কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ করতে চান? জেনে নিন খরচ বাঁচানোর সেরা উপায়গুলো
নিয়মিত ভালভাবে ভ্রমণ করার জন্যে যে সকল গুণাবলীগুলো একজন ভাল পর্যটকের মধ্যে থাকা দরকার, তার মধ্যে প্রথমেই থাকবে কীভাবে ট্রিপের জন্যে বাজেট করতে হবে তা জানা। শুধুমাত্র কিছু শর্টকাট বা ট্রিক ব্যবহার করে ভালো বাজেটিং করা যায় না। কুড়িয়ে বাড়িয়ে চেষ্টা করে হয়তো আপনি কিছু টাকা বাঁচাতে পারবেন, কিন্তু ভালভাবে বেড়াতে যাওয়ার খরচ বাঁচানোর জন্য বাজেটিংয়ের আর ভ্রমণের একেবারে গোড়ার দিকে মন দিতে হবে - কোথায় যাবেন, আর কখন যাবেন আর কীভাবে যাবেন।
সরাসরি কাজের কথায় চলে আসা যাক, কীভাবে কতগুলো প্রাথমিক কথা মাথায় রাখলে আপনিও বাজেটের মধ্যে থেকে ট্যাভেল করতে পারবেন।
১. কোথায় বেড়াতে যাবেন, তা ভেবেচিন্তে ঠিক করুন
শেষপর্যন্ত পারফেক্ট ডেস্টিনেশন কিন্তু আপনার হাতে কতটা সময় আছে, আর আপনি কতটা খরচ করতে পারবেন, তার উপরে নির্ভরশীল। তাই আপনি যদি কোনও একটা অপশনে মনস্থির না করে বিভিন্ন বিকল্পের প্রতিও আগ্রহী হন, তাহলে বেশ কিছুটা সাশ্রয় করতে পারবেন। আপনার প্রধান খরচ কিন্তু হবে ফ্লাইটের টিকিটে, তাই সেই বুঝে গন্তব্যস্থল নির্বাচন করাটাই শ্রেয়। আর এর জন্যে স্কাইস্ক্যানার খুব ভাল একটি ওয়েবসাইট। এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দামের মধ্যে কোথায় কোথায় আপনি যেতে পারবেন, সেটি আপনি একেবারেই দেখতে পারবেন। বার বার বিভিন্ন ওয়েবসাইট বার বার সার্চ করার কোনও প্রয়োজন হবে না। গত গ্রীষ্মে আমার একটি ট্রিপের জন্যে করা স্কাইস্ক্যানার সার্চের ম্যাপ ভিউটি একবার দেখে নিন।
ফ্লাইট বাজেট ৩০০০০ টাকা দিয়ে সার্চ করার পর ওই বাজেটে উপলব্ধ সমস্ত ফ্লাইট আমি একসঙ্গে স্কাইস্ক্যানারে দেখতে পেলাম। ইচ্ছেমতো যে কোনও ফ্লাইট এখান থেকে নির্বাচন করা যায়।
২. অনলাইনে বাজেট ট্র্যাভেল ব্লগারদের অনুসরণ করুন
কোথায় যাবেন সেটা একবার ঠিক হয়ে গেলে, সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে ভাল তথ্য আপনি পাবেন যারা সেখানে ইতিমধ্যেই ঘুরে এসেছে তাদের কাছ থেকে। বাজেট টিপস না প্রয়োজন হলেও আপনি ট্র্যাভেল ব্লগারদের থেকে জানতে পারবেন যে কোনও জায়গায় গিয়ে কী কী করা উচিত, কী কী না করাই ভাল, কী কী স্ক্যাম থেকে দূরে থাকা উচিত আর সেই সব জায়গায় অজানা অদেখা কী বিশেষত্ব আছে। ত্রিপোটো-তে যে কোনও ডেস্টিনেশনের ব্যাপারে সার্চ করে দেখে নিতে পারেন ব্লগাররা কী কী তথ্য, ট্র্যাভেল গাইড বা ভিতরের ইনসাইডার ট্রিক্স জানাচ্ছেন।
৩. অফ সিজনে কম দামের ফায়দা তুলুন
একদম পিক সিজনে ভ্রমণ করার মূল সমস্যা কিন্তু দু রকম - সবকিছুর দাম বেশি হওয়ার পাশাপাশি থাকবে প্রচুর সংখ্যায় ট্যুরিস্ট। অফ সিজনে কিন্তু খরচ হতে পারে প্রায় ৭০% কম - হোটেল ভাড়া অনেক কম থাকে, আর বিভিন্ন ট্র্যাভেল প্যাকেজ সস্তায় পাওয়া যায় আর বেশি ভিড়ও হয় না। কোনও মাসে সবথেকে সস্তায় বেড়াতে যেতে পারবেন সেটা জানতে হলে স্কাইস্ক্যানারে "চিপেস্ট মন্থ" (Cheapest Month) সার্চ ফিচারটি ব্যবহার করুন। কম দামে ফ্লাইট পাবেন এবং সাধারণত থাকার জায়গার খরচাপাতি মোটামুটি ফ্লাইট ভাড়ার সঙ্গে সাদৃশ্য বজায় রাখে।
৪. কোন বুকিংগুলো আগে থেকে করতে হবে জেনে রাখুন
যাত্রার দিনের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ আগে ফ্লাইট ভাড়া সবথেকে কম থাকে। তবে যদি প্রাইস এলার্ট সেট করে রাখেন, তাহলে আপনি কোনও সুলভ ডিল মিস করবেন না। অনলাইনে হোটেল ভাড়া একটু বেশি পড়ে, তাই আপনি বিভিন্ন ট্র্যাভেল ফোরাম বা ব্লগ পড়ে জেনে নিতে পারবেন মোটামুটি কীরকম খরচ হওয়া উচিত। আগে থেকে বুকিং করে রাখলে সুবিধে হয়, অনেকসময় ভিসার জন্যেও আগে থেকে বুকিং করে রাখতে হয়, কিন্তু বাজেট ট্র্যাভেলের জন্যে একটু আগে থেকেই রিসার্চ শুরু করে দেওয়া ভাল।
৫. মেটা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করুন
কোনও ফ্লাইট বা হোটেল ভাড়ার বিভিন্ন সাইটে কী দাম, তা তুলনা করা একান্ত প্রয়োজন। অনেক সময়েই সংস্থাগুলো আসল দামের উপর প্রচুর পরিমাণে অযথা চার্জ বা কমিশন বসিয়ে রাখে। তাই স্কাইস্ক্যানার (ফ্লাইটের জন্যে) বা ত্রিপোটো (হোটেলের জন্যে) জাতীয় মেটা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করলে সবচেয়ে সুলভ ডিলগুলোর একটি ধারণা পেয়ে যাবেন।
স্কাইস্ক্যানার খুবই ফ্লেক্সিবল - ডেট, ডেস্টিনেশন বা ডিপার্চার পয়েন্ট না ব্যবহার করেও আপনি সার্চ করতে পারবেন।
আপনি আপনার দেশের সবকটি এয়ারপোর্ট সার্চে ব্যবহার করে দুনিয়ার যে কোনও জায়গায় বিমান খরচ দেখতে পারেন - তাও আবার খরচ অনুযায়ী সাজানো থাকবে। কী অসাধারণ ফিচার, তাই না!
৬. বিকল্প থাকার জায়গা
কোনও হোটেলের থেকে কিন্তু হোস্টেল, গেস্টহাউস বা হোম - স্টের খরচ অর্ধেকের থেকেও কম হবে। আজকাল অনলাইনে যখন এতগুলো অপশন সহজলভ্য তখন সেই বাঁধাধরা হোটেলেই থাকতে হবে, তার কোনও মানে নেই। এককালে পর্যটকদের চিরুনি তল্লাশী চালিয়ে বিকল্প থাকার জায়গা খুঁজতে হত; কিন্তু বর্তমানে এয়ার বি.এন.বি জাতীয় সাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি দারুন এবং সুলভ হোম স্টে খুঁজে পাবেন। এমনকী ত্রিপোটো ব্যবহার করে এক-ই সাইটে একসাথেই কোনও জায়গায় হোম-স্টে , হোস্টেল এবং হোটেলের দামের তারতম্যের খোঁজ পেয়ে যাবেন।
৭. অল্প সময়ের জন্যে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার কথা ভাবতে পারেন
কোথাও বেড়াতে গিয়ে, সেই জায়গার স্থানীয় সমাজজীবনে স্বেচ্ছাশ্রম দান করার মতো মানসিক প্রশান্তি আর কোথায় পাবেন। লম্বা ট্যুরের ক্ষেত্রে আপনি সপ্তাহ দুয়েকের জন্যে ভলান্টিয়ারিং বা স্বেচ্ছাসেবক রূপে কাজ করতে পারেন। এর মাধ্যমে দৈনিক কোনও খরচ না করেই, কোনও জায়গায় থেকে, সেখানকার সামাজিক জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠতে পারবেন। ভারতীয় পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে পৃথার বিদেশে স্বেচ্ছাসেবক কীভাবে হবেন সেই গাইডটি একবার পড়ে নিতে পারেন।
৮. কেনাকাটি করুন সুপার মার্কেটে, লাঞ্চ ডিনার না কিনে ব্যবহার করুন যেখানে থাকবেন সেখানকার রান্নাঘর
হোটেলের নিজস্ব দোকান বা ট্যুরিস্ট দোকান থেকে দৈনিক ব্যবহার্য জিনিস কিনলে দিতে হয় অনেকটা এক্সট্রা টাকা। তার বদলে খুঁজে নিন স্থানীয়রা কোথায় কেনাকাটি করেন বা সুপার মার্কেটগুলো কোথায়। হোস্টেলে বা এয়ার বি.এন.বি-তে থাকলে ব্যবহার করুন ওখানকার রান্নাঘর (এখন প্রায় সব জায়য়গাতেই আলাদা রান্নাঘর পাবেন)। বারবার লাঞ্চ বা ডিনারে খরচা করার বদলে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে নিজেই রেঁধে নিন সুস্বাদু নানান ডিশ। এরফলে আপনার ফুড বাজেটে প্রায় ৫০% শতাংশ সঞ্চয় আপনি করতে পারবেন।
৯. ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা রূপান্তর অ্যাপ ব্যবহার করুন
এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের ফলে কতটা উপকার পাবেন তা আপনার কল্পনার বাইরে। যে কোনও ইন্টারন্যাশনাল ট্রিপে যাওয়ার আগে ফোনে অন্তত একটি ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে রাখুন। গুগল ট্রান্সলেট জাতীয় প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি কোনো অচেনা শহরে আরো স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবেন, দোকানে দরদাম করতে পারবেন, স্থানীয় কোনও ব্যাপারে ভাব বিনিময় করতে পারবেন এবং অনলাইনে খুঁজে পাবেন না এরম অনেক গোপন তথ্য আপনি স্থানীয়দের থেকে সরাসরি জানতে পারবেন।
১০. এমন জিনিসে খরচ করুন, যা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ
দিনের শেষে আপনার কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ, তাই আপনাকে খুশি এনে দেবে। বাজেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি ঠিক করতে পারবেন আপনি নতুন কোনও জায়গায় গিয়ে সেখানে কীভাবে মিশবেন, সময় কাটাবেন আর সেখান থেকে কতটা জিনিস আপনি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তাই আপনি যা করতে পছন্দ করেন, তার পিছনে সবথেকে বেশি বাজেটে রাখুন, বাকি সবকিছুতে খরচের ওপরে লাগাম টেনে। ট্যুরিস্টদের জন্যে বানানো ফাঁদে পড়লে কিন্তু শেষমেশ আপনার পয়সা খরচ হবে অনেকটা, কিন্তু মন ভরবে না কিছুতেই। তাই আপনার যদি মূল উদ্দেশ্য নানা রকম নতুন খাবার খাওয়া, তাহলে সাইটসিইং বা নাইটলাইফের পিছনে বেশি খরচ করে লাভ নেই। তার বদলে স্থানীয় রান্নার ক্লাস করুন, বা খেয়ে দেখুন স্থানীয়দের হাতে রান্না করা বাড়ির খাবার। একবার যদি আপনি কীসে প্রাধান্য দেবেন তা ঠিক করতে পারেন, তাহলে আপনার ভ্রমণ পাবে সঠিক দিশা এবং আপনিও পাবেন সঠিক ভ্যালু ফর মানি।