
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা যতই আধুনিক হয়ে উঠছি, ততই এই পৃথিবীর বুকে ঘটে চলেছে, একের পর এক বিরল ঘটনা এবং নজির। এই তো কিছুদিন আগেই কলকাতার লোকজন বেশ দুঃখ করছিল, "শীত চলে গেল, শীত চলে গেল" বলে কিন্তু কই সে মহাশয় আবারও এসেছেন স্বমহিমায়, ওই যেমন বইয়ের পাতাতে পড়েছিলাম না ! 'আবার সে এসেছে ফিরিয়া' গোছেরই, এক ধরনের ব্যাপার-স্যাপার।
যাই হোক কলকাতার বুকে শীতলতায় কাঁপতে কাঁপতেই বঙ্গবাসী যখন ইতি-উতি ভালবাসার ওম খুঁজে বেড়াচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই বঙ্গবাসীর চোখের সামনে এসে দাঁড়াল অভূতপূর্ব এক ঘটনা।
আড্ডাপ্রিয় বাঙালির যাবতীয় চর্চার কেন্দ্রই হল পাড়ার মোড়ের চা-এর দোকান, আর এই বিষয়টাও যে বাঙালির আলোচনার প্রাইম টপিক থেকে একেবারে সরে যাবে না, সেকথা বলাই বাহুল্য।
কী হয়েছে মশাই? জানতে চাইছেন তো ?
তাহলে খোলশা করে বলাই যাক, 'বরফ পড়ছে, বরফ...' এবার নিশ্চয়ই আপনি বলবেন হ্যাঁ, শীতকালে তো বরফ পড়বেই, সেকথা তো স্বাভাবিক, আর পাহাড়ি এলাকায় বরফ পড়বে না এমন আবার হয় নাকি বলুন মশাই।
নাহ্! বরফ যদি শিমলা, কুলু, মানালি কিংবা ভারতের বাইরে অন্য কোনও পাহাড়ি উপত্যকাতে পড়ত, তাহলে এত আলোচনাই হত না। কিন্তু এ বরফ তো স্বয়ং মরুভূমিতেই আছড়ে পড়েছে...
বিশ্বাস হবে না জানি, মরুভূমিতে বরফ পড়া আর রাতের বেলাতে সূর্য ওঠা কতকটা একই ধাঁচের।
কিন্তু এ কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্পও নয় কিংবা কোনও সিনেমার শুটিংও নয়, নিদেন পক্ষে কোনও রাসায়নিক যৌগের বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হওয়া বরফও নয়।
ঘটনা ঘটেছে আফ্রিকার সাহারা মরুভূমিতে এবং সৌদি আরবের মরুভূমি এলাকাতে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুসারে সাহারা মরুভূমিতে ঘটেছে তুষারপাত এবং অন্যদিকে সৌদি আবরের বিস্তীর্ণ মরুভূমি অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে খবরের যথার্থতা নিয়ে বারবারই একধরনের প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়, কিন্তু এই খবরটি যে একশো শতাংশ খাঁটি সেই বিষয়ে কোনও রকম সন্দেহ নেই, একটি ভিডিয়ো থেকে দেখা গিয়েছে মরুভূমির একটা বিস্তীর্ণ প্রান্তর বালিতে ঢাকা, তার উপরে জমা পড়েছে বরফ, আর তার মধ্যে থেকেই হেঁটে যাচ্ছে ভেড়ার দল।

একবিংশ শতকের দোড়গোড়াতে দাঁড়িয়ে এমন আর কত বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকবে মানবসমাজ, তা আমরা কেউই জানি না। বিশেষজ্ঞদের মতে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-র জন্য যে আমাদের এই প্রকার ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা আর নতুন করে নাই বা বলা হয়।
বঙ্গবাসী আশা করি এবার থেকে চা-এর কাপে ঝড় তোলার সঙ্গে সঙ্গে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নিজেকে এবং অন্যকে সচেতন করে তুলতে পারবে। না হলে কলকাতাতেও বরফ পড়া শুরু হতেই পারে যে কোনও দিনই।