কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক বিভিন্ন ভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। তার প্রভাব পড়েছে আমাদের কর্মক্ষেত্রে, জীবনযাত্রায়, খাদ্যাভ্যাসে এবং আমাদের বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানে বা অভ্যাসে। আসতে আসতে আমরা এই নতুন নর্ম্যাল জীবনের সাথে মানিয়ে নিচ্ছি এবং সুস্থ থেকে নতুন নিয়মে নতুন ভাবে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। আমাদের মতো বহু পর্যটক আবার নতুন করে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন এবং সবার মনে একটাই প্রশ্ন, প্যান্ডেমিক পরবর্তী কালে ঘুরতে বেরোলে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে? নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখতে হবে? আসুন, দেখে নি আগামী বছর আমরা কীভাবে নতুন নর্ম্যালকে মাথায় রেখে মনের মতো করে সুরক্ষিত ভাবে ঘুরে আসতে পারি।
প্যান্ডেমিকের পরে কোথায় বেড়াতে যাবেন :
প্রথমেই ঠিক করুন আপনি কোথায় বেড়াতে যেতে চান। যেহেতু কোভিড পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলো এখনও অনিশ্চিত, তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পরার বদলে আমাদের উচিত নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বানিয়ে, সেটাকে যাচাই করে এবং সবশেষে সেটাকে মেনে এগিয়ে চলা।
অন্তর্দেশীয় / ডোমেস্টিক : ভারতবর্ষের মধ্যে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া নিয়ে বর্তমানে কোনও বাধানিষেধ না থাকলেও, প্রতিটি রাজ্যের কিছু নির্দিষ্ট বিধি আছে। যে রাজ্যে যাবেন, সেই রাজ্যের সরকারি নির্দেশাবলী আগে থেকে জেনে নিন। নির্দেশাবলী জানতে আপনি সেই রাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটে যেতে পারেন। নির্দেশানুসারে কোনও পারমিটের প্রয়োজন হলে সেটি সঠিক কর্তৃপক্ষ দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিন এবং ভ্রমণকালে সবসময় সঙ্গে রাখুন।
আন্তর্জাতিক / ইন্টারন্যাশনাল : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে রয়েছে আলাদা নিয়ম। বেশ কিছু দেশের সীমানা ভারতীয়দের জন্যে এখনও বন্ধ। আবার বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে এয়ার বাবল চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয়রা সেই দেশে যেতে পারছেন - আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, মালদ্বীপ এবং আরও কিছু আফ্রিকার দেশে শর্তসাপেক্ষে ভাবে যেতে পারছেন ভারতীয় যাত্রীরা। প্রতিটি দেশে যাত্রা করার পূর্বে সেই দেশের ভিসা এবং স্পেশাল প্যান্ডেমিক সংক্রান্ত যোগ্যতা পূর্ণ করতে হবে।
মনে রাখবেন, যেহেতু পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল, তাই যেকোনও রাজ্যে বা দেশে যেকোনও সময় কোয়ারান্টিনে থাকার প্রয়োজন হতে পারে। পর্যটকদের সেক্ষেত্রে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
নিউ নরম্যাল এবং নতুন নিয়ম কানুন : কী কী পরিবর্তন আমাদের মাথায় রাখা উচিত
বিমানযাত্রা বা ফ্লাইটস্ : বর্তমানে প্রায় সমস্ত ফ্লাইটে মুখোশ, ফেস শিল্ড এবং গ্লাভস পরে ওঠা বাধ্যতামূলক। কিছু কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে পিপিই পরে উঠতে এবং নামতে হচ্ছে। সৌভাগ্যক্রমে এই সকল উপকরণ এয়ারপোর্টে আপনাকে দেওয়া হবে। কিন্তু অবশ্যই আগে থেকে ওয়েব চেক-ইন করিয়ে রাখবেন এবং হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছবেন।
বিমানপথে যাত্রাকরার সময় আপনাকে থার্মাল স্ক্যানার বা ডিসিনফেকশন টানেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে। ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট বা খাবার দাবারের ক্ষেত্রেও আগের তুলনায় কড়াকড়ি দেখতে পাবেন।
বেড়াতে গিয়ে খাওয়াদাওয়া : ভ্রমণকালে আমরা সকলেই চাই নতুন জায়গাতে নতুন জিনিস খেয়ে দেখতে এবং সেদিক থেকে স্ট্রিটফুড অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু ভবিষ্যতে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এমন রেস্টুরেন্টে যান যেখানের হাইজিন নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। সবসময় হাত ধুয়ে এবং স্যানিটাইজ করে নিন খাওয়ার আগে। অপর ব্যক্তির কাঁটা চামচ বা প্লেট ব্যবহার করবেন না। বসে খাওয়ার জায়গায় খুব ভিড় থাকলে নিরাপদ পদ্ধতিতে তা প্যাকেজিং করিয়ে দূরে গিয়েও খেতে পারেন।
ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স : এতদিন পর্যন্ত দেশে বিদেশে বেড়াতে গিয়ে আপনার হয়তো ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার খরচ বা ফ্লাইট, ক্রুজ, ট্যুর বা হোটেল প্ল্যান ক্যান্সেল হলে তার খরচার অধিকাংশ আপনি ফেরত পেতে পারেন উপযুক্ত ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স বা ভ্রমণ বীমা করানো থাকলে।
প্যাকিং : বর্তমানে বিশেষ প্রয়োজন আগে থেকে সমস্ত রকম প্যাকিং করে রাখা যাতে পথে ঘাটে সমস্যায় পড়তে না হয়।
নিউ নর্ম্যালে যে জিনিসগুলো আপনার অবশ্যই সঙ্গে রাখা প্রয়োজন : সার্জিক্যাল মুখোশ, ফেস শিল্ড, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডিসিনফেকট্যান্ট স্প্রে, নিজস্ব জলের বোতল, সাবান এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, প্রেসক্রিপশন সমেত। ইন্স্যুরেন্সের কাগজ এবং ট্র্যাভেল পারমিট, প্রয়োজন অনুসারে সাথে রাখবেন। প্যাকিং করার আগে একবার রুটিন হেল্থ চেকআপ করিয়ে নিতে পারেন।
বুকিং : বর্তমানে অনলাইন বুকিং করা সমস্ত জায়গায় বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। হোটেল, ট্রেন, প্লেন, মিউজিয়াম, গ্যালারি, প্রদর্শনী, যে সমস্ত দ্রষ্টব্য আছে, তার টিকিট অনলাইনে পাওয়া গেলে ভিড় এড়িয়ে আগে থাকতে করে নিন। ভ্রমণ কালে যতটা নো কনট্যাক্ট প্রটোকল মেনে চলতে পারবেন, আপনি এবং আপনার পরিবার থাকবে ততটাই সুরক্ষিত। এছাড়া অনলাইনে আগে থেকে বুকিং করলে আপনি বেশ কিছুটা ছাড় ও পেতে পারেন।
বেছে নিন অফবিট ডেস্টিনেশন : আসতে আসতে যত বেশি সংখ্যক মানুষ বেড়াতে শুরু করবেন, জনপ্রিয় জায়গা গুলিতে হঠাৎ করে ভিড় বাড়তে আরম্ভ করবে। তাই বেছে নিন আপাত ভাবে কম জনপ্রিয়, কিন্তু অল্প পরিচিত এবং সুরক্ষিত ডেস্টিনেশন যেখানে আপনি ভিড় এড়িয়ে নিরাপদে আপনার ছুটি উপভোগ করতে পারবেন
কোভিড পরিস্থিতিতে ভ্রমণকালে সুস্থ থাকার জন্যে কী কী মেনে চলবেন
নিয়মিত হাত সাবান দিয়ে ধোবেন বা স্যানিটাইজ করবেন। হাত না ধুয়ে মুখে, চোখে বা খাবারে হাত দেবেন না।
পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা অন্যান্য জায়গায় টেবিল, হেড রেস্ট, হ্যান্ডেল ইত্যাদি ধরার আগে স্যানিটারি ওয়াইপ দিয়ে মুছে দিতে পারেন বা ডিসিনফেকটেন্ট স্প্রে করতে পারেন।
যথেষ্ট খাবার এবং জল খান, ভিটামিন সি এবং ডি বেশি করে খেতে পারেন এবং রাত্রে ভাল করে ঘুম।
এমন কোনও জায়গায় যাবেন না যেটি কোভিড-১৯ হটস্পট বলে চিহ্নিত হয়েছে।
ভ্রমণকালে শরীর খারাপ হলে অবিলম্বে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ কর।
আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খবর দিন যাতে নিরাপদে চিকিৎসা লাভ করতে পারেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যে আমরা যে নতুন রকমের স্বাভাবিক অবস্থায় পৌঁছতে চলেছি, সেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বা ভ্রমণে, বিশেষ সতর্কতার এবং নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা প্রয়োজন হবে। আশা করি আমরা সবাই মিলে এই মহামারীকে জয় করব আর নতুন বছরে নতুন উদ্যমে আমরা এই বিশ্বজগৎকে আবার খুঁজে পাব।