মারফিস ল-য়ের নাম শুনেছেন? এই থিয়োরিটি বলে "কোনও কিছু বিপদের সম্ভাবনা থাকলে, সেই বিপদটি হবেই"। আক্ষরিক অর্থের বাইরে গিয়ে বুঝতে চাইলে এই থিয়োরিটি বলতে চায় যে আপনার মনে যদি কোনও সমস্যার আশঙ্কা থাকে, তাহলে স্থান কাল পাত্র নির্বিশেষে সেই ঘটনাটি ঘটবেই। এই মজার থিয়োরিটি যদি আমরা ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি, তাহলে প্রথমেই থাকবে মারফিস ল অফ ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ট্রিপ - প্রথমবার বিদেশে বেড়াতে গিয়ে যা যা সমস্যা হতে পারে, তা হবেই এবং বড় কোনও বিপদ বা দুর্ঘটনার কথা বাদ দিলে, বেশিরভাগ পর্যটকদের কাছেই আছে এরকমের অভিজ্ঞতা।
কিন্তু আশাহত হবেন না। জেনে রাখুন ৮টি এমন বিষয়, যা নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
১. আপনি হারিয়ে যেতে পারেন
হাস্যকর মনে হলেও, বিদেশে বেড়াতে গিয়ে বহু পর্যটক পথ ভুল করেন বা হারিয়ে যান। এতে তাদের গোটা ট্রিপের প্ল্যানে সমস্যা হয়, হয়রানি বেড়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রচুর অর্থব্যয় হয়। এর অন্যতম কারণ বিদেশে ভাষাগত সমস্যা।
বিপদমুক্তির উপায় : একটি ভাল আন্তর্জাতিক সিম কার্ড সবসময় সাথে রাখুন, যাতে যে কোনও জায়গায় আপনি ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। না হলে, বিদেশে গিয়ে এয়ারপোর্টে নেমেই সেই দেশের স্থানীয় সিমকার্ড ও কিনে নিতে পারেন। আর দরকারে কমিউনিকেট করার মতো একেবারে প্রাথমিক কিছু বাক্য বা শব্দ আগে থেকে শিখে রাখা ভাল।
২. আপনার ফ্লাইট বাতিল হতে বা দেরি করে ছাড়তে পারে
সাধারণত উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশেই এই সমস্যাটি সবথেকে বেশি দেখা যায়। আগাম নোটিস ছাড়াই বহু ফ্লাইট ক্যান্সেল বা ডিলে হয়ে যায়। উন্নত দেশগুলোতেও যেখানে প্রচুর লো-কস্ট ক্যারিয়ার রোজ যাতায়াত করে, সেখানেও এই অবস্থার সম্মুখীন হতে পারেন।
বিপদমুক্তির উপায় : বিদেশে গিয়ে বা যাওয়ার সময় লো-কস্ট ফ্লাইট বুক করবেন না, কারণ একবার ক্যান্সেল হয়ে গেলে কিছু করার থাকবে না, ভাষাগত সমস্যাও হতে ওয়ারে বিদেশের এয়ারপোর্টে। তার বদলে একটি ভাল ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স কিনে রাখুন, যা ফ্লাইট ডিলে বা ক্যানসেল হওয়ার ফলে অর্থব্যয় হলে আপনাকে ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে। রিলায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স আপনাকে এই কয়েকটি বিষয়ে সাহায্য করতে পারবে :
ক) এয়ারলাইন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মেডিক্যাল সমস্যা বা ব্যক্তিগত বেকারত্বজনিত কারণে ফ্লাইটের ১২ ঘণ্টার বেশি দেরি হলে যদি আপনার অর্থব্যয় হয়।
খ) এয়ারলাইন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মেডিক্যাল সমস্যা বা ব্যক্তিগত বেকারত্বজনিত কারণে ট্রিপ ক্যানসেল বা বিঘ্নিত হলে যদি আপনার অর্থব্যয় হয়।
গ) ৩ ঘণ্টার বেশি দেরির কারণে কানেকটিং ফ্লাইট মিসের কারণে যদি আপনার অর্থব্যয় হয়।
৩. আপনার জিনিসপত্র হারিয়ে যেতে পারে
বেড়াতে গিয়ে প্রায়শয়ই আমাদের কোনও জিনিস কোথায় রেখেছি তা মাথায় থাকে না। এই জাতীয় সমস্যা বিদেশে অর্থাৎ আমাদের চেনাশোনা জায়গার বাইরে হলে কিন্তু বড় বিপদে পরিণত হতে পারে।
বিপদমুক্তির উপায় : প্রথমত শুধুমাত্র সেই জব জিনিসপত্র নিয়ে যান, যা একান্ত প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয়ত, বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে লাগেজের সবকটি জিনিস, ছোট হোক, বড় হোক, ভাল করে গুনে রাখুন এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়ার সময় প্রতিবার একবার করে দেখে নিন। মনে রাখবেন, যদি বিমান পরিচালক সংস্থা আপনার মালপত্র হারিয়ে ফেলে, তাহলে আপনার আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স আপনার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ করে দেবে, তাই এরম ইন্স্যুরেন্স করিয়ে রাখা ভাল। রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স পলিসি নিয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
৪. আপনার শরীর খারাপ হতে পারে
বেড়াতে গিয়ে শরীর খারাপ মানে তো একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো। একে হাতে সময় কম, তারপর আছে পর পর প্ল্যান। এর মাঝে শরীর খারাপ হলে, বিছানায় শুয়ে পস্তানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
বিপদমুক্তির উপায় : ছোটবেলায় মা যেমন বলতেন - একদম বাইরের জিনিস খাওয়া নয়। বাইরের যে কোনও খাবার, বিশেষত স্ট্রিট ফুড থেকে সমস্যা হতে পারে। আপনার শরীরে যদি প্রয়োজনীয় ইমিউনিটি না থাকে, তাহলে যেখানে সেখানে না খাওয়াই ভাল। তবে শরীর যদি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে খারাপ হয়, তাহলে বাড়ি ফিরে যাওয়াই উচিত। ভাল আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। রিলায়েন্স আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স আপনার হাপাতালের বিল, ওষুধের খরচ, এমনকি আপনার দেশে ফিরে আসার খরচের দায়িত্বও বহন করে।
৫. আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে যেতে পারে
পর্যটকদের নিয়ে সমীক্ষা করলে কিন্তু অনেকেই জানাবেন কীভাবে বিদেশে পাসপোর্ট হারিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সমস্যাটি বেশ কমন হলেও, আপনার সাথেও যদি হয়, তাহলে বিদেশের মাটিতে ভাষাগত সমস্যা এবং আইনি কারণে বেশ হয়রানি হতে পারে।
বিপদমুক্তির উপায় : পাসপোর্ট পকেটে নিয়ে ঘুরবেন না, "গুছিয়ে তুলে রাখার" প্রয়োজন নেই কারণ কোথায় রেখেছেন তা মনে থাকবে না, আর ফোনে সবসময় পাসপোর্টের একটি ডিজিটাল কপি রেখে দেবেন। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বিদেশে নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার জন্যে যা খরচ হবে, রিলায়েন্স আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বীমা তা বহন করবে।
৬. আপনার সাথে থাকা ক্যাশ টাকা ফুরিয়ে যেতে পারে
এই বিষয়ে আমার থেকে ভাল আর কে জানবে বলুন। নিজে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। হয়তো আপনার আক্যাউন্টে টাকা আছে, কিন্তু বেশি খরচ হবে না ভেবে যথেষ্ট ক্যাশ আনেননি। এখন সব ক্যাশ ফুরিয়ে যাওয়ার পর ভাবছেন রাতের ডিনার করবেন কীভাবে।
বিপদমুক্তির উপায় : ভাল করে রিসার্চ করে তবেই যান। ত্রিপোটোর মতো ভাল অনলাইন ট্র্যাভেল সাইটে আপনি পাবেন বহু পর্যটকের নিজস্ব ভ্রমণের কাহিনি। সেখান থেকে আপনি ধারণা করতে পারবেন কোনও নির্দিষ্ট দেশে কতটা খরচ হতে পারে। এছাড়া আপনি সঙ্গে ফরেক্স কার্ড নিয়ে যেতে পারেন, স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে এই কার্ড ব্যবহার করে বিদেশি এ.টি.এম থেকে আপনি নিজস্ব টাকা তুলতে পারবেন।
৭. আপনার থাকার জায়গা একেবারেই ভাল হবে না
এরকম সমস্যা তো বোধহয় আমাদের সকলের সঙ্গেই হয়েছে। অনলাইনে "অবিশ্বাস্য" কম দামে কোনও হোটেলের অসম্ভব সুন্দর ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গে বুক করেছেন, যাতে পরে দাম বেড়ে গেলেও সমস্যা না হয়। কিন্তু সাবধান! পুরো ব্যাপারটাই জালিয়াতি। বেশিরভাগ হোটেল এরকম ডিল কোয়ালিটির সঙ্গে আপোষ না করে দিতে পারবে না।
বিপদমুক্তির উপায় : ইন্টারনেটে রুম বুক করার আগে সবসময় সত্যিকারের পর্যটকদের লেখা অনলাইন রিভিউ গুলো পড়ে নিন। যদি পছন্দ না হয়, তাহলে সেই পুরনো পদ্ধতি বেছে নিন - আগে রুম স্বচক্ষে দেখে পছন্দ করুন, তারপর বুক করুন।
৮. খাওয়াদাওয়াটা কিছুতেই মনের মতো হবে না
ভারতীয় হিসেবে আমাদের খাদ্যাভ্যাস বেশ অন্যরকম, আর আমরা সকলেই খাদ্যরসিক, তাই এই সমস্যাটি আমাদের অনেকের সঙ্গেই হয়। বিদেশের বেশিরভাগ দেশেই রান্নায় মশলা দেওয়ার প্রচলন সেরকম নেই, তাই মনের মতো সুস্বাদু খাবার সব জায়গায় নাও পেতে পারেন। আরেকটি বড় সমস্যা হল বহু দেশেই কিন্তু ভেজিটেরিয়ান খাবার দাবার পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও তা খুবই বিরল।
বিপদমুক্তির উপায় : এমন কারও সঙ্গে কথা বলুন যে আগে ওই নির্দিষ্ট দেশে আগে গেছে বা অনলাইনে এমন ব্লগ পড়ুন যা ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসকে মাথায় রেখে লেখা হয়েছে। প্রতিটি দেশেই ভেজিটেরিয়ান কুইজিন নিয়ে হাজার হাজার ব্লগ লেখা হয়েছে, তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে সেগুলো বুকমার্ক করে রাখুন। আর সবসময় সঙ্গে কাপ নুডলস বা ভাজাভুজি সাথে রাখুন, যাতে খিদে পেলে মুখ চালিয়ে যেতে পারেন।
ব্যাস! আশা করব এবার বিদেশ বিভুঁইয়ে বিপদে পড়লে এই ব্লগটির কথা মাথায় রাখলে আপনার সমস্যার কিছু উপশম হবে। তবে আমি আবার বলব দেশের বাইরে পা রাখার আগে কিন্তু টাকা খরচ করে একটা আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স বানিয়ে রাখা ভাল।
শুনতে বাইরের দেশের মনে হলেও, রিলায়েন্সের আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স কিন্তু নানান রকম সমস্যা কভার করে আপনার সহায়তা করতে পারে - নানা রকম সুযোগসুবিধা থেকে শুরু করে টাকা চুরি হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় এমার্জেন্সি ক্যাশ বা কোনও দুর্ঘটনায় আহত হলে চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ - সব কিছুই সহায়তাই পাবেন।
এই আর্টিকলটি রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে সহায়তায় লিখিত।