আমরা যারা কংক্রিটের একটা কঠিন বেড়াজালে আবদ্ধ, তাদের কাছে গ্রাম ও গ্রাম্য পরিবেশ মনের মধ্যে যেন অদ্ভুত সিন্গ্ধতা ও শান্তির কোমল প্রলেপ বুলিয়ে দেয় | ব্যস্ত শহুরে জীবনের দমবন্ধ করা আবহাওয়া থেকে মুক্তির স্বাদ এনে দেয় এই গ্রামাঞ্চল| আজকের এই ব্লগে রইল এমনই কয়েকটি সুন্দর ও মনোরম গ্রামের সুলুক-সন্ধান, যা শহরের কৃত্রিম জীবনযাত্রা থেকে ক্ষণিক রেহাই দিতে পারে| আর আমরাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, প্রকৃতির অসামান্য চিত্রপট পরিবেষ্টিত এই গ্রামগুলি আপনার মন ভাল করার একমাত্র পন্থা হয়ে উঠবেই |
হিমাচল প্রদেশের মালানা গ্রাম ঘুরে দেখার পরিকল্পনা সেরে ফেলুন
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে কুলু উপত্যকায় অবস্থিত মালানা বিশ্বের প্রথম গণতান্ত্রিক গ্রাম হিসেবে পরিচিত। অতুলনীয় সৌন্দর্য্য সমৃদ্ধ মালানা; তার মেঘপুঞ্জি এবং বিশুদ্ধ বাতাস দ্বারা আপনাকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সঙ্গে দর্শন করাবে।
হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকায় অবস্থিত ভারতবর্ষের প্রথম হেরিটেজ গ্রাম প্রাগপুর
কাঁচা পাকা পাথুরে রাস্তা এবং এক অসামান্য স্থাপত্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই গ্রামটি। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এবং সুসজ্জিত এই গ্রামটির মধ্যে রয়েছে অনেক কিছু দেখার জায়গা যেমন ম্যাকলয়েডগঞ্জ, পালামপুর ইত্যাদি। তাই এই পল্লীগ্রামটি দেখার সুযোগ এলে একদম হাতছাড়া করবেন না।
উত্তরাখণ্ডের কলাপ হয়ে উঠতে পারে আপনার অস্পষ্ট চিন্তাভাবনার পুনরুজ্জীবিত রূপ
প্রতিটি ব্যস্ত শহরের এক নিজস্ব একাকিত্বের পরিসর থাকে; কলাপ হল তেমনই একটি স্থান। গাড়োয়াল পর্বতের কাছে অবস্থিত কুয়াশাচ্ছন্ন এই জায়গাটি আপনার জনবহুল ব্যস্তময় জীবন থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে এক বিশুদ্ধ পরিবেশে। এখানকার পাহাড়ের কোলে কোলে প্রতিধ্বনিত শব্দগুলি কিছুটা আপনার স্বাভাবিক কর্মময় জীবনের অব্যহতি ঘটাবে।
মেঘালয়ের পূর্ব কাশী পাহাড়ের কোলে অবস্থিত মাওলিননং; বৈদেশিক ধাঁচে তৈরি ভারতবর্ষের অন্যতম গ্রাম
পর্বতের কোলে, শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের সবথেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রামটি হল মাওলিননং। প্রকৃতির সবুজ বর্ণের অপরূপ শোভা আগত পর্যটকদের চোখের বিরাম দেয়। আপনি এখানে ভ্রমণ করতে গেলে, এখানকার শহরগুলো এবং লিভিং রুট ব্রিজের নয়নাভিরাম দৃশ্যটি দেখতে একদম মিস করবেন না।
লাদাখে অবস্থিত ইন্দিলামা মুনলান্ড গ্রাম -লামায়ুরু
লামায়ুরুতে অবস্থিত খয়েরি, ধূসর এবং সাদা রংয়ের তৈরি বাড়িগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সুন্দর পরিবেশ; এর মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে সবচেয়ে প্রাচীনতম বৌদ্ধ মঠগুলোকে। এখানে চাঁদ-সদৃশ সমতলভূমি অবস্থিত হওয়ায় প্রকৃতি প্রেমীরা এই অপরূপ সৌন্দর্যকে বার বার ক্যামেরাতে ধরে রাখতে ছুটে আসেন |
সিল্ক-রুটের আঁকাবাঁকা পথের আনন্দ উপভোগ করার অন্যতম একটি জায়গা হল জুলুক | তবে এখানে পর্যটকেরা নিজেদের পছন্দ মত কোনো রকম পান্থশালা বা আবাসন খুঁজে পাবেন না। থাকতে হবে এখানকার অধিবাসীদের সাথেই। এই স্থানের রাস্তা বেশ বিপজ্জনক আর প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে অপেক্ষারত সরু ৩২টি বাঁক যা আপনার গাড়ি চালানোর দক্ষতাকে ক্রমাগত পরীক্ষা করে চলে।
ভারতের লাদাখে অবস্থিত একমাত্র উষ্ণ প্রস্রবণের গ্রাম হল লাদাখের পানামিক
খারদুং লা দিয়ে প্রবেশ করে লে থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পানামিক গ্রামটি হল নুব্রা উপত্যকার প্রবেশদ্বার। এখানে গরম জলের সালফার মিশ্রিত ঝরণা, বরফে আবৃত পর্বতশৃঙ্গ ক্রমাগত আকর্ষণ করে চলে পর্যটকদের। এই গ্রামটি সিয়াচেন অববাহিকার আগে ভারতের সীমাতের সর্বশেষ স্বতন্ত্র গ্রাম।
হিমাচল প্রদেশ স্পিতি উপত্যকায় অবস্থিত কিব্বের বিশ্বের সবথেকে উচ্চতম গ্রাম হিসেবে পরিচিত
১৪০০০ ফুট উচ্চতায় সামান্য কিছু বাসিন্দা নিয়ে অবস্থিত কিব্বের গ্রামটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক নয়নাভিরাম দৃশ্যপট সাজিয়ে অপেক্ষারত। আপনি এখানে ট্রেকিং করে অনেক সুউচ্চ বৌদ্ধমঠ চাক্ষুষ করতে পারবেন যেগুলো আপনার স্মৃতিতে আজীবন থেকে যেতে বাধ্য।
পুভার:
কেরালার উপকূলবর্তী একটি গ্রাম পুভার
আরব সাগরের উপকূলে, প্রত্যন্ত জমির উপর গড়ে ওঠা এই উপকূলবর্তী পুভার গ্রামটি ত্রিবানদ্রাম-এর দক্ষিণতম দিকে অবস্থিত। সমুদ্র সৈকতের অসামান্য সৌন্দর্য উপভোগ এবং কেরালা ঘোরার আনন্দ আস্বাদনের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা।
যেখানে সমস্ত পথের শেষ হয় - হিমাচল প্রদেশের কিন্নাউর উপত্যকার অন্তর্গত চিৎকুল গ্রাম
ইন্দো-চায়না বর্ডারের অবস্থিত ভারতবর্ষের এটিই শেষ গ্রাম যেখানে আপনি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবেন। হিমালয়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর মতো এখানেও কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি ঘর দেখতে পাওয়া যায়; যা সমস্ত পার্বত্য গ্রামগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে আপনি একদিনের এসে প্রকৃতির সঙ্গে আত্ত্বিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
তামিলনাড়ু মুত্তম মৎস্য প্রকল্পের জন্য প্রসিদ্ধ অন্যতম একটি গ্রাম
পাহাড়ি গুহা এবং পার্বত্য পরিবেশ গড়ে ওঠা মুত্তম গ্রামটি আপনাকে এক নৈসর্গিক দৃশ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটাবে। এখানে লাইটহাউস আর সূর্যাস্তের দৃশ্য স্বচক্ষে উপভোগ করা গেলেও সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ভিড় প্রায় নেই বললেই চলে।
ডং:
অরুণাচল প্রদেশের অবস্থিত সাংস্কৃতিক সমভাবাপন্ন গ্রাম ডং
তিনটি দেশের সঙ্গমস্থলে এবং ভারতের পূর্বতম দিকে অবস্থিত গ্রামটি হল ডং। সমস্ত চিত্র গ্রাহকরা এই স্থানে আসেন তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করার জন্য। এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল মাত্র তিনটি মাটির ঘরের সমন্বয়ে এই গ্রামটি গড়ে উঠেছে এবং এখানকার মানুষজন অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত কিন্তু অতিথি আগমনে তারা সর্বদা মুক্তহস্ত।
তাহলে আর দেরি কীসের? ঝটপট আপনার জিনিসপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভারতবর্ষের এই সুন্দর সুন্দর গ্রামগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।