দৈনন্দিন জীবনের রোজ-নামচা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আপনাকে হতাশ আর বিচ্ছিন্ন করে তুলতে পারে। কিন্তু মাঝে মধ্যে এই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াটাও আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এমন কিছু অতুলনীয় সুন্দর জায়গা আছে, যা আপনাকে মোবাইল নেটওয়ার্ক আর মা বাবার মিষ্টি কিন্তু ঘন ঘন ফোন কলগুলো থেকে নিয়ে যাবে অনেক অনেক দূরে। যেখানে হয়তো আপনি পাবেন একান্ত ব্যক্তিগত অবসর...
১. লাদাখ, কাশ্মীর
সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলাগুলির মতন লাদাখেও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোবাইলের টাওয়ার বসানোর অনুমতি পায় না। তাই ভোডাফোন বা এয়ারটেল নেই, আছে শুধুই বি.এস.এন.এল, তাও পোস্টপেড।
কিন্তু লেহ্ তে এসে আপনি ইন্টারনেট ক্যাফেও পাবেন। কিন্তু ততক্ষণে আপনি আর সেটাকে পাত্তা দেবেন না। কারণ লাদাখে আছে ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে আরও অনেক বেশি মনোগ্রাহী দেখার মতো জিনিস।
পৌঁছনোর সবথেকে ভাল উপায় : রোড ট্রিপ
পড়ুন কীভাবে দুই ইডিয়ট ৪৫০০কিলোমিটার রোড ট্রিপ করে লাদাখ পৌঁছলো : ৪৫০০কিমি, দুই ইডিয়ট আর লাদাখে ওয়াইল্ড সাফারি
২. মালানা/তোষ, হিমাচল
কাসল বা মানিকারান থেকে ট্রেক করে মালানা আর তোষে পৌঁছানো যায়। আর যেখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্যানাবিজ পাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে আর বাবা মার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করবে বলে মনে হয়না।
পৌঁছানোর সবথেকে ভালো উপায় : ট্রেক
পড়ুন কীভাবে কৈমবাতুরের এই পর্যটকরা পার্বতী ভ্যালিতে ছুটি কাটালেন : পার্বতী ভ্যালির পাহাড়ী আলিঙ্গন
৩. হ্যাভলক, আন্দামান
যদি সমুদ্র আপনাকে ডাক দিয়ে থাকে, তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে শেষ প্রান্তে লুকিয়ে আছে আপনার প্রশ্নের উত্তর। ভেবে দেখলেই বুঝবেন, মাঝসমুদ্রে কে আর মোবাইলের টাওয়ার বসাতে আগ্রহী। আর আপনি যদি এখানে বিভিন্ন আন্ডারওয়াটার অ্যাক্টিভিটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে ফোনের দরকারও আর বিশেষ প্রয়োজন হবে না।
পৌঁছানোর সবথেকে ভালো উপায় : ফেরি
আন্দামান, এবং বিশেষ করে হ্যাভলক স্নোরকেলিং বা স্কুবা ডাইভিং করার জন্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ জায়গা। হ্যাভলকে স্কুবা ডাইভিং নিয়ে জানতে এটা পড়ুন।
৪. আলেপ্পি, কেরালা
ধরে নিন আপনি আছেন সমুদ্রের মাঝখানে, একটি খুব সুন্দর কাঠের হাউসবোটে। আর আপনার মা বাবা হয়তো দেশের অন্য প্রান্তে, টিভিতে বিগ বস দেখছেন। আপনার থেকে অনেক অনেক দূরে।
এরপর যদি আপনার ফোনে সিগন্যালের প্রয়োজন হয়, তাহলে নেটওয়ার্কটাই একমাত্র সমস্যা নয়।
পৌঁছানোর সবথেকে ভালো উপায় : কোচি থেকে রোড ট্রিপের মাধ্যমে।
বেড়াতে যাওয়ার জন্যে আলেপ্পির মতন অলস ডেস্টিনেশন খুব কমই আছে। পড়ুন অলস মানুষদের জন্য ১০টি উপযুক্ত ডেস্টিনেশন
৫. স্পিতি ভ্যালি, হিমাচল প্রদেশ
স্পিতির কোল্ড ডেজার্ট আপনাকে দিতে প্রস্তুত অনেক কিছু, কিন্তু মোবাইল কানেক্টিভিটি বাদে। বার বার নিজের ফোন দেখার অভ্যেস কাটিয়ে উঠে পাহাড়ি গুম্ফা এবং শেষ না হওয়া ড্রাইভের দেশে নিজের মনের মধ্যে হারিয়ে যান।
পৌঁছনোর সবথেকে ভালো উপায় : রোড ট্রিপ
একা মহিলা পর্যটকদের জন্য হিমাচল এবং বিশেষ করে স্পিতি সারা দেশের মধ্যে খুব নিরাপদ একটি জায়গা। এই উপত্যকায় এক অচেনা আগন্তুকের সঙ্গে দিশার হিচ হাইকিং এর গল্প পড়ুন : স্পিতি তে হিচ হাইকিং প্রমাণ করল যে একা মহিলা পর্যটকদের জন্যে হিমাচল ভীষণ নিরাপদ
৬. যে কোনও ট্রেক
শুধুমাত্র নিজের দু'পায়ের উপর ভরসা করে, পাহাড়ি সমস্ত বিপদ এবং অকৃত্রিম সৌন্দর্যের উপহারকে সঙ্গী রেখে ট্রেকে বেরিয়ে পড়ার মানে হল পদে পদে বেঁচে থাকার প্রবৃত্তিকে আপন করে একপ্রকার এগিয়ে চলা। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে হয়তো আপনার মা-বাবার কথা বার বার আপনার মনে পড়বে, কিন্তু পাহাড়ি পরিবেশে থাকবে না আক্ষেপ করার কোনও সুযোগ।
যদি না সঙ্গে থাকে বি.এস.এন.এল
হিমাচল প্রদেশে করতে পারেন প্রায় ৪০টির বেশি ট্রেক। পড়ুন : হিমাচল প্রদেশের সমস্ত সম্ভাব্য ট্রেকের হদিশ
৭. কচ্ছের রণ, গুজরাত
আবার সেই সীমান্তবর্তী এলাকার সমস্যা। নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারত সরকার এই সমস্ত অঞ্চলে কোনও বেসরকারি টেলিকম সংস্থাকে অনুমতি দেয় না। তাই এই অদ্ভুত নোনা মরুভূমির মধ্যে হারিয়ে যান, খুঁজে পান নতুন এক সংস্কৃতি।
পৌঁছনোর সবথেকে ভালো উপায় : রোড ট্রিপ
এলিটা একাই কচ্ছ এবং শ্বেত মরুভূমিতে রোড ট্রিপ করে এসেছে। পড়ুন একলা কচ্ছ অভিযান
৮. আন্নেকাল সংরক্ষিত অরণ্য, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা
আধুনিক সমাজের কোনও অভিশাপ, সংরক্ষিত অরণ্যগুলোর মতো প্রাকৃতিক ভূখণ্ডকে কলুষিত করতে পারে না। বন্য এই অরণ্যগুলোতে শুধু স্যাটেলাইট ফোনই ভরসা। তাই কভারেজ এরিয়ার বাইরে গিয়ে কোনও সংরক্ষিত অরণ্যের গহীনে যেতে চাইলে, তা মা-বাবাকে না বলাই ভাল বা মোটামুটি সঠিক তথ্য দিয়ে যাওয়াটাই ভাল।
পৌঁছনোর সবথেকে ভাল উপায় : ট্রেন
পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মাথেরণ গাড়ি ঘোড়ার ঝঞ্ঝাট ছাড়া একটি হিল স্টেশন। তাই বন্যপ্রাণী নিয়ে আপনি উৎসাহিত না হলেও, মাথেরণ নিশ্চয়ই আপনার মন জয় করবে। পড়ুন : চিত্তাকর্ষক মাথেরণ
৯. গুহা অভিযান, মেঘালয়
আজকালকার বাচ্চাদের চাওয়ার শেষ নেই। মোবাইলের সিগনাল চাই, তাও আবার গুহার মধ্যে? আদতে আপনি কে, ব্যাটম্যান? নাকি কোনও সুপারম্যান?
পৌঁছনোর সবথেকে ভালো উপায় : হেঁটে
সত্তানুরূপা চেরাপুঞ্জির মসমাই গুহায় বেড়িয়ে এসে লিখেছে খুবই মনোগ্রাহী এক ভ্রমণকাহিনী। পড়ুন : চেরাপুঞ্জির মসমাই গুহায় চলাফেরা
১০. কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, অসম
ভয়ঙ্কর জন্তু জানোয়ার দের দেখলে মা বাবার কথা মনে পড়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের মতো অভয়ারণ্যে আপনার ফোনের বিরক্তিকর রিংটোনের কোনও জায়গা নেই। ফোন ফেলে এগিয়ে চলুন অভিভাবকদের থেকে অনেক দূরে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য।
পৌঁছানোর সব থেকে ভালো উপায় : বাস
সমগ্র বিশ্ব এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কাজিরাঙার গুরুত্ব অপরিসীম। আরও জানতে পড়ুন কাজিরাঙা : বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং বিশ্বের ঐতিহ্য
১১. যে কোনও অভয়ারণ্য
প্রকৃতপক্ষে সকল অভয়ারণ্যেই আপনার ফোন বা তার রিংটোন অনাহূত বলতে পারি। এই কারণেই এই সকল স্থানে সরকার থেকে টেলিফোন কানেক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মজা করছিলাম, আসল কারণ হল বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির পশুদের নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্যে।
ওরাও আপনার রিংটোন পছন্দ করে না।
উত্তরাখণ্ড থেকে কেরালার বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে আসল পর্যটকদের সত্যিকারের ভ্রমণকাহিনি পড়তে চান, দেখুন ট্রিপোটোর ভ্রমণকাহিনির সম্ভার...