বাগরাকোট থেকে লাভা লোলেগাঁও যাওয়ার পথে পাহাড়ের কোলে সবুজে ঢাকা একটি ছোট্ট গ্রাম হল চুইখিম। শিলিগুড়ি থেকে ওথলাবাড়ির সাড়ে চার কিলোমিটার আগে বাম দিকে টার্ন নিয়ে আড়াই কিলোমিটার গেলে পাবেন বাগরাকোট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল (বাগরাকোট)। বাগরাকোট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ডানদিকে টার্ন নিয়ে ঘন জঙ্গলের বুকচিরে সামান্য অফরোডিং করে পৌঁছে যাওয়া চুইখিম। ৫২ কিলোমিটারের মত সম্পূর্ণ যাত্রাপথ। পথের ধারে পাবেন দেখা লিস নদীর, তবে ছুঁতে পারবেন না। দূর থেকে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলা লিস দেখেই আবারও এগিয়ে চলা এবং পৌঁছে যাওয়া গন্তব্যে। কুলিম্পংয়ের উপত্যকা এবং হিমালয়ের কুয়াশা দ্বারা চুইখিম লুকিয়ে আছে, চুখিম উত্তর বঙ্গের এক অজানা রত্ন যা পাহাড়ী দৃশ্য, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, ট্রেকিং, মাউন্টেন ভিউ, পাখি এবং প্রজাপতি পর্যবেক্ষণ সহ প্রসারিত একটি অ্যাড্রেনালাইন ভরা অ্যাডভেঞ্চারে গর্বিত, জলপ্রপাত, গভীর জঙ্গল, প্রজাপতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ, ভিলেজ হাইকিং।
আপনি যদি সিনেমার মতো বনের মধ্যে লুকানো জলপথ এবং উঁচু জলপ্রপাত দ্বারা ঘেরা এবং ট্রেকিংয়ের বিষয়ে উন্মাদ হন, তবে উত্তরবঙ্গে চুইখিম ছাড়া আপনার আর কোনও দরকার নেই। চুইখিম তার বিভিন্ন প্রজাপতি-পতঙ্গ এবং বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সংমিশ্রনের জন্য শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিদ এবং গবেষকদের কাছে একটি বিশেষ তাত্পর্য প্রাপ্য। এই ক্ষুদ্র পার্বত্য গ্রামগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার আত্মাকে পূর্ণ করবে। এটি চারপাশে হিলস্লোপস এবং ঘন বন দ্বারা বেষ্টিত।
চুইখিম হলো পাখি এবং প্রজাপতি-মথেদের স্বর্গরাজ্য। ছাত্র-ছাত্রী এবং বোটানিস্টদের কাছে চুইখিম এক আলাদা মাহাত্বের দাবিদার এর রকমারি প্রজাপতি-মথেদের এবং নানা প্রজাতির উদ্ভিদ সমাহারের জন্য। চুইখিমের বিশেষত্ব এখানকার মনোরম প্রকৃতি, সানসেট ভিউ পয়েন্ট, স্থানীয় সংস্কৃতি, খাবার এবং জঙ্গল। চুইখিমের জঙ্গলে বার্ড ওয়াচিং, বাটারফ্লাই এবং মথ ওয়াচিং এর জন্য প্রতিবছর উৎসুক প্রকৃতিপ্রেমী, বিশেষজ্ঞ এবং ছাত্র-ছাত্রী রা ভিড় করে থাকেন। এছাড়াও চুইখিমের সাথে জুড়ে আছে লোকমুখে প্রচলিত নানান উপকথা, লোকগাথা এবং রোমাঞ্চকর সব কাহিনী। যা আপাত কল্পনায় কতকটা আষাঢ়ে লাগলেও এমন নিভৃত নিরালায় সদ্য জ্বালানো গনগনে ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে অবিরাম ঝিঁঝি র ডাকের মাঝে হয়ত আপনার শরীরের শিহরণ জাগাবে। এছাড়াও আছে এখানকার মানুষ, তাঁদের বেঁচে থাকা, উত্থান-পতনের জীবনকাহিনী। পাহাড়ের কোলে পাহাড়িয়া হয়ে সদ্য আগুন দেওয়া ধোঁয়া ওঠা উনুনের পাশে বসে আপনিও শুনতে পারেন প্রকৃতির সাথে সখ্যতা করে বেঁচে থাকা কর্মঠ মানুষগুলোর সরল সাধারণ জীবনযাত্রা, জীবিকা, উপার্জন, প্রেম-ভালোবাসার সুখ দুঃখের কাহিনী। হয়ত অবাক হবেন আপনি, নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ওদেরই একজন হয়ে গিয়ে পাহাড়িয়া হয়ে বাসা বাধঁতে মন যাবে আপনারও চুইখিমের কোলে।
দূর পাহাড়ের কোলে উদিত সূর্যের প্রথম কিরণ গায়ে মেখে ব্ল্যাক টি র কাপ হাতে নিজের রুমের বাইরে এসে দাঁড়ালেই আপনাকে সুপ্রভাত জানাবে ভোরের পাখিরা। বেলা বাড়লে ভিলেজ ওয়াকে বেরিয়ে গ্রামের পাথুরে পথ ধরে পায়ে পায়ে হেঁটে যেতে পারেন। পরিচিত হবেন এখানকার মানুষের রুজিরুটি, কালচার, জীবন বৈচিত্রের সাথে। হয়তোবা কোনো খামারের পাশ দিয়ে যেতে যেতে পাকা কফি বিনস বা গোলমরিচের থোকা দেখে দাঁড়িয়ে পরতে পারেন। জঙ্গলের পথ আপনাকে প্রত্যহ রুটিনমাফিক জীবনযাত্রা থেকে মুক্তির দিশা দেখাবে। শরীর মন মুক্ত প্রকৃতির মাঝে তাজা হয়ে উঠবে।
হলিডে ডেস্টিনেশন হিসাবে পাহাড়ের কোলে মুক্ত প্রকৃতির মাঝে নির্জঞ্ঝাট কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য চুইখিমের কোনো বিকল্প নেই। চুইখিমের অনন্য সৌন্দর্য আপনার মন কাড়তে বাধ্য।
চুইখিম একটি পরিবেশ বান্ধব গ্রাম। একজন দায়িত্বশীল ভ্রমণকারী হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই গ্রাম এবং পরিবেশকে দূষিত না করা এবং দূষণমূলক সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকা।