বালি-এস্কো-এর বাইরের সৌন্দর্য দেখে মোহিত হয়ে যদি আপনি ভাবেন এটাই সর্বোচ্চ, সেরা, তাহলে আপনি এখনও গোয়ার এই বুটিক হোটেলের সৌন্দর্যকে আপনি কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেননি। বিভিন্ন রকম কারুকার্যময় চিত্র দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এইখানকার প্রতিটি অংশকে, যা দেখলে হয়তো আপনি আরও আশ্চর্য হয়ে যাবেন।
অনামিবা
অঞ্জুনা বিচের বিলাসবহুল এই হোটেলটি গোয়ার বর্ণময় নৈশজীবন এবং বিখ্যাত ফ্লিয়া মার্কেটের একবারে নিকটেই গড়ে উঠেছে। অঞ্জুনা সৈকতের কাছে এই রিসোর্টটির মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা আপনাকে বারবার এখানে ফিরে আসতে বাধ্য করবেই।
অবস্থান
হাউস ২৫৯/২ এবং ১২৫৯/৩, সার্ভে নম্বর ৫০৯/১এ, গাওঁয়াদি, বাডেজ, ৪০৩৫০৯ অঞ্জুনা।
উপযৌক্তিকতা
দম্পতি বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য যদি আপনি একটু অন্যরকম জায়গার সন্ধান করেন, তাহলে বলব এটি আপনার জন্য একেবারে আদর্শ। এখানে আপনার পকেটের টাকা বাঁচিয়ে আরামদায়ক কিছুটা সময় কাটাতে পারবেন।
অনামিবা সম্বন্ধে কিছু কথা
অনামিবা শব্দের সংস্কৃত অর্থ হল ‘ঘর’ বা সুখে বসবাস করা। আর এই বৈদিক বা ভারতীয় চিন্তাভাবনা হোটেলটির সাজসজ্জার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। প্রাণীরূপী দেবতাকে পূজা করা হিন্দু ধর্মের অন্যতম একটি ঐতিহ্য, আর এই ঐতিহ্য মেনেই হোটেলের প্রবেশদ্বারে রয়েছে জোড়া হাতির মূর্তি, উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জলের মধ্যে ব্যাঙের মূর্তি এবং মাছ আকৃতির একটা কাঠামোর মধ্য থেকে ক্রমাগত জল এসে সিঁড়ির ধাপ দিয়ে একটি সুইমিংপুলে পড়ছে।এখানকার কাঁচের প্রবেশদ্বারের মধ্য দিয়ে প্রবেশের সময় এবং এই কাঠামোটি পেরিয়ে আপনি ঢুকতে পারবেন রেস্টুরেন্টে।
মোরাদাবাদ, রাজস্থান এবং গুজরাট-এর অনুকরনে জালি দেওয়া দেওয়ালের প্যাটার্ন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক পাথর এবং সৌখিন আসবাবপত্র দিয়ে এই হোটেলেটি সাজানো হয়েছে। এছাড়াও দালান এবং বাথরুমের কারুকার্য আপনাকে এক ইন্দো-সংস্কৃতি ধারার ইঙ্গিত দেবে। সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে এখানে রয়েছে তামার পাতে তৈরি কফি টেবিল এবং গোলাকার চায়ের বাক্সগুলো, যা আপনাকে এক অন্যরকম স্বাদ এনে দেবে।
এই অনামিবা শুধু একটি রিসোর্টই নয়। এটি একাধারে দিল্লির প্রসিদ্ধ চিত্র শিল্পী অনিতা লাম্বার মস্তিকপ্রসূত হয়ে একটি আর্ট-গ্যালারি হয়ে উঠেছে যেটি গোয়া মিউজিয়াম-এর সাথে যৌথ ভাবে এখানকার তরুণ প্রতিভাধর শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে থাকে।
এই হোটেলে স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য চিত্রের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হলো এখানকারপুল যেটি সাজিয়ে তোলা হয়েছে কিছু অসাধারণ কারুকার্য দিয়ে। হোটেলের ব্যবস্থাপনাও অসাধারণ এবং এখানে একটি ‘ইয়ানা’ নামক ওপেন-এয়ার ওয়েলনেস সেন্টার রয়েছে যেখানে আপনি ওয়েলনেস স্পা, থাই স্পা উপভোগ করতে পারেন।
ঘর
এই হোটেলে ২৩ টি জাঁকজমকপূর্ণ ঘর এবং পেন্টহাউস রয়েছে।
প্রতিটি ঘরের অভ্যন্তরে রয়েছে সৌখিন আসবাবপত্র এবং সুসজ্জিত বাথরুম। ঘরে রয়েছে কিং-সাইজ খাট এবং বসার জন্য একটি সুন্দর জায়গা। আপবিট স্যুইট-গুলোতে রয়েছে বসবার জন্য প্রশস্ত জায়গা এবং একটা বাথটব।
ঘন সবুজ অরণ্য এবং তার সঙ্গে দেওয়ালে অঙ্কিত অপূর্ব কারুকার্য প্রতিদিন আপনার সকালকে করে তুলবে অনন্য। হোটেলের প্রতিটি ঘরে টিভি, ওয়াই-ফাই, আলমারি, বিদ্যুৎচালিত কেটলি ইত্যাদি। বিভিন্ন রকম লাল ও ধূসর পাথরের কারুকার্য দ্বারা এখানকার ঘরগুলোকে বেস, প্রিমিয়াম এবং ডিলাক্স শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। সবশেষে বলব চারটি পেন্টহাউসের কথা, যেখানে আপনি অবসর সময় কাটাতে পারবেন সম্পূর্ণ নিজস্ব ছাদে।
খাবার
আপনার ক্ষুধা মেটানোর জন্য এখানকার দুটি রেস্টুরেন্টে খাবারের সু-বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রথমটি হল ‘পাও ক্যাফে’ যেটি গোয়ার অন্যতম স্টেপল ব্রেড-এর অনুকরণে নামাঙ্কিত, এবং অন্যটি হল ‘মোয়ো’।
এখানকার রিসেপশনটি ‘পাও ক্যাফে’-তে অবস্থিত হওয়ার কারণে আপনি চেক-ইন করার সময়েই নির্দ্বিধায় কফির স্বাদ নিতে পারেন।
বিঃদ্রঃ:- যদি আপনি অনামিবা হোটেলে নাও থাকেন, তবুও সেখানকার ‘পাও-ক্যাফে’র বিভিন্ন মুখরোচক স্ন্যাকস এবং মিনি মিলের স্বাদ আস্বাদন করতেই পারেন। অনেক পর্যটকদের মতে এখানকার বিখ্যাত কিছু খাবারের মধ্যে অন্যতম হল মাছ, চিপস আর প্যান-ফ্রাইড নুডুলস।
তিনটি স্তরের সুসজ্জিত ‘মোয়ো’ রেস্টুরেন্টটি আবার সুইমিং পুলের সামনে অবস্থিত। এখানে উল্লেখযোগ্য পদের মধ্যে গোয়ার নিজস্ব খাবার, উত্তর ভারতীয়, ইতালিয়ান এবং কন্টিনেন্টাল খাবার পরিবেশন করা হয়। সাথে সাথেই আপনি এখানকার ফাস্টফুড এবং ককটেলও চেখে দেখতে পারেন।
লক্ষণীয় বিষয়
১. অবস্থান
অঞ্জুনা সমুদ্র সৈকতথেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথে হোটেলে পৌঁছনো যায়। উত্তর গোয়াতে অবস্থিত অঞ্জুনা সৈকতে আপনি খুঁজে পাবেন বিভিন্ন রকম রোমাঞ্চকর ওয়াটারস্পোর্টসের সুলুক সন্ধান; সঙ্গে রয়েছে আপনার নৈশ পার্টি উপভোগ করার জন্য বহুল উপলব্ধতা এবং ফ্লিয়া মার্কেটের আকর্ষণ। এছাড়াও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা আছে যা আপনি সহজেই ভ্রমণ করতে পারবেন, যেমন-চাপোড়া ফোর্ট, আল-বুকের-উ ম্যানশন এবং মাসক্যারেনহাস ম্যানশন।
২. এখানকার প্রতিটি ঘরকে সাজানো হয়েছে সৌখিন আসবাবপত্র, কারুকার্যময় চিত্র এবং যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলোর পরিপূর্ণতার সমাবেশে।
৩. ঘরে থাকা বৃহদাকার চাকচিক্যপূর্ণ সাদা বাথটাবটি আপনার স্নানকে করে তুলবে আরও মোহময়ী।
৪. ওপেন এয়ার স্পা এবং মাইক্রোব্রেয়ারি খুব শীঘ্রই এখানে শুরু করা হবে।
৫. হাতে ঠান্ডা মার্গারিটার গ্লাস সহযোগে আপনি এখানকার সুইমিং পুলে বসে থাইল্যান্ড এবং বালির সুইমিং পুলে স্নান করার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
৬. আপনি যদি ফটো তুলতে ভালোবাসেন তাহলে এখানকার সজ্জিত লাইটগুলো আপনার ফটো এবং ইনস্টাগ্রামের জন্য অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে পারে।
খরচ:
৫০০০ টাকা থেকে শুরু।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, এখানে আপনি নির্ধারিত সময়ের আগে চেক-ইন (সকাল ৯:০০টা) এবং পরে চেক-আউট-এর (বিকেল ৪:০০টা) সুবিধা নিতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে হোটেলে আগে থেকে কথা বলে নিতে হবে।
ভ্রমণের আদর্শ সময়:
নভেম্বর থেকে মার্চ মাস ।
গুরুত্বপূর্ণ জায়গা:
• অঞ্জুনা বিচ: ২.৩ কিলোমিটার
• বাগা বিচ: ২.৭ কিলোমিটার
• ওজরান বিচ: ২.৭ কিলোমিটার
• থিভিম রেলওয়ে স্টেশন: ১৩.৫ কিলোমিটার
• ডাবোলিম এয়ারপোর্ট (নিকটতম বিমানবন্দর): ৪৯ কিলোমিটার