জঙ্গলের পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ যদি আপনার একমাত্র ভালবাসা হয়ে থাকে, তাহলে জিম করবেট অভয়ারণ্যের সীমানায় অবস্থিত পাতলিদুন সাফারি লজ হতেই পারে আপনার একমাত্র গন্তব্য | পাখিদের কাকলি মুখরিত, ঘুঘুর পোকার সমন্বয় ধ্বনি, এই সবকিছু মিলিয়ে এই সবুজ পাহাড়ে মোড়া জায়গাটি বেশ মোহময়ী | ‘পাতলিদুন'-এর অর্থ হল সংকীর্ণ উপত্যকা | এই সাফারি লজটিতে কুমায়নী প্রথা ও শহুরে ঐশ্বর্যের সূক্ষ্ম মেলবন্ধন লক্ষ করা যায় |
কাদের জন্য উপযুক্ত:
যে সমস্ত পর্যটকদের অফবিট স্থান পছন্দ তাদের জন্য পাতলিদুন সাফারি লজটি আদর্শ | প্রকৃতি প্রেমী মানুষ এই জায়গাটিকে হনিমুন স্পট হিসেবে বেছে নিতে পারেন | ২০১৬ সালে আউটলুক ট্রাভেলসের বুটিক হোটেল অ্যাওয়ার্ডস-এ এই লজটি শ্রেষ্ঠ হনিমুন হোটেলের শিরোপা পেয়েছে |
পাতলিদুন সাফারি লজে আপনি অন্যান্য লাক্সারি হোটেলের মতো বিলাসিতায় রাত্রিবাস করতে পারেন, আবার লজ থেকে করবেট জঙ্গলের রোমাঞ্চকর জীবন, গোপনীয় ট্রেইল অন্বেষণ করার অভিজ্ঞতাও উপলব্ধি করতে পারেন |
পাতলিদুন সাফারি লজ সমন্ধে কয়েকটি বিশেষ কিছু তথ্য:
হিমালয়ের শিবলিক রেঞ্জের পাদদেশে এবং উত্তরাখণ্ডের ভাকরাকোট গ্রামের নিকটবর্তীস্থানে পাতলীদুন সাফারি লজের অবস্থান | এই অঞ্চলটির চারিদিকে বিভিন্ন ধরণের গাছের সমাবেশ, এর মধ্যে কয়েকটি বিলুপ্ত প্রায় গাছও পরিলক্ষিত হতে পারে | এখানকার বিস্তীর্ণ তৃণভূমি আর নিকটবর্তী কোশি নদীর এলোমেলো গতিপথ আপনাকে মুগ্ধ করবেই | পাতলিদুন সাফারি লজ প্রায় ১৩ একর জমির উপর বিস্তৃত ১২ টি কটেজ -এর সমন্বয়ে গঠিত |
লজের পারিপার্শ্বিক রূপটির মধ্যে কুমায়নি ঐতিহ্যের একটা সুস্পষ্ট আভাস লক্ষ করা যায় | কাঠ দ্বারা নির্মিত বিশাল তোরণদ্বার, পাথরের কারুকার্য-এর সমাবেশ, লজের বারান্দায় থাকা তুলসী মঞ্চ - আপনার ভ্রমণের আমেজটা আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই পারে | উত্তরাখণ্ডের ছোট ছোট নদী ও হিন্দু ক্যালেন্ডারের মাসের নাম অনুসারে এই কটেজগুলোর নামকরণ হয়েছে|
কটেজের প্রত্যেকটি কক্ষের সাথে প্রাচীন আসবাব, সাঁতার এর উপযুক্ত জলাশয়, সুবিশাল এবং প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে | এই রাজকীয় কটেজগুলোর মূল আকর্ষণ হল কটেজের জানালা | পাশ্চাত্য দেশগুলোর ধাঁচে তৈরি এই বিশাল জানালা থেকে প্রকৃতির রূপটি দেখলে মনে হয় কেউ যেন তুলির সাহায্যে পরিপূর্ণ ভাবে সাজিয়ে তুলেছে | কটেজে একান্তে মনোরম পরিবেশে আপনার মনের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ‘বাটলার উইন্ডো'-এর ব্যাবস্থা করা হয়েছে, যার সাহায্যে বিনা ব্যাঘাতে খাদ্যদ্রব্য আপনার কক্ষে সরবরাহ করা হবে | এছাড়াও, প্রত্যেকটি কটেজে সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে |
আহার:
পাতলিদুন লজের লাগোয়া জায়গাটিকে কৃষিকার্যের জমি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে | লজের কর্মীরা এই জমি থেকে উৎপাদিত সবজি আর ফল দিয়েই অতিথি আপ্যায়ন করে থাকেন | কটেজ থেকে বাইরের দিকে বেরোলে দেখতে পাবেন স্থানীয় মানুষজন তাদের কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত | প্রত্যেকদিন তাঁরা অতি যত্ন সহকারে সবজি উৎপাদন করছেন | এছাড়া, তাদের নিজেদের বাগানেও সারি বেঁধে রয়েছে পেপে গাছ, আম গাছ, ছোট ছোট টমেটো গাছ, ইত্যাদি |
লজের রাঁধুনিরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং সুচারু রন্ধনশিল্পী হিসেবে প্রখ্যাত | লজের রন্ধনশিল্পীরা আপনার পছন্দ অনুযায়ী খাবার খুব কম সময়েই আপনার সামনে হাজির করতে সক্ষম | এখানে এসে কুমায়নি খাবারের স্বাদ নিতে কিন্তু অবশ্যই ভুলবেন না |
খরচ:
• লাক্সারি কটেজ – রাত্রিবাসের খরচ ১৪,০০০ টাকা থেকে শুরু |
• প্রিমিয়াম লাক্সারি কটেজ – রাত্রিবাসের খরচ ১৫,০০০ টাকা থেকে শুরু |
(এই খরচটির মধ্যে প্রত্যেকদিনের প্রাতঃরাশ -এর খরচ অন্তর্ভুক্ত |)
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময়:
অক্টোবর থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত সময় টিকে জিম করবেট ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে গণ্য করা হয় | বর্ষায় বৃষ্টিস্নাত দিনের পর, রোদঝলমলে দিনে শীতের হালকা প্রলেপ গায়ে মেখে জঙ্গল ভ্রমণ করার আনন্দটা এক্কেবারে অন্যরকম স্বাদ এনে দেয়| আপনি যদি ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এখানে ভ্রমণে আসেন এবং ভাগ্য সহায় থাকলে তুষারপাতরেও সাক্ষী হতে পারেন | তবে প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ পরিদর্শন করতে পাতলিদুনে বছরের যে কোনও সময় আসার জন্য আপনার আগাম নিমন্ত্রণ রইল |
পাতলিদুনে আকর্ষণীয় স্থান:
জঙ্গল সাফারি:
পাতলীদুন যেহেতু করবেটের সীমান্তে অবস্থিত, তাই খুব সহজেই এই লজ থেকে জিম করবেট অভয়ারণ্য ঘুরে আসতে পারেন | একটা ছয় সিটের জীপ্ ভাড়া করে পৌঁছে যান করবেট |অভয়ারণ্য প্রবেশের খরচ ও সমস্ত রকম ট্যাক্স সহযোগে যার খরচ পড়বে প্রায় ৩০০০ টাকার মতো | এই সাফারি পরিদর্শনের সময়সীমা হল সকাল ৬টা থেকে ১০ টা এবং দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত |
চেনা ও অচেনা পাখিদের সাথে সাক্ষাৎ ও পরিচয়:
এই পার্কটিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আস্তানা বলা যেতে পারে | এখানে আপনি প্রায় ৫৮০ টি -বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সন্ধান পেতে পারেন | লজ থেকে হেঁটে একটু দূর গেলে দেখতে পাবেন শাল গাছের কোলে পাখিগুলো তাদের বাসস্থান গড়ে তুলেছে | ধূসর বর্ণের সারস, টিয়া, রাজহংসীর সাথে আলাপ করতে আপনাকে আসতেই হবে পাতলিদুন |
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আহরণ:
প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে চাইলে লজ থেকে হেঁটে ঘণ্টা তিনেক দূরত্বে মধ্যে জঙ্গলের রাস্তা ধরে ঘুরে আসতে পারেন | এই পথে আপনার সঙ্গী হবে ছোট্ট পাহাড়ি নদী, একটি জলপ্রপাত আর শিবালিক পর্বতমালা |
স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ স্থানীয় জিনিস ক্রয়:
এই সাফারি লজের নিজস্ব একটি চা-এর ব্যবস্থা রয়েছে | স্থানীয় মানুষ পরিচালিত এই দোকানটিতে কুমায়নি স্ন্যাক্স সহযোগে চা বিক্রি করা হয় | পাতলিদুন, এই এলাকার স্থানীয় কুটির শিল্পে সক্রিয় সহযোগিতা করে থাকে, তাই লজের ভিতরেই দোকানটিতে রন্ধনের প্রয়োজনীয় অর্গানিক মশলা, মধু ইত্যাদি বিক্রি হয় | ইচ্ছা করলে এই প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো আপনি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ক্রয় করতে পারেন |
পথনির্দেশ:
পাতলিদুন সাফারি লজ নৈনিতাল জেলার ভাকরাকোট গ্রামে অবস্থিত |
বিমানে: পাতলিদুন সাফারি লজ-এর নিকটতম বিমানবন্দরটি হল পান্থনগর| বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে ৫০ কিমি দূরত্বে পৌঁছে যান সাফারি লজে |
ট্রেনে: পাতলিদুন পৌঁছনোর জন্য নিকটতম রেল স্টেশনটি হল রামনগর | ভারতের যে কোনও বড়ো শহর - কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, ভুবনেশ্বর, কোচিন স্টেশন থেকে সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন রামনগর | স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে অথবা জীপ্ ভাড়া করে মাত্র ৪০ মিনিটের দূরত্বে পৌঁছে যান গন্তব্যে |