মাটি থেকে ৩৫০০০ ফুট উচ্চতায়, ঘণ্টায় ৫০০ মাইল বেগে ছুটে চলা তখনই সম্ভব যখন বিমানের ফ্লাইট ক্রুর প্রত্যেকে কাজে কর্মে হবে নিপুণ। তবে এটা ভাবলে ভুল করবেন যে এরোপ্লেনের ভেতরে আপনার কাছে কিছু গোপন রাখা হয় না; শুধুমাত্র হোটেলের কর্মচারীরাই যে আপনার থেকে নানা বিষয় লুকিয়ে রাখে তা তো নয়।
এরোপ্লেনের ভেতরে আলো কমিয়ে দেওয়া সবসময় রুটিনমাফিক নাও হতে পারে, পাইলট আর এয়ার হোস্টেসদের মাঝের সাংকেতিক কথোপকথন শুধুই মজার জন্যে নাও হতে পারে, যে জল টা খেলেন সেই জল দিয়ে হয়তো আপনি বাড়ীতে চা তৈরি করে খেতে পারবেন না। তাই আপনার সিট বেল্টটা পরেই নিন, আর জানুন এমন কিছু অপ্রীতিকর তথ্য যা আপনার ফ্লাইট ক্রু চায় না আপনি জানুন।
১. ককপিটে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত পাইলট
নিয়ম অনুযায়ী, পাইলটদের কিন্তু তাদের ২৪ঘণ্টা কর্মসময়ের মধ্যে ৮ঘণ্টার বেশি প্লেন ওড়ানোর কথা নয়, কিন্তু ব্যাপারটা এত সোজা নয়। ফ্লাইটের পরের বিভিন্ন কাজ করে, হোটেল গিয়ে, খেয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে, আবার ড্রাইভ করে ফিরে এসে, এয়ারক্রাফট মেন্টেনেন্স এর সবকিছু কাজে যোগদান করে, ফ্লাইট পূর্ববর্তী নানা নিয়মকানুন মেনে, খুব একটা সময় আর হাতে বাকি থাকে না। কিন্তু ভেবে দেখুন, ফ্লাইট ক্রু কি কখনও আপনাকে বলবে যে আজকের পাইলট এতসব করে চূড়ান্ত ক্লান্ত হয়ে এখন প্লেন চালাবে? তাই চিন্তা করবেন না, শুধুই "রিল্যাক্স" করুন।
২. প্লেনের মধ্যেও সি.সি.টি.ভি ক্যামেরা
বন্ধু বান্ধবরা সবাই মিলে প্লেনে উঠে দেখলেন অর্ধেক সিট খালি, যেখানে ইচ্ছে বসে পড়লেন, এমনকি সবাই মিলে পাশাপাশি একটাই রো তে বসে পড়লেন। তবে যদি ভাবেন এসব কেউ লক্ষ্য করছে না, তাহলে কিন্তু সাবধান। আধুনিক প্রযুক্তির সমস্ত প্লেনের অভ্যন্তরীণ গোপন ক্যামেরা দিয়ে কিন্তু সবাই সব জেনে যাবে, একটু আধটু দুষ্টুমি করলেও।
৩. প্লেনের মধ্যেই আগ্নেয়াস্ত্রধারী স্কাই মার্শাল, হাতকড়া
প্রায় সব বিমানেই এমন কিছু মানুষ আর জিনিস থাকে, যা আপনার ভাবনার বাইরে। কিন্তু সবই যাত্রীদের নিরাপত্তার খাতিরে। বেয়াড়া যাত্রীদের সামলানোর জন্যেই থাকে হাতকড়ার ব্যবস্থা। আর মিষ্টি দেখতে চশমা পড়া যে ছেলেটার দিকে সবকটা ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট হেঁসে তাকাচ্ছে, সে কিন্তু বন্দুকধারী এয়ার মার্শাল হতেই পারে। পরিস্থিতি কেবিন ক্রুর হাতের বাইরে গেলেই কিন্তু সে ঝাঁপিয়ে পড়বে সামাল দিতে। কিন্তু সেরকম অবস্থা না হলেই হয়তো আপনি খুশি হবেন
৪. কেবিন লাইটস কমে আসা
রাত্রিবেলার বা ভোরবেলার ফ্লাইটের টেক অফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় কেবিন লাইটের নিভু নিভু হয়ে আসা তো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন আসল কারণটা? আপনাকে ঘুমোতে সাহায্য করার জন্যে বা শান্ত করার জন্য নয়। আসল কারণ হল এমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করতে হলে যাতে যাত্রীরা বাইরের অন্ধকারের সাথে দ্রুত মানিয়ে উঠতে পারেন। আমাদের এক পাইলট বন্ধু অজ্ঞাত থাকার শর্তে জানান "কোনও কারণে ইঞ্জিনের প্রবলেম হলে আমরা ইঞ্জিন বন্ধ করে দি, এর ফলে পাওয়ার কমে আসায় অনেক সময়েই উড়ান চলাকালীন লাইটগুলো নিভিয়ে দেওয়া হয়"।
৫. ফ্লাইট ক্রুদের নিজেদের ভাষা
লক্ষ্য করেছেন কি যে অনেক চেষ্টা করেও কিন্তু ফ্লাইট ক্রু নিজেদের মধ্যে কি ভাষায় কথা বলছে সেটা ঠিক ধরতে পারছেন না? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, উড়ান চলাকালীন কোনও সমস্যা হলে সেটা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে এমনভাবে কথা বলে, যাতে যাত্রীরা সেটা শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে অযথা প্যানিক সৃষ্টি না করে। তাই পরের বার যদি দেখেন যে ফ্লাইট ক্রু নিজেদের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে গোপন ভাষায় কথা বলছে, তাহলে কিন্তু উপরওয়ালাকে স্মরণ করার সময় চলে এসেছে।
৬. ফ্লাইটের ভেতরের খাবার দাবার
ইন-ফ্লাইট মিলের জন্যে হা-পিত্যেশ করে বসে থাকেন? অবসরপ্রাপ্ত এক বিমানসেবিকার লেখা অনলাইন ব্লগ অনুযায়ী "ওই খাবার তো আমরা খাবই না, কিছুতেই না। সেরকম দেখলে, বিমানসংস্থাগুলোও চায়না যে ওই খাবার গুলো খেয়ে তাদের পাইলটদের ফুড পয়সনিং হোক।" বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিমানের ভিতরে যাত্রীদের জন্যে পানীয় তৈরি করতে যে জল ব্যবহার করা হয় তাতে পাওয়া যায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, এমনকি বিপদজনক ই. কোলাই ব্যাক্টেরিয়াও। আর তাই দেখবেন বিমান সেবক সেবিকারা কিন্তু সবসময় বোতলের জলই খাচ্ছেন।
৭. এরোপ্লেনের ভিতরের রূপ
বিমানের ভিতরটা দেখলে কিন্তু মনে হবে পরিষ্কার, ঝাঁ চকচকে; কিন্তু সত্যিটা একটু প্যাঁচালো। যে ছোট্ট টেবিল টায় আপনি খাবার দাবার রাখেন, গোটা বিমানে টয়লেটের পর বোধহয় ওটাই সবচেয়ে নোংরা। আর হেডরেস্ট গুলোতে তো লেগে থাকে আইল দিয়ে যাতায়াত করা হাজার হাজার মানুষের হাতের জীবাণু। যে চাদর চাপা দিয়ে সারারাত শুলেন, ওটাই আবার ভাঁজ করে রেখে দেওয়া হয় ড্রয়ারে। আর টয়লেটের কথা তো ছেড়েই দিন, স্বল্প দৈর্ঘ্যের ফ্লাইট গুলোতে তো বাথরুম পরিষ্কার করার সময়ই পাওয়া যায় না।
৮. সব প্যাসেঞ্জার যা জানতে চায়
বিমানের বাথরুম প্রচন্ড অস্বাস্থ্যকর হওয়ার পাশাপাশি, এটা জেনেও আপনি খুশি হবেন না যে বাথরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকলেও ফ্লাইট ক্রু কিন্তু বাইরে থেকে সেই দরজা খুলে দিতে পারে। যারা বাথরুমে অসাবধানে আটকে পরেন, তাদের পক্ষে এটা ভাল ব্যাপার নিশ্চয়ই, কিন্তু যারা ৩০,০০০ ফুট উচ্চতায় বাথরুমে থাকতে থাকতে কখনোই চাইবেন না যে দরজা খুলে যাক, তাদের পক্ষে কিন্তু আশঙ্কার বিষয়ই বটে।
তবে অপ্রীতিকর মনে হলেও, আধুনিক যাতায়াতের বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে আকাশ পথে যাত্রাই সবচেয়ে নিরাপদ। হাওয়াই ভ্রমণের কোনো গোপন তথ্য জানলে, শেয়ার করুন আমাদের সাথে।