যে কোনও যাত্রার মধ্যে ট্রেন যাত্রাটি একেবারে অন্য রকম ভ্রমণের স্বাদ এনে দেয়। আর এই ট্রেন যাত্রার সঙ্গে আপনি প্রকৃতির অসাধারণ রূপটিকে অনায়াসেই উপভোগ করতে পারেন। ট্রেন যাত্রার একটা সুবিধা হল, ট্রেনের সাহায্যে দেশের যে কোনও ছোট বড় শহর অথবা গ্রাম এমনকি দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোতেও পৌঁছনো যায়। আর তাই ট্রেনের আরামদায়ক যাত্রার সঙ্গে প্রকৃতির অজানা রূপকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগটা কখনওই মিস করবেন না। এই ব্লগে সমস্ত ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য রইল ট্রেন সফরকালীন কয়েকটি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যপটের সুলুক সন্ধান।
১. গোয়া এক্সপ্রেসে বসে সফেদ সুন্দর দুধসাগর জলপ্রপাত দর্শন:
গোয়ার প্রধান রেল স্টেশন ভাস্কো-দা-গামা পৌঁছনোর ঠিক আগের মুহূর্তে বানজারা ঘাট অঞ্চলের কাছে প্রবহমান দুধসাগর জলপ্রপাতের দর্শন পেয়ে যাবেন। গোয়ায় অবস্থিত জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে এই জলপ্রপাতটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। আর ট্রেনে বসে এই জলপ্রপাতটির সৌন্দর্য উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে এই অসাধারণ দৃশ্যটিকে ক্যামেরাবন্দি করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না কিন্তু।
২. পাহাড়ের বুকে পাইনের ঘন জঙ্গলকে উপভোগ করতে কালকা- শিমলা ট্রেন যাত্রা টি বেছে নিতে পারেন:
কালকা-শিমলার রেল লাইনে মোট ১০৩টি টানেল রয়েছে। পাহাড় পরিবেষ্ঠিত বিংশ শতাব্দীর এই রেল লাইনটি মূলত ব্রিটিশ শাসনকালে নির্মিত এবং তৎকালীন যুগে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলটিকে বেছে নিয়েছিলেন। বর্তমানে কালকা- শিমলা রেল লাইনটি 'হেরিটেজ প্রপার্টির ' অন্তর্গত। শিমলা থেকে ধরমপুর এবং সোলান ভ্যালি অতিক্রম করে প্রায় ১০০ কিমি দীর্ঘ এই যাত্রায় আপনার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে পাহাড়, পাইন অরণ্য, আর রয়েছে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো মনোরম দৃশ্যপট। শিমলা ভ্রমণে গিয়ে এই ট্রেন যাত্রাটির স্বাদ অবশ্যই একবার ট্রাই করে দেখবেন।
৩. ভগবানের নিজের দেশের সৌন্দর্য দু'চোখ ভরে অনুভব করতে চাইলে কেরলের এই রেল যাত্রাটি বেছে নিতে পারেন:
এর্ণাকুলাম থেকে ত্রিবান্দম ভায়া কোল্লামের ট্রেন সফরকালীন দৃশ্যপটের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রের উন্মাদনা, প্রকৃতির রূপরেখার এবং এর সঙ্গে আপনার জন্য অপেক্ষামান রয়েছে উপকূলীয় জীবনযাত্রার কোমল পরশ। প্রায় ২৫০ কিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তীর্ণ এই রেললাইনটি। এছাড়াও, ট্রেনে বসেই আপনি দেখা পেয়ে যাবেন সমুদ্রতীরে জন্মানো অসংখ্য খেজুর ও নারকেল গাছ, আর সঙ্গে সঙ্গে কেরলের গ্রাম্য জীবনযাত্রাকেও খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
৪. তুষারাবৃত স্বর্গীয় পরিবেশ ভ্রমণ করতে চাইলে কাশ্মীরের রেলযাত্রার স্বাদ নিতে পারেন:
প্রকৃতির অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পাটনি এবং পীরপিঞ্জল রেঞ্জের রেল যাত্রাটিকে বেছে নিতে পারেন। শ্রীনগর থেকে বারামুল্লা যাওয়ার পথে আপনিও স্বর্গীয় পরিবেশের সাক্ষী থাকতে পারেন। ট্রেনের জানলা থেকে পাহাড় পরিবেষ্টিত গতিপথ বেয়ে পাথরের ব্রিজের উপর ট্রেনের জার্নিটা বেশ রোমাঞ্চকর।
৫. গভীর সমুদ্রে ট্রেন যাত্রার স্বাদ নিতে মণ্ডপাম-পাম্বান-রামেশ্বরম রেল ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারেন:
দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের অগণিত জলরাশির সঙ্গে নীল আকাশের মিলন দেখেছেন কখনও? ঠিক এই ধরণের প্রাকৃতিক রূপ পরিদর্শন করতে চাইলে পাল্ক-স্ট্রেট পরিবেষ্টিত পাম্বান রেল ব্রিজের উপর এই ট্রেন যাত্রাটি উপভোগ করতে পারেন। আর এই যাত্রা অবলম্বন করে আপনি দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। রামেশ্বরম মন্দির ভ্রমণ করার জন্য পর্যটকরা এই রেলপথটি বেছে নেন, আর বলাই বাহুল্য যে এই যাত্রাটি বেশ মনোরম এবং আদৰ্শও। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এটি ভারতের সর্ববৃহৎ মন্দির প্রাঙ্গণ হিসেবে পরিচিত।
৬.ওড়িয়া সংস্কৃতির সাক্ষী থাকতে কোরাপুট থেকে রায়াগাদার যাত্রার অংশীদার হতে পারেন:
কোরাপুট - রায়গাদা অঞ্চলে অবস্থিত রেল লাইনটিও ভারতের ট্রেন ভ্রমণকালীন যাত্রাপথের অসাধারণ দৃশ্যপটের একটি অনন্য নিদর্শন। এই সফরে আপনি সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যাবেন পূর্বঘাট পর্বতমালা ও তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এই রেলপথটিও অনেকগুলো টানেলর সমাহারে গঠিত; আর টানেলগুলো অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি দর্শন পাবেন দেওমালি পাহাড়, চুনাপাথরের গুহা ইত্যাদির। আপনি যদি হীরাখণ্ড এক্সপ্রেসের সাহায্যে যাত্রা করেন তাহলে ঘন সবুজের পাহাড় ও দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশির মিলিয়ে আপনার যাত্রাটি অবিস্মরণীয় হতে চলেছে।
৭. শৈশবের দার্জিলিং-এ ফিরে যেতে চাইলে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলপথকে বেছে নিতে পারেন:
পাহাড় ও মেঘের বুকে হারিয়ে যেতে চাইলে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং-এর ট্রেন সফরটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। এই রেলপথটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত; আর এই আনন্দঘন ট্রেন যাত্রার সমাপ্তি হয় ভারতের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন ঘুমে | এই স্টেশন থেকেই আপনি তুষারশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গের দেখা পেয়ে যাবেন। তাছাড়াও দার্জিলিং-এর বাতাসিয়া লুপ থেকেও আপনি হিমালয়ের মোহনীয় এবং আকর্ষণীয় রূপটি পরিদর্শন করতে পারেন |
৮. দিগন্ত বিস্তীর্ণ সবুজে ঘেরা বাগান ও শান্ত লেকের অজানা কাহিনি জানতে চাইলে মেট্টুপলয়াম-কোন্নুর-উটি রেলপথকে বেছে নিতে পারেন:
২৫০ টি ব্রিজ ও ১৬টি টানেলের পরিমণ্ডলে মেট্টুপলয়াম - কোন্নুর - উটি এই দক্ষিণ ভারতীয় শৈল শহরে রেল ভ্রমণের প্ল্যানটাও বেশ এক্সসাইটিং হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই যাত্রাটিতে হিলগ্রভ, ওয়েলিংটন, কিতি, লাভেডেল প্রভৃতি দর্শনীয় স্টেশনের সন্ধান পাবেন এবং স্টেশন গুলির সৌন্দর্য প্রতীয়মান করার পর আপনি আপ্লুত হতে বাধ্য। এই পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে প্রাণভরে উপভোগ করার জন্যই এখানকার ট্রেনগুলি ঘণ্টায় মাত্র ১২কিমি গতিবেগে চলে। প্রকৃতির রূপসজ্জাকে স্মৃতি হিসেবে বন্দি করার জন্য এখানে পর্যটকদের যথেষ্ট সুযোগ প্রদান করা হয়।
ট্রেন সফরকালে এই সমস্ত আনন্দঘন মুহূর্তের একনিষ্ঠ সাক্ষী থাকতে আজ থেকেই পরিকল্পনা করে ফেলুন আর প্রাকৃতিক স্থাপত্যগুলো দৃষ্টিগোচর করে আসুন।