পরিবারকে বাদ দিয়ে আমি প্রথমবার একা বেড়াতে যাই মাত্র ২৩ বছর বয়সে। আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেও সেটা আমার প্রথম ট্রিপ ছিল। আমি একই সঙ্গে উত্তেজিত আর নার্ভাস দুটোই ছিলাম। উত্তেজিত কারণ এই ট্রিপে আমি ওকে আরও ভাল করে চেনার সুযোগ পাব। আর নার্ভাস কারণ আমাদের আলাপ মাত্র ছয় মাসের আর এর আগে দু'ঘণ্টার বেশি আমি ওর সঙ্গে কাটাইনি। এর পরে যেটা হল সেটাকে একটা দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
আমি দেখলাম আমার বয়ফ্রেন্ড প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর স্মোক করে। এটাও দেখলাম বাথরুম ব্যবহার করে ফ্লাশ করে না! আর ও বেড়াতে গিয়েও ঘরে বসে সিনেমা দেখতে বেশি পছন্দ করে বাইরে ঘোরার চেয়ে। এগুলো আমার একদম ভাল লাগছিল না। কিন্তু তাও আমি ধৈর্য নিয়ে ওর সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকার চেষ্টা করছিলাম। যদিও সেগুলো খুব অসহ্য মুহূর্ত ছিল। এর পরের ট্রিপ আরও খারাপ হল।আমরা সব জিনিস নিয়েই ঝগড়া করতে শুরু করলাম। লাক্সারি হোটেলে থাকব নাকি সস্তার কোথাও, কোথাও হেঁটে যাব নাকি রিক্সা নেব, রাত্রে চাইনিজ খাব ভারতীয় খাবার এবং আরও অনেক ব্যাপারে আমাদের মতান্তর হল।
এই বেড়ানো আমার জন্য একটা আই ওপেনার ছিল। এতে আপনার এমন এক সত্ত্বা দেখা যায় যা আগে আপনি বুঝতে পারেননি। প্রতিদিন দেখা হলে যেটা আপনি অনুভব করেননি, সেই মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে অনেকগুলো দিন কাটালে কিছু বিষয় আরও অনেক খুঁটিনাটি বেশি স্পষ্ট হয়।
বোধহয় সেই কারণেই আমার এক বান্ধবী, তাঁর বাবা মায়ের পছন্দ করা এক তথাকথিত ভাল ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি, একটা ট্রিপ করার আগে। ও নিশ্চিত ছিল যে বেড়াতে গেলে এমন কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি আসবে যাতে দু'জনে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা বোঝা যাবে। আর সেটা এমনিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনায় বোঝা সম্ভব নয়।
আমি তখনও এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। শুধুমাত্র বেড়াতে যাওয়ার ভিত্তিতে কি সম্পর্কের বিচার করা যায়? যতই দীর্ঘ দিনের ট্রিপ হোক না কেন, তাতে কি সম্পর্কের মুখোশ সত্যি খুলে পড়ে?
তারপর দ্বিতীয় বয়ফ্রেন্ড এল আমার জীবনে। আমাদের প্রথম উইকেন্ড ট্রিপ হল প্রায় চার মাসের পর। আমার এইবার খুব একটা উত্তেজিত লাগছিল না। যদিও ও খুব উত্তেজিত ছিল। ও নিজের কয়েকজন বন্ধুকে ড্রিঙ্কস নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। ওই বন্ধুরা সেই শহরে থাকত যেখানে আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম। দেখলাম সবমিলিয়ে ১৫ জন এসেছে। ১৫ জন অপরিচিত মানুষ, যারা আমায় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছিল। আমি এমনিতে খুব কম কথা বলি। তাই আমাকে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি করে দেওয়ার জন্য আমার দ্বিতীয় বয়ফ্রেন্ডের উপর খুব রাগ হচ্ছিল, মুখে অবশ্য তখন কিছুই বলিনি। সপ্তাহের শেষে ও আমাকে একটা হাইকে নিয়ে গেল। সেই হাইকে পাহাড় এবং সমুদ্র দুটোই ছিল। আমি যদিও নিজেকে খুব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ভাবতাম, যদিও কোনও অ্যাডভেঞ্চার আমি কোনওদিন করিনি। ৩০ মিনিট মতো আমার এই হাইক বেশ ভাল লাগল, তারপর মনে হল আমি আর পারব না। ও এগিয়ে যেতে লাগল আর আমার মনে হল যে আমি যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি সেটা এত তাড়াতাড়ি ওকে বলা ঠিক হবে না। আমি পা টেনে টেনে চলছিলাম যাতে ও বুঝতে পারে। কিন্তু ও খুব শান্তভাবে এগিয়ে যেতে থাকল। গন্তব্যে পৌঁছে ও আমায় জিজ্ঞাসা করল যে, এই হাইক আমার ভাল লেগেছে কিনা? আমি রেগে আগুন হয়ে ওকে দু-চার কথা শুনিয়ে দিলাম। তাতে ও তখনও খুব শান্ত হয়ে নিজের ফোনে আমায় কিছু দেখাল। ফোনে ও আমায় একটা ব্লগ দেখাল যেটা আমি কিছু বছর আগে লিখেছিলাম। যেখানে লেখা ছিল যে, "আমি হাইক আর সাঁতার ভালবাসি। এই পৃথিবীটা আমি দেখতে চাই। আমি এমন ভ্রমণসঙ্গী চাই যে আমার সব রকমের চেষ্টায় আমার পাশে থাকবে।"
এই ট্রিপ আমাকে পাল্টে দিল। ভালবাসা নিয়ে আমার মনে যে ধোঁয়াশা ছিল সেটা কেটে গেল। এই ট্রিপ আমাকে এমন একজন মানুষকে বুঝতে শেখাল যে আমার সাথে ঝগড়া না করে আমার মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করছে।
আমি এখনও জানিনা যে ও সত্যিই খুব ভাল মানুষ নাকি এই ট্রিপটাই আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। কিন্তু দু'বার দু'জন আলাদা মানুষের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে আমি তাঁদের সঙ্গে আমার রসায়নটা ভাল করে বুঝতে পেরেছি। যেটা নিজের শহরে একটা কাফেতে বসে বোঝা যেত না।
আপনিও কি মনে করেন যে সম্পর্ক বুঝে নেওয়ার সেরা রাস্তা হচ্ছে ভ্রমণ? আপনার মনের মানুষের সঙ্গে ভ্রমণের সময় এরকম কোনও ইঙ্গিত কি আপনি পেয়েছেন? যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে সেটা জানাবেন। আপনাদের অভিজ্ঞতা জানতে আমার ভালই লাগবে।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন
(এটি একটি অনুবাদকৃত /অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)