বেশিরভাগ হিন্দুরা বারাণসী শহরকে ভালবেসে বলেন কাশী, কেউ বলেন আলোর শহর বা দ্য সিটি অব লাইটস। আবার কেউ বলেন শিক্ষা, সঙ্গীত আর নৃত্য জীবনের সব রসের ধারা যেখানে মিশে গেছে সেই তো বনারস বা বেনারস! বলা হয় এই শহরের সবচেয়ে প্রথম বাসিন্দা এখানে থাকতে এসেছিলেন ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বে। আর শহরের বয়স? তা ধরে নিন হাজার তিনেক হবে। বাবা বিশ্বনাথ শিবের বাড়ি বলে কথা! পরের পর ঘাট, সেই হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের কথাই তো বলে।
আপনি এর মধ্যে যে কোনও একটা ঘাটে গিয়ে মিনিট দশেক দাঁড়ান। মনে হবে আপনি অন্য কোনও একটা দেশে চলে এসেছেন। গেরুয়া বসন পরা সাধু, মন্ত্রের উচ্চারণ, পর্যটকদের উচ্ছ্বাস, জল ছিটিয়ে স্নানের শব্দ, গণৎকারদের মেলা, সন্ধের আরতি... সব মিলিয়ে যাকে বলে এক অদ্ভুত মেথড ইন ম্যাডনেস! আর আপনি যদি ফেলু মিত্তিরের ভক্ত হন তাহলে তো বারাণসীর ঘাট আপনার প্রিয় হতে বাধ্য!
বারাণসীর ঘাটের তালিকা:
গঙ্গা নদী যেখানে অসি নদীর সঙ্গে মিশেছে সেখানেই এই অসি ঘাট। কথিত আছে দেবী দুর্গা শুম্ভ আর নিশুম্ভ নামক দুই রাক্ষসকে হত্যা করার পর তাঁর অসি বা তরবারি এই নদীতে ফেলে ছিলেন। তাই এহেন নামকরণ হয়েছে। এই ঘাট বারানসীর একদম দক্ষিণে অবস্থিত। মস্ত পিপল গাছের নীচে রয়েছে অতিকায় শিবলিঙ্গ। যদিও মূল শহর থেকে এই ঘাট বেশ দূরে, তবে গবেষক, বিদেশী ছাত্রছাত্রী আর উৎসুক পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে এই ঘাট।
কী করবেন, কী দেখবেন: সকাল বেলার আরতি যাকে সুবাহ -এ- বেনারস বলা হয় সেটা একদমই মিস করা যাবে না। ভোর চারটের সময় এই আরতি হয়। সকালে উঠছেন আর সূর্যোদয় দেখবেন না সেটা কি হয়? তার সঙ্গে সঙ্গে রোজ সকালের ফ্রি যোগা ক্লাসও করে নিতে পারেন। অসি চৌরাহা সাইনবোর্ড দেওয়া যেখানে সেখানে দুর্দান্ত গোলগাপ্পা পাওয়া যায়। অসি চৌরাহার কাশী স্টলে খেয়ে দেখুন সবজি-কচৌরি (কচুরি) আর জিলিপি। পিৎজা খেতে চাইলে ভাটিকা ক্যাফেতে চলে যান।
কোথায় থাকবেন: গঙ্গা মনাসট্রি বা প্যালেস অন গ্যাঞ্জেস দেখতে পারেন। আরও অপশনের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
বারাণসীর সবচেয়ে পবিত্র ঘাট এই মণিকর্ণিকা। কারণ এখান থেকেই যে পাওয়া যায় মোক্ষ, পাওয়া যায় অনন্ত মুক্তি। এখানে বেশিরভাগই মৃত্যু পথযাত্রী বয়স্ক মানুষদের ভিড় দেখা যায়। তাঁরা বিশ্বাস করেন এখানে মারা গেলে তাঁদের কর্ম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এখানে গয়ার মতো বংশ তালিকাও আছে। বলা হয় এই ঘাটে চিতার আগুন কোনওদিন নেভেনা। পরের পর সার দেওয়া মৃতদেহ রাখা আছে। ডোমরা নিয়ে যাচ্ছে তাঁদের পোড়াতে। অল্প কিছু পয়সা দিয়ে এই দৃশ্য পর্যটকরা দেখতেও পারেন।
কী করবেন, কী দেখবেন: কাঠওয়ালা মন্দির দেখতে পারেন। নেপালের কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দিরের আদলে এটি তৈরি। কাশী বিশ্বনাথের মন্দির যা স্থানীয় ভাষায় সোনার মন্দির নামে খ্যাত সেটা তো অবশ্যই দেখবেন। আলমগির মসজিদ থেকে পুরো বারাণসী শহর দেখতে পাবেন। হাতে সময় থাকলে ভোলে সিল্ক হ্যান্ডক্রাফট থেকে বেনারসি সিল্ক শাড়ি দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন: গণপতি গেস্টহাউজ আর ব্রিজরাম প্যালেস আছে থাকার জন্য। আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
এই ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস। ১৭৮১ সালে এখানেই লড়াই হয়েছিল ওয়ারেন হেস্টিংস আর চেত সিংহের। চেত সিংহ এখানেই একটি ছোট্ট কেল্লা তৈরি করেছিলেন সুরক্ষার জন্য। যুদ্ধে তিনি হেরে যান এবং ব্রিটিশরা এই কেল্লা দখল করে। আগে এই ঘাটের নাম ছিল খিড়কি ঘাট। নদীর চারটি তীর এই ঘাটের সঙ্গে যুক্ত যথা চেত সিং, নিরঞ্জনি, নির্বানি ও শিভালা । ১৮ শতকের পুরনো এই ঘাটে তিনটে শিব মন্দির আছে।
কী করবেন, কী দেখবেন : ৩০০ বছরের পুরনো সঙ্গীতানুষ্ঠান বুদ্ধ মঙ্গলে অংশ নিতে পারেন। এই অনুষ্ঠান এই ঘাটে এক সপ্তাহ ধরে চলে। সূর্যাস্তের পরে আরতি দেখতে পারেন। ঘাট সংলগ্ন কোলোনিয়াল বাড়ি দেখুন আর এখানকার অলি গলিতে হেঁটে বেড়াতে পারেন।
কোথায় থাকবেন: স্টপস হস্টেল বারানসী ও পঞ্চকোট রাজ গ্যাঞ্জেস আছে থাকার জন্য। আরও অপশনের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
এই ঘাটের এত পরিচিতি নেই। মুসলিম সেনা নায়ক মীর রুস্তম আলির নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে এই ঘাট। এখানে জরাসন্ধেশ্বর আর বৃহদাদিত্যর উদ্দেশ্যে পুজো হয়। সকালে অনেকেই চাল আর ফুল দিয়ে পুজো করেন। বৃহদাদিত্যর অঞ্চলে আশা বিনায়ক ও যজ্ঞ বরাহন্দ বিশালাক্ষীর মূর্তি আছে। আছে একটি পবিত্র কুয়ো, যা ঘেরা আছে পাঁচটি মন্দির দিয়ে এবং দিভদস্বেশরের মূর্তি দেখা যাবে ধর্মকূপ বলে একটি অঞ্চলে। স্বামী কারাপত্রি, যিনি একজন গোঁড়া ব্রাহ্মণ এবং গোষ্ঠী প্রধান, তিনি বলেছেন যে এই ঘাটের বিশ্বেশ্বর মন্দির অপবিত্র হয়ে গেছে। কারণ এখানে নিচু জাতের মানুষ জন আসেন। তাই তিনি ১৯৫৬ সালে নতুন বিশ্বেশ্বর মন্দির স্থাপন করেছেন। এটি ঘাটের একদম উপরে অবস্থিত।
কী করবেন, কী দেখবেন: বারানসী কাফে ও বেকারিতে স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ করুন। এখানকার শতাব্দী প্রাচীন বটুক ভৈরব মন্দির দর্শন করুন। ১৭৫০ সালের মুঘল স্থাপত্য দেখতে চাইলে রামনগর কেল্লা দেখে আসুন। আর দেখতে পারেন দণ্ডায়মান বৌদ্ধ মূর্তি।
কোথায় থাকবেন: হোটেল অলকা ও আ প্যালেস অন রিভার এ থাকতে পারেন। এছাড়া আরও অপশনের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
নাগপুরের অর্থমন্ত্রী শ্রীধর নারায়ণ মুন্সি এই ঘাট নির্মাণ করেন। তাই এই ঘাটের আরেক নাম মুন্সি ঘাট। যারা ক্যামেরা কাঁধে বেনারস দৌড়ন শুধু ছবি তুলতে, তাঁদের জন্য একদম আদর্শ জায়গা হল এই ঘাট। এখানে একটি ১৯০০ শতকের দুর্গ আছে, যার মালিক হল বিহারের একটি পরিবার। গোটা দুর্গ নির্মিত হয়েছে বেলেপাথর দিয়ে। গ্রিক স্তম্ভের ব্যবহার করা হয়েছে এই দুর্গে। ১৯৯৪ সালে ক্লার্কস হোটেল গ্রুপ এই দুর্গ নিয়ে সেটাকে ব্রজরাম প্যালেস হোটেলে পরিণত করে।
কী দেখবেন, কী করবেন : ঘাটে হাঁটতে খুব ভাল লাগবে। চন্দ্র প্রকাশ স্যাংচুয়ারির গভীর অরণ্যে ঘুরে আসুন। সোনা আর রূপোর ব্রোকেড ও জরির কাজ দেখতে চাইলে তাঁতিদের গ্রাম সরাই মোহনা ঘুরে আসুন। থটেরি বাজার ঘুরে দেখুন বেশ ভাল লাগবে। গোদোউইলিয়া বাজারের কালাকাঁদ আর পান খেয়ে দেখতে ভুলবেন না।
কোথায় থাকবেন: রাম ভবন রেসিডেন্সি ও গ্যাঞ্জেস ইন-এ থাকতে পারেন। তাছাড়া অন্য অপশন দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পুরাণ বলে এখানে জন্মেছেন দেবতা অগ্নি। নানা রঙে রাঙানো এই ঘাটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অর্ধেক জলমগ্ন শিব মন্দির। এই মন্দিরের বয়স ১৫০ আর ১৮৩০ সালে এই ঘাটের কিছু নির্মাণ কাজ হওয়ার সময় মন্দিরটি অর্ধেক জলে ডুবে যায়। এই ঘাট বারানসীর সবচেয়ে আনন্দময় একটি ঘাট। এখানকার অলি গলি ঘুরে দেখতেই সময় চলে যায়। এই ঘাটকে সিদ্ধ ক্ষেত্রও বলেন তীর্থযাত্রীরা। এই ঘাট মণিকর্ণিকা ঘাটের উত্তরে অবস্থিত। ঘাটের উপরেই রয়েছে কাশীর কিছু বিখ্যাত মন্দির।
কী দেখবেন কী করবেন : সূর্যাস্তের পর গঙ্গায় নৌকো করে ঘুরতে পারেন। গঙ্গায় স্নান করে দেখুন,কেমন অনুভূতি হয়। ১৮ শতকের দুর্গা মন্দির দেখতে পারেন। গোটা দুপুর ধরে অন্নপূর্ণা, অঙ্কথা, মৃত্যুঞ্জয় মহাদেব, তুলসি মানস আর সঙ্কটমোচন মন্দির দেখে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : সিন্ধিয়া গেস্ট হাউজ ও শিবরাত্রি গেস্ট হাউজ এ থাকতে পারেন। অন্য অপশনের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
লালমোহন গাঙ্গুলির বাণী একদম যথার্থ। এই ঘাটে একটা ব্যাপার আছে। এই ঘাটের আরতি খুব ভাল লাগে দেখতে। পুরাণ বলে প্রজাপিতা ব্রহ্মা যজ্ঞ করার সময় দশটি ঘোড়াকে বলিদান করেন আর তাই এই নামকরণ করা হয়েছে। এখানে মূলত অগ্নি দেবতার পুজো করা হয়। এছাড়া সূর্য দেবতা , শিব ও গঙ্গা নদীর আরাধনাও করা হয়।
কী দেখবেন, কী করবেন: মহারাজ জয় সিংহ নির্মিত মান মন্দির দেখুন। চৌখণ্ডী স্তূপের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর দেখে আসতে পারেন। মস্ত বড় ছাতার নীচে পাণ্ডারা বসে আছেন সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করুন। ভারত কলা ভবনে যেতে ভুলবেন না। কারণ মাটি আর ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত নানা বস্তু দিয়ে সাজানো এই ভবন সত্যি দেখার মতো।
কোথায় থাকবেন : বুঙ্কেদুপ হস্টেল ও হোটেল বরুনা'য় থাকতে পারেন। অন্য অপশনের জন্য ক্লিক করুন এখানে।
রাজপুত স্থাপত্যের জন্য এই ঘাট অবশ্যই দেখবেন। জয়পুরের মহারাজ মান সিংহ ১৬ শতকের মাঝামাঝি এই ঘাট নির্মাণ করেন। ১৭৩০ সালের গরমকালে সোয়াই জয় সিংহ দ্বিতীয় এখানে একটি অবজারভেটরি তৈরি করেন। এখানে রাখা জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি এখনও বেশ ভাল অবস্থায় আছে। এখান থেকে গঙ্গার দুই পাড়ই দেখা যায়।
কী দেখবেন, কী করবেন : স্থূলদন্ত বিনায়ক, রামেশ্বর আর সোমেশ্বর মন্দির দেখুন। ঔরঙ্গজেব নির্মিত জ্ঞানব্যাপী মসজিদ দেখুন। সারনাথের ধামেকা স্তূপ ও চৌখণ্ডী স্তূপও দেখার মতো। দেখতে ভুলবেন না অশোক স্তম্ভও।
কোথায় থাকবেন :মধুবন প্যালেস ও হোটেল গ্রেপভাইন এ থাকতে পারেন। অন্য অপশনের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)