ব্রহ্মকমল একটি ফুলের নাম, যেটি হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে প্রধানত জন্মাতে দেখা যায় | ব্রহ্মকমল - এই নামটা হয়তো অনেকেরই অজানা, তবে পর্বতপ্রেমী মানুষেরা এই নামটির সঙ্গে বেশ পরিচিত | পর্বতের সমারোহে উত্তরাখণ্ড রাজ্যে এই পাহাড়ি ফুলটির বিশেষ মর্যাদা আছে |
হিন্দু পুরাণ অনুসারে এই ফুলের বৈশিষ্ট্য
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মনে করা হয়, সৃষ্টির আধার ভগবান ব্রহ্মা যে কমল ফুলের (পদ্ম ফুলের ) উপর উপবেশন করতেন, সেই ফুলটি হল এই ব্রহ্মকমল | আবার হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দেবী পার্বতী তাঁর সন্তান গণেশের পুনঃজীবনের জন্য ব্রহ্মার কাছে অমৃত জলের সন্ধান করেন | ভগবান ব্রহ্মা সেই সময় দেবী পার্বতীর অনুরোধে এই ব্রহ্মকমল সৃষ্টি করেন | সেই প্রথা অনুসরণ করেই আজও এই ফুলের মধ্যে থাকা জলটিকে জীবন দায়ী এবং অমৃত সমান মনে করা হয় |
ফুলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
এই ফুলটি সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৪৫০০ মিটার উচ্চতায়, হিমালয়ের তরাই-ভাঙর অঞ্চলে প্রস্ফুটিত হয় | এই ফুলের অলৌকিক রহস্যটি হল এই ফুলটি বছরে মাত্র একবারই ফোটে | অর্থাৎ এই ব্রহ্মকমল গাছটিতে বছরে মাত্র একটিই ব্রহ্মকমল ফুল ফুটতে দেখা যায় | এই ফুলটি সাধারণত মধ্য রাতে প্রস্ফুটিত হয় | শ্বেতশুভ্রবর্ণের এই ফুলটি পাহাড়ের রুক্ষ্ম, শুষ্ক পরিবেশে, শীতল আবহাওয়ায়, দুর্গম স্থানে দেখতে পাওয়া যায় | কথিত আছে, যে মানুষ জীবনে একবার ব্রহ্মকমল প্রস্ফুটিত হতে সচক্ষে দেখেছে, তাঁর সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়েছে | ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি সুপ্রসিদ্ধ জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী কেদারনাথ মন্দিরে প্রতিদিন এই ব্রহ্মকমল অর্পণ করেই পূজার্চনা করা হয় |
প্রধান আকর্ষণ:
এই ব্রহ্মকমল দর্শনের পাশাপাশি আপনি ঘুরে আসতে পারেন প্রসিদ্ধ চারধাম যাত্রার একটি যাত্রা কেদারনাথ ধামে | উত্তরাখণ্ড রাজ্যের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার এই মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৩৫৮৩ মিটার উচ্চতায় এবং মন্দাকিনী নদীর তীরবর্তী স্থানে অবস্থিত | চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত মন্দিরের ঠিক পিছনের দিকে সুউচ্চ হিমালয়ের মনোমোহিনী রূপ, অন্যদিকে খরস্রোতা মন্দাকিনী নদীর শব্দ এবং মন্দিরের পরিবেশের মধ্যে স্বর্গীয় আমেজ, আপনাকে মুগ্ধ করবেই | গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথ ট্রেক করেও যেতে পারেন | এছাড়া ঘোড়া, ডুলি, এমনকি হেলিকপ্টার-এও পৌঁছতে পারেন |তবে প্রকৃতির নিগূঢ় রহস্যের সন্ধান পেতে চাইলে আপনাকে কিন্তু ট্রেক করেই যেতে হবে |
যাত্রাপথ: সহজসাধ্য
দূরত্ব: গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথ মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি
সময়: ৭ ঘণ্টা |
কেদারনাথ থেকে একদিনের ট্রিপে পৌঁছে যেতে পারেন বাসুকি তাল | মন্দাকিনী নদী পার করে, ছোট এবং খাড়াই পাহাড় পেরিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান বাসুকি তাল-এর উদ্দেশ্যে | এখানে আপনার সঙ্গী হিসেবে রয়েছে শুভ্র বরফাচ্ছন্ন হিমালয়, নীল আকাশ আর তার সঙ্গে সাদা মেঘের ভেলা | কিছু দূর এগোলেই দেখতে পাবেন পাহাড় বেয়ে ঝরণা ধারা নেমে আসছে, এই ঝরণাগুলো অদূরেই মন্দাকিনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে | প্রকৃতির এই অপরূপ এবং বিচিত্র শোভা দেখতে দেখতে সোজা পৌঁছে যান বাসুকি তাল | সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৪১৩৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই হিমবাহ লেকটি | লেকটির চারিদিকে পাহাড়ের বিন্যাস দেখলে মনে হয় কেউ যেন তাঁর রমণীয় প্রেয়সীকে দেহরক্ষী দ্বারা সুরক্ষিত করে রেখেছেন | একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, লেক তীরবর্তী স্থানে সারি বেঁধে ব্রহ্মকমল ফুলের কুঁড়ি ফুটে উঠছে | প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই বাসুকি তাল এর রাস্তাটা খুবই দুর্গম | তার ট্রেকে যাওয়ার আগে সুদক্ষ পথ প্রদর্শক বা স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে যাওয়াই ভাল |
কাঠিন্য: অন্যান্য ট্রেক এর তুলনায় দুর্গম |
দূরত্ব: ৮ কিমি
সময়: প্রায় ১০ ঘণ্টা
ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময়:
ব্রহ্মকমলের উদ্দেশ্যে ট্রেক করার জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হল মে মাস - অক্টোবর মাস |
কাদের জন্য উপযুক্ত:
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্বতারোহীদের জন্য ব্রহ্মকমল ট্রেকটি উপযুক্ত বলতেই হবে |
কোথায় থাকবেন:
ব্রহ্মকমলের উদ্দেশ্যে ট্রেক করতে যেতে চাইলে আপনাকে কেদারনাথ মন্দিরের কাছের হোটেলগুলোকেই রাত্রিবাসের জন্য বেছে নিতে হবে | কেদারনাথে হোটেলে রাত্রি বাসের খরচ মোটামুটি ১৩০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকার মধ্যে |
কীভাবে যাবেন:
ট্রেনে
ভারতের যে কোনও ছোট বড় শহর থেকে পৌঁছে যান হরিদ্বার অথবা দেরাদুন স্টেশন | হরিদ্বার থেকে ১১৪ কিমি অথবা দেরাদুন থেকে ১০৩ কিমি দূরত্বে অবস্থিত গৌরীকুণ্ডে পৌঁছে যান ১টা ছোট গাড়ি করে | গৌরীকুণ্ড থেকে ঘোড়ায়, ডুলি, হেলিকপ্টার বা ট্রেক আপনার পছন্দ মতো যাতায়াতের সুবিধা বেছে নিতে পারেন |
বিমানে
ভারতের যে-কোনও ছোট বড় শহর থেকে পৌঁছে যান দিল্লি বিমানবন্দর| দিল্লি থেকে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারবেন দেরাদুন নিকটবর্তী জলি গ্রান্ট বিমানবন্দরে | বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৯৬ কিমি পেরোলেই আপনিই পেয়ে যাবেন গৌরীকুণ্ড |