নীলগিড়ি বা নীলগিরি পাহাড় পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং কেরালা জুড়ে অবস্থিত। নীলগিরির প্রকৃত অর্থ হল নীল পাহাড়। এই রোড ট্রিপে রাস্তাটি আপনাকে সুন্দর পাহাড়, ঘন জঙ্গল এবং চা বাগানের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাবে। আর শীত কালে যদি এই রাস্তা দিয়ে যান তাহলে কুয়াশায় ঘেরা পাহাড় অথবা কোথাও লুকিয়ে থাকা নীল কুরঞ্জি ফুলে, বেগুনি-নীল রঙে পাহাড়টিকে মুড়ে রাখে। এই সফরে আপনি আপনার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা একাও যেতে পারেন। আপনার সঙ্গে থাকবে পথের মনোরম দৃশ্য আর মাঝে মধ্যে গাড়ি থামিয়ে সেই দৃশ্য উপলব্ধি করাই যেন যাত্রাপথের মূল উদ্দেশ্য। তাহলে আর সময়ের অপেক্ষা কেন, বাক্স-পেটরা বেঁধে বেড়িয়ে পড়ুন।
যাত্রাপথ
শুরু করব বেঙ্গালুরু থেকে। বেঙ্গালুরুতে ভীষণ ট্রাফিক তাই সকাল ৬টা নাগাদ বেরোলে সবচেয়ে ভাল হয়, তাহলে সমস্ত ভিড়ভাড় এড়ানো যাবে অতি সহজেই। বেঙ্গালুরু-মাইসোর এক্সপ্রেসওয়ে (SH ১৭) ধরে মাইসোরে পৌঁছে যান। সেখান থেকে আপনার প্রথম গন্তব্য স্থল হল বান্দিপুর ন্যাশনাল পার্ক, মাইসোরে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ। দ্বিতীয় দিন আপনি গুডালুর এবং উটি যাবেন, যেখানে আপনি বিশ্বের অন্যতম সেরা গল্ফ কোর্স দেখতে পাবেন, একটি সুন্দর-রক্ষণাবেক্ষণ করা বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখে এবং বাড়িতে বানানো চকোলেট ফাজ খেয়ে আনন্দ করতে পারেন। শেষে, আপনি উটি থেকে কুনুরের দিকে রওনা হবেন, এক অসাধারণ রাস্তা দিয়ে কোটাগিরিতে যাওয়ার সময়, কোটাগিরি আপানার অন্তিম গন্তব্যস্থল।
রুটটি সংক্ষেপে এইরকম দেখাবে
বেঙ্গালুরু - মাইসুরু - বান্দিপুর - গুডালুর - উটি - কুন্নুর - কোটাগিরি - বেঙ্গালুরু
ভ্রমণবৃত্তান্ত: বেঙ্গালুরু থেকে কোটাগিরি (৩ দিন, ৩৪১ কিমি )
প্রথম দিন:
বেঙ্গালুরু থেকে SH17 বা বেঙ্গালুরু মাইসোর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মাইসোর পৌঁছান যা মোটামুটি ৭৩ কিমি দূরে। শহরটিতে পৌঁছাবার পরে এখানকার সুন্দর রাজপ্রাসাদ এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দির ঘুরে দেখুন। সকালের জলখাবারের জন্য, স্থানীয় দোকানে অবশ্যই এখানকার ইডলি দোসা খাবেন। খাওয়ার পর মুখ মিষ্টির জন্য যে কোনও বেকারিতে গিয়ে মাইসোর পাক অবশ্যই খাবেন। এরপর NH67 ধরে রওনা দিন বান্দিপুরের দিকে। বান্দিপুরের পরিধি হল ৮৭৪ বর্গ কিমি, এই অভয়ারণ্যতে হাতি এবং অন্য বন্য জীব জন্তু দেখা যায়। মাইসোর - উটি রাস্তা ধরে দুপুর ৩:৩০ -এর আগেই পৌঁছতে হবে, কারণ এটি সন্ধে ৫:৩০ -এ বন্ধ হয়ে যায়। পার্কে ঢোকার টিকিট ভারতবাসীর জন্য ৩০০ টাকা আর বিদেশিদের ১১০০ টাকা।
রাস্তায় সময় লাগবে : ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট
দূরত্ব : ২১৭ কিমি
সেরা অভিজ্ঞতা : রঙিন কাঁচে আর ১০০০০০ লাইটে সাজানো সুন্দর মাইসোর প্রাসাদ। বান্দিপুর সাফারিতে হরিণ, লঙ্গুর, হাতি এবং সমস্ত প্রকার বন্যজীবকে প্রতক্ষ্যভাবে দেখা।
কোথায় থাকবেন : দ্য সেরাই বান্দিপুর এবং নিজগুণা রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ।
দ্বিতীয় দিন
যদি ইচ্ছে হয় তাহলে সকাল সকাল উঠে বান্দিপুরে সকালের সাফারিতে সেরে ফেলুন, না হলে আরাম করে হোটেল থেকে জলখাবার সেরে গুডালুরের দিকে বেরিয়ে পড়ুন NH-৬৭ ধরে। এই সুন্দর শহরটি স্বাধীনতার আগে চা চাষের জন্য ব্রিটিশরা বানিয়েছিল। এখন এখানে বিশাল গাছে ঘেরা সর্পিল রাস্তা আর মাঝে মাঝে চা বাগান, আপনি নিশ্চিন্তে ঘণ্টা দুয়েক কাটিয়ে ফেলবেন। এখানে অবশ্যই দাঁড়িয়ে কোনও ছোট দোকানে চা আর ম্যাগি খেয়ে নেবেন। এরপর সোজা রওনা দিন উটির দিকে যেটি কিনা আজ আপনার গন্তব্যস্থল। চেষ্টা করুন ১টার আগে পৌঁছে যেতে আরে দুপুরের খাবারটা কালিনারিয়ামে সারতে, এখানে ইউরোপিয়ান , আমেরিকান খাবার পাওয়া যায়। এরপর আশে পাশে নীলগিরিতে ঘেরা দেখার জায়গাগুলো ঘুরে দেখে ফেলুন। রাতে দোসা এবং থালি খেতে চলে যা নাহার নীলগিরিস্ হোটেলে।
রাস্তায় সময় লাগবে : ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
দূরত্ব : ৮০ কিমি
সেরা অভিজ্ঞতা : নীলগিরিসে লম্বা ইউক্যালিপটাস গাছের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানো; গুডালুরের নিডল রক ভিউ পয়েন্ট থেকে পাহাড়ের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ; উটি লেকে নৌকা চড়া; নীলগিরি টয় ট্রেনে চেপে সুন্দর শহরটিকে দেখা; দোদাবেতা ৮,৬৯৬ ফুট থেকে মাইসোর মালভূমি এবং কোয়েম্বাটুর দেখার অভিজ্ঞতাও বেশ সুন্দর বলতেই হবে।
কোথায় থাকবেন : তাজ স্যাভয় হোটেল এবং অ্যাকর্ড হাইল্যান্ড হোটেল।
আজকের রাস্তাটা সবচাইতে সুন্দর তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ুন, NH৬৭ ধরে ওয়েলিংটন হয়ে কুন্নুর পৌঁছে যান। গাড়ি চালাতে বেশ ভাল লাগবে, অসাধারণ সুন্দর রাস্তা, যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে সবুজে সমৃদ্ধ নীলগিরি এটি কিন্তু বছরের কোন শুয়ে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে। শীতকালের মেঘগুলো যেন একটি পোস্টকার্ডের ছবির মতো। কুন্নুর কিন্তু খুব শান্ত নিরিবিলি শহর উটির ঠিক উল্টো। এখানে রাস্তার ধারে যেকোনো দোকানে দাঁড়িয়ে চা খান বা যে কোনও রাস্তা ধরে হেঁটে আসুন আর রাস্তার ধারে ফুলে থাকা ফুলগুলো দেখতে ভুলবেন না। ২-৩ ঘণ্টা কাটিয়ে রওনা দিন কোটাগিরির দিকে। আপনার এই অন্তিম গন্তব্যটি ৫,৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই পঞ্চায়েত অধীন শহরটি পর্যটকহীন বললেই চলে। আপনি আপনার সময়, এখানকার সুন্দর আবহাওয়ায়, চা-বাগান ঘুরে কাটাতে পারেন।
রাস্তায় সময় লাগবে : ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট
দূরত্ব : ৪২ কিমি
সেরা অভিজ্ঞতা : সিমস পার্কের প্রচুর গাছের সংগ্রহের প্রশংসা করুন; বান্দি শোলা বাসস্টপ থেকে কুনুরের রলিয়া বাঁধে যাওয়ার মনোরম হাঁটা পথ; কোটাগিরিতে জনস্টোন সার্কেলের কাছের দোকানে বেকড জিনিসগুলো খেয়ে উপভোগ করুন; কোটাগিরির কাছে ক্যাথরিন ঝর্ণাটাও দেখার মতো।
কোথায় থাকবেন : নাহার রিট্রিট এন্ড ওয়েলনেস স্পা এবং হ্যাঙ্গিং হাটস রিসোর্ট।
কখন যাবেন ?
এই রোড ট্রিপে সারা বছরই যাওয়া যায় কারণ আবহাওয়া কখনওই খুব গরম বা খুব ঠান্ডা থাকে না। তবে সব থেকে ভালো শোনায় হল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী এই সময় একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব থাকে, আকাশ পরিষ্কার থাকে। ঠান্ডায় পাহাড়গুলো সবুজে ঘেরা আর মেঘ তার উপরে এক সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলে।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)