ভারতবর্ষ এক অর্থে বৈচিত্রপূর্ণ দেশ... বহু জাতি, বহু ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস এই ভারতবর্ষে। ধর্ম এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি ভারতের নিজস্ব প্রাকৃতিক এবং ভৌগোলিক ঐশ্বর্যের পরিসংখ্যান সীমাহীন এবং ভ্রমণপিপাসু মানুষদের জন্য তা হতে পারে কোনও এক আশ্চর্য গুপ্তখনির সন্ধান। আমাদের তরফ থেকে রইল এমনই বাছাই করা ভারতের তিরিশটি পর্যটককেন্দ্র, যা আপনি কোনও না কোনও সময়ে ভ্রমণ করতে পারেন।
১। লাইমাওসিয়াং, মেঘালয়
পূর্ব খাসি পাহাড়ের খাত্রাশনং লাইটক্রোক ব্লকে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটিতে প্রকৃতির নিদারুণ সৌন্দর্যের হাতছানি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
২। ছেট্টিনাদ প্যালেস, তামিলনাড়ু
ইতিহাস বা ঐতিহাসিক গল্পকথা শুনতে যারা ভালবাসেন, তাদের জন্য আর রাজস্থানই এক এবং একমাত্র গন্তব্য হয়ে রইল না, তামিলনাড়ুর চেট্টিনাদ প্রাসাদটিতে শিল্প, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের এক অনন্য সংমিশ্রণের ছাপ স্পষ্টত ধরা পড়বে।
৩। ১৩ আর্চ ব্রিজ, কেরালা
কেরালার ১৩ টি আর্চ ব্রিজ কোল্লাম জেলার কাজথুরুথিতে অবস্থিত। এই স্থাপত্যের নমুনা এবং বানানোর কৌশল সত্যিই বিস্ময়কর। প্রধানত পাথর দিয়ে এক শতাব্দী আগেই আর্চটি তৈরি হয়েছে।
৪। তাডা ফলস্, অন্ধ্রপ্রদেশ
অন্ধ্র প্রদেশের এই বিখ্যাত জলপ্রপাতগুলো মূলত পাহাড় এবং সবুজ রঙের প্রাকৃতিক পরিবেশে সুসজ্জিত। ট্রেকার এবং চলাচলকারীদের জন্য একান্ত নিরিবিলি পরিসর হতে পারে এই জলপ্রপাতের তীরটি...
৫। আরভালেম গুহা, গোয়া
পুরাণ এবং মহাকাব্যভিত্তিক যোগসূত্র রয়েছে এই গুহার স্থাপত্যশৈলী নির্মাণ প্রসঙ্গে। এই গুহাগুলো (বিচোলিম টাউন থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত), এখন একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কারের কারণে জানা গিয়েছে মহাভারতে পাণ্ডবদের নির্বাসনের সময় এটি মূলত তৈরি হয়েছিল... সুতরাং, মহাকাব্যিক ঐতিহ্য মিশে রয়েছে এই গুহার পাথরে পাথরে।
৬। ঝাটিঙ্গগ্রি, হিমাচলপ্রদেশ
হিমাচল একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল এটি, তবে এই ছোট্ট আবাসটি ঘাটসনি থেকে বারোট যাওয়ার পথে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার পার্বত্য পরিবেশ নিখুঁত এবং নিঃশব্দ, পর্যটকদের পক্ষে আদর্শ বলা যেতে পারে।
৭। দুধপাহাড়ি, কাশ্মীর
দুধপাহাড়ি ভারতের অন্যতম সুন্দর ঘাট হিসেবে বিবেচিত এবং শ্রীনগর থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
পর্যটকদের ভিড় থেকে বাঁচতে আপনি অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন এই জেলাটিকে। তবে রাস্তার পাশে হাতির দিকে নজর রাখতে রাখতে, বনের মধ্য দিয়ে একেবারে ড্রাইভ করতে করতে এগিয়ে চলুন।
অবশ্যই পড়ুন: পরিবারের সাথে ভারতে দেখার সেরা জায়গা
৯। ছালাকুদে, কেরল
মুন্নার এবং থেক্কাডি আপাতত লিস্ট থেকে সরিয়ে ফেলুন, আপনি যদি এক্সপ্লোরার ধরণের হন তবে ছালাকুদে আপনার জন্য ঠিক জায়গা। এটি পাহাড়, বন্যপ্রাণী, জলপ্রপাত সবেরই একপ্রকার সমাবেশ লক্ষ করা যাবে।
ভারতের প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম সেরা উদাহরণ হিসেবে একে পরিচিতি দেওয়া যেতে পারে। স্টেপওয়েলটি এমন একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ যা যে কোনও ভারতীয়র কাছেই বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আপনি যদি কিঞ্চিত অনুসন্ধানপ্রেমী হন, তাহলে অনায়াসেই আপনি মাইথন ভ্রমণ করতে পারবেন।
১২। চিখলধারা, মহারাষ্ট্র
এই ছোট জায়গার অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে কিচকদারি এবং শাককল হ্রদ। গোয়ালিওয়র দুর্গ থেকে প্রাচীন মন্দির এবং বন্যজীবন যাদুঘর পর্যন্ত, চিখলদারা সত্যই জনপ্রিয় এক সৌন্দর্য বলতে হবে।
হাফলং লেকের সৌন্দর্য এবং এর চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য একথা বিনা দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে।
মন্দাকিনি নদীর নীরব তীরে শুয়ে এই ছোট এই গ্রামটিকে আপনি অনায়াসেই উপভোগ করতে পারবেন।
উত্তর কর্ণাটকের বাগালকোট জেলায় লুকিয়ে থাকা বাদামি গুহাগুলো মহান চালুক্য স্থাপত্যের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য যে এই শহরটি ষষ্ঠ শতাব্দীতে চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল।
থারাঙ্গমবাদীর অর্থ 'যেখানে ঢেউয়ের গান শোনা যায় ' এবং সমুদ্র সৈকতের এই শহরটির নাম সেই অনুসারেই করা হয়েছে। ১৬২০-এর দশকে ডেনিশ উপনিবেশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট ড্যান্সবার্গ এখনও দক্ষিণ ভারতের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য এক স্থান বলে পরিচিতি পায়।
সৈকতের পাশে একটি ছোট্ট টিলা, সাদা সৈকত বালির দীর্ঘ প্রসারিত ভূমি এবং সবচেয়ে চমকপ্রদ হল এই অঞ্চলের সূর্যাস্ত। কাশিদ সৈকত একটি লুকানো সমুদ্র সৈকত, যা থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপের মতো দেখতে, আর এর রেশ পর্যটকদের মধ্যে থেকে যায় অনেকক্ষণ।
পেহেলগাহের একটা ছোট্ট সংস্করণ বলা যেতে পারে একে... আদতে যে সকল পর্যটক শান্ত-নিরিবিলি আশ্রয় খুঁজছেন তাঁদের জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান বলতে পারি। তবে এই গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
১৯। শ্যালোর, উত্তরাখণ্ড
গ্রামটি প্রায় শহুরে পরিবেশ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছে, চুচেন লেন্টস মঠ, রহুনেহ গুহাগুলো, খন্দোস্যাংফুং গুহাগুলো, ফুর্তশাচু হট স্প্রিংস, পেমায়াংস্টে, রাবেডেন্টস ধ্বংসাবশেষ এবং আরও অনেক কিছুই আপনি এখানে দেখতে পাবেন!
২০। আথিরাপিল্লি জলপ্রপাত, কেরল
শোলেয়ার ফরেস্ট রেঞ্জের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল আথিরপিল্লি জলপ্রপাত, প্রকৃতপক্ষে শান্ত পরিবেশের সন্ধানে ভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি মনোরম দর্শনীয় স্থান। প্রায় ৮০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য নিঃসন্দেহে উপভোগ্য বলতেই হবে।
২১। আরাকু ভ্যালি
গলিকোণ্ডা, রক্তকোণ্ডা এবং চিতামোগোন্দির পাহাড়ের কোলে নিমজ্জিত আরাকু ভ্যালির সৌন্দর্য হ'ল অপরূপ।
২২। নাগারহোল ন্যাশনাল পার্ক
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কর্তৃক একে অনুমোদন করা হয়েছে, পার্কে বন্যজীবন এবং উদ্ভিদের সংরক্ষণ রয়েছে, যা কোনও ফটোগ্রাফারের আনন্দ উপভোগের জন্য যথেষ্ট বলতে পারি।
২৩। ড. সেলিম আলি বার্ড স্যাঙ্কচুয়ারি, গোয়া
রিবান্দার থেকে অদূরেই মূলত ফেরি যাত্রার মধ্যে দিয়ে আপনি এই স্থানে পৌঁছতে পারবেন, পাখিদের এই অভয়ারণ্যটি চোরাও দ্বীপে অবস্থিত। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের ভিড় এইস্থানে দেখতে পাওয়া যায়। পাখি বিশারদদের কাছে এর থেকে উত্তম পরিবেশ আর কিছুই বোধহয় হতে পারে না...
২৪। লুংলাক ভ্যালি, জম্মু ও কাশ্মির
প্রায় ৭০ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অবস্থান এই স্থানে দেখা গিয়েছিল, ফুগতাল গোম্পা দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৈরি হয়েছিল, গুহাটি দক্ষিণ-পূর্বদিকে জাংসকারে অবস্থিত। মাটির ইট এবং পাথরের তৈরি এই মঠটির নির্মাণ। ফুগতালকে অনন্য করে তোলে এমন আরেকটি জিনিস হ'ল আপনি কেবলমাত্র পায়ে হেঁটে এইস্থানে প্রবেশ করতে পারবেন এবং আপনি এখানে পৌঁছনোর পরে, এক অপরিমেয় শান্তি খুঁজে পাবেন এমনটা বলতে পারি।
আপনার ট্রেকিং লক্ষ্যগুলোর একেবারে সঠিক সূচনা করতে চাইলে চোপতা আপনার জন্য অন্যতম সেরা জায়গা হতে পারে। ছোট্ট গ্রাম তুঙ্গনাথ এবং চন্দ্রশিলায় ভ্রমণের জন্য বেস ক্যাম্প হিসেবে কাজ করে। শান্ত নিরিবিলি আশ্রয় খুঁজে নিতেও ভ্রমণ করতে পারেন বেশ স্বচ্ছন্দে।
২৬। থাউফিমা, নাগাল্যান্ড
ঐতিহ্যবাহী আঙ্গামি নাগা-স্টাইলযুক্ত ঝুপড়ি, খাঁটি উপজাতির জীবনযাত্রা এবং সুস্বাদু রাইস বিয়ার সবই পাবেন এই গ্রামে। এই উপজাতি গ্রামটি নাগাল্যান্ডের কেন্দ্রে একটি দুর্দান্ত জায়গা, কেবলমাত্র তাদের জন্য যারা পাহাড়ের স্থানীয় সভ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করতে জানেন।
২৭। লোকটাক লেক, মণিপুর
কেইবুল লানজাও জাতীয় উদ্যানটি বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান। লোকটক লেকের প্রকৃতি যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ.... এখানে জলের উপরেই বিভিন্ন প্রজাতির ফ্লোরা এবং ফনার সন্ধান পাওয়া যায়।
২৮। মুরুদ, মহারাষ্ট্র
জানজিরা, ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী মেরিন ফোর্টৃগুলোর মধ্যে অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান। এটি কেবল সমুদ্রের মাঝখানে দৈত্যস্বরূপ কাঠামো নিয়ে উপস্থাপিত, মনোমুগ্ধকর বলে মনে না হলেও, এটি একটি লবণের জলাশয়ের সঙ্গে সংযুক্ত, যার কারণে এটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
২৯। চম্পারেন পাভাগা, গুজরাত
এই সুন্দর প্রাচীন শহরের অনেক পছন্দ করে আপনার মধ্যে ইতিহাসবিদকে ছড়িয়ে দিন। ব্রাজিল যুগের প্রাচীন চকোলোইথিক সাইট থেকে শুরু করে প্রাচীন হিন্দু পাহাড়ি দুর্গ, ১৬শ শতাব্দীর ঐতিহাসিক রাজধানীর অবশেষ মসজিদ, মন্দির, সমাধি, স্টেপওয়েল এবং ট্যাঙ্ক পর্যন্ত রয়েছে।
৩০। এদাক্কাল, কেরল
খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৬০০০ বছরেরও আগে রক পেইন্টিংয়ের সঙ্গে ভারতের প্রাচীন সংযুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এই গুহাগুলো। ইতিহাসপ্রেমী মানুষদের জন্য এ এক আদর্শ স্থান বলা যেতে পারে।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)