বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যান প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে অনেকটা স্বর্গের মতোই বলা যায়। এখানে নানা রকমের পশু-পাখি ও গাছপালা আছে। এই পার্কটি প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটারের মতো অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন ভারতের প্রথম প্রজাপতি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, অ্যাকোয়ারিয়াম এবং কিছু ঐতিহাসিক সৌধ। এখানকার বায়োলজিকাল পার্কে আপনি সাফারি করতে পারেন আর পশু-পাখিদের তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানে দেখার সুযোগ পাবেন।
বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যানে কেন যাবেন?
প্রকৃতির মুখোমুখি হতে চাইলে বা জঙ্গলের জীবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা গড়ে তুলতে চাইলে এখানে একবার আসতেই হবে। আর মজার বিষয় হল এখানে সব বয়সী মানুষদেরই কিছু না কিছু করার আছে। ছোটরা এখানে এসে আনন্দ পাবে, যারা ছবি তুলতে ভালবাসে, পাখি আর অরণ্য ভালবাসে বা শুধুই একটু একা থাকতে চায়, তাঁদের সবার জন্য এই পার্কের দরজা খোলা আছে।
১। জঙ্গল সাফারি করুন আর চিড়িয়াখানায় যান : সম্ভবত ছোট বড় সবার ভাললাগা আর ভালবাসার ব্যাপার এটা। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, এশিয়ান লায়ন, হাতি, সজারু, স্লথ, ভল্লুক সহ আরও অনেক পশু দেখা যাবে এই সাফারিতে। এখানে দুটো সাফারি আছে। একটা গ্র্যান্ড সাফারি যার দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার আর একটা হল টাইগার ও লায়ন সাফারি, এর দৈর্ঘ্য হল ১১ কিলোমিটার।
এখানকার চিড়িয়াখানা একটি বিশেষ আকর্ষণ। বিশেষ করে সঙ্গে যদি খুদে কেউ থাকে, তার অবশ্যই ভাল লাগবে। এখানে একটি সরীসৃপ পার্ক আছে। আছে ছোট্ট মঞ্চ। যেখানে প্রাণীদের জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় বোঝানো হয়। চিড়িয়াখানা দেখা আর যে কোনও একটা সাফারি একসঙ্গে করা যায়। তাহলে এই ট্রিপ আরও ভাল লাগবে। তবে সপ্তাহান্তে এই সাফারি আর চিড়িয়াখানার টিকিট পাওয়া খুব দুষ্কর। সবচেয়ে ভাল হয় দুপুর দুটোর আগে পার্কে পৌঁছে গেলে।
২) হাতির স্যাংচুয়ারি দেখুন : এখানে শুধু হাতিদের জন্য সংরক্ষিত একটি এলাকা আছে। ১২২ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত হাতিদের এই অভয়ারণ্য ডিজাইন করেছেন ক্যারল বাকলে, যিনি এলিফ্যান্ট এইড ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। হাতিদের কোনওভাবে বিরক্ত না করেই মানুষের সঙ্গে এদের যোগাযোগ গড়ে তোলা হয় এখানে।
৩) রয়েছে প্রজাপতির পার্কও: ২০০৬ সালে এই পার্কের উদ্বোধন হয়। এইরকম পার্ক ভারতে প্রথম। সাত একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই পার্কে আছে একটি মিউজিয়াম, কনজারভেটরি ও অডিও ভিসুয়াল রুম। কনজারভেটরিতে ২০ টি প্রজাতির প্রজাপতি থাকতে পারে। এখানে তাদের ভালভাবে থাকার জন্য কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা হয়েছে।
৪) ট্রেকিং করতে পারেন: বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যান পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে অবস্থিত। তাই উইকেন্ডে ট্রেকিং করার জন্য এই জায়গা একদম আদর্শ। এখানে অনেকগুলো ট্রেকিং রুট আছে, যা ট্রেকারদের বেশ ভাল লাগবে। প্রাকৃতিক রক ফরমেশান উড্ডিগেবান্দে অঞ্চলে, যা পার্ক থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ৩ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে আরও একটি ন্যাচারাল রক ফরমেশন যার নাম হাজ্জামানা কাল্লু। এক কিলোমিটারের মধ্যেই আছে মির্জা হিল। অসংখ্য গাছপালা আর আচমকা জন্তু জানোয়ারের মুখোমুখি হওয়া এই ট্রেকিংয়ের বাড়তি পাওনা।
কীভাবে যাবেন বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যান
সবচেয়ে কাছের শহর হল বেঙ্গালুরু, যা এই পার্ক থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
সড়কপথে: প্রতি ২০ মিনিট অন্তর এখানে আসার বাস পাওয়া যায়। ট্যাক্সি বা নিজের গাড়িতেও আসতে পারেন।
রেলপথে: সবচেয়ে কাছের স্টেশন হল বেঙ্গালুরু জাংশন। কর্ণাটক দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ভালভাবে যুক্ত, তাই কোনও চিন্তা নেই।
বিমানপথে: বেঙ্গালুরুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখান থেকে সবচেয়ে কাছে অবস্থিত। সেখান থেকে নিজস্ব গাড়ি, ট্যাক্সি বা বাসে করে পার্কে যাওয়া যায়।
বানেরঘাট্টা ন্যাশনাল পার্ক হোটেলস
যেহেতু এই পার্ক বেঙ্গালুরু শহরের খুব কাছে, তাই সেখানে থাকতেই সবাই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু এই পার্কের খুব কাছেই রয়েছে অনেক বাজেট হোটেল। যেখানে প্রকৃতির মাঝে দু'চার রাত্রি কাটানো যায়।
পার্ক থেকে দূরত্ব ৬.৭ কিলোমিটার
খাওয়া দাওয়া
বিগত কয়েক বছর ধরে এই জাতীয় উদ্যানে অনেক পর্যটক আসায় এখানে প্রচুর খাওয়া দাওয়া করার জায়গা আছে। মূলত এখানে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়। নাগারজুন, গরমা গরম, চুং ওয়া, সিমপ্লি ইন্ডিয়ান, সিজনস আর চাভাডি হল কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্তরাঁ। পার্কের মধ্যে ছোট ছোট দোকানে চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, চা ইত্যাদি পাওয়া যায়।
এক ঝলকে বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যান
শহরের সীমানা থেকে খুব দূরে নয় এই পার্ক। বেঙ্গালুরুর বিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচতে জীবনের এক সতেজ স্রোতের জন্য, বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যান প্রকৃতির সরল আনন্দ উপভোগ করার জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্রিয়াকলাপের আয়োজন করা হয় যা এই অঞ্চলের বিদেশি এবং আদিবাসী বন্যজীবনের সাথে আপনার সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। আপনি নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা বা অন্য জায়গা থেকে আগত পর্যটক যাই হোন না কেন, বানেরঘাট্টা জাতীয় উদ্যান সবার জন্য উপভোগ্য। আমরা নিশ্চিত যে এই পার্ক আপনার স্মৃতিতে একটি চিহ্ন রেখে যাবে ।
কয়েকটি জরুরি কথা
প্রবেশ মূল্য :পার্কে ঢোকার মূল্য হল ৮০ টাকা আর ছোটদের জন্য ৪০ টাকা। তবে এখানে ঢুকে অন্যান্য জায়গা যেমন বাটারফ্লাই পার্ক , সাফারি ইত্যাদির জন্য আলাদা টাকা দিতে হবে।
সময়: মঙ্গলবার ব্যতীত প্রতিদিন খোলা থাকে সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
যোগাযোগ : ৮০২৯৭৭৬৪৬৬
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)