কান পাতলেই হয়তো আপনি শুনতে পেতে পারেন, মুম্বাই থেকে ৯০ কিমি দূরে অবস্থিত এশিয়ার ক্ষুদ্রতম শৈলনিবাস–ম্যাথারনের মৃদু আহ্বান। তার হাতছানিতে সাড়া দিয়ে আপনি যেতেই পারেন কোনও এক সপ্তাহান্তে বর্তমানের কোলাহল ছেড়ে; অতীতে ফেলে আসা এক প্রশান্তির আস্বাদ পেতে, ছোট্ট খেলনার মতো ট্রেনগুলোতে চড়ে স্মৃতির শৈশবে। সত্যিই অরণ্যের চাঁদোয়ার নীচে এ এক সম্পূর্ণ যানবাহনবিহীন অঞ্চল ।
স্যাফরন স্টে-পার্সি ভিলা
মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার পশ্চিমঘাটে সবুজের কার্পেটে মোড়া পুরনো বাংলোগুলো যেন আপনারই জন্য অপেক্ষারত। ম্যাথারনের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই ভিলার চতুর্দিকেই সবুজের সমারোহ আর লাল মাটির মাদকতা। ১৩০ বছরের পুরনো স্যাফরন স্টে পার্সি ভিলায় আজও লেগে আছে ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়া। অমলিন ব্রিটিশ স্থাপত্য, পুরনোদিনের আসবাবপত্র, পার্সি ঐতিহ্যের নিদর্শনবাহী রাজকীয় সাজসজ্জা আপনাকে নিয়ে যাবে অতীত সময়ে।
জায়গাটির বিশেষত্ব - সবার জন্যই এর দ্বার উন্মুক্ত , তা সে চারজনের পরিবারই হোক অথবা দু'জনের মেলবন্ধন কিংবা নিতান্তই একজন ব্যক্তির নির্ভেজাল ছুটি কাটানোই হোক।
অতিথিরা চাইলে একটি ঘর অথবা ভিলার চারটি শয়নকক্ষই বুকিং করতে পারেন। ভিলাটিকে ঘিরে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সবচেয়ে আকর্ষনীয় এর বারান্দাটি। ঘণ্টায় পর ঘণ্টা ইরানি চায়ে চুমুক দিয়ে এবং প্রিয় বই পড়বার আস্বাদনে কাটিয়ে দেওয়া যায় সময়। আর ঠিক সেই সময় আপনাকে সঙ্গ দিতে হয়তো বিনা নিমন্ত্রণেই জুটে যেতে পারে কিছু রসিক কিঞ্চিত মিশুকে বানর।
ভোজন বিলাস :
স্যাফরন স্টে ভিলা আপনাকে প্রদান করবে সুন্দর একটি প্রাতরাশ । অগ্রিম জানিয়ে রাখলে ভিলার রাঁধুনি আপনার জন্য বানিয়ে দিতে পারে চমৎকার পার্সি খাবার।
কী কী করতে পারেন :
শহরতলিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি পদব্রজের আনন্দ নিতে পারেন অথবা ভাড়া করে নিতে পারেন টানা রিক্সা। ঘুরে বেড়াতে পারেন এখানকার মনকাড়া প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। শার্লট লেক ভিলা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই। এরই বাঁ দিকে রয়েছে পিসারনাথ মন্দির আর ডান দিকে ইকো পয়েন্ট। লুইসা পয়েন্টে আপনি প্রবাল দেখার আনন্দ পাবেন এবং বিশালগড়ের ভগ্নপ্রাপ্ত দূর্গ। সূর্যোদয়ের আভায় স্নাত হতে আপনাকে যেতে হবে প্যানোরমা পয়েন্টে আবার দিনের শেষে সূর্যের রক্তিম আভার সাক্ষী থাকতে আপনি যেতে পারেন পরকুপাইন পয়েন্টে।
আরও কী কী করতে পারেন :
কোন্ডানা কেভ , দোধানি জলপ্রপাতে ওয়াটার রাপেলিং :
কোন্ডানা গুহা হল ষোলোটি বৌদ্ধ গুহার একত্র সমাবেশ। গুহাগুলো সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দিতে খননকৃত। বিভিন্ন স্থাপত্য, ভাস্কর্য এবং স্তুপের মাধ্যমে এখানে চিত্রিত হয়েছে গৌতমবুদ্ধের নানান জীবনগাথা। এখান থেকে রেল পথে আপনি ঘুরে আসতে পারেন কাজরাট স্টেশন। ম্যাথারন হিলের পাদদেশে দেখা মিলবে দোধানী জলপ্রপাতের যেখানে আপনি ওয়াটার রাপেলিং-এর আনন্দও নিতে পারেন।
চান্দেরি কেভ , পেভ ফোর্ট, কালাভন্তিন গিরিচূড়ায় পর্বতারোহন:
ম্যাথারন থেকে কিছুটা দূরেই কাজরাটে সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণির একটি শৃঙ্গ হল চান্দেরি। যার উচ্চতা প্রায় ৮০০ মিটার ।
পেভ ফোর্ট ম্যাথারন থেকে ১৩ কিমি দূরে অবস্থিত নেরাল অঞ্চলে অবস্থিত । ফোর্টটি অনেকটা ভগবান গনেশের আকৃতিবিশিষ্ট। স্থানীয়ভাবে তাই অনেকেই ফোর্টটিকে ‘বিকটগড়’ নামে চিহ্নিত করে থাকেন। এটি একদিনের যাত্রা।
কালাভান্তিন শৃঙ্গ , যা স্থানীয় ভাবে কালাভান্তিন দূর্গ ( কলাবন্তীর দূর্গ )নামে পরিচিত। এটি ম্যাথারন এবং পানভেলের মাঝামাঝি ২৩০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত একদিনের ট্রেকিং। চতুর্দিকের দৃশ্য যেমন মনহরা তেমনই আরোহন পথও ক্রমাগতঃ দুর্গম থেকে দুর্গমতর।
মোটামুটি : ডিলাক্স ডাবল রুমের জন্য প্রতি রাতের ভাড়া প্রায় সাত হাজার।
পথ নির্দেশ: মুম্বাই থেকে ম্যাথারন ৯০ কিমি , পুনে থেকে ১২০ কিমি এবং সুরাট থেকে প্রায় ৩২০ কিমি দূরে অবস্থান করছে । মুম্বাই এবং পুনে উভয় জায়গা থেকেই রেলপথে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন নেরাল জাংশন স্টেশন। নেরাল থেকে টয় ট্রেনে প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে করতে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে ২১ কিমি অতিক্রম করে ঘণ্টা দুয়েকেই ম্যাথারন। অ্যাডভেঞ্চারের নেশা প্রবল হলে আপনি বেছে নিতে পারেন দস্তুরি গেট বরাবর পর্বতারোহনের মাধ্যমে ম্যাথারনে পৌঁছনোর পথ।