দি ফোর রুমস্ হোটেল
দি ফোর রুমস্ হোটেলটি হল ফোর টেবিল প্রজেক্টের নতুন সংযোজন। জঞ্জাল বস্তু এবং কঙ্কালের আবরণ সরিয়ে অভিনবত্বের ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই হোটেলের ঘরগুলোকে।
ঐতিহ্যবাহী এই হোটেলটি মাটির দেওয়াল এবং নিচু চালের সংমিশ্রণে তৈরি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বারান্দাযুক্ত ঘরগুলো অদ্ভুত সুন্দর ছবি এবং সুসজ্জিত আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো।
হিমাচল প্রদেশের ধৌলাধার রেঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্নিগ্ধ এবং ছোট্ট একটি গ্রামের নাম গুনেহার। এখানে চা বাগান আর বাঁকা রাস্তাগুলো মোড় নিয়ে পর্যটকদের পৌঁছে দেয় গ্রামে। এখানে বেশিরভাগ হিমালয়ান উপজাতিদেরই বসবাস রয়েছে। অন্যান্য পার্বত্য উপনগরীর মতো গুনেহারেও ইটের তৈরি পাকা বাড়ি এবং গবাদি পশু সংরক্ষণ আর জীর্ণ ভগ্নপ্রায় খাবারের দোকান দেখতে পাওয়া যায়।
তবে এই গুনেহার এমন কিছু আছে যা আপনাকে সত্যিই অবাক করে দেবে, যেটি হয়তো আপনি মানচিত্রেও খুঁজে পাবেন না।একজন জার্মান ইন্দোফিল, ফ্রাঙ্ক সচলিচ্চমান তার ক্যানভাস এবং চিত্রশৈলী দ্বারা এই গ্রামটিকে এবং গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রা অবিশ্বরণীয় ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
গুনেহার ঘুরতে যাওয়ার কারণ:
এই গ্রামের সৌন্দর্য্য যেন কোনও শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা
সচলিচ্চমান জন্মগ্রহণ করেছিলেন হ্যামবার্গের বাঙালি মা এবং জার্মান বাবার ঘরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি প্রথমবার ভারতবর্ষে ভ্রমণ করতে আসেন। ফ্রাঙ্কের ফোর টেবিল প্রজেক্ট শুরু হয় আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের জীবনকে এক অন্য ধারায় সাজিয়ে তোলা। আর এই প্রকল্পের কথা মাথায় রেখে তিনি উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি করেছিলেন একটি সুন্দর গ্যালারি, একটি ক্যাফে এবং একটি পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বুটিক হোটেল। এটি এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যতম কর্মসংস্থানের কাজ করে চলেছে এবং এই গ্রামটিকে পুনরায় উজ্জীবিত করে ঐতিহ্যের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
কনটেম্পোরারি আর্টের সম্ভার:
যে কোনও শিল্পের সৌন্দর্য নির্ভর করে শিল্পীর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং চিন্তাধারার উপর। আর প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের শিল্পকলাকে হয়তো শিরোনামে "ShopArt ArtShop" রাখা হয়।যা প্রতিদিন তিন বছর অন্তর দেখতে পাওয়া যায়। ফ্রাঙ্ক ২০১৩ সালের সমস্ত রীতিনীতি এবং বাধা নিষেধ দূরে সরিয়ে এই গ্রামের ১৩ জন উদীয়মান শিল্পীকে নিয়ে আসেন এবং তাদের দিয়ে এখানকার প্রত্যেকটি দোকানগুলোকে চিত্রের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলেন যার ফলস্বরূপ অনেক মানুষজন উদ্বুদ্ধ হয়,আর প্রকৃতি মাকে একটি সুন্দর রূপ প্রদান করে।
এখানে সমস্ত দোকানগুলোতে চিত্রের মাধ্যমে সমসাময়িক শিল্প সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে, যা এখানকার শিল্পীদের জীবনকে এক অন্য ঘরে চালিত করেছে। তাদের এই চিত্র তাদের গ্রাম্য সংবেদনশীল জীবন থেকে কিছুটা অন্যপথে নিয়ে গিয়েছে, যার ফলে তাঁদের এই কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ করার জন্য তাঁরা নিজেরাই আর্টসি হুপলা নামে নিজস্ব একটি মেলা প্রত্যাবর্তন করেছেন।
ওয়ান রূপি সিনেমা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিকতা:
গুনেহার-এর সবথেকে জমজমাট জায়গাটি হল এখানকার KM Lo's -এর 'one rupee cinema'। সিঙ্গাপুরের খ্যাতনামা পরিচালক এখানে অনেক জায়গার সিনেমার কর্মশালা করেছেন যেমন কম্বোডিয়া, চায়না, ফিলিপাইনস, থাইল্যান্ড এবং লাওস। গুনেহারে তাঁর তৈরি জায়গাটি বাচ্চাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এখানে এসে তিনি ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষাদান করেছেন এবং এখানকার আগ্রহী মানুষজনকে শিখিয়েছেন কীভাবে এক পয়সার মধ্যে চলচ্চিত্র গঠন করা যায় এবং ক্যামেরা চালানো আর চলচ্চিত্র গঠনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত পদ্ধতিও তিনিই শিখিয়েছেন।
ইন্দোর থেকে আগত মুদিতা ভান্ডারি নামক একজন জনপ্রিয় সেরামিক শিল্পী জীর্ণ প্রাচীরগুলোতে পোড়ামাটি, বিভিন্ন রকমের পাথর, সিলেট এবং গ্রাম জীবনের ব্যবহারিক সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন এবং এই কাজের স্বেচ্ছাসেবিকা হয়ে গ্রামের অনেক মহিলারা তাকে সাহায্য করেছেন।পাশাপাশি রিমা কুমারের তৈরি গুনেহারের বৈওয়ার্কশপটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
উপত্যকায় বয়ে চলা নদী:
আপনি এই গুনেহার-এর শৈল্পিক সৃষ্ট দেয়াল অনুসরণ করে পৌঁছে যেতে পারেন গ্রামের মধ্যে। যেখানে ঝকঝকে গুনেহার নদীর পাড়ে দেখতে পাবেন কর্দমাক্ত শরীরবিশিষ্ট গাভীর দলকে। এই গ্রামের অন্যতম একটি দিক হল এটি সম্পূর্ণভাবে দূষণমুক্ত একটি জায়গা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই গ্রামটির সকালবেলা শুরু হয় সবুজ ঘন পর্বত শৃঙ্গ এবং ঝিলিমিলি রোদের আভা দিয়ে।
বিশেষ খাবারদাবার
ফোর টেবিল ক্যাফেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ঘরের তৈরি খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা আছে। নিজ্বস্য রসনায় তৈরী মুরগির মাংস সহযোগে পানীয় এবং বিয়ার এখানকার মূল আকর্ষণ সেটা বলা যেতেই পারে। এখানে প্রাতঃরাশ-এ বিভিন্ন ধরনের ফল, চীজ এবং ডিম সহযোগে পাউরুটি পরিবেশন করা হয়।
যাত্রার আদর্শ সময়
এই সুন্দর এবং অচেনা গ্রামটি পরিদর্শনের সবচেয়ে ভাল সময় হল মার্চ থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়। কারণ এই সময় তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই থাকে এবং মাঝে মাঝে রাতের বেলা মেঘলা আকাশ দেখতে পাওয়া যায়।
গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর পথ নির্দেশিকা
ধর্মশালা থেকে গাড়ি করে দু'ঘণ্টা পথ অতিক্রম করলেই গুনেহারে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এছাড়াও ধর্মশালা থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সব থেকে কাছের রেল স্টেশন পাঠানকোট থেকেও আপনি এখানে পৌঁছতে পারেন।
পরিবহণ ব্যবস্থা
গুনেহার ঘুরতে গেলে আপনাকে পায়ে হেঁটেই ঘুরতে করতে হবে, কারণ এখানে লোকালয়ে কোনও পরিবহণ ব্যবস্থা নেই।