বেড়াতে যাওয়া আমার খুব পছন্দের। আর কোনও আনকোরা নতুন দেশে যাওয়ার জন্যে বিমানের টিকিট কাটার মতো সুখবর আর কী-ই বা হতে পারে। না, ভুল বললাম। সবচেয়ে বড় সু-খবর হল নতুন দেশে যাওয়ার জন্যে সবথেকে কম দামে টিকিট কাটা। আপনার প্রথম ফ্লাইট হোক বা একশতম, বেশি বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনতে কার ভাল লাগে বলুন? সেই বাড়তি টাকাটা আপনি খরচ করতে পারেন ছুটিতে গিয়ে খাবার, ড্রিংকস বা বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্নের উপরে। এবার যদি আমি আপনাকে এমন কতগুলো উপায় বলি, যা মেনে চললে আপনাকে কখনও কোনও ফ্লাইটের জন্যে এক পয়সাও বেকার বাড়তি খরচ করতে হবে না?
আমি বিগত ৭ বছর ধরে নিয়মিত ভাবে বিমানে ভ্রমণ করি এবং ইতিমধ্যেই অন্তত ১৩ বার পুরো পৃথিবীটা ঘুরে এসেছি। বিশ্বাস হল না? আমার ফ্লাইট ম্যাপটা দেখুন। উপর থেকে ম্যাপটিকে দেখে অনেক খরচের ব্যাপার মনে হলেও আমি নিজে বহু বছর ধরে চেষ্টা করে শিখেছি কী কী উপায়ে সুলভতম ফ্লাইট টিকিট কিনে বেশ কিছু টাকা বাঁচানো যায়। আর আজ সেই রহস্যগুলো আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব, যাতে আপনারাও একইভাবে সুলভে টিকিট কাটতে পারেন। রইল আমার সবথেকে পছন্দের কিছু পদ্ধতি।
১) কায়াক এবং গুগল দ্বারা ব্যবহৃত অত্যাধুনিক ওয়েবসাইটটি নিজে ব্যবহার করুন
যখন এই প্ৰবন্ধটি পড়তে শুরু করলেন, নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন যে আমি সেই ক্লিয়ারট্রিপ, মেক মাই ট্রিপ বা যাত্রার কথা বলব। কিন্তু তার বদলে আপনাদের জন্য রইল একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ। হয়তো আপনি এই.টি.এ ম্যাট্রিক্স ওয়েবসাইটের নাম আগে কখনও শোনেননি, কিন্তু এর মাধ্যমেই আমি প্রায় কয়েকশো ডলার খরচ বাঁচিয়েছি। এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছেন এম.আই.টির বিশ্ববিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা। টিকিট বুকিংয়ের সময় আপনার সমস্তরকম চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই সাইটের সৃষ্টি। হ্যাঁ, হয়তো সাইটটি দেখতে একটু পুরনো আমলের, কিন্তু দুঃখ কীসের, বাঁচাচ্ছে তো অনেকটা টাকা।
২) টিকিট কখন কাটবেন সেটাই আসল বিষয়
সত্যি বলতে, বিমান টিকিট কাটার জন্য সেরা সময় খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে সেরকম কোনও নিয়ম কিন্তু নেই। কিন্তু প্রাথমিক কতগুলো পদক্ষেপ নিয়ে রাখা ভাল। প্রথমত, আমি বেশ অনেকদিন আগে থেকেই ফ্লাইটের ওপর নজর রাখতে শুরু করি, যাতে বুঝতে পারি ভাড়াটা মোটামুটি কতটা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি মোটামুটি বিমানে চড়ার প্রায় ৬ সপ্তাহ আগে টিকিট কাটি। হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্যবশত আপনি অবিশ্বাস্য কোনও লাস্ট-মিনিট ডিল পেতে পারেন, কিন্তু সেই আশায় বসে থাকলে শেষ মুহূর্তে টিকিটের দাম বেড়ে হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সুযোগও আছে। আর দিন বলতে গেলে মঙ্গল বা বুধবার ফ্লাইট টিকিট একটু বেশি সস্তা হয় কারণ ওইদিন গুলোতে বিজনেস ট্র্যাভেলারদের সংখ্যা কম থাকে, ফলে ফ্লাইটের চাহিদাও কম হয়, আর তাই দামও কম হয় কিছুটা।
৩) কুকি মানেই কিন্তু তা ভাল জিনিস নয়
প্রায় প্রতিটি ওয়েবসাইট আপনার সার্চ ইনফরমেশন সেভ করে রাখে এবং বুঝতে পারে আপনি কবে টিকিট কাটবেন বলে ভাবছেন। যতবার আপনি ফিরে এসে এসে ফ্লাইটের দাম দেখার চেষ্টা করবেন, ওয়েবসাইট তত আপনাকে দাম বাড়িয়ে দেখাবে। তাহলে, উপায়? ওয়েবসাইটের কুকিজ গুলো ক্লিয়ার করুন এবং ইনকগনিটো ব্রাউজার উইন্ডো থেকে টিকিট কাটুন।
৪) বিকল্প এয়ারপোর্ট দেখুন
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলগুলোতে পৌঁছনোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একের বেশি এয়ারপোর্ট হয়ে যেতে পারেন এবং আমি সবসময় কোথাও যাওয়ার আগে সবকটি এয়ারপোর্ট হয়ে যাওয়ার খরচ দেখেনি। দুবাই থেকে টার্কি যাওয়ার সময় একবার প্রধান আতাতুর্ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ফ্লাইটের দাম এত বেশি ছিল, আমি ট্রিপ প্রায় ক্যান্সেল করে দিচ্ছিলাম। কিন্তু, সৌভাগ্যক্রমে তখনই জানতে পারি, ইস্তানবুলে আছে আরও একটি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট সাবিহা গোকসেন। আর কী আশ্চর্য, টিকিট পেলাম প্রচন্ড সস্তায়। বিমান ভাড়া এত কম হওয়ায় আমি মনের আনন্দে টার্কির ইতিহাস ও সংস্কৃতি উপভোগ করতে পেরেছিলাম।
৫) যোগদান করুন ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রামে
মনে পড়ে, সেই গরমের ছুটিতে বন্ধুদের সাথে লেহ্ যাবেন ঠিক করলেন, কিন্তু টিকিটের দাম মাত্রাছাড়া হওয়ায় শেষমেশ যেতে পারলেন না? আমার কিন্তু এরম অভিজ্ঞতা নেই। সম্ভবত ফ্লাইট টিকিট কাটার সময় টাকা বাঁচানোর অন্যতম শ্রেষ্ট উপায় হল কোনও ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত মাইল রিডিম করে। ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি কোনও এয়ারলাইনের টিকিট কাটলে তাদের থেকে "মাইলস" পাবেন। মাইলস জমা করে করে তার বদলে আপনি আসল টিকিট কিনতে পারবেন। পরের বার ফ্লাইট ধরার সময় এরকম প্রোগ্রামে নাম লিখিয়ে নিতে পারেন।
কিন্তু আপনি জিজ্ঞাসা করতেই পারেন যে তাহলে ফ্রিকুয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রামে মাইলস জমা করতে গেলে তো প্রথমে টাকা খরচ করে বিভিন্ন ফ্লাইটের টিকিট কাটতে হবে। কিন্তু আমি যদি বলি যে টিকিটের প্রচন্ড চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমি জেট এয়ারওয়েজ এর মাধ্যমে দিল্লি থেকে লেহ্ রিটার্ন ট্রিপ করেছি মাত্র ১৫০০ টাকায়, তাও প্রায় ৩ বছর ধরে জেট এয়ারওয়েজের একটাও ফ্লাইট না ধরেই? কীভাবে সম্ভব জানতে চান? আমি এমন একটা এইচ.ডি.এফ.সি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি, যা আমাকে প্রতিবার ব্যবহারের পর জেট মাইলস দেয়।
৬) স্কাইস্ক্যানারের এক্সপ্লোর সুবিধাটি ব্যবহার করুন
কখনও বেড়াতে যেতে খুব ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই জানেন না যে আপনার কাছে যা টাকা আছে তার জোরে কতদূর যেতে পারবেন? এরকম সময়ে আপনার প্রয়োজন স্কাইস্ক্যানারের এই টুল বা ফিচারটির। এক্সপ্লোর ফিচারের মাধ্যমে আপনি আপনার বাসস্থান এবং বাজেট এন্টার করতে পারেন, তার বদলে স্কাইস্ক্যানার আপনাকে ওই বাজেটে দুনিয়ার কোথায় কোথায় যাওয়া যায় দেখিয়ে দেবে। আমার শেষ হং কং ট্রিপের শেষের দিকে আমার সব টাকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ভারতীয় মুদ্রায় ১০ হাজার টাকার মধ্যে কোথাও রাউন্ড ট্রিপে যেতে পারলে তবেই সেখানে যাব। প্রায় কোনও আশা না নিয়েই আমি স্কাইস্ক্যানারে এক্সপ্লোর করি, এবং সত্যিই মাত্র ১০হাজার টাকার ভেতরে ফিলিপিন্স যাওয়ার টিকিট পাই। ধন্যবাদ স্কাইস্ক্যানারকে, এমন একটা জায়গায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে, যেটা আমি ভাবিই নি।
আপনারও কী উড়তে ভালো লাগে? আপনার সবথেকে পছন্দের ফ্লাইং হ্যাকগুলো কি? জানালে খুব ভাল লাগবে।
আমি মনে প্রাণে এক পর্যটক, আজ অবধি ৬টি মহাদেশের ২২টি দেশে গেছি। অতলান্তিক মহাসাগরের বরফ শীতল জলে ডুব দেওয়া, শ্রী লঙ্কার এক বৌদ্ধ গুম্ফার সংস্কার করা, বা বোর্নিয়োর জঙ্গলে হাইকিং করা আমার কিছু স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তার সঙ্গে সঙ্গে আমি একজন প্রযুক্তিবিদ, পাবলিক স্পিকার বা ভাষ্যকার, মেরু অভিযাত্রী এবং সাস্টেনেবিলিটিতে বা পরিবেশের রক্ষাকার্যে বিশ্বাস করি। আমার গল্প ফলো করতে চাইলে আসুন www.passportuncontrol.com এবং ইনস্টাগ্রামে @geeknextdoor