দিল্লির সাকেত মেট্রো স্টেশন থেকে হেঁটে একটু দূরেই সাইদ-উল-আজিব-এর লেন নং ৩-এ এলে দেখা পাবেন চম্পা গলির। লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রাখা চম্পা গলি যেন কোনও এক রূপকথার সব পেয়েছির দেশ... শিল্প, সংস্কৃতি, চা, কফি আর স্বতঃস্ফূর্ত সংগীতানুষ্ঠান, সবই পাবেন এখানে।
পাথর বসানো সরু রাস্তায় হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন একটি ক্যাফে (ভেতরে আছে তাদের নিজস্ব রোস্টারি - বা কফী রোস্টিং করার মেশিন), একটি ডিজাইন স্টুডিয়ো, বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কশপ এবং পাড়ার চায়ের দোকানের মতন একটি পপ আপ টি স্টল। স্থানীয় মানুষদের বসবাস এবং বেশ কয়েকটি রেশন দোকানের ফাঁকে ফাঁকে এই সবকিছুই আছে চম্পা গলির ভিতরে।
ঠিকানা : খাসরা ২৫৮, লেন ৩, ওয়েস্ট এন্ড মার্গ, সাইদুলাজব, সাকেত
নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশন : সাকেত, গেট নং ২
কীভাবে পৌঁছবেন : বিভিন্ন রকম স্ট্রিট আর্ট সম্বলিত লেন ৩ ধরে ভেতরে এগিয়ে গেলে পাবেন প্রথমে ক্রাই-এর অফিস এবং একটি কোচিং সেন্টার। আর তারপরেই দেখতে পাবেন একটি বড় কালো গেট, যার ভেতরে পৌঁছলেই পাবেন গোটা উইকেন্ড কাটিয়ে দেওয়ার মতো চম্পা গলির বিভিন্ন আকর্ষণীয় ক্যাফের।
ব্লু টোকাই কফি রোস্টার্স : ক্যাফে ও রোস্টারি
এক দিল্লি দম্পতির শুরু করা এই ক্যাফেতে পাবেন একটি খুব ছিমছাম, আড়ম্বরহীন পরিবেশ। বিভিন্ন রকম কফি ব্লেন্ড, বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবার দাবার আর মনকাড়া মিউজিক মিলিয়ে পরিবেশটা একদম দুর্দান্ত। ব্লু টোকাই-এর পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বললেও অনেক কিছু জানতে পারবেন। রোস্টিং এবং ব্রিউইং উনিট-এর বিভিন্ন দিক আপনি ঘুরে দেখতে পারেন, কফি তৈরির মূল পদ্ধতি সম্পর্কেও আপনি জানতে পারবেন হাতে-নাতে। প্রতি বুধ ও রবিবার, এদের রোস্টিং রুমে ব্রিউইং সেশনের আয়োজনও করা হয়।
বিশ্রাম করতে চাইলে কয়েকটা ডেজার্ট কুলার সঙ্গে নিয়ে বসে পড়তে পারেন ক্যাফেটির খোলা ব্যাক ইয়ার্ডে। ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জে দিয়ে আপনি এখানে কাজও করতে পারেন। ব্লু টোকাই ক্যাফেতে মেসন এন্ড কো এবং আর্থ লোফ কোম্পানির অতি সুস্বাদু হ্যান্ডমেড চকোলেট ও বিক্রি হয়।
ইতিপূর্বে ব্লু টোকাই-এর আয়োজিত কয়েকটি ওপেন হাউস প্রোগ্রামে নানারকম শিল্প প্রদর্শনী, সঙ্গীত এবং কবিতা সন্ধ্যা, ও নানারকম শিল্পের নিলাম অনুষ্ঠান ও আয়োজিত হয়েছে। ক্যাফের তৃতীয় অনুষ্ঠানে, দিল্লির থিতিয়ে পড়া রেগে মিউজিক কালচারকে পুনর্জীবন দেওয়া হয়। স্কা-ভেঞ্জার্স নামের আফ্রিকান-জামাইকান ফোক ব্যান্ডের লিড গায়ক দিল্লী সুলটানেট ক্যাফেটিতে একটি জামাইকান শৈলীতে হ্যান্ডমেড রেগে সাউন্ড সিস্টেম চালু করেন।
কী কী খাবেন : কোর্তাদোস, কোকোনাট মোকা, বানানা ব্রেড, প্ৰণ জুদলস
সময় : সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা
পিপল ট্রি : স্টুডিয়ো এন্ড শপ ফর অল্টারনেট ডিজাইন
অসাধারণ সুন্দর অল্টারনেট বিভিন্ন ডিজাইনকে জনপ্রিয় করে তুলতে তৈরি হয়েছে এই স্টুডিয়ো কাম দোকানটির। পাবেন এখানে হ্যান্ড প্রিন্টেড শার্ট, খাদির জামাকাপড় এবং ব্লক প্রিন্টিংয়ের ওপর তৈরি স্টোল। স্বাধীনভাবে প্রকাশিত মজার মজার কবিতা, ছড়া, গল্প, আঁকা মিলিয়ে প্রকাশিত ছোট ছোট ম্যাগাজিন ও পাবেন এখানে। স্কিন কেয়ারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট, নানা রকম স্টাইলিশ জুয়েলারি, অখ্যাত গায়কদের মিউজিক রেকর্ড, এবং প্রাকৃতিক নন-টক্সিক বায়ো-ডিগ্রেডবল উপাদান দিয়ে তৈরি মজার মজার স্টেশনারি আইটেম, সবই পাবেন এখানে।
সময় : সকাল ১০.৩০ টা থেকে সন্ধে ৭টা
জাগ-মাগ ঠেলা : পপ আপ স্ট্রিট স্টাইল চায়ের দোকান
পিপল ট্রির পাশেই রয়েছে এই এলাকার অন্যতম আকর্ষণ, জাগমাগ ঠেলা, এটি একটি পপ আপ যা পাড়ার পুরনো চায়ের দোকানের আদলে তৈরি। সামনের কাউন্টারে এবং পিছনের ব্যাক ইয়ার্ডে বসার জায়গা আছে। সম্প্রতি ওনারা একটি রিডিং রুম খুলেছেন যেখানে আপনি পড়তে পারবেন নানা জনপ্রিয় বই, ইচ্ছে হলে আপনি বই ডোনেটও করতে পারবেন।
এই ঠেলা থেকে পাবেন সুস্বাদু কিছু চা আর কফি, আছে অসাধারণ খেতে হট চকোলেটও। কিন্তু যেটা অবশ্যই ট্রাই করবেন সেটা হল এদের আইস পপস যেগুলো বিভিন্ন রঙচঙে অদ্ভুত কম্বিনেশনে পাওয়া যায়, যেমন পুদিনার সাথে সি বাকথর্ন বেরি ফ্লেভার, কলার সাথে থাই ক্যাপুচিনো ফ্লেভার, মধু দিয়ে মাস্ক মেলন বা ডুমুর দিয়ে সবেদা ফ্লেভার।
কী কী খাবেন : আইস পপস, মশলা চা, মার্বেল কেক
সময় : সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮টা
জুগাড় - এন.পি.ও এবং হ্যান্ডিক্রাফটসের দোকান
নন প্রফিট অর্গানাইজেশন হওয়ার সাথে সাথে জুগাড়ে পাবেন নানা রকম হাতে তৈরি সুন্দর ঘর সাজানোর জিনিস - যেমন, টাই ডাই আর্টস বা নানা রকম শিল্পকর্ম। সবকিছু দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেলে চিন্তা নেই, চলে আসুন পিছনের গেটে, যেখানে দিয়ে যেতে পারবেন জামুরা ডিজাইন ল্যাবের ওয়ার্ক শপে। এই স্টুডিয়োতে কাঠ, মেটাল বা কংক্রিটের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়।
সময় : সকাল ১০ টা থেকে সন্ধে ৭ টা
চোখ বা মনের ক্ষিদে কি এখনও মেটেনি? তাহলে চম্পা গলি থেকে কয়েক মিনিটের দুরত্বে সাঈদ-উল-আজাবের এই ক্যাফে দুটি তে ঘুরে আসুন।
রোজ ক্যাফে
এই ভিক্টরিয়ান স্টাইলে সাজানো ক্যাফেটি যেন এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের পাতা থেকে উঠে এসেছে। চারপাশে গোলাপি দেওয়াল, ডিস্ট্রেসেড স্টাইলে সাজানো আসবাবপত্র এবং ফুল আঁকা চিনে মাটির কাপডিশ নিয়ে এক রাজকীয় ব্যাপার, যা ক্যাফে ছাড়ার অনেকক্ষণ পরেও আপনার মনে থেকে যাবে।
কী কী খাবেন : কাফির লাইম পাতা দিয়ে মিন্ট লেমনেড, স্কিনি পিজ্জা আর অল ডে ব্রেকফাস্ট
সোহো বিস্ত্রো এবং ক্যাফে
সাকেতের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত সোহো বিস্ত্রোর খোলা বারান্দায় বসে ক্যাফেটির সুসজ্জিত কিন্তু ছিমছাম অভিজাত ডেকোরেশন দেখার মজাই আলাদা। এদের খাবারেও ইউরোপীয় এবং কন্টিনেন্টাল প্রভাব স্পষ্ট।
তাই এই উইকেন্ডেই বন্ধু বান্ধবদের সাথে ঘুরে আসুন চম্পা গলি বা বই বা ল্যাপটপের সাথে চলে যান একলাই, পাবেন কফি, শান্তি আর কথোপকথন।