মধ্য ভারত বলতে আপনি কী বোঝেন?
বরফ তো এক বিন্দুও নেই। গাছপালা আছে, নাকি তাও নেই? আছে আদিগন্তবিস্তৃত ক্ষেতজমি, না কি অগোছালো ভাবে বেড়ে উঠেছে এক ঝাঁক মফস্সল?
উত্তরটা কিন্তু বেশ আলাদা। মধ্যভারতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে এক ব্যতিক্রমী নদী। অন্যান্য নদীর গতির বিপরীতে, এটি বয়ে চলেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে, এর যাত্রাপথের বেশিরভাগ জায়গা জুড়েই গড়ে উঠতে পারেনি সমতলভূমি, আর সারাবছর বয়ে চলে কোনও হিমবাহের সাহচর্য ছাড়াই।
এই সুবিশাল নদীটির নাম নর্মদা।
নর্মদা ভারতবর্ষের ৭টি পবিত্র নদীর অন্যতম, ক্ষেত্রবিশেষে গঙ্গার থেকেও পবিত্র বলা হয়ে থাকে। মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিশগঢ়ের সীমানায় মাইকাল পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমদিকে গিয়ে ভেদ করে মধ্যপ্রদেশকে। অবশেষে নদীটি মোট ১৩১২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে গুজরাতের গাল্ফ অফ খাম্বাটের কাছে আরব মহাসাগরের সঙ্গে মেশে। গুজরাতের ভারুচের কাছে নর্মদার প্রস্থ ৩ কিলোমিটার, আর আরব মহাসাগরে মেশার আগে গাল্ফ অফ ক্যাম্বের কাছে এর প্রস্থ ২১ কিলোমিটার।
কিন্তু কীভাবে নর্মদা নদী কোনও হিমবাহের সাহায্য ছাড়াই সারাবছর জলসিঞ্চিত থাকে?
নর্মদার উৎপত্তি বৃষ্টির জলপুষ্ট নর্মদা কুণ্ড থেকে। এই অঞ্চলে প্রতি বছর ১৪০ সেন্টিমিটারের মতো ভারি বৃষ্টিপাত হয়। জব্বলপুর আর পাঁচমারীর হয়ে যাওয়ার সময় (যেখানে গড় বৃষ্টিপাত ১৮০ সেমি), বহু উপনদী প্রচুর জলরাশি নিয়ে নর্মদায় মিলিত হয়। তার সঙ্গে, ভূগর্ভস্থ জলের কারণেও এই নদীতে সবসময় বিপুল পরিমাণে জল থাকে। কিছুটা জল ছোট বা বড় বাটির মতো আয়তন ধারণ করে থাকে এবং ঘোর গ্রীষ্মকালেও আস্তে আস্তে নদী উপত্যকায় চলে আসে। শেষে গুজরাতের কাছে এসে ঢালু অগভীর জমিতে নদীখাতটি চওড়া হতে শুরু করে। গুজরাতের বেশিরভাগ জায়গাতেই নদীর প্রস্থ ১.৫ থেকে ৩ কিলোমিটার।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী
বেদে বলা আছে, গঙ্গা স্নানে যে পুণ্য হয়, নর্মদা দর্শন করলেই সমপরিমাণ পুণ্য অর্জন করা যায়।
গঙ্গাও নিজে শুদ্ধ হতে নর্মদায় আসে। গল্প কথা অনুযায়ী, সারাবছর ধরে সহস্র মানুষের পাপ ধুয়ে ধুয়ে নিজে কলুষিত হয়ে ওঠা গঙ্গা প্রতি বছর বৈশাখ সপ্তমীর দিনে নর্মদায় শুদ্ধ হতে আসেন। তবে দুই নদীর ভৌগোলিক অবস্থান দেখলে ব্যাপারটা একটু অসংলগ্ন লাগে।
কিন্তু যদি আমরা বৈশাখ মাসের (বা ইংলিশ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মে মাসে) বন্যার সময়ে গঙ্গার গতিপথ লক্ষ্য করি, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি মনে হবে। গুজরাতের চানদোদ জায়গাটি নর্মদা এবং আউরভি নদীর মিলনস্থল অবস্থিত। আউরভি নদীর অববাহিকার সাথে যুক্ত পার্বতী নদী, যা আবার চম্বল নদীর উপনদী। চম্বল একসময় মিলিত হয় যমুনার সঙ্গে, যা কিনা আবার গঙ্গার উপনদী। যে ঋতুতে বন্যা হবে, সেই সময়ে গঙ্গার জল উপনদী শাখানদী বেয়ে কোনওভাবে নর্মদায় পৌঁছে যাওয়ার উপায় খুঁজে বার করবে।
পুরাণ থেকে এগিয়ে
পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক গল্পগাথার দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ায় সাধু সন্তদের মনে নর্মদা নদী আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। বায়ুপুরাণ বা স্কন্দপুরাণের মতো পুরাণকাহিনিতে নর্মদার উৎপত্তি নিয়ে আলাদা করে বিভাগ করা আছে। দ্বিতীয় শতাব্দী থেকেই নর্মদার তীরে বহু তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে। মাহিষ্মাতি, হেহইয়া বা অবন্তীর মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ সাম্রাজ্যও গড়ে উঠেছিল এই নদীর তীরেই....
কোথায় কোথায় যাবেন :
নর্মদার পূর্ণ রূপ উপভোগ করতে চাইলে, যান এই সব জায়গায়
ভেদাঘাট : সাদা মার্বেল পাথরের রিফ্ট ভ্যালি এবং ধুঁয়াধার জলপ্রপাত নিয়ে জানতে হলে পড়ুন এখানে।
হোসাঙ্গাবাদ : ঐতিহাসিক এই শহর এবং নর্মদা ও তায়ী নদীর সঙ্গম নিয়ে জানতে হলে ঘুরে আসতে পারেন।
ভারুচ : উপসাগরবর্তী এই শহরটি নিয়ে জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে।