নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা...

Tripoto
Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 1/9 by Deya Das
প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খোঁজার এক প্রচেষ্টা (ছবি সৌজন্যে: অনুজ মালিক)

পাহাড়ি অঞ্চল এবং তার প্রকৃতি সকল ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সেরা পর্যটন স্থান হিসেবেই সুপরিচিত| কিন্তু পার্বত্য প্রকৃতির এই রূপসৌন্দর্য্যের সঙ্গেই আপনার হোটেলের অন্দরসজ্জাটির মধ্যেও যদি প্রাকৃতিক রূপের কোমল ছোঁয়া থাকে, তাহলে তার চেয়ে ভাল পর্যটন স্থান অন্য কিছুই হতে পারে না | সপ্তাহ শেষে এই ধরণের প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে প্রিয়জনের সঙ্গে সেরা একটা মুহূর্ত কাটানোর জন্য আপনার গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে ঝিল্লিঙ্গ টেরাস| এই হোটেলটির একটি অন্যতম আকর্ষণ হল, প্রত্যেকটি ঘরের নামকরণেই রয়েছে প্রকৃতির নিপুণ প্রতিচ্ছবির ছোঁয়া |

ঝিল্লিঙ্গ টেরাস:

১৯৩৩ সালে একজন সংস্কৃত পন্ডিতের পোলিশ স্ত্রী তাঁর নিজের দেশ পোল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন | সেই ইচ্ছা অনুসারেই সেই পন্ডিত উত্তরাখণ্ডের গভীর অরণ্যের মধ্যে, শীতল আবহাওয়া পরিপূর্ণ পরিবেশে, সুউচ্চ হিমালয়ের দক্ষিণে, গোলা রেঞ্জ নিকটবর্তী স্থানে একটি চেস্টনাট হাউস নির্মাণ করেন | ৮০ বছর পরে পুরনো সেই ভালবাসার বাড়িটি আজ ঝিল্লিঙ্গ টেরাস নামক হোমস্টেতে পরিণত হয়েছে |

এই হোমস্টেটি নির্মাণ করা হয়েছে নন্দাদেবী এবং অন্যান্য শৃঙ্গের মধ্যবর্তী অঞ্চলে | প্রাকৃতিক শোভা পরিবেষ্টিত এই হোমস্টেটির অন্দরসজ্জায় প্রকৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে যুক্ত গাছপালা এবং জীবজন্তুর কোমল রূপ বৈচিত্র্যের আবছা ছোঁয়া লক্ষণীয়| এই হোমস্টের নিচের তলার দুইটি সুইট বুরাংশ ও উটিশ নামে পরিচিত, যার মধ্যে নিজস্ব একটি করে সাক্ষাৎকক্ষ আছে | এছাড়া উপরের তলায় কাফল ও পদম নামে দুই শয্যা বিশিষ্ট দুইটি সুইট আছে|

পদম:

হিমালয়ান চেরি ফুল ‘পদম’-এর নাম অনুসারে একটি মিনি সুইটটির নামকরণ হয়েছে |এছাড়াও হালকা গোলাপি রং করা এই কক্ষটির মেঝেটি কাঠ দ্বারা নির্মিত | এই মিনি সুইটে একটা সুন্দর বারান্দাও রয়েছে | এই বারান্দা থেকে সকালের সোনালি আভায় পূর্ণ হিমালয়ের রূপ অথবা সন্ধে নামার ঠিক আগে রঙিন আলোয় মাখা হিমালয়ের থেকে শুভরাত্রি অভিবাদন পেতে হলে আপনাকে আসতেই হবে ঝিল্লিঙ্গ টেরাসে|

Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 2/9 by Deya Das
সুসজ্জিত থাকার বন্দোবস্ত (ছবি সংগৃহীত)

কাফল

ভারতীয় ও নেপাল সীমান্ত বরাবর পার্বত্য অঞ্চলের বিখ্যাত ফল বে-বেরি বা বক্স মির্টলে- র নাম অনুসারে কক্ষটির নাম হয়েছে কাফল | দুইজনের থাকার মতো উপযুক্ত কক্ষটি হলুদ, ফিরোজা এবং সবুজ-এই তিনটি রং মিলিয়ে একটি নতুন রঙে সজ্জিত হয়েছে; যার প্রথম দর্শনেই একটা অন্যরকম আরাম অনুভূত হয় | কক্ষটির সুবিশাল জানালা দিয়ে উঁকি মারে একমাত্র হিমালয় | সারাদিন হিমালয়ের মুখোমুখি বসে একান্তে প্রকৃতির শোভা উপভোগ চাইলে কক্ষটির বারান্দাটি কিন্তু মন্দ নয় |

Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 3/9 by Deya Das
সকালের রোদ্দুরে মনোরম পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)
Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 4/9 by Deya Das
পাহাড় এবং প্রকৃতির সংস্পর্শে (ছবি সংগৃহীত)

উটিশ

ভারতের উত্তরবর্তী অঞ্চলে সুবিশাল অল্ডার গাছের নাম অনুসারে কক্ষটির নাম উটিশ|এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, এই গাছের কাঠ মজবুত হওয়ার কারণে এটি অন্দরসজ্জার আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয় | কক্ষগুলোর মধ্যে তোয়ালে রাখার আলনা, টয়লেট পেপার এর হোল্ডার, এমনকি আয়নাটিও অল্ডার গাছের কাঠ দ্বারা নির্মিত | হালকা নীলাভ বর্ণের এই সুইটটি ছোট পরিবারের পর্যটকদের জন্য একেবারে উপযুক্ত | নিচের তলায় প্রশস্ত বারান্দা এবং সুইটের পিছনের দিকের ছোট্ট বাগানটি সমস্ত পর্যটকদের মন ভাল রাখার জন্য আদর্শ স্থান | উটিশে পর্যটকদের সাক্ষাৎকারীদের জন্য বিশেষ কক্ষের ব্যবস্থা আছে | এছাড়াও, সুইটের লিভিংরুমে একটি ফায়ারপ্লেস এবং সব বয়সের পর্যটকদের জন্য গেমিং ও ক্যাটারিং-এর বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে |

Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 5/9 by Deya Das
অন্দরসজ্জা (ছবি সংগৃহীত)

বুরাংশ:

পাহাড়ি রডোডেনড্রন ফুলের একটি বিশেষ ধরণের নাম অনুসারে এই সুইটের নামকরণ হয়েছে বুরাংশ | বসন্তে বিকশিত এই ফুলের লাল রং অনুসরণ করেই সুইট- টিকে লাল রঙে আরও উজ্জ্বল করা হয়েছে | সুইটের অন্যতম আকর্ষণ হল ঐতিহ্যশালী ফায়ারপ্লেস, বিলাসবহুল পালঙ্ক, নির্দিষ্ট সাক্ষাৎকক্ষ, সুবিশাল বারান্দা ইত্যাদি |

রিঙ্গল:

ওক অরণ্যে ঐতিহ্যগত ভাবে ফলনকারী খর্বকায় বাঁশের নাম অনুসারে রিঙ্গল কটেজটির নামকরন হয়েছে | কটেজটির উপরের ছাদটির এই বাঁশের কাঠ দিয়ে নির্মিত | এই বাঁশ কাঠটি স্থানীয় মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় | বাঁশ কাঠনির্মিত শিল্পকেই এখানকার মানুষ রোজগারের অন্যতম পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন | দুইতলা বিশিষ্ট এই সুইটে আলাদা শয়নকক্ষ, ভোজনকক্ষ, এবং সমস্ত রকম রন্ধন সরঞ্জাম বিশিষ্ট রান্নাঘর-ও রয়েছে |

Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 6/9 by Deya Das
কাঠের আসবাব শোভিত ঘর (ছবি সংগৃহীত)
Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 7/9 by Deya Das
সহজ সুন্দর পরিবেশ (ছবি সংগৃহীত)

অন্যতম আকর্ষণ:

ঝিল্লিঙ্গ নিকটস্থ দুটি ট্রেক কিন্তু খুবই রোমাঞ্চকর | ইচ্ছা করলে, এই ট্রেকগুলো আগে থেকে পরিকল্পনা করে ফেলুন আর বেড়িয়ে পড়ুন প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনের উদ্দেশ্যে।

গুয়ালা নদী ট্রেইল:

একদিনের ট্রেকে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন এবং পার্বত্য গ্রাম পানায়ালি পেরিয়ে গুয়ালা নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ ধরে পৌঁছে যান নদীর উৎস সন্ধানের জন্য | দূর থেকে দেখলে এই নদীর উৎসস্থলটি এক্কেবারে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই মনে হয় | নদীটি পাহাড়ের গা বেয়ে জলপ্রপাতের রূপ নিয়ে সমতলে নেমে বয়ে চলেছে আজীবনকাল ধরে | আবহাওয়া অনুকূল থাকলে নদীর বুকে একটু সাঁতরে নিতে চাইলেও অভিজ্ঞতা মন্দ হবে না | এই সুদূর প্রসারী ট্রেকের মধ্যে পথপ্রদর্শক দ্বারা নির্মিত ক্যাম্পে, মনোরম পরিবেশে পাহাড়ের কোলে দুপুরের আহার সম্পন্ন করে সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসুন হোমস্টেতে |

যাত্রাপথ - কঠিন

দূরত্ব - ১০ কিমি

সময় - ৮ ঘণ্টা

কানারখা ট্রেইল:

Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 8/9 by Deya Das

গাউলা নদীর ট্রেইলের তুলনায় কানারখা ট্রেইল পর্যন্ত ট্রেক করা অনেকটাই সহজসাধ্য| হোমস্টে থেকে কানারখা ট্রেইল ট্রেকে যেতে হলে সকালে বেড়িয়ে দুপুরের মধ্যে ফিরে আসা যায় | প্রায় ২০০০ ফিট উচ্চতায় পাহাড়ের পাদদেশে কানারখা গ্রামটি অবস্থিত | এগ্ররিয়ান সম্প্রদায় সম্পন্ন এই গ্রামটি বেশ জনবহুল বলতেই হবে | স্থানীয় ফসল উৎপন্ন করেই এঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন |

কাঠিন্য - তুলনায় সহজসাধ্য

দূরত্ব - ৮ কিমি

সময় - ৬ ঘণ্টা

কী কী করবেন:

পর্যটকদের উদ্দেশ্যে ঝিল্লিঙ্গ টেরাসে প্রায়ই ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয় যা ক্লাউডশপ নামে পরিচিত | এই ক্লাউডশপ মূল লক্ষ্য হল মানুষকে শিল্প, যোগ, বা শিক্ষা মূলক ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত করা |

তাছাড়াও প্রত্যেকটি সুইটে বিভিন্ন ধরণের গেম যেমন মনোপলি, স্ক্র্যাব্বল প্রভৃতির ব্যবস্থা আছে | অন্ধকার রাতে, গা ছমছমে পরিবেশে কটেজের লিভিং-রুমের ফায়ার প্লেস বা বারান্দাতে বন ফায়ার করতে চাইলেও তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়|

খরচ:

জুলাই মাসে রাত্রি যাপনের খরচ:

• উটিশ - ১৩,৫০০ টাকা

• বুরাংশ - ১৩,৫০০ টাকা

• সম্পূর্ণ চেস্টনাট হাউস - দুই রাত্রিযাপনের খরচ ১,২৪,০০০ টাকা

• পদম - ১০,০০০ টাকা

• রিঙ্গল - ১৩,৫০০ টাকা

• কাফল - ১০,০০০ টাকা

ঠিকানা:

মাটিয়াল গ্রাম , ভাটেলিয়া - ধানচুলি - ভীমতাল রোড ,দক্ষিণগোলা রেঞ্জ , নৈনিতাল ,উত্তরাখন্ড

কীভাবে যাবেন:

রেলপথে - মাটিয়াল গ্রাম যাওয়ার জন্য নিকটতম স্টেশনটি হলো কাঠগোদাম | স্টেশন থেকে স্থানীয় ট্যাক্সি ভাড়া করেঘন্টা খানেক দূরত্বে পৌঁছে যান গন্তব্যে |

বিমানপথে - ঝিল্লিঙ্গ টেরাসে পৌঁছনোর জন্য নিকটস্থ বিমানবন্দরটি হল পান্থনগর বিমানবন্দর| বিমানবন্দর থেকে ঘণ্টা দুয়েক দূরত্বের মধ্যেই পৌঁছে যান মাটিয়াল | আর মাটিয়াল গ্রাম থেকে ঘণ্টা খানেক ট্রেক করে পৌঁছে যান ঝিল্লিঙ্গ টেরাসে |

Photo of নৈনিতালের কাছাকাছি অবস্থিত ঝিল্লিঙ্গ টেরাস সপ্তাহ শেষে ঘুরতে যাওয়ার সেরা ঠিকানা... 9/9 by Deya Das
থাকবার ব্যবস্থা (ছবি সংগৃহীত)

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)

Further Reads