সিকিম চিরকালই স্বপ্নের ডেস্টিনেশন। অসাধারণ ভূমিরূপ, অসম্ভব ভাল মানুষজন আর মন মাতানো প্রাকৃতিক দৃশ্যের কারণে যেন সিকিম বরাবর আমাকে কাছে ডেকেছে। সিকিমের চারদিকে চিন, নেপাল এবং ভুটানের আন্তর্জাতিক সীমানা। এরফলে সিকিমের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছনো একটু খরচসাপেক্ষ এবং দুর্গম হতে পারে, কিন্তু গেলে একেবারেই হতাশ হবেন না আপনি।
পূর্ব সিকিমের জুলুক একটি বেশ অফবিট জায়গা, এই গ্রামের জনসংখ্যা কয়েকশোর আশেপাশে। কিন্তু এই স্বল্পসংখ্যক মানুষের আতিথেয়তা এবং আন্তরিকতা আপনাকে প্রতিপদে মুগ্ধ করবে এবং আপনার যাত্রা সার্থক করে তুলবে।
কীভাবে পৌঁছবেন
পর্যটকরা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট বা নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে সরাসরি ৭-৮ ঘণ্টার রোড ট্রিপের মাধ্যমে জুলুক পৌঁছতে পারেন। কিন্তু আমাদের ছুটিটা একটু অন্যরকম হওয়ায় আমরা প্রথমে গ্যাংটক পৌঁছে, সেখান থেকে জুলুক যাওয়া স্থির করি। কিন্তু তাতে আখেরে ভালই হয়েছিল। গ্যাংটক থেকে জুলুকের দুরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার এবং মাঝে কতবার স্টপ দিচ্ছেন সেটা ধরে মোটামুটি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার গোটা রাস্তাটা পৌঁছে যাওয়া যায়।
পারমিট
জুলুক যেতে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের থেকে পারমিট করাতে হয়। হোটেল থেকে বা ট্যুর অপেরারেটররাই এই পারমিট আপনার হয়ে করিয়ে দিতে পারে। আমাদের ট্যুর অপেরারেটর পরদিন সকালে আমাদের প্রয়োজনীয় পারমিট দিয়ে দেন। যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যেতে চান, তাহলে পারমিটের জন্যে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
গ্যাংটক থেকে আমাদের প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল। শেয়ার ট্যাক্সি, বাস বা কোনও সরকারি সার্ভিস এখানে নেই। ভাড়া মোটামুটি ৬০০০ থেকে ৮০০০ টাকা কিন্তু ফাইনাল ভাড়া আপনার দরদাম করার ক্ষমতা এবং হাতে কতটা সময় আছে তার ওপর নির্ভর করবে। যদিও ব্যাপারটা একটু দামি, তাও এটাই সবথেকে ভাল উপায় বলেই মনে হয়। আমরা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন জায়গায় চারিদিকের মনোরম দৃশ্য দেখার জন্যে গাড়ি থামিয়েছিলাম বহুবার, যা শেয়ার ট্যাক্সিতে সম্ভব হত না।
কোথায় থাকবেন
জনপ্রতি ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার মধ্যে জুলুকে প্রচুর হোমস্টে আছে। আর তাতে তিন বেলার খাবারও ধরা থাকে। অনলাইনে এয়ার বি.এন.বি ছাড়া এগুলো বুক করার কোনও উপায় পাইনি এবং অন সিজনে গেলে আগে থেকে বুক করে যাওয়াই ভাল। অফ সিজন হওয়ায় আমরা জনপ্রতি ৮০০টাকা করে দুজনে ঘর পেয়ে গেছিলাম, বুকিং না থাকা সত্ত্বেও।
আমার মনে হয় আপনার ট্রিপ প্ল্যান করার জন্যে যা যা তথ্য দরকার, তা সব বলে দিয়েছি। এবার আপনি শুধু ছবিগুলো দেখুন।
আমি খুব একটা বেশি ঘোরাঘুরি করি না, কিন্তু এটুকু বলতে পারি এটা আমার পর্যটক জীবনের শ্রেষ্ঠ রোড ট্রিপ। এই যাত্রাপথে কাটানো ৬ ঘণ্টা বোধহয় আমার এই পৃথিবীতে কাটানো সেরা ৬ ঘণ্টা। প্রতি বাঁকে বাঁকে এমন অসাধারণ দিগন্তবিস্তৃত নতুন নতুন প্রাকৃতিক রূপ আমি দেখেছি, যা আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি নিশ্চিত, দিল্লির দৈনন্দিন জীবনের চাপে, আমার মন শান্তির খোঁজে বার বার ইস্ট সিকিমের এই পথে ফিরে আসবে।
একবার এই রোড ট্রিপটা করে আসুন, একটুও পস্তাবেন না।
টাটা।