আপনি কি ভিন্ন স্বাদের আউটটিং এর কথা ভাবছেন? একঘেয়েমি কাটানোর জন্য কোনও সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে চাইলে চলে আসতে পারেন মহারাষ্ট্রে । এখানে এমন অনেকগুলো সমুদ্র সৈকত আছে, যেগুলো এখনও পর্যটকদের নজরবন্দি হতে পারেনি । আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন তাহলে এই খোলামেলা পরিবেশে শুধুমাত্র সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ আপনাকে মুগ্ধ করবেই ।
১. সিন্ধুদুর্গ :
মহারাষ্ট্রের একান্ত গোপনীয় সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে প্রথমেই যে নামটি অজান্তেই উঁকি দেয় সেটি হলো সিন্ধুদুর্গ। এই বিচটি কোঙ্কণ উপকূলের প্রসিদ্ধ তারকার্লি বিচের খুব কাছেই অবস্থিত ।এই সৈকতে আপনি তেমন ভাবে পর্যটকদের দেখা না পেলেও, প্রকৃতির স্নিগ্ধতাকে প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্র তটে পাখিদের কোলাহল, মাঝিদের ব্যাস্ততা, দুপুরের রোদে জলরাশির চাকচিক্য, ঢেউয়ের যাতায়াত এই সমস্ত কোলাজ করা ছবি একটি ফ্রেমে আবদ্ধ করার জন্য সিন্ধুদুর্গে আপনার জন্য রইল সাদর আমন্ত্রণ ।
ভারতের উপকূলীয় রাজ্যে মহারাষ্ট্রের আরেকটি সৌন্দর্যময় সমুদ্র সৈকতটি হল ভগয়ে। এই সৈকতটি পড়ুল শহরের নিকটে অবস্থিত। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, এটি মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন এবং নির্জন সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত। চারিদিকে ছোট ছোট পাথরে পরিপূর্ণ এই বিচ থেকে একটু দূরে অবস্থিত ফোর্টের দৃশ্যটি দেখতে বেশ মনোরম লাগে। সমুদ্রের পরিছন্ন সফেদ নোনা জলের উন্মত্ততা, দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির ওপার থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তকে একান্তে উপভোগ করার প্ল্যানটা বেশ রোমাঞ্চকর। তবে এই সমুদ্রসৈকতটি তারকার্লি বা গোয়ার নিকটে অবস্থিত হলেও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। আর তাই এই জায়গাটি আপনি অনায়াসেই পারফেক্ট রোমান্টিক ডেস্টিনেশনের খেতাব দিয়ে সমৃদ্ধ করতেই পারেন।
অঞ্চলটির বিশেষত্ব কী?
সিন্ধুদুর্গ এবং ভগয়ে এই দুটি সমুদ্রসৈকত মহারাষ্ট্রের সিন্ধুদুর্গ জেলায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটির বিশেষত্ব হল কার্লি নদী ও আরব সাগরের মিলন। তবে এই মিলনক্ষেত্রের অসাধারণ পরিবেশের মূল আকর্ষণ হল ডলফিন দর্শন । দেববাগের মোবারা পয়েন্টে সমুদ্রের জলে ডলফিনের খেলা দেখার জন্য এখানে প্রচুর অতিথির সমাগম হয়।
কী কী করবেন?
মহারাষ্ট্রের এই সৈকতগুলোর উদ্দেশ্যে ভ্রমণে এসে আপনি ভগয়ে সৈকতের নিকটস্থ নিভাতি ফোর্ট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ভেঙ্গুরলা তালুকায় অবস্থিত কোচারা পাহাড়ের শৃঙ্গে অবস্থিত এই ফোর্টটি। এই ফোর্টটির কিন্তু একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। একসময় এই ফোর্টটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনস্থ ছিল, কিন্তু ১৮ শতকে কোনও ব্রিটিশ অফিসার এই ফোর্টটিকে দখল করেন । তবে এই ফোর্টটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র পরিবেষ্টিত অঞ্চলটির দৃশ্যটা কিন্তু এক্কেবারে অন্যরকম।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও যদি আপনি জলজ জীবনকে উপভোগ করতে চান তাহলে নিয়াতি, দেববাগ, খাবানে সৈকতে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। এই সৈকতগুলো মূলত ডলফিন দর্শনের জন্য বিখ্যাত। দর্শকদের অভিবাদন জানানোর জন্য এখানকার ডলফিনরাও সবসময় প্রস্তুত থাকে। আর তাই সিন্ধুদুর্গ বন দপ্তরের তরফ থেকে দর্শকদের জন্য ডলফিনদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভগয়ে সমুদ্র সৈকতটিকে সমুদ্রপ্রেমী মানুষের কাছে স্বর্গ বললে কোনও ভুল হবে না। এখান থেকে মিনিট কয়েক দূরত্বে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত তারকার্লি, মালভান, কুডাল পরিদর্শন করে আসতে পারেন। আর হ্যাঁ ভ্রমণকালীন সময়ে এখানে উৎপাদিত খাদ্য যেমন নারকেল, কাজু; আবার গ্রীষ্মের সময় গেলে আম কিংবা কোনও তাজা ফলের স্বাদ আহরণ করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
বাসস্থান:
ভ্রমণকালীন বাসস্থান হিসেবে ভগয়ে -এর কোনও হোমস্টে বা ইকোস্টে রিসোর্টগুলোকে বেছে নিতে পারেন । এখানকার ইকোস্টে রিসোর্টগুলো মূলত বাঁশ বা বেত দ্বারা নির্মিত। সমুদ্রতীরে চারিদিকে সবুজ গাছ পালার পরিমণ্ডলে এই থাকার জায়গাগুলো বছরের অন্যান্য সময় ছাড়াও গ্রীষ্মেও যথেষ্ট মনোরম এবং আরামদায়ক। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ হোমস্টেগুলো স্থানীয় কোনও পরিবার দ্বারা পরিচালিত। তাই নিশ্চিন্তে হোমস্টে গুলোতে রাত্রিবাস করে ভ্রমণের দিনগুলো মধুময় করে তুলতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
বিমানে - মহারাষ্ট্রের এই অফবিট সৈকতে ভ্রমণ করতে চাইলে পৌঁছে যেতে পারেন এই অঞ্চলের নিকটস্থ বিমানবন্দর সিন্ধুদুর্গতে ।এই নব্য বিমানবন্দর থেকে একটা ছোট গাড়ি নিয়ে মাত্র ৫ কিমি দূরত্বে পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে । এছাড়াও, ভারতের যে কোনও শহর থেকে পৌঁছে যেতে পারেন গোয়ার ডাবোলিম বিমানবন্দর, সেখান থেকে ১২২ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান ভগয়ে ।
ট্রেনে - ভগয়ে পৌঁছানোর নিকটতম রেল স্টেশন গুলি হলো - কুডাল (২২ কিমি ), সিন্ধুদুর্গ (৫ কিমি ), এবং কঙ্কাভলী ( ৫৫ কিমি )। ভারতের যে কোনও ছোট বড় শহর থেকে উপরিউক্ত যেকোনো একটি স্টেশন নেমে পড়ুন । স্টেশন থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে পৌঁছে যান গন্তব্যে।
সড়কপথে - আপনি যদি সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছতে চান তাহলে গোয়া স্টেট হাইওয়ে অনুসরণ করে কুডাল (দূরত্ব ২২ কিমি ), কিংবা কঙ্কাভলী ( দূরত্ব ৫৫কিমি ) পথ ধরে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন ভগয়ে। তাছাড়া, মুম্বই, পুণে, সাঁতারা, গোয়া এবং কাছাকাছি যে কোনও স্থান থেকে রাজ্য পরিবহণ সমিতি দ্বারা পরিচালিত বাসের সাহায্যেও পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে ।