কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন

Tripoto
Photo of কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন 1/6 by Doyel Banerjee
শক্তিপীঠে মহাশক্তির আরাধনায় (ছবি সংগৃহীত)

সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী, ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন মুণ্ডমালা কোথা পেলি? কালীপুজোর সময় এই গান বাঙালির অতি পরিচিত। সাধক রামপ্রসাদ থেকে মহাসাধক বামাখ্যাপা সবাই এই প্রশ্ন নিরন্তর করে গেছেন। কে তুমি? কোথা থেকে তুমি এলে? এত অসীম শক্তি কীভাবেই বা তুমি ধারণ করলে নিজের মধ্যে? পুরাণ ও বিভিন্ন শাস্ত্র বলছে 'কালী' শব্দটি এসেছে 'কাল' বা 'সময়' থেকে। কালী হলেন কাল-কে যিনি হরণ করেছেন। আবার ঘোর কৃষ্ণবর্ণ গায়ের রং বোঝাতেও কালী শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে। আবার অনেকে বলছেন শিবেরও অপর নাম 'কাল'। তাঁর অর্ধাঙ্গিনীরূপে বিরাজ করেন কালী।মনে করা হয় নবদ্বীপের বিখ্যাত তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ বাংলায় সর্বপ্রথম কালীমূর্তি নির্মাণ করে তাঁর পুজো শুরু করেন। পরে সেটাই অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরে এই পুজো সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আমরা যে কালীপুজো দেখি এটি তারই বৃহৎ ছবি। কিন্তু কীভাবে তৈরি হল এই শক্তিপিঠ? কিংবদন্তী বলে রাজা দক্ষের যজ্ঞে অপমানিত হয়ে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেন সতী। তাঁর মৃতদেহ নিয়ে প্রলয় নাচন শুরু করেন শিব। তাঁকে থামাতে বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড করে দেন। একেকটি খণ্ড একেক জায়গায় পড়ে প্রস্তরীভূত হয়ে শক্তিপীঠ তৈরি হয়েছে। তন্ত্র সাধনার সাথে কালীপুজোর বিশেষ যোগ আছে। তাই কালীপুজোর সময় বিভিন্ন শক্তিপীঠে ভক্ত ও পর্যটক সমাগম বেড়ে যায়। এইবার সেটা সম্ভব না হলেও মানস ভ্রমণ করতে বাধা নেই।

মহাতীর্থ কালীঘাট

Photo of কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন 2/6 by Doyel Banerjee
মহাতীর্থ কালীঘাটে দেবী কালী (ছবি সংগৃহীত)

একসময় বর্তমান কালীঘাট মন্দিরের কাছ দিয়েই প্রবাহিত মূল গঙ্গা নদী। তাই একে আজও আদি গঙ্গা বলা হয়ে থাকে। এখন যদিও আদি গঙ্গা একটা নালায় পরিণত হয়েছে। আদি গঙ্গায় স্রোতের ধারাবাহিকতা সেই অর্থে আমাদের চোখে পড়ে না... তবে এর কারণে মূল মন্দিরের আকর্ষণ এতটুকু কমেনি। সত্যি বলতে কী, কলকাতা পর্যটনের মূল আকর্ষণ হল এই মন্দির। এখানে সতীর বাঁ-পায়ের সামনের অংশ পড়েছিল। কিংবদন্তী বলে মায়ের এক পরম ভক্ত নদীর ধারে এক অদ্ভুত আলো দেখতে পান। এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটি পায়ের প্রস্তরীভূত অংশ। সেইখানেই মন্দিরের সূচনা হয়।

কীভাবে যাবেন

যারা বাইরে থেকে আসছেন, তাঁদের কালীঘাট যেতে গেলে রাসবিহারীর মোড়ে যেতে হবে। চারমাথার মোড়ের মেট্রো স্টেশনের নামও কালীঘাট। সেখান থেকে এগিয়ে যেতে হবে ভবানীপুরের দিকে। খানিক এগোলেই গ্রিক অর্থোডক্স গির্জার উল্টো দিকের গলি দিয়ে ঢুকে খানিক এগোলেই বাম হাতে পড়বে মন্দির।

বিশদ জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন

তারাপীঠ

Photo of কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন 3/6 by Doyel Banerjee
তারাপীঠ মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

কালীঘাটের মতোই মাহাত্ম্য আছে বীরভূম জেলার তারাপীঠেরও। দ্বারকা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থানে বেশ একটা গা ছমছমে ব্যাপার আছে। বলা হয় তন্ত্রে সিদ্ধ কাপালিক ও তান্ত্রিকদের খুব প্রিয় স্থান হল এই তারাপীঠ। এখানে সতীর চোখের তারা বা আইবল পড়েছিল। বিখ্যাত সাধক বামাখ্যাপা ও কমলাকান্ত এইখানে বসেই মা তারার সাধনা করতেন।

কীভাবে যাবেন

গাড়িতে সিউরি থেকে রামপুরহাট হয়ে তারাপীঠ যেতে হয়। ট্রেনে এলেও কাছের রেলস্টেশন হল রামপুরহাট। অনেকে শান্তিনিকেতন বেড়াতে এসেও গাড়ি নিয়ে এখানে আসেন।

এছাড়া অন্যান্য শক্তিপীঠ

মোট একান্নটি শক্তিপীঠের মধ্যে অনেকগুলিই পড়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। সেগুলো এবার এক ঝলকে দেখে নেব।

বর্ধমান জেলা: বর্ধমানের কেতুগ্রামে পড়েছিল সতীর বাম বাহু। সেখানে আছে বহুলা দেবীর মন্দির। আবার গুসকরার কাছে মঙ্গলকোটে পড়েছিল দেবীর ডান কনুই। এখানকার দেবী উজানি কালী নামে পরিচিত। কারণ মঙ্গলকোটের প্রাচীন নাম ছিল উজানি নগর। আবার বর্ধমানেরই ক্ষীরগ্রামে পড়েছিল দেবীর ডান পায়ের আঙুল। সেই মন্দির যুগাদ্যা মন্দির নামে পরিচিত।

Photo of কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন 4/6 by Doyel Banerjee
বহুলা দেবীর মন্দির (ছবি সংগৃহীত)

বীরভূম জেলা: বর্ধমানের পরেই শক্তিপীঠ বা সতীপীঠের ক্ষেত্রে যে জেলার নাম উপরের দিকে আসে সেটি হল বীরভূম জেলা। শান্তিনিকেতনের অনতিদূরেই আছে কঙ্কালিতলা মন্দির । এখানে দেবীর কঙ্কাল পড়েছিল বলে কথিত আছে। দেবীর কোনও মূর্তি মন্দিরে নেই, পূজা হয় ছবিতে অর্চনা করে। মন্দিরের পাশেই আছে একটি পুকুর। কিংবদন্তী বলে এই পুকুর থেকেই দেবীর কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন প্রখর গ্রীষ্মেও এই পুকুরের জল শুকিয়ে যায় না।

Photo of কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন 5/6 by Doyel Banerjee
কঙ্কালিতলা মন্দির, বীরভূম (ছবি সংগৃহীত)

বীরভূমের লাভপুরে আছে অট্টহাস মন্দির । এখানে দেবীর ঠোঁট পড়েছিল। লাভপুর প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান। মন্দিরের কাছেই তাঁর ভিটেও দেখে আসতে পারেন।

Photo of কালীপুজোর আগে পশ্চিমবঙ্গের এই শক্তিপীঠগুলোতে মানস ভ্রমণ করে নিন 6/6 by Doyel Banerjee
অট্টহাসে পড়েছিল মায়ের ঠোঁট (ছবি সংগৃহীত)

বীরভূমের নলহাটিতে পড়েছিল মায়ের নলি। মূলত সেখান থেকেই এই নামকরণ হয়েছে। এখানে আছে নলাটেশ্বরীর মন্দির। একই জেলার বক্রেশ্বরে পড়েছিল দেবীর দুই ভ্রূয়ের মাঝের অংশ।

বর্ধমান ও বীরভূম বাদে হুগলীর খানাকুল , মেদিনীপুরের তমলুক, মুর্শিদাবাদ ও জলপাইগুড়ি জেলাতেও একটি করে শক্তিপীঠ আছে।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন

Further Reads