আদা চায়ের উষ্ণতা আর গন্ধ আপনাকে উদ্বেল করে দিচ্ছে। পোরসিলিনের কাপে সেই চায়ে আপনি চুমুক দিচ্ছেন আর টাপুর টুপুর বৃষ্টি উপভোগ করছেন। মাঝে মধ্যে আবার বৃষ্টি থেমে গিয়ে এক চিলতে খুশির রোদ আপনার মুখের উপর ঝলমল করে উঠছে। এটা কোনও রূপকথা নয়, এটা আপনার চা বাগানে কিছুদিন কাটানোর অভিজ্ঞতা হতে পারে।
কখনও হাল্কা সুগন্ধ আবার কখনও মনের মতো লিকার, হিমালয় থেকে নীলগিরি হয়ে ভারতে যে কত রকমের চা হয় সেটা জানাই ছিল না। এখানেই আছে ছোট ছোট সাদামাটা বাড়ি আর মনের মতো দুর্দান্ত সব সাহেবি বাংলো। আপনি যদি চা-প্রেমী হন তাহলে এই বাংলোগুলোতে দু এক রাত্তির কাটিয়ে যেতে পারেন।
ভারতের কয়েকটি বিখ্যাত চা বাগান
ওয়াইল্ড মাশির- ইস্টার্ন হিমালয়ান বোটানিক আর্ক
২২ একর জায়গা নিয়ে তৈরি এই আড্ডাবাড়ি এস্টেট প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৮৬৪ সালে। তেজপুরের এই চা বাগানে আসাম আর কোলোনিয়াল স্থাপত্যের মিশেল দেখা যায়। ওয়াইল্ড মাশির এখানকার সবচেয়ে সুস্বাদু একটি মাছের নাম যা অসমের জিয়া ভোরোলি নদীতে পাওয়া যায়। এখানে গেলেমনে হবে আপনি ব্রিটিশ আমলে পৌঁছে গেছেন। এখানে পাঁচটা বাংলো আছে আর এখানকার কটেজের নাম দেওয়া হয়েছে চায়ের নামে। যেমন অ্যামব্রোসিয়া বাংলো, এখানে দুটো ঘর আছে। তাছাড়া আছে উলং ও অর্থোডক্স আসাম বাংলো। এখান থেকে আসার আগে শেপার্ডস পাই, ক্যারামেল কাস্টার্ড আর আসামের মাছের ঝোল অবশ্যই খেয়ে আসবেন।
কেমন এই টি-এস্টেট
এখানে মোট পাঁচটি বাংলো আর মোট ১৪ টি ঘর আছে।বাংলোগুলোর সামনে যে লন আছে সেগুলো প্রায় সারা বছরই মরসুমি ফুলে ভরা থাকে। এখানে এলে আপনি চা বাগানের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নানা গল্প। সিলভার টিপস, সেকেন্ড ফ্লাশ এই সব নামের বাংলোর নাম শুনলেই চলে যেতে ইচ্ছে করে। ২০০০ বর্গ মিটারের প্রায় এক একটি বাংলো, আর চা বাগানে কাঠের বেঞ্চে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখেই দিন কেটে যাবে।
কী কী করার আছে
এখানে ৫৭ রকমের চা হয়, সবগুলো সম্ভব না হলেও কয়েকটা অবশ্যই করবেন। ফেরার সময় এখানকার বিখ্যাত কালো চা নিতে ভুলবেন না। ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখুন। একটা অরগ্যানিক স্টেশন আছে সেটা দেখে আসতে পারেন, এটা বিনামূল্যে হবে। আর সাসটেনেবিলিটি পার্ক, শনিবারের বালিপারা বাজারও যেতে পারেন। এস্টেটের নিজস্ব সবজি দিয়ে রান্না করার সুযোগও আছে। আছে হাইকিং আর বাইকিং রুটও। ব্রহ্মপুত্র নদীতে র্যাফটিংও করতে পারেন।
কোথায়
বালিপারা ডিভিশন, আড্ডাবাড়ি টি এস্টেট, সোনিপুর, বালিপারা
কীভাবে যাবেন
সবচেয়ে কাছের রেলওয়ে স্টেশন আর বিমানবন্দর আছে গুয়াহাটিতে। সেখান থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে এই চা বাগান। গাড়িতে লাগবে ৫ ঘণ্টা। এক পিঠের ট্যাক্সি ভাড়া ৪,৫০০ টাকা।
খরচ
দুজনে থাকলে ৭,৩০০ টাকা থেকে শুরু।
আরও জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন
ওল্যান্ড প্লানটেশন স্টে
নীলগিরির পাদদেশে এই চা বাগান ১২০ একরের। এখানে চা ছাড়াও কফি, লবঙ্গ আর মরিচেরও চাষ হয়। এখানে তিনটে কটেজ আছে। ফরাসি কায়দার জানলা দিয়ে তাকালেই আপনি বিস্তৃত কুনুরের সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এমন জিনিস দিয়েই এখানে কটেজ তৈরি হয়েছে। এখানে গেল সুস্বাদু রাজমা আর জনপ্রিয় অ্যাভারে বিন খেতে ভুলবেন না যেন।
কেমন এই টি এস্টেট
এখানে তিনটে কটেজ আছে, যাদের নাম যথাক্রমে দ্য এস্টেট হাউজ, দ্য হর্নবিল হাউজ আর দ্য পিপার হাউজ।
কী কী করার আছে
এখানকার চা টেস্ট করে দেখুন সবার আগে। ঘুরে আসুন এখানকার মশলার বাগানে। মালাবার প্যারাকিট, দ্য ইউরেশিয়ান ব্ল্যাকবার্ড, দ্য ভেলভেট ফ্রন্টেড নুথাচ, টিকলস ব্লু ফ্লাইক্যাচার, এরকম নানা জাতের পাখিতে ভর্তি এই এস্টেট। সেগুলো দেখেও সময় কেটে যায়। এখানে আশেপাশে অনেক জলপ্রপাত আছে। এখানকার কর্মীদের বলে সেখানে একটা ছোট পিকনিকের আয়োজন করুন। নীলগিরি মাউনটেন রেলওয়েতে করে ঘুরে আসতে পারেন আশেপাশে।
কোথায়
কোল্লাকাম্বি পোস্ট, কুনুর
কীভাবে যাবেন
সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হল কোয়েম্বাটোর (এরনাকুলাম) সেখান থেকে এই বাংলো ১৩০ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন।
খরচ
দুজনের জন্য খরচ পড়বে ৩, ৮২৫
বিশদ জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন
গ্লেনবার্ন টি এস্টেট
পাহাড়ের উপর অবস্থিত ম্যাগনোলিয়া গাছে ঘেরা এই এস্টেট ১৬০০ একরের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুটো সুন্দর নদীও। ১৮৫৯ সালে একটি স্কটিশ চা কোম্পানি এটি তৈরি করে। এখন এখানে একটি বুটিক হোটেল আছে যেখান থেকে দারজিলিং শহর আর কাঞ্চনঝঙ্গা দিব্যি স্পষ্ট দেখা যায়। বাংলোগুলো একদম স্কটিশ স্থাপত্যের ধারা মেনেই তৈরি। এখানকার চায়ের পাতা দিয়ে তৈরি পাকোড়া, চকোলেট ব্রাউনি, তিব্বতি মোমো আর বার্মিজ খাও শুয়ে না চেখে দেখলে ভুল করবেন । ( সব মিল শুল্ক সমেত যোগ করা আছে)।
কেমন এই টি এস্টেট
এখানে দুটো বাংলো আছে আর প্রত্যেক বাংলোতে চারটে করে সুইট আছে। প্রায় একশ বছরের পুরনো "বড়" বাংলোতে আছে মস্ত বারান্দা, ফায়ারপ্লেস ও গ্রন্থাগার। পাশের বাংলো "ওয়াটার লিলি " পাথরের সিঁড়ি দিয়ে বড় বাংলোর সঙ্গে যুক্ত। ওয়াটার লিলিতে মাসাজ রুম, মিটিং রুম ইত্যাদি আছে।
কী কী করার আছে
থাকার সাথে সাথে শুল্ক সমেত যোগ করা আছে আশেপাশের চা বাগানে ঘোরা, চা চেখে দেখা ইত্যাদি ট্যুরগুলো। সঙ্গে গাইডও থাকবে। মাছ ধরার বন্দোবস্তও আছে। এখানে একটি মিনি স্পা আছে সেখানে গ্রিন ট্রি অয়েল দিয়ে ফুল বডি মাসাজও করানো যায়।
কোথায়
সিংগ্রিটান, দার্জিলিং
কীভাবে যাবেন
কলকাতা, নতুন দিল্লি আর গুয়াহাটি থেকে রোজ বাগডোগরার ফ্লাইট আছে। সেখান থেকে এই এস্টেট মাত্র তিন ঘণ্টা লাগে।
খরচ
দুজনের খরচ শুরু হচ্ছে ৩৬,৫০০ থেকে, তারমধ্যে থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য কিছু যোগ করা আছে।
বিশদ জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন
তালায়ার ভ্যালি বাংলো
মুন্নার থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ২৫০০ একরের এই এস্টেট এখন উডব্রায়ার গ্রুপের অধীনে। জলপ্রপাত আর জঙ্গল পেরিয়ে এই এস্টেটে ঢুকলেই চোখ জুড়িয়ে দেওয়া সবুজ চা বাগান। কোলোনিয়াল ধারায় তৈরি বাংলো আছে এখানে। এখানে একটি দারুণ চা তৈরির ওয়ার্কশপ হয়। যেখানে আপনি নিজে চা তুলে, ফারমেন্ট করে সেই চা তৈরি করে পান করতে পারবেন। এই সুযোগ হারাবেন না! এখানকার মালাবার পরোটা আর মাটন স্টিউ, কেরালা প্রন কারি এগুলো খেয়ে দেখবেন কিন্তু।
কেমন এই টি এস্টেট
এখানকার বাংলোতে চারটি সুইট আছে। রয়্যাল তলোয়ার, ম্যাগনোলিয়া, রোজ আর ব্লু জে।
কী কী দেখার আছে
এখানে অনেক হাইকিং আর ট্রেকিং স্পট আছে। তাছাড়া দেখে আসতে পারেন টি মিউজিয়াম, মাত্তুপেত্তি ড্যাম, লাক্কম জলপ্রপাত আর ব্রায়ার কাঠের ব্রিজ। এটা কিন্তু সেলফি তোলার জন্য আদর্শ। বাংলোর খুব কাছেই এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান, তাই সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায়
ভি ৩৬৩, কান্নান দেভান হিল ভিলেজ, তাল্লিয়ার পোস্ট, ইদুক্কি
কীভাবে যাবেন
সবচেয়ে কাছের রেলওয়ে স্টেশন আর বিমানবন্দর হল কোচি ( এরনাকুলাম), এখান থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে বাংলো। ট্যাক্সি ভাড়া করে যাওয়া যায়।
খরচ
দুজনের খরচ ৯০০০ টাকা।
বিশদ জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন।
এলএ মেসন হেরিটেজ বুটিক ফ্রেঞ্চ বাংলো
কোটাগিরির হাডাথরাল পাহাড়ে অবস্থিত এলএ একটি হেরিটেজ বাংলো। এর দেখাশোনা করেন এক ফরাসি দম্পতি। হামিং বার্ডের ডাকে আপনার ঘুম ভাঙবে, শুনতে পাবেন মন্দিরের ঘণ্টা ধ্বনি আর নাকে আসবে সুন্দর উলং চায়ের গন্ধ। বারান্দায় বসে নীল রঙা জ্যাকারান্ডা ফুলের সৌন্দর্য দেখেই সময় কেটে যাবে। দেখতে পাবেন অপূর্ব সূর্যাস্তও। ভারতীয় আর ফরাসি দুই ধরনের খাবারই এখানে পাবেন। এদের নিজস্ব সবজি বাগান থেকে সবজি তুলেই রান্না হয়।
কেমন এই টি এস্টেট
এই বাংলোয় চারটে ঘর আছে আর ছয়জন থাকতে পারে।
কী কী করার আছে
ওপেন এয়ার জাকুজি আছে, আছে ফরাসি পেতাঙ্ক (এক ধরনের খেলা), ভলিবল আর ব্যাডমিন্টন কোর্ট এবং মস্ত ফুটবল খেলার মাঠ। আপনি চাইলে পিয়ানো বাজাতে পারেন আর স্থানীয় শাক সবজি দিয়ে রান্নাও করতে পারেন। এদের কুনুরে যে ক্লাব আছে সেখানে ব্রিজ, স্নুকার বিলিয়ার্ড, টেনিস, ইনডোর ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেন। অ্যারাভেনুর কাছে দেখে আসতে পারেন ক্যাথরিন জলপ্রপাত।
কোথায়
হাডাথোরাল টি এস্টেট, নিহাং পোস্ট অফিস, কোটাগিরি
কীভাবে যাবেন
সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হল কোয়েম্বাটোর, সেখান থেকে কোটাগিরি ৪৭ কিলোমিটার। কাছের রেলওয়ে স্টেশন হল কুনুর। যা ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কোয়েম্বাটোর আর কুনুর থেকে নিয়মিত কোটাগিরি যাওয়ার স্থানীয় বাস আর ট্যাক্সি ছাড়ে।
খরচ
দুজনে থাকার খরচ ৬০০০ টাকা থেকে শুরু।
বিশদ জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন
দ্য ক্লাব হাউজ বাই ট্রাঙ্কুয়ালিটি
কুনুরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের শৃঙ্গ টেনেরফিতে অবস্থিত এই চা বাগান। এখানে এলে আপনার কাছে ধরা দেবে নীলগিরির অপার সৌন্দর্য। দুটি বেডরুমের সঙ্গেই লাগোয়া বাগান আর লাউঞ্জ সত্যিই লোভনীয়। এখানে কিন্তু একবারে একটি পরিবারই থাকতে পারে। উটি থেকে এক ঘণ্টার দুরত্বে অবস্থিত এই চা বাগান উইকেন্ড কাটানোর জন্য আদর্শ। একটি পরিবার এই চা বাগানের দেখাশোনা করেন। এরাই প্রথম নীলগিরিতে সিটিসি চা উৎপাদন করেন। এখানকার খাবারে বাড়ির খাবারের স্বাদ পাবেন। বাদাগা গোষ্ঠীর স্থানীয় মেলা দেখতে পাবেন এখানে এলে।
কেমন এই টি এস্টেট
এখানে দুটি বিলাসবহুল সুইট আছে। টিক আর রোজউড দিয়ে সাজানো এখানকার সুইট। একবারে একটি পরিবারই থাকতে পারে, যাতে অতিথিদের ব্যক্তিগত পরিসর অটুট থাকে।
কী কী করার আছে
কুনুরে এদের টি এক্সপিরিয়েন্স সেন্টারে ঘুরে আসুন। গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি ছাড়াও নানা স্বাদের চা চেখে দেখার সুবর্ণ সুযোগ পাবেন।
কোথায়
১০১ গ্রে হিল, ইম্পিরিয়াল টি কোম্পানি, কুনুর
কীভাবে যাবেন
সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হল কোয়েম্বাটোর (এরনাকুলাম), এখান থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে বাংলো। ট্যাক্সি করে যেতে পারেন।
খরচ
দুজনের থাকার খরচ হল ৬০০০
বিশদ জানতে এই ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)