তাই সমস্ত অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য এই ব্লগে জঙ্গলের অ্যাডভেঞ্চার ট্রেকিং এবং হাইকিং-এর কয়েকটি শ্রেষ্ঠ সন্ধান রইল।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,৯০০ মিটার উচ্চতায় কেরলের ওয়েনদে অবস্থিত চেমব্রা পাহাড়। সৌন্দর্যের নিরিখে দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত পাহাড়গুলোর মধ্যে এই পাহাড়টি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সুন্দর। এই ট্রেকে আপনার জন্য রয়েছে পাহাড়েঘেরা ঘন সবুজ অরণ্য। এখানে আপনি জঙ্গলের বন্যতার সঙ্গে মেঘেদের আনাগোনার প্রত্যক্ষদর্শী থাকতে পারেন। তবে এই ট্রেকের মূল আকর্ষণ কিন্তু লাভ লেক। পাহাড়ের শৃঙ্গকে ছোঁয়ার আগে হার্ট আকৃতির লেকের দৃশ্যটি আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
এই ট্রেক উপভোগ করার আগে মেপ্পাদি বন দপ্তরের অনুমতিপত্রটি প্রয়োজন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মেপ্পাদি স্থানটি চেমব্রা ট্রেকের সূচনা স্থল থেকে ৩৫কিমি অদূরে অবস্থিত ।
চেমব্রা ট্রেক সম্পর্কে বিশদে জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
সময়সীমা - এই ট্রেক সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘণ্টা ।
কাঠিন্য - সহজসাধ্য
কখন যাবেন
চেমব্রা ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় হল বর্ষার পরবর্তী সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়টি এই ট্রেকের জন্য আদর্শ ।
গোয়ার পালি জলপ্রপাত ট্রেক
গোয়ার কথা মনে পড়লেই প্রথমেই মাথায় আসে গোয়ার সমুদ্র স্নান, ডান্স পার্টি, গোয়ার নাইট লাইফকে উপভোগ করা, ইত্যাদি । কিন্তু আপনি যদি প্রকৃতই প্রকৃতি প্রেমিক হন এবং গোয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পুরোপুরি উপভোগ করতে চান তাহলে পালি জলপ্রপাত পরিদর্শন করতে একদম ভুলবেন না। গোয়ার এই অচেনা ট্রেইলটি শিবলিং ফলস নামেও পরিচিত। গোয়ার ছোট্ট গ্রাম ভাল্পই-এর গভীর অরণ্যে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। গ্রাম থেকে ৬ কিমি লম্বা জলাধার, পাথুরে পাহাড়, তৃণভূমি পেরিয়ে জলপ্রপাত দর্শনের ট্রেকটি কিন্তু অন্যান্য ট্রেকের তুলনায় কঠিন। এখানে ভিন্ন ধরণের সরীসৃপ এমনকি কোবরারও দেখা পেতে পারেন।
সময় - এই ট্রেক সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ২-৩ ঘণ্টা ।
কাঠিন্য - তুলনায় কঠিন ।
কখন যাবেন
বর্ষা পরবর্তী যে কোনও সময় এখানে যেতে পারেন। অগাস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়টা এই ট্রেকের জন্য উপযুক্ত। আবার শীতকালীন সময়ও এই ট্রেকের জন্য আদৰ্শ, তবে এই সময় জলপ্রপাতের জলের আধিক্য বর্ষা পরবর্তী সময়ের তুলনায় অনেকটাই কম থাকে।
সমস্ত প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে মুদুমালাইকে স্বর্গ বললে খুব একটা ভুল হবে না। মুদুমালাইয়ের দর্শনীয় স্থানটি হল মুদুমালাই ন্যাশনাল পার্ক। পর্যটকরা সাধারণত এই অভয়ারণ্যে জিপ সাফারি করে থাকেন কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ বর্তমানে জঙ্গল ট্রেকিং এর জন্যও এই অভয়ারণ্যকে বেছে নেন। ট্রেক করে আপনি মাত্র ২- ৩ ঘণ্টার দূরত্বে পৌঁছে যেতে পারেন মুদুমালাই-এর অসামান্য সুন্দর শিখর দর্শনের উদ্দেশ্যে। এই ট্রেকে আপনার সঙ্গী হতে চলেছে কলা গাছের বাগান, ঘন জঙ্গল। একই সঙ্গে অদ্ভুত কিছু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হতে পারেন।
সময়- এই ট্রেকের জন্য সময় লাগবে ২- ৩ ঘণ্টা ।
কাঠিন্য - সহজসাধ্য
কখন যাবেন
মুদুমালাই এর ট্রেক এবং সৌন্দর্য দর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস ।
ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের এই রাজ্যটি বর্তমানে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই রাজ্যটিও কয়েকটি সুন্দর জঙ্গলের জন্য বিখ্যাত। তবে ট্যালি ভ্যালি অঞ্চলটি বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের প্রধান বাসস্থান হিসেবে পরিচিত। আর তাই অজানা উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের সাক্ষাতের জন্যই ভ্রমণপিপাসু মানুষ এই অঞ্চলটিকে ট্রেকিং এর জন্য বেছে নেন। এখানে অচেনা প্রাচীন গাছ ছাড়াও দেখতে পাবেন বাঁশ ঝাড়ের ঘন জঙ্গল।
এই ট্রেক এবং জঙ্গল পরিদর্শনের জন্য আপনার ভারতীয় নাগরিকত্বের সঠিক প্রমাণ পত্রটির প্রয়োজন ।
সময়সীমা - এই ট্রেক সম্পাদন করতে সময় লাগবে ২-৩ দিন।
কাঠিন্য - সহজসাধ্য
কখন যাবেন
পর্যটকদের মতে এই ট্রেকের জন্য শ্রেষ্ট সময় শরৎ কাল কিংবা বসন্ত কাল। অর্থাৎ অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস সময়টিকে আপনি বেছে নিতে পারেন।
কর্ণাটকের শিবমগা অঞ্চলে অবস্থিত, কোদাচাদ্রি শৃঙ্গটি ন্যাচারাল হেরিটেজ সাইট হিসেবে পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,৪০৬ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত কোদাচাদ্রি শৃঙ্গটি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার একটি অঙ্গ। এই ট্রেকে আপনি সঙ্গী হিসেবে পাবেন মুকাম্বিকা ন্যাশনাল পার্ককে। অভয়ারণ্যের অচেনা জীব জন্তুর সঙ্গে পরিচয় করে, জঙ্গলের প্রকৃতির অনন্য সুন্দর অভিজ্ঞতাকে মনের খাঁচায় বন্দি করে চঞ্চলা জলপ্রপাতকে পরিদর্শন করে আসতে পারেন ।
সময়সীমা - এই ট্রেক সম্পাদন করতে সময় লাগবে ২-৩দিন ।
কাঠিন্য - সহজসাধ্য
কখন যাবেন
বর্ষার শেষ থেকে শীতকালীন সময় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস এই ট্রেকের জন্য আদৰ্শ ।
উত্তরাখণ্ডের কুঞ্জখারাক ট্রেক
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পাঙ্গত অঞ্চল থেকে এই ট্রেকের সূচনা হয়। এই ট্রেকে আপনি সাক্ষাৎ দর্শন পাবেন ঘন জঙ্গল, প্রকান্ড দেবদারু গাছ, এবং অবশ্যই হিমালয়ের। আর এই যাত্রায় আপনি সঙ্গী হিসেবে পাবেন কোশি নদীকে। ভারত এবং নেপালের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে নদীটির উৎপত্তি। এই ট্রেকের আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুটি হল প্রকৃতি আপনার কাছে নতুন সাজে ধরা দেবে।
সময়সীমা - এই ট্রেক সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ২- ৩ দিন ।
কাঠিন্য - সহজসাধ্য
কখন যাবেন
অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় এই ট্রেকের জন্য আদৰ্শ। মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়ে এখানে খুব গরম থাকে, তাছাড়াও এই সময় দাবানলের সম্ভাবনা থাকে ।
উত্তরাখণ্ডের জিম করবেটে সীতাবানী ট্রেক
জিম করবেট থেকে যারা ছোট ট্রেকের সন্ধান করছেন তাঁরা অনায়াসেই সীতাবানী ট্রেকটিকে বেছে নিতেই পারেন। সীতাবানী মন্দির থেকে ট্রেকের সূচনা হয়, আর প্রায় ৮-৯ কিমি দূরত্বে গভীর অরণ্যে একটি শিব মন্দির ভ্রমণ করার পর এই ট্রেকের সমাপ্তি ঘটে। তবে এই ট্রেকে আপনার একমাত্র সঙ্গী হিসেবে থাকবে ছোট ছোট নদীর জলধারা আর অরণ্যের নিস্তব্ধতা। এই ট্রেক প্ল্যান করলে আপনি অবশ্যই দেখা পাবেন গজরাজ এবং দলছুট হরিণের।
কিন্তু, এই ট্রেকের জন্য যাত্রা করার আগে বনদপ্তরের পার্মিটটি সঙ্গে রাখবেন আর বাঘ এবং হিংস্র পশুদের থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন। সর্বোপরি, অরণ্যের সার্থকতা বজায় রাখতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
ট্রেক সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
সময়সীমা - এই ট্রেক সম্পন্ন করতে সময় লাগবে ৩-৪ ঘণ্টা।
কাঠিন্য - অন্যান্য ট্রেকের তুলনায় কঠিন ।
কখন যাবেন
অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় এই ট্রেকের জন্য উপযুক্ত ।
উত্তরাখণ্ডের এই অঞ্চলটির প্রকৃতির নিত্যনতুন রূপসজ্জা, হিমালয়ের মনকাড়া সৌন্দর্য, স্থানীয় মানুষের সারল্য ইত্যাদি সকল মানুষকেই অভিভূত করে। তাই বিনসার ওয়াইল্ডলাইফ অভয়ারণ্য ভ্রমণে গিয়ে জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে ট্রেকটি কিন্তু এক্কেবারেই মিস করবেন না। গেস্ট হাউস থেকে একটা গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান পাহাড়ের পাদদেশে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ২- ৩ ঘণ্টার দূরত্বে পৌঁছে যেতে পারেন বিনসারের সর্বোচ্চ পয়েন্টে। এখানে আপনি দেখা পাবেন বাঁদর আর তার মায়ের লুকোচুরি খেলা, নীল আকাশে রং বেরঙের পাখিদের অগাধ যাতায়াত, ল্যাঙ্গুরের এক গাছ থেকে অন্য গাছের উদ্দেশ্যে যাতায়াত। এছাড়াও অনেক অচেনা বন্য পশুদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে আসতে পারেন।
এখানে আপনি এই ট্রেক সম্পর্কে বিশদে জানতে পারেন ।
সময়সীমা - এই ট্রেকের জন্য আপনার সময় লাগবে ২- ৩ ঘণ্টা।
কাঠিন্য - সহজসাধ্য
কখন যাবেন
অক্টোবর থেকে নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস এই ট্রেকের জন্য আদর্শ । তুষারপাত এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকার কারণে এই সময় আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে ।
উপরিউক্ত কোনও ট্রেকটিকে আপনি বেছে নিলেন আর আপনার ট্রেকের অভিজ্ঞতা কেমন হল, জানাতে কিন্তু ভুলবেন না। আমরা আপনার কমেন্টের অপেক্ষায় থাকলাম ।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)