‘মোমো’-এই জনপ্রিয় খাদ্যটির সূত্রধর তিব্বত হলেও বর্তমানে ভারতীয় খাদ্য সম্ভারের তালিকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে | বাড়ির অতিথি আপ্যায়ন থেকে বন্ধুদের আড্ডার মাঝে শেয়ার করে খাওয়া, সর্বত্র মোমো তার নিজস্বতার পাখা মেলে বিস্তার লাভ করে চলেছে |শুধু মোমো কেন? মোমোর অন্যান্য রূপ হিসেবে ডিমসাম ও ডাম্পলিং ভারতীয় খাদ্যের আনাচে কানাচে প্রবেশ করে খুব সহজেই খাদ্যরসিক ভারতীয় মানুষের পেট ও মন দুইই জয় করে চলেছে| মাংস বা সবজি, ক্যাডবেরি বা পনির - যেকোনো স্টাফিং সহযোগে পরিপূর্ণ প্রত্যেকটি মোমোর স্বাদটা জিভে জল আনার মতোই বেশ লোভনীয়| শীতের সময়ে এই সুস্বাদু খাদ্যটিকে লাঞ্চ বা ডিনারের পারফেক্ট মেনু হিসেবে অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন |
৬ টি শ্রেষ্ঠ মোমো পরিবেশন স্থান:
বর্তমানে আট থেকে আশি সমস্ত খাদ্য প্রিয় ভারতীয় মানুষের কাছে মোমো খাদ্যটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়েছে | আর আমরাও ধীরে ধীরে এই বৈদেশিক খাদ্যটিকে নিজেদের মতো করে ভারতীয় খাদ্য সংস্কৃতির আভরণের মোড়কে সাজিয়ে তুলেছি | মোমো নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় রন্ধনশিল্পও নতুন দিক খুঁজে পেয়েছে | ভারতের রন্ধনশিল্পে ব্যবহৃত প্রসিদ্ধ মশলা ব্যবহার করার পর মোমোর স্বাদটাও সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে তা বলাই বাহুল্য | আপনিও যদি খাদ্য রসিক এবং মোমো প্রেমিক হয়ে থাকেন, তাহলে এই বিখ্যাত ভ্রমণ স্থানের মোমোর স্বাদ চেখে দেখতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না |
স্পিতি ভ্যালি:
সমস্ত ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে ছোট্ট গ্রাম স্পিতি ভ্যালিকে স্বর্গ বললে কিছু ভুল হবে না| আর এই স্বর্গীয় প্রকৃতির সৌন্দর্য আহরণের সঙ্গে সঙ্গে আপনি যদি সুস্বাদু মোমোর একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য স্পিতি ভ্যালি শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ স্থান হয়ে উঠতে পারে | এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, মোমোর সাথে ডিমসাম খাদ্যটিও এই অঞ্চলে বিশেষভাবে জনপ্রিয় | তবে স্থানীয় মানুষের মতে, এখানে চমরী গাই -এর চর্বি বিশিষ্ট মোমোর স্বাদটা এক্কেবারে অন্যরকম|
স্পিতি ভ্যালিতে মোমো স্বাদের শ্রেষ্ঠ রেস্তোরাঁটি হল - হোটেল দুপছেন, কুনজুম টপ কাফে |
দার্জিলিং:
শৈলশহর দার্জিলিং-এ ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে গরম গরম মোমোর স্বাদ নেয়ার অভিজ্ঞতাটাও বেশ রোমাঞ্চকর | পাহাড়ের পাদদেশে, শীতের দিনে একটা ছোট্ট কাফেতে বসে সুস্বাদু মোমো খাওয়ার কল্পনাটাও বেশ লোভনীয় | এখানে মোমো একটি মশলাদার চাটনি সহযোগে পরিবেশন করা হয় | আর এই মোমো নিরামিষ ও আমিষ দুটি রূপেই বেশ মুখরোচক এবং চমকপ্রদ |
দার্জিলিং -এ মোমো স্বাদের শ্রেষ্ট রেস্তোরাঁটি হল - কুঙ্গার হট স্টিমুলেটিং কাফে |
উত্তরপূর্ব ভারতে ভ্রমণে গিয়ে, সেখানকার মোমো টেস্ট করে দেখেছেন কি? যদি আপনার উত্তরটা না হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে শিলং-এর মোমোর স্বাদ চেখে দেখতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না | এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ভারতে মোমোর জন্য প্রসিদ্ধ স্থানগুলোর মধ্যে প্রধান হল শিলং |এছাড়াও, এখানে ডাম্পলিং-এর আয়তন ভারতের অন্য রাজ্যের তুলনায় বৃহত্তর | যে সমস্ত পর্যটনকারী চাটনি সহযোগে মোমোর স্বাদ পেতে চান এবং কম মশলাদার মোমো পছন্দ করেন তাঁরা শিলং-এর মোমো চেখে দেখতে অবশ্যই ভুলবেন না |
শিলং-এ মোমো স্বাদের শ্রেষ্ট রেস্তোরাঁটি হল - ওপেন আপ-এর সিটি হাট রেস্তোরাঁ |
ম্যাকলিয়ডগঞ্জ:
ভারতে বসে বিশুদ্ধ তিব্বতীয় মোমোর স্বাদ পেতে চাইলে চলে আসতে পারেন ম্যাকলিয়ডগঞ্জ | তিব্বত ও ভারত এর সীমান্তে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের এই ছোট্ট নগরীটিকে মোমোর প্রবেশদ্বার হিসেবে গণ্য করাই যায় | ম্যাকলিয়ডগঞ্জ ভ্রমণে গেলে দলাই লামা মন্দির প্রাঙ্গনের সামনে দেখা পেতে পারেন নিত্যনতুন মোমো সম্ভারের | এখান থেকে ন্যূনতম মূল্যে মোমো চেখে দেখার অভিজ্ঞতাটিও মন্দ হবে না |এই মোমোর দোকানগুলোতে একই ছাদের তলায় আপনি পেয়ে যাবেন চিকেন মোমো, মটন মোমো, পর্ক মোমো, আলু ও চীজ-এর স্টাফিং পরিবেষ্টিত মোমো ইত্যাদি | আর এই মোমোগুলো সুস্বাদু স্যুপ সহযোগে পরিবেশন করা হয় |
ম্যাকলিয়ডগঞ্জের মোমো স্বাদের শ্রেষ্ট রেস্তোরাঁটি হল - নরলিং ও নিকশ-এর ইতালিয়ান কিচেন |
গ্যাংটক:
ভারতের সবচেয়ে পরিশুদ্ধ সিকিম রাজ্যটির খাদ্য তালিকার মধ্যে নেপালি ও তিব্বতীয় সংস্কৃতির তীক্ষ্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় |নেপালি খাদ্য ডাল ভাত ও ঢিন্দ সিকিম রাজ্যের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে | অন্যদিকে মোমো থেকে গিয়া-থুক যা থুকপা নামে পরিচিত, কিংবা তিব্বতীয় শাপলেই (মাংস দিয়ে নির্মিত খাদ্য ) - এই সমস্ত তিব্বতীয় খাদ্য ভারতীয় খাদ্য সংস্কৃতির তালিকার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে পড়েছে | গ্যাংটকে ভ্রমণে গিয়ে যদি বিশুদ্ধ তিব্বতীয় খাদ্যের স্বাদ ভক্ষণ করতে চান - তাহলে ফাগশাপা (শুকর মাংস পরিবেষ্টিত খাদ্য) টেস্ট করতে অবশ্যই ভুলবেন না |
গ্যাংটকে মোমো স্বাদের শ্রেষ্ঠ রেস্তোরাঁটি হল - টেস্ট অফ তিব্বত রেস্তোরাঁ ও দ্য রোল হাউস |
ভারত ও তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত লে নামক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছাড়া মোমোর জার্নিটা সম্পূর্ণ হয় না | খাদ্য প্রিয় যে কোনও মানুষের কাছে লে -অঞ্চলের মোমোর স্বাদটা অতুলনীয় | স্টিমড চিকেন মোমোই হোক বা ভাজা মটন মোমো অথবা চামরি গাই-এর দুধ দ্বারা নির্মিত চীজ মোমো; সব ধরণের মোমোর মধ্যে রয়েছে মুখে জল আনা স্বাদ | এছাড়াও, এই ঠান্ডা পার্বত্য প্রদেশের তুলতুলে ও সুস্বাদু ডিমসাম-এর স্বাদ টাও মোমোর স্বাদের মতোই লোভনীয় |
লে প্রদেশে মোমো স্বাদের শ্রেষ্ঠ রেস্তোরাঁটি হল - লামায়ুরু রেস্টুরেন্ট ও সামার হারভেস্ট রেস্তোরাঁ |
আপনার পরবর্তী গন্তব্য যদি উপরিউক্ত ৬ টি গন্তব্যের মধ্যে হয়, তাহলে পার্বত্য প্রদেশের শীতল আবহাওয়ায় আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটিকে আরও মজাদার করে তুলতে পারে শৈল শহরগুলির বিখ্যাত মোমো এবং ডাম্পলিং রেস্তোরাঁগুলো | আর পাহাড়ের পাদদেশে শীতলতার আমেজ নিয়ে প্রিয়জনের সাথে তিব্বতীয় এই খাবারটিকে উপভোগ করার মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরা বন্দি করতে একদম মিস করবেন না |