দিল্লি থেকে রামগড় সড়কের যেখানে সমাপ্তি , ঠিক সেখানেই খুঁজে পাবেন প্রকৃতি আর ভালোবাসার অদ্ভুত মেলবন্ধনে নির্মিত এক স্বর্গীয় ভূখণ্ডকে। উত্তরাখণ্ডের কুমায়নের ঘন বনাঞ্চলের মধ্যে গড়ে ওঠা হিমালয়িকা হোমস্টে এই জায়গার সৌন্দর্যে এক অন্য মাত্রা দান করেছে।
শহর নিবাসী পর্বতপ্রেমীদের জন্য পর্বত ক্রোড়ে তাদের অবকাশ যাপনের স্বপ্নকে ক্রমাগত পূরণ করে চলেছে এখানকার এক অন্যতম গ্রাম 'শ্যামক্ষেত'।
শালিনী এবং উত্তম দাভে নামক দিল্লির এক দম্পতি প্রায় ১৩ বছর ধরে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অফুরন্ত ভালবাসায় সাজিয়ে তুলেছেন এই ছোটো জায়গাটিকে। শ্রম আর আবেগের দ্বারা নির্মিত এই জায়গাটি ক্রমশ হয়ে উঠেছে প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দম্পতিযুগল এই বনাঞ্চলকে তাঁদের সম্পত্তি বিকাশের পন্থা রূপে দেখলেও, তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য কিন্তু পাখির সঙ্গে প্রকৃতির ও ভালোবাসাকে একাত্ম করা।
হাতে তৈরি উন্মুক্ত বাগান থেকে শুরু করে পক্ষী সংযোগ ভাস্কর্যগুলোতে স্বর্গীয় অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন এই দাভে দম্পতি।শুধু ভ্রমণকারীদের জন্য নয়, পাখিদের জন্যও সমানভাবে তাঁরা গড়ে তুলেছেন এক উন্মুক্ত আকাশ।
সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের কারিগরি শিল্পের সহায়তায় ও স্থাপত্যশৈলীতে হিমালয়িকা হয়ে উঠেছে অন্যতম। তাদের শৈল্পিক সত্ত্বার মূল প্রবাহমান চিন্তাধারারটি হল "অতীত থেকে অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করে বর্তমান জীবনকে সাজিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া"।
এই জায়গার মালিকেরা সবসময় নজর রেখেছেন আগত অতিথিদের আতিথিয়তার উপর। শুধুমাত্র তাদের নিয়মিত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যোগান দিতেই নয়, তাদের সঙ্গে আসা তাদের পোষ্যদের সমানভাবে নজর রাখার ব্যবস্থাপনাও আছে। আগত প্রতিটি পরিদর্শককে স্বাগত জানাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সর্বদা প্রস্তুত রাখা কফি পূর্ণ একটি পেয়ালা।
হিমালয়িকার সবথেকে কাছের শহরটি হল ভোয়ালী, একমাত্র যেখানে এটিএম-এর কাজ হয়। জানিয়ে রাখা উচিত যে এখানে এটিএম কার্ড ব্যবহৃত হয় না, তাই হোমস্টে নির্বাচনের সময় নির্ধারিত অর্থ আগেই দিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। অবশ্য এখানে ওয়াইফাই, প্রিন্টার, কপি এবং স্ক্যানার প্রভৃতির ব্যবস্থাপনা লক্ষণীয়। সঙ্গে সঙ্গে সময় মতো রান্না এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও এখানকার সমস্ত কর্মীরা নজর রাখেন।
পরামর্শ:- এই হোমস্টেতে থাকতে চাইলে বেশ আগে থেকে এখানে বুকিং করতে হবে কারণ এই জায়গার চাহিদা অত্যন্ত বেশি।
কী কী করবেন
যারা একটু নিরিবিলি আর প্রকৃতির ছোঁয়ায় নিজের আত্মচেতনাকে খুঁজে নিতে পছন্দ করেন, সেই সমস্ত দম্পতি আর পরিবারের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। আর যেসব দম্পতিরা প্রকৃতির কোলে নিজেদের একাকিত্বকে উপভোগ করতে চান তাদের জন্য এটি একটি অনবদ্য স্থান।
কোথায় অবস্থিত
ভোয়ালী-রামগড় সড়ক পথে ২.৬ কিলোমিটার গেলেই শ্যামক্ষেত গ্রাম। ব্লক রামগড় জেলা নৈনিতাল, কুমায়ন পর্বতমালা, উত্তরাখন্ড-২৬৩ ১৩২
কীভাবে যাবেন
দিল্লি থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শ্যামক্ষেত গ্রাম। নিজস্ব গাড়িতে গন্তব্যে পৌঁছোতে সময় লাগে মোটামুটি সাত ঘণ্টা। আর যদি রেলপথে যাত্রা করেন, তাহলে দিল্লী থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেস কাঠগোদাম স্টেশনে পৌঁছলে, সেখানে আপনাকে নির্দিষ্ট হোমস্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপস্থিত থাকেন অতিথিসেবকেরা।আবার ফেরার সময় তারাই আপনাকে এই কাঠগোদাম স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে যাবেন। নিকটস্থ বিমানবন্দর পান্থনগর (৬৩ কিলোমিটার) থেকেও আপনার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
থাকার ব্যবস্থা
মূল ভিলা:- এখানে একটি বিশাল আকৃতির কাঁচ ঘেরা ঘর দেখতে পাবেন, যেটি সবাই মিলে বসে চা খাওয়ার জন্য একবারে উপযুক্ত জায়গা। এছাড়া প্রতিটি ঘরে রয়েছে
একটি করে ফায়ারপ্লেস। এছাড়াও রয়েছে দশজনের মত নির্মিত নৈশভোজের স্থান আর একটি বিশাল রান্নাঘর এবং তিনতলা কাঠের নির্মিত শয়ন কক্ষ।
প্রতি রাতের ভাড়া:-১০,০০০ টাকা
গেস্ট কটেজ: ছোট পরিবারের জন্য এই গেস্ট কটেজ এক্কেবারে আদর্শ। এখানে খুব সুন্দর একটি বাগান রয়েছে আর রয়েছে নৈশভোজের জায়গা, রান্না করার জায়গার সাথে দুটি শয়ন কক্ষ আছে।
প্রতি রাতের ভাড়া:-১০,০০০ টাকা
যে অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করতে পারবেন
হিমালয়িকা থেকে গাগার পর্যন্ত ছোট ট্রেক
অন্যান্য দেখার জায়গা:-হিমালয়িকা থেকে গাগার যাওয়ার পথে এখানকার দর্শনীয় জায়গাগুলি প্রত্যেকটি চোখে পড়ার মতো। নন্দা দেবী এবং পঞ্চচুলি পর্বত শৃঙ্গ দুটি দেখতে পাবেন। এছাড়াও এখানকার অতিথিসেবক আপনাদেরকে আরও কিছু দেখার জন্য পথনির্দেশকের ব্যবস্থা করে দেবেন।
কুলথি-ঝান্ডিধার:-একটি গাড়ি ভাড়া করে হিমালয়িকা থেকে রামগড় রোড ধরে ৫ কিলোমিটার যাত্রা করলে দেখতে পাবেন ঝান্ডিধার পর্বতশৃঙ্গ। যদি আপনি এখানে থাকতে চান তাহলে অতিথিসেবক আপনার জন্য মহেশ খান অরণ্যের মধ্যে ফরেস্ট রেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন।
ভোয়ালী স্বাস্থ্যালয়:-
১৯১২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যালয় হিসেবে এটিকে গণ্য করা হয়েছে।
হিমালয়িকা থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থান যেখানে জহরলাল নেহেরুর স্ত্রী কমলা নেহেরু টিবি রোগের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করেন। সুতরাং এটি ইতিহাস প্রেমীদের জন্য অত্যন্ত আগ্রহের একটি দর্শনীয় জায়গা।
ঘোড়াখাল মন্দির:-
কুমায়নের উৎসর্গিত দেবতার এই মন্দির হিমালয়িকা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মন্দির ঘুরতে আসার সবথেকে ভালো সময় হলো দশেরা। যেসময় আপনি এসে শুধুমাত্র মানুষের জমায়েত নয়; পশুপাখিদের বলিদানও দেখতে পাবেন।