থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় দ্বীপপুঞ্জগুলোর মধ্যে ফুকেট শীর্ষ স্থানাধিকারী | আর থাইল্যান্ডের সর্বাধিক আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতগুলো এই ফুকেটেই অবস্থিত | সমুদ্রের উদ্দামতা এবং সমুদ্রতটে নাম না জানা পাখিদের বিচরণ, রেনফরেষ্টের নিস্তব্ধতাকে প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে আসতেই হবে কিমালাতে | আপনি যদি প্রকৃতির এই অসামান্য লীলা খেলার সঙ্গে অত্যাধুনিকতার মোড়কে পরিপূর্ণ রিসর্টে আপনার জীবনের বিশেষ দিনটি কাটাতে চান তাহলে কীমালা এক্কেবারে আদর্শ বলতেই হবে |
কাদের জন্য উপযুক্ত:
এই রিসর্টটি রেনফরেস্টের একেবারে গভীরে অবস্থিত | প্রকৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে রিসর্টটির মধ্যে একটা স্বর্গীয় অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির কোমল ছোঁয়া রয়েছে; আর পর্যটকরা সেই অনুভূতিটি খুব সহজেই অনুভব করতে পারবেন | একটা রোমান্টিক গেটওয়ে অথবা মধুচন্দ্রিমার জন্য এই স্থানটি উপযুক্ত, এই রিসোর্টটি লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে, তাই যে কোনও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ জীবনের বিশেষ দিনটিতে প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে অনায়াসেই পৌঁছে যেতে পারেন কিমালা |
কিমালা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য:
এই রিসর্টটি আদ্যোপান্ত সবুজে ঘেরা, বিশাল বড় বড় গাছ দ্বারা পরিবেষ্ঠিত ঘন অরণ্যের অদূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত | প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে মাথায় রেখেই যেন রিসর্টের বাইরেটুকুকে সাজানো হয়েছে | থাই সংস্কৃতি ও আধুনিকতার মিশেলে পরিমণ্ডলে সজ্জিত এই নিদর্শনটি যে কোনও পর্যটককেই আকর্ষণ করে | থাই উপজাতির জীবন দর্শনকে কেন্দ্র করেই মূলত এই ৭-তারা রিসোর্টটি নির্মাণ করা হয়েছে | রিসর্টের প্রত্যেকটি ভিলাতে প্রাইভেট পুলের ব্যবস্থা আছে | এছাড়াও, শরীর এবং মনকে চনমনে করে তুলতে এখানকার স্পা সার্ভিসটিও পরখ করে দেখতে পারেন |
ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য রিসর্টে যোগা ও এক্সারসাইজের সমস্ত উপকরণ উপলব্ধ রয়েছে |
থাই উপজাতির আবাসগুলো আদলে নির্মিত কিমালা রিসর্টের প্রতিটি ভিলা | এখানে মোট ৪টি ভিন্ন ধরণের থাই গোষ্ঠীর আবাসস্থলের সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায় |
ক্লে-পুল কটেজ:
এই কটেজটি মূলত পা-টা-পি উপজাতি নির্মিত গৃহগুলোর থিমকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়েছে | কটেজ অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রেও এই প্রাচীন উপজাতির শিল্পকার্য ও গভীর অরণ্যের প্রাকৃতিকতার কোমল ছোঁয়া চোখে পড়ে | এই কটেজেও পর্যটকদের জন্য নিজস্ব জলাশয় আর বর্ষার বৃষ্টিতে ভেজার স্বাদ উপভোগ করার জন্য শাওয়ারেরও ব্যবস্থা আছে |
টেন্ট-পুল ভিলা:
যাযাবর এর জীবনযাত্রা কে প্রত্যক্ষভাবে উপভোগ করতে টেন্ট পুল ভিলাটি বেছে নিতে পারেন | এই ভিলাটি খন জন গোষ্ঠীর ধারণা থেকে উদ্ভুত | নিজস্ব জলধারা দ্বারা সংযুক্ত এই ভিলাটি থেকে একদিকে যেমন শান্ত ও নিস্তব্ধতায় আবদ্ধ রেনফরেস্টটিকে উপভোগ করা যায়, ঠিক তেমন ভাবেই সমুদ্রের ঢেউ-এর উন্মাদনাকেও সরাসরি প্রত্যক্ষ করা যায় |
ট্রি-পুল হাউস:
দু-তলা বিশিষ্ট এই বাড়িটি থাই উপজাতি উই-হা-এর স্থাপত্য কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে | বাড়ির উপরের তলায় রয়েছে বিশালকার সজ্জা বিশিষ্ট শয়নকক্ষ; আর এই শয়নকক্ষটির ঠিক বাইরে রয়েছে একটি জলাশয় | এই জলাশয়কে কেন্দ্র করে বসার জন্য প্রশস্ত জায়গাও রয়েছে | বাইরে থেকে এই ট্রি-পুল হাউস এর দৃশ্যটা ছবির মতোই সুন্দর |
বার্ডস-নেস্ট পুল ভিলা:
এই ভিলাটি থাই উপজাতি রাঙ্গ-নক-এর থিমকে উপজীব্য করে নির্মাণ করা হয়েছে | ভিলাটির অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে যেমন আদিম উপজাতির শিল্পশৈলীর পরশ পাওয়া যায়, তেমনই বাহ্যিকসজ্জাটি পাখিদের গৃহের আভরণের মোড়কে সাজিয়ে তোলা হয়েছে | এই ভিলাটি থেকে অরণ্যের নিস্তব্ধতা, সমুদ্রের উন্মাদনার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের রুক্ষ্মতাকেও অনুভব করতে পারবেন | আলোছায়া মাখা দিনে গভীর অরণ্যে নিস্তব্ধতায় মধ্যে হঠাৎ করে অনেক পাখির কলকাকলি শুনতে চাইলে অথবা অন্ধকার রাতে জোনাকির আলোয় অভিভূত হতে চাইলে এবং অরণ্যের শোভা দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে কিমালা |
খরচ:
প্রাতঃরাশ সহযোগে এই ভিলাটিতে রাত্রিবাসের খরচ ৪০,০০০ টাকা থেকে শুরু |
আহার:
কিমালা রিসর্টটি বিশেষত মালা ও চা-লা এই দুইটি রেস্তোরাঁর জন্য প্রসিদ্ধ | চা-লা রেস্তোরাঁটি মূলত জলাশয়ের তীরবর্তী একটি বার | এখানে বিভিন্ন ধরণের স্ন্যাক্স, ককটেল ও অন্যান্য পানীয় উপলব্ধ রয়েছে | বিশ্বের সমস্ত সুস্বাদু ও চমকপ্রদ খাদ্যের স্বাদ আহরণ করতে বেছে নিতে পারেন মালা রেস্তোরাঁটিকে | এখানকার রন্ধন শিল্পীদের হাতের তৈরি প্রত্যেকটি খাবারের স্বাদ জাস্ট অসাধারণ | প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি কিমালা এসে প্রসিদ্ধ সিলার ওয়াইন চেখে দেখতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না|
শ্রেষ্ঠ সময়:
কিমালা ভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে শীতকালীন সময় অর্থাৎ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত সময়টিকে বেছে নেওয়া হয় |পর্যটকদের মতে, সমুদ্রতীরবর্তী এই অঞ্চলটি এইসময় ঠান্ডা বা গরম এর সামঞ্জস্যতায় পরিপূর্ণ থাকে | আর তাই রিসর্টও তার পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করার যথেষ্ট সুবিধা থাকে |
কীভাবে পৌঁছবেন:
বিমানে: নিউ দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর থেকে সোজা বিমানে পৌঁছে যান ফুকেট ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর | বিমানবন্দর থেকে গাড়ি নিয়ে মাত্র ১৯ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে | ফুকেট পৌঁছনোর জন্য দিল্লি থেকে অনেকগুলো বিমান উপলব্ধ রয়েছে, আর বিমান খরচ প্রায় ১২০০০ টাকা থেকে শুরু |
কিমালার প্রধান আকর্ষণ:
কামালা বিচ:
কিমালা থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে পৌঁছে যেতে পারেন ফুকেটের প্রধান আকর্ষণ কামালা বিচ | এই বিচ থেকে আপনি উপভোগ পারবেন ছোট ছোট ঢেউ-এর যাতায়াত | সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে খেলতে চাইলে বা সমুদ্রের বুকে নিজেকে ভাসাতে চাইলে কিংবা সমুদ্রতীরে প্রিয় মানুষের সঙ্গে নিভৃতে সময় কাটানোর জন্য এই সমুদ্র সৈকতটি একেবারে আদর্শ |
থ্যানন ব্যাংলা:
সূর্যাস্তের পর থাইল্যান্ড-এর জীবনযাত্রা উপভোগ করতে পৌঁছে যেতে পারেন এই অঞ্চলে | প্রিয় মানুষের সঙ্গে হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন এখানকার বার এবং রেস্তোরাঁগুলোতেও | স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে স্থানীয় বিপনি থেকে কেনাকাটি করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না | আবার থাইল্যান্ডের নাইট লাইফের অভিজ্ঞতাটি আপনার ভ্রমণের আমেজটাকে আরও মধুময় করে তোলার জন্য যথেষ্ট |
ফুকেট ফ্যান্টাসি:
ফুকেট ফ্যান্টাসি হল একটি থিম পার্ক | আপনার যদি ম্যাজিক ভাল লাগে তাহলে এখানে আসতে পারেন |পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য এখানে বিভিন্ন সময়ে অনেকগুলো প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে | কিমালা থেকে ৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে পারেন এই থিম পার্ক টিতে |
হানিমুন হোক কিংবা একটা রোমান্টিক গেটওয়ে; কিমালার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য রইল সাদর আমন্ত্রণ |