প্রথমেই বলে রাখি স্বাদের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের অনুভূতি কিন্তু এক একরকমের হয়। তাই যদি কারওর কোনও তর্ক করার প্রয়োজন হয়, তাঁকে অবশ্যই স্বাগত জানালাম।
যে কোনও আচার বা পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানের শেষপাতে মিষ্টি না হলে ভারতীয়দের একেবারেই চলে না। মুখ মিষ্টি করার আচার-অনুষ্ঠান শুধু পারিবারিক অনুষ্ঠানে নয়; কোনও জন্মদিনে, বিয়েতে, বিভিন্ন পূজা-পার্বণে এমনকি নতুন সুখবরের বার্তা দিলেও আমরা সব সময় করে থাকি। তাই প্রত্যেকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তাদের তৈরি নিজস্ব কিছু মিষ্টির বৈশিষ্ট রয়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আমি সেখানকার ভিন্ন ধরনের মিষ্টি স্বাদ নিয়ে বুঝেছি কোনওটা খুব ভাল আবার কোনওটা মোটামুটি। তাই এবার আমি সেই মিষ্টিগুলোর সঙ্গেই আপনাদের আলাপ করাব।
এই মিষ্টিটি তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি মণ্ড প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে চিনি মিশ্রণ করা হয় এবং তারপর সেটি ভাজা হয়। শীতপ্রধান রাজ্যগুলোর অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি পরিবেশনের প্রবণতা দেখা যায়। জন্মদিন এবং বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানেই এই মিষ্টি বেশি প্রচলিত।
বলের মতো আকারের দেখতে এই মিষ্টি বানানো হয় ডাল জাজ্ঞেরি এবং অড়হর ডাল দিয়ে। তারপরে ভাজা হয়। সেইজন্যই এটির কিছু জায়গা খুব নরম হয় আবার কিছু কিছু জায়গা খুবই শক্ত হয়। তাই এটি আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি। তবে অনেকের মতো আমিও মিষ্টিটির নাম না শুনলেও, কোন এক বৃষ্টির দিনে এটি খাওয়ার আনন্দ উপভোগ করেছিলাম।
নেপালের অনুকরণে সৃষ্ট এই মিষ্টিটি তৈরি করা হয় ভিন্ন স্বাদে ভরা এলাচ, লবঙ্গ, কলা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে। আমার কাছে এটা খুব মন মতো লাগেনি।
ভগবান গণেশের জন্য তৈরি করা নারকেলের লাড্ডু কিন্তু খুব জনপ্রিয়। তবে মিষ্টি হিসেবে এটা খুব একটা অবহেলিত নয়।
খুবই ফ্যাটবহুল (যদিও জানি ভারতীয় মিষ্টি বেশিরভাগই ফ্যাটবহুল হয়, তবে এটি একটু বেশি); ঠেকুয়া তৈরি হয় বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে এবং তারপর সেটি পরিবেশন করা হয়।
সব জায়গায় মিষ্টির খোঁজ থাকলেও আমরা সবসময় কোনও বিয়ে বাড়ি বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে খোঁজ করি; যেখানে এই মিষ্টিটি একবারে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। মুগ ডালের হালুয়ার বিকল্প হিসাবে রাবড়ি লস্যি বিভিন্ন রকমের মিষ্টি খুঁজে পাওয়া যায়।
চায়ের সঙ্গে খাওয়ার জন্য সে রকম ভাবে কোনও মিষ্টি আমি কেরল এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে খুঁজে পাইনি। যদিও এটাও বেশ সুন্দর।
অনেকেই এটার বিরোধীতা করতে পারেন যে এই মিষ্টিগুলো ত্রিপুরা বা নাগাল্যান্ড থেকে আসেনি। তবে আমি প্রাক্তন রাজ্যগুলোতে ঘুরে বেশ কিছু ভাল মিষ্টির সন্ধান পাই; যেগুলোর কথা আমি পরে আলোচনা করব। কোয়াট পিঠা কলা দিয়ে তৈরি হয়, তাই এর স্বাদটিও আমার কাছে খুব চটচটে লেগেছে।
বেশ অনেকদিন পর হায়দ্রাবাদের এক বিয়েবাড়িতে আমি গোলাপ জামুনের মতো দেখতে এই মিষ্টিটির সন্ধান পাই; যা দেখে আমি বেশ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।
উড়িষ্যার রান্নাঘর থেকে উঠে আসা ভারতীয় মিষ্টির মধ্যে অন্যতম এই মিষ্টি প্রধানত কোনও অনুষ্ঠানে জন্যই তৈরি করা হয়। ছানা পোড়া তৈরি হয় শুকনো ছানা দিয়ে ।
এই মিষ্টিটি চায়ের সঙ্গে খাবার জন্য মিজোরামে খুবই প্রসিদ্ধ। কাউন্গলঙ বা ফাজু চালের গুঁড়ো পাতার মধ্যে সেদ্ধ করে তার পুডিং দিয়ে তৈরি করা হয় লে কুর্তায়।
জিলিপি আর মালপোয়ার সাথে কিছুটা মিল থাকলেও দেহারোরি কিন্তু নিজস্ব গৌরবে জাজ্বল্যমান। তবে এর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণে এলাচ আমার তেমন একটা পছন্দ নয়।
বেবিনকা প্রস্তুত করা হয় সাতটি স্তরে। তার মধ্যে থাকে বাটার চিনি ডিমের কুসুম এবং নারকেলের দুধ।
অরুণাচল প্রদেশের খাপসে হল একরকম ভাজা পেস্ট্রি। তবে এর মিষ্টত্ব একটু কম হওয়া উচিত।
উত্তরে মিষ্টিগুলো তৈরির প্রধান দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় দুধ। তাই এখানে গিয়ে খুঁজে পেলাম ভুট্টার ক্ষীর। তবে মধ্যপ্রদেশের ভুট্টার ক্ষীর হল অন্যতম একটি মিষ্টি।
আয়ান বাঙ্গি তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য। সারারাত চাল জলে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং পরদিন বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদা এবং বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস মিশিয়ে এই মিষ্টি তৈরি করা হয়।
সম্ভবত এমন কোনও ভারতীয় মিষ্টি নেই যা আপনি রাজস্থানে গিয়ে খুঁজে পাবেন না। তবে সবকিছুর মধ্যে মালাই ঘেওর এখানকার অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টি, যা তৈরি হয় ময়দা খোয়া ক্ষীর এবং মালাই দিয়ে।
তবে এবার পরিচয় করাব বেসনের তৈরি মিষ্টির সঙ্গে, যা প্রধানত পরিবেশন করা হয় দুধের সঙ্গে আর এর স্বাদ বাকি সমস্ত মিষ্টিগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
এটা দেখে কি মনে হয় কোন পান, বা কোনো কুলফি? কোনটাই নয়। এটা সিঙ্গধী। আপনি উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা হয়েও এখনও অবধি যদি এই মিষ্টিটির নাম না শুনে থাকেন, তবে আমার সেটা বেশ আশ্চর্যজনক লাগবে। কারণ এখানকার প্রসিদ্ধ মিষ্টিগুলোর মধ্যে কুমায়ন অঞ্চলে এই মিষ্টির অন্যতম।
কেশর আমন্ড পিস্তা বাদাম দিয়ে তৈরি ভাজা এই পরিবেশন করা হয় মূলত দুধের সঙ্গে।
মিষ্টির কথা হচ্ছে আর লাড্ডু তার তালিকায় থাকবে না এমন কি হতে পারে? অসমের ঐতিহ্যবাহী এই নারকেলের লাড্ডু খুব সহজে তৈরি হলেও এবং খেতেও কিন্তু সুস্বাদু।
সবথেকে বেশি বিক্রিত ১০টি মিষ্টির তালিকার মধ্যে অন্যতম হল হরিয়ানার চুড়মা; যা তৈরি হয় দেশি ঘি এবং গমের আটা দিয়ে। এর সাথেই সমানভাবে জনপ্রিয় রাজস্থানের ডাল বাটি।
বিদেশে রপ্তানি করা মিষ্টিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মাইসোর পাক, যা তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণে ঘি, চিনি, এলাচ, ছোলার আটা দিয়ে।
মেঘালয়ের অন্যতম মিষ্টিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। দেখতে অনেকটা মালপোয়ার মতো।
পুখলেইন-এর সঙ্গে খুব একটা বেশি পার্থক্য না পেলেও মালপোয়া ভারতবর্ষের একটি অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টি, যা খুব সম্ভবত পাশ্চাত্য দেশগুলোতেও প্রাতঃরাশে প্যানকেকের মতো পরিবেশন করা হয়।
গুজরাটিরা ক্ষীর তৈরি করতে সিদ্ধহস্ত। বাসুন্দি তৈরি করা হয় প্রধানত দুধের সঙ্গে বিভিন্ন বাদাম এলাচ এবং ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে।
ময়দা দিয়ে তৈরি ঘিয়ে ভাজা এবং চিনির ঘন রসে ডোবানো এই বালুশাহি মিষ্টি প্রথম বিহারে তৈরি হলেও জনপ্রিয় হয় কিন্তু উত্তরপ্রদেশের হাত ধরে।
কাশ্মীরে তৈরি সুফটা অন্যান্য মিষ্টির থেকে একটু আলাদা। কারণ এর মধ্যে মিষ্টত্ব ভাবটা অনেকটা কম থাকে আর এটি পরিবেশন করা হয় চিনির রসে ভেজানো শুকনো ফল দিয়ে।
দুধ আর ক্রিম দিয়ে তৈরি কুলফি কিন্তু সবার মনে এক অন্য জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলার মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লা থাকা সত্ত্বেও আমি মিষ্টি দই কে নির্বাচন করেছি।
জিলিপির রাজা অমৃতসরি জিলিপির স্বাদ যদি আপনি এখনও না গ্রহণ করে থাকেন,তাহলে বলব মিষ্টি খাওয়া আপনার কাছে এখনও অসম্পূর্ণ।