
উত্তরাখণ্ড বলতেই আমরা মূলত সুবিশাল বরফাচ্ছন্ন পর্বতশৃঙ্গকেই কল্পনা করে থাকি | কিন্তু উত্তরাখণ্ডের লুকনো সম্পদ হল এখানকার অভয়ারণ্যগুলো | আর এই অভয়ারণ্যগুলোর মধ্যে ভ্রমণকারীদের প্রথম পছন্দ হল বিনসার অভয়ারণ্য| বিনসারের অচেনা বন্য জগতের সাথে আলাপ করতে চান? প্রকৃতির অজানা রহস্যের গুপ্ত সন্ধান করতে আজই চলে আসুন, ট্রি অফ লাইফ-গ্র্যান্ড ওক ম্যানোর-এ |
স্বাধীনতার আগে এই প্রাসাদটি ব্রিটিশদের নিজস্ব বাসস্থান হিসেবে পরিচিত ছিল | কুমায়ুনের তৎকালীন কমিশনার হেনরি রামসে বহুদিন এই প্রাসাদের স্থায়ী বসবাসকারী ছিলেন| প্রাসাদটির সুবিশাল দালান, পুরনো কাঠের তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, আরামদায়ক ফায়ার প্লেস, সমস্তকিছুর মধ্যেই প্রাচীনতার ছোঁয়া রয়েছে | প্রাসাদটি এক্কেবারে অভিয়ারণ্যের মধ্যে অবস্থিত | এই বন্য জীবন, প্রকৃতির নির্জনতা, জোনাকির আলোর ফুলঝুরি চাক্ষুস দেখার অভিজ্ঞতার একদম মিস করবেন না|
কাদের জন্য উপযোগী:

বন্যজীবন ও জঙ্গল অর্থাৎ আদিম জীবনধারণ যারা ভালোবাসেন, সেই সমস্ত পর্যটকদের ট্রি অফ লাইফ - ট্রি গ্রান্ড ওক ম্যানোর-এ স্বাগত | এখানে আপনি আপনার প্রিয় মানুষের সঙ্গেও আসতে পারেন; আবার পরিবারের সমস্ত সদস্যদের নিয়ে এলে আপনার রোমাঞ্চকর যাত্রাটি আরও সুখকর হয়ে উঠতে পারে |
উপযুক্ত সময়:
অভয়ারণ্যের দৃশ্যাবলী বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম | তবে পর্যটকরা বিনসার বেড়ানোর জন্য মার্চ থেকে জুন অর্থাৎ শীতের শেষ ও বর্ষার আগের সময়টাকেই শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন | তবে বরফাবৃত জঙ্গল দেখতে চাইলে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মধ্যে যে কোনও সময়ই আপনি যেতে পারেন |
বিনসারের ট্রি অফ লাইফ সম্পর্কে কিছু তথ্য:





প্রায় ৩০০ বছর পুরনো এক ওক গাছের স্মৃতিকে অনুসরণ করেই প্রাসাদটির নাম “ট্রি অফ লাইফ- গ্রান্ড ওক ম্যানোর” বেছে নেয়া হয়েছে | প্রায় ১৫০ বছর পুরনো এই অট্টালিকাটি বিনসার অভয়ারণ্যের গভীরে এবং কুমায়ুন পর্বতশৃঙ্গের পাদদেশে অবস্থিত | ১৮৫৬ সালে কুমায়ুনের ব্রিটিশ কমিশনার হেনরি রামসে নিজের বাসস্থান হিসেবে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন যেটি পরবর্তী কালে একটি বিলাসবহুল হোটেল হিসেবে পরিচিতি পায় | হোটেলটির ৪কিমি ব্যাসার্ধ্যের মধ্যে আর কোনও লোকালয়ের চিহ্ন নেই |
এবার হোটেলটির অন্দরসজ্জা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক | গ্রান্ড ওক ম্যানোর-এ সব মিলিয়ে মোট ৯ টি ঘর বা কক্ষ রয়েছে এবং সব কক্ষগুলো তৎকালীন ব্রিটিশ অফিসারদের নাম অনুযায়ী নামাঙ্কিত করা... পর্যটকদের মধ্যে রোমাঞ্চকর আবেদন নিয়ে আসে অবশ্যই |
প্রত্যেকটি কক্ষে নিজস্ব স্নানঘর, বিশালাকার ব্যালকনি, ফায়ারপ্লেস ছাড়াও সমস্ত রকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা আছে | ঘরগুলোর সুবিশাল আয়তন, প্রাচীন আসবাবপত্র, বিশালাকৃতি জানালা, এই সমস্ত কিছুর মধ্যে আপনার মনে হতেই পারে কেউ যেন ঐতিহাসিকতার আলতো প্রলেপ মাখিয়ে দিয়েছে | সকালে সরাসরি সূর্যের থেকে সুপ্রভাত অভিবাদন এবং নির্জন রাতের ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ শুনতে শুনতে একটা দিন কাটাতে চাইলে আজই চলে আসুন গ্রান্ড ওক ম্যানোর-এ |
খরচ:
দুজনের রাত্রিবাসের খরচ প্রায় ৫৪০০ টাকা থেকে শুরু |
আহার:



গ্র্যান্ড ওক ম্যানোর-লোকালয় থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন | তাই হোটেলটিতে ফসল ও শাক-সবজি ফলনের সু-বন্দোবস্ত আছে | সুতরাং এখানে অতিথি হয়ে এসে আপনি কেবলমাত্র তাজা এবং বিশুদ্ধ আহারাদি আশা করতে পারেন | হোটেলের রন্ধনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক কর্মচারী যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ | এক বন্য পরিবেশে নির্ভেজাল ভারতীয় খাদ্যের স্বাদ নিতে চাইলে চটপট বেড়িয়ে পড়ুন আর পৌঁছে যান গ্র্যান্ড ওক ম্যানোর-এ |
প্রধান আকর্ষণ:
ঘোরচুলা বা জিরো পয়েন্ট ভ্রমণ:
ঘোরচুলা বা জিরো পয়েন্ট যেতে চাইলে, সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন হোটেলের মালিক সিংহু ও শিখার সাথে | আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী বেছে নিন ঘোরচুলা ট্রিপ বা জিরো পয়েন্ট ট্রিপ আর আর প্রত্যক্ষ করে আসুন সুউচ্চ পর্বতের সৌন্দর্য্য | এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, জিরো পয়েন্ট হলো বিনসারের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, যার উচ্চতা প্রায় ৭৮০০ ফিট | ট্রেক করে জিরো পয়েন্ট-এর উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে আপনি পেয়ে যাবেন ওক আর রডোডেনড্রন ঘন জঙ্গল| এছাড়াও আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে হরিণের ডাক, অজানা পাখির গুঞ্জন; এবং একই সাথে দেখা পেতে পারেন বিভিন্ন অচেনা পশুর |
অন্যদিকে, বরফাবৃত শ্বেতশুভ্র হিমালয়ের ও পঞ্চচুল্লির সাথে একান্তে পরিচয় করতে চাইলে আপনাকে বেছে নিতেই হবে ঘোরচুলা ট্রেক | এই ট্রেক ও আপনার সাথে ওক আর রডোডেনড্রন এর সাক্ষাৎ অবশ্যই করাবে |
পাহাড়ি গ্রামে ভ্রমণ:
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃভ্রমণের বেড়িয়ে পড়ুন পাহাড়ি গ্রাম এর উদ্দেশ্যে | ওক আর সিডার-এর ঘন জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন এক ছোট্ট গ্রাম কাঠদড়া-তে | একদিকে গ্রামের মানুষের সহজ জীবনযাত্রা এবং অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাস করার কঠিন জীবন কাহিনীর জ্বলন্ত প্রতিছব্বি আপনার সামনে স্বমহিমায় ধরা দেবে | এই গ্রামের একমাত্র জীবিকা হলো চাষবাস | এখানে দেখতে পাবেন কীভাবে তারা বেঁচে থাকার তাগিদে পাহাড়ের মধ্যবর্তী জায়গাটিকেই চাষের জমি হিসেবে বেছে নিয়েছেন |
জাগেশ্বর মন্দির দর্শন:
কুমায়ুন অঞ্চলের জাগেশ্বর মন্দিরটি হল পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ | দ্বাদশ শতাব্দীর এই প্রাচীন মন্দিরটি অসাধারণ স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন | সিডার অরণ্যের ভিতর জাগেশ্বর মন্দির ছাড়াও আরও এই ধরণের ১৫০টির উপর মন্দির রয়েছে | একদিনের ট্রিপে এই গভীর অরণ্যের ভিতর মন্দির প্রদক্ষিণ করার সুযোগ একদম হাতছাড়া করবেন না |
যোগা প্রশিক্ষণ:
আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্য সম্মন্ধে সচেতন হন অথবা মানসিক শান্তি লাভ করতে চান তাহলে অবশ্যই স্থানীয় যোগা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারেন | হোটেলের মালিক এবং কর্মচারীবৃন্দ এই সমস্ত কিছুর এ আয়োজন আপনার জন্য করে দিতে পারেন |



কীভাবে পৌঁছবেন:

বিমানে: কুমায়ুন অঞ্চলের নিকটতম বিমানবন্দরটি হল পান্থনগর বিমানবন্দর | বিমানবন্দর থেকে গ্র্যান্ড ওক ম্যানোর-এর দূরত্ব প্রায় ১৫২ কিমি | ভারতের যে কোনও ছোট বড়ো শহর থেকে সহজেই পৌঁছে যান দিল্লি এয়ারপোর্ট,তারপর দিল্লি থেকে সরাসরি বিমানে চেপে পৌঁছে যান পান্থনগর | বিমানবন্দরে পৌঁছে ট্যাক্সি ভাড়া করে সোজা পৌঁছে যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে |
সড়কপথে: প্রথমে উত্তর ভারতের যেকোনো জায়গা থেকে বাসে করে পৌঁছে যান কাঠগোদাম | তারপর সেখান থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান গ্রান্ড ওক ম্যানোর-এ | অথবা হোটেলে জানিয়ে রাখলে তারাও কাঠগোদাম থেকে গাড়ি ব্যবস্থা করে দিতে পারে |
ট্রেনে: ট্রেনে যেতে চাইলে প্রথমে কাঠগোদাম স্টেশনে পৌঁছে একটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে ১১৯ কিমি দূরত্ব পেরিয়েই পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে | অথবা হোটেলে জানিয়ে রাখলে তারাও গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারে |