সমস্ত ভূতুড়ে জিনিসপত্রের প্রতি কি আপনার অসীম কৌতূহল? আপনি কি অবসর সময়ে বন্ধ ঘরে একলা একলা হরর ফিল্ম দেখতে ভালোবাসেন? ঘুরতে যাওয়ার সময়েও কি আপনি একইরকম রোমাঞ্চের স্বাদ পেতে চান? তাহলে এটা জেনে আপনি হয়তো বেশ অবাক হবেন যে, ভারতবর্ষে এমন বিভিন্ন হোটেল আছে, যেখানে চেক-ইন করার মানেই হল এরকম রহস্য রোমাঞ্চের মধ্যে গিয়ে পড়া। ভূত দেখার ঘটনা থেকে শুরু করে অতর্কিত আর্তনাদ, এইসকল হোটেলের গেস্ট এবং কর্মচারীরা সম্মুখীন হয়েছেন এমনই সব পরিস্থিতির, যার ফলে হোটেলগুলো ইতিমধ্যে পেয়েছে ভূতুড়ে হওয়ার কুখ্যাতি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতবর্ষের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ভূতুড়ে হোটেল সম্পর্কে, যাদের হৃদয় দুর্বল, তারা কিন্তু সাবধান!
১. ওয়েলকাম হোটেল দ্য স্যাভয়
কোথায় : গান্ধী চক, মুসৌরি
ভয়ের কারণ : মুসৌরির স্যাভয় হোটেলটিকে ভারতবর্ষের অন্যতম ভূতুড়ে হোটেল বলে মনে করা হয়। কথিত আছে ১৯১০ সালে বেশ রহস্যময় পরিস্থিতিতে লেডি গারনেট ওমরের মৃত্যু হয় এখানে। কয়েক বছর পরে, লেডি গারনেটের চিকিৎসা যিনি ডাক্তার করছিলেন, তারও এখানেই মৃত্যু হয়। তখন থেকেই হোটেলের অতিথিরা এমন অনেক ভৌতিক ঘটনার কথা বলেছেন যা কার্যত যুক্তি তর্কের অতীত বলতেই পারি।
২. ব্রিজরাজ ভবন প্যালেস হোটেল
৩. মর্গ্যান হাউস
৪. ফার্নহিলস রয়্যাল প্যালেস
৫. দ্য তাজমহল প্যালেস
৬. হোটেল লেকভিউ
কোথায় : নয়নপুর, কোটা
ভয়ের কারণ : ব্রিটিশ শাসনকালে কোটার এই হেরিটেজ হোটেলটি ছিল জনৈক মেজর বার্টনের বসতবাড়ি। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় বার্টন এবং তাঁর পরিবারের হত্যা করা হয় এই বাড়িরই সেন্ট্রাল হলে। ১৯৮০ সালে বাড়িটিকে হোটেল হিসেবে খোলা হয়, কিন্তু তারপর থেকেই বিভিন্ন অতিথি অভিযোগ করেন রাতের বেলাতে বিভিন্ন ভূতুড়ে উপদ্রব সম্পর্কে। স্বয়ং কোটার রানীও স্বীকার করেছেন যে তিনি নিজে এখানে ভৌতিক ব্যাপার-স্যাপার অনুভব করছেন।
কোথায় : চন্দ্রালোক, কালিম্পং
ভয়ের কারণ : কালিম্পং-এর একেবারে মধ্যিখানে অবস্থিত মর্গ্যান হাউস টুরিস্ট লজ বানানো হয়েছিল ১৯৩০ সালে, জর্জ মর্গ্যান সাহেবের বসতবাড়ি হিসেবে। লেডি মর্গ্যানের অসময়ে মৃত্যুর পর মর্গ্যান পরিবার বাড়িটি ছেড়ে সদলবলে চলে যান। স্টেট ট্যুরিজম গেস্ট হাউস হিসাবে মর্গ্যান হাউসের উদ্বোধন হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে অতিথিরা বুঝতে পারেন যে মর্গ্যান পরিবার বাড়িটি ছেড়ে চলে গেলেও, লেডি মর্গ্যানের আত্মা এখনও এই বাড়ির মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কাঠের মেঝেতে উঁচু হিল জুতো পরে খটখট শব্দ করতে করতে কোনো মহিলার হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ অনেকেই শুনেছেন, কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি কোনও কিছু চোখে দেখার অভিজ্ঞতা হয়নি।
কোথায় : উটি
ভয়ের কারণ : উটির অন্যতম জনপ্রিয় এবং পরিচিত ফার্নহিলস রয়্যাল প্যালেসের বাড়িটি। ২০০২ সালের বলিউডের হরর ফিল্ম 'রাজ'-এর শুটিং-এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল এই বাড়িটিই। শোনা যায় শুটিং চলাকালীন ফিল্মের বিভিন্ন কর্মচারী, এমনকি বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার সরোজ খান-ও শুনতে পান তাদের উপরের ফ্লোরগুলো থেকে রাত বাড়লেই বিভিন্ন আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আওয়াজ হচ্ছে। হোটেলের কোনো কর্মচারীর দেখা না পেয়ে, ফিল্ম ক্রুর লোকজন ঘুমিয়ে পড়েন। পরেরদিন সকালে তারা হোটেলের রিসেপশনে গিয়ে অভিযোগ করেন আগের রাতের ব্যাপারে এবং তার বদলে পান এক ভয়াবহ জবাব - রিসেপশনের কর্মচারীরা জানান যে ওই হোটেলে উপরে আর কোনো ফ্লোর-ই নাই।
কোথায় : কোলাবা, মুম্বই
ভয়ের কারণ : শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, ভারতবর্ষের অন্যতম আইকনিক হোটেল, দ্য তাজমহল প্যালেস কিন্তু ভূতুড়ে। লোকমুখে শোনা যায়, হোটেলটি তৈরি করার প্রাথমিক সমস্ত ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ইংল্যান্ডে ফিরে যান হোটেলের প্রধান স্থপতি ডব্লিউ.এ.চেম্বার্স। তিনি ফিরে এসে দ্যাখেন যে হোটেলটি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমুখে এবং তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অবসাদের শেষ চূড়ায় পৌঁছে তিনি হোটেলের ভিতরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এত বছর পরেও হোটেলের বিভিন্ন অতিথি এবং কর্মচারীরা হোটেলের পুরোনো উইংয়ের আনাচে কানাচে চেম্বারসের আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন।
কোথায় : ওয়েস্ট লেক রোড , উটি
ভয় কারণ : আপনার সাহসের চরম পরীক্ষা করতে চাইলে এক রাত কাটিয়ে আসুন উটির হোটেল লেকভিউতে। ঘন সবুজ পাহাড়ি পরিবেশে গা ছমছমে লেকভিউ হোটেল বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার কারণে কুখ্যাতি লাভ করেছে। হঠাৎ করে বিছানার বেড শিট গুলোর আচমকা ছিটকে সরে যাওয়া থেকে পূর্ণিমার রাতে ভূতুড়ে কান্নার আওয়াজ, অতিথিদের সহ্য করতে হয়েছে আরও অনেক কিছুই। স্থানীয় বাসিন্দারাও হোটেলটি কে অভিশপ্ত মনে করেন এবং সূর্য ডোবার পরে একেবারে এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেন তাঁরা।
(লোকের মুখে অলৌকিক কিংবা অবাস্তব ধারণা গড়ে তোলা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়, সাধারণ লোকমুখে শোনা বিভিন্ন অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করেই লেখাটি হয়েছে...)