প্রত্যেক পর্যটকদের নতুন পর্যটন স্থান অন্বেষণ করার এক সুপ্ত ইচ্ছা থাকে | কিন্তু নিভৃত দ্বীপে একান্তে ছুটি কাটানোর ইচ্ছা সমস্ত ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অন্য রকমের আনন্দ এনে দেয় | অনেক সময় নতুন কিছু পর্যটনের ঠিকানা পেলেই ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়তে ইচ্ছা করলেও খরচের কথা মাথায় রেখে পিছিয়ে পড়তে হয় | কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও, অল্প খরচে কর্ণাটকের নদী বেষ্টিত এই অপ্রকাশিত দ্বীপটিতে ঘোরার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না | নদী তীরবর্তী এই অঞ্চলে একটিই বিলাসবহুল হোমস্টে রয়েছে | এই স্থানটি এখনও তেমনভাবে পর্যটকদের নজরবন্দি হয়ে ওঠেনি, তাই এটি হোটেল বুকিং বা টিকিট বুকিং-এর সমস্ত ঝঞ্ঝাটমুক্ত | কম খরচে, বিলাসবহুল হোমস্টেতে থেকে পরিবেশের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে চাইলে চলে আসুন কর্ণাটকের শ্রেষ্ঠ এই গোপন পর্যটন ঠিকানা সুবর্ণ সঙ্গম |
উপযুক্ত সময়:
সপ্তাহান্তে সমস্ত কাজের শেষে বা সপ্তাহের যে কোনও দিনে কাজের ফাঁকে বেড়ানোর জন্য মন আনচান করলেই ব্যাগ গুছিয়ে টিকিট কেটে বেড়িয়ে পড়ুন এই অচেনা দ্বীপের উদ্দেশ্যে | একান্তে নিরিবিলিতে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর জন্য সুবর্ণ সঙ্গম পর্যটকদের কাছে আদর্শ জায়গা | এছাড়াও রোমান্টিক সময় কাটানোর জন্যও সুবর্ণ সঙ্গমকে অনায়াসেই বেছে নেওয়া যায়|
এই হোমস্টে সম্পর্কিত তথ্য:
কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণে ম্যাঙ্গালোর এবং উদুপি মধ্যবর্তী টন্স নামক গ্রামে অবস্থিত সুবর্ণ সঙ্গম | সুবর্ণ নদীর তটে গড়ে উঠেছে এই বিলাসবহুল হোমস্টে সুবর্ণ সঙ্গম | সুবর্ণ নদীর আঁকাবাঁকা পথ, কখনো বিচ্ছিন্নতা, কখনও বা একত্রতা, সমস্ত কিছু জ্বলন্ত ক্যানভাস হয়ে ওঠে এই সুবর্ণ সঙ্গম | শান্ত, কোলাহলবিহীন পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য আপনার সঙ্গে আপনার প্রিয় পোষ্যটির জন্যও বিশেষ আমন্ত্রণ রইল|
সুবর্ণ সঙ্গম ভিলাটি চিরাচরিত এবং সাধারণ স্থাপত্যের আঙ্গিকে নির্মিত | একতলায় ২টি প্রধান শয়নকক্ষ এবং উপরের তলায় ১টি কক্ষ উপলদ্ধ আছে | ভিলাটিতে সমস্ত সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সরলতা এবং আধুনিকতার এক অসামান্য মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায় | অন্যান্য হোমস্টে-র মতো এখানেও এয়ার কন্ডিশনার, টিভি, ওয়াই -ফাই সমস্ত আধুনিকতাও উপলব্ধ |
প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ভিলার রুমগুলোতে পর্যটকদের জন্য নিজস্ব ডেকের ব্যবস্থা করা রয়েছে | এবার ভিলাটির বাহ্যিক দৃশ্য সম্পর্কে আসা যাক| বাইরের দৃশ্যটা অনেকটা ছবির মতো | এই শুদ্ধ বাতাস, মনোরম আবহাওয়া, রকমারি পাখির অনাবিল যাতায়াত এবং তাদের কল-কাকলির মাঝে বারংবার নিজেকে একাত্ম করতে আসতেই হবে সুবর্ণ সঙ্গমে |
আহার:
যেহেতু সুবর্ণ সঙ্গম দ্বীপটি লোকালয়-এর বাইরে, তাই খাদ্য বিকল্পের সুবিধা নেই | কিন্তু ভিলায় কর্মরত রাঁধুনির হাতের মঙ্গোলিয়ান খাবার এবং তার পরিবেশন যে কোনও নামি দামি রেস্তোরাঁর খাবারের তুলনায় যথেষ্ট সুস্বাদু| খাদ্যের মধ্য দিয়ে সুবর্ণ সঙ্গম আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয় মঙ্গোলিয়ানদের রোমহর্ষক জীবনযাত্রার কথা | মঙ্গোলিয়ান খাদ্যকে অভূতপূর্বভাবে এবং নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে পরিবেশন করার জন্য সুবর্ণ সঙ্গম এর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ |
খরচ:
দু'জন মানুষের সুবর্ণ সঙ্গমে রাত্রিবাসের খরচ শুরু মাত্র ৫৯৯৫ টাকায় | আপনার সমস্ত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে আপনি সম্পূর্ণ ভিলাটি নিজেদের জন্য পেয়ে যাবেন যার রাত্রিবাসের খরচ ৯০০০ টাকা |
ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময়:
ঠান্ডার সময়টা সুবর্ণ সঙ্গম এবং এই দ্বীপে ঘোরার শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করা হয় | অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিলের আগে পর্যন্ত যেকোনও সময় আপনি যেতে পারেন | গ্রীষ্মের সময় এখানে প্রচুর গরম থাকে | অন্যদিকে বর্ষার সময়ও প্রচুর বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন থাকে | তাই গ্রীষ্ম ও বর্ষা, বছরের এই দুই সময় এখানে বেড়ানোর প্ল্যান এড়িয়ে যাওয়াই ভালো |
কী কী করবেন :
১. নির্জন দ্বীপে ভ্রমণ
সুবর্ণ সঙ্গমের প্রধান আকর্ষণ হল নদীবেষ্টিত এই দ্বীপ | সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নিকার্স পড়ে চাইলেই বেড়িয়ে পড়তে পারেন প্রাতঃভ্রমণ উদ্দেশ্যে | শীতের সকালের প্রথম সূর্যকিরণ গায়ে মেখে আদ্যপান্ত দ্বীপটা ঘুরে দেখার সুযোগটা একদম মিস করবেন না | সূর্যের সোনালী কিরণ নদীর জলের উপর পড়ে একটা অদ্ভুত বিচ্ছুরণে পরিণত হয়| প্রকৃতির নানান শোভা, নানান ধরনের গাছ পালা, বন্য জীবনযাপনের সাক্ষী হতে চাইলে এখানে একবার আসতেই হবে |
২. পড়ন্ত বিকালে নৌকো বিহার
সুবর্ণ সঙ্গম থেকে নৌকো করে ভালবাসার সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে নদীর স্রোতের সঙ্গে ভেসে যেতে পারেন | কোনও পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্ত বা পাখিদের নিজেদের ঘরে ফিরে যাওয়ার সময়টাকে ক্যামেরা বন্দি করতে ভুলবেন না| প্রকৃতির এই নিখাদ সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতার কিন্তু কোনও ভাগ হবে না |
৩. মালপে বিচে সূর্য স্নান
টন্স অঞ্চলের অন্যতম সুন্দর পর্যটন স্থান বন্দর নগরী মালপে | উপকূলবর্তী এই মালপে বিচ ও এখনও তেমনভাবে প্রকাশ্যে আসতে পারেনি | সেই কারণে স্থানীয় মানুষ ছাড়া পর্যটকদের আনাগোনা তেমন নেই | মনের মানুষের সাথে সমুদ্র সৈকতে বসে ঢেউয়ের গর্জন শোনার সাক্ষী থাকতে পারেন | অথবা একাকী বিচে বসে নিরিবিলিতে কাটিয়ে নিতে পারেন অনেকটা সময় | অথবা জেলেদের থেকে শিখে নিতে পারেন মাছ ধরার নতুন কৌশল | আবার কখনো এডভেঞ্চার এর জন্য জেট-স্কি ও করতে পারেন | সুবর্ণ সঙ্গম থেকে ১ দিনের ট্রিপে মালপে বিচের ভ্রমণ কখনোই মিস করবেন না |
৪. উদুপি ভ্রমণ
সুবর্ণ সঙ্গম থেকে মাত্র ১০কিমি মধ্যেই প্রাচীন ধর্মীয় নগরী উদুপি | উদুপিতে প্রতি বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের সমাগম হয় | উদুপি-প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ মন্দির, শ্রীকৃষ্ণ মঠ পরিদর্শন করতে কিন্তু অবশই ভুলবেন না | পরিশেষে, ইচ্ছা করলে ঐতিহ্যবাহী কাঞ্জিভরম সিল্ক শাড়ী পরখ করে দেখতে পারেন| উদুপি থেকে সেন্ট-মেরি দ্বীপও ঘুরে আসতে পারেন|
পথ নির্দেশ:
দিল্লি থেকে সুবর্ণ সঙ্গম
বিমানে: সুবর্ণ সঙ্গম পৌঁছনোর নিকটতম বিমান বন্দরটি হল ম্যাঙ্গালুরু বিমানবন্দর | মাত্র ৪০০০ টাকায় প্রত্যেকদিন দিল্লি ম্যাঙ্গালুরুতে বিমান পরিষেবার সুযোগ রয়েছে| বিমানবন্দর থেকে থেকে ৬৫ কিমি দূরেই অবস্থিত সুবর্ণ সঙ্গম | ম্যাঙ্গালুরুতে পৌঁছে ছোট গাড়ি ভাড়া করে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে |
ট্রেনে : ট্রেনে নিউ দিল্লি থেকে ম্যাঙ্গালোরে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ঘণ্টার মতো | ম্যাঙ্গালুরু স্টেশন থেকে ভিলার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি | স্টেশন থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে ভিলায় যেতে পারেন ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে |