নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায়

Tripoto

অপরূপ লোহিত উপত্যকা (ছবি জেরেমি কাই) 

Photo of নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় by Doyel Banerjee

বুদ্ধদেব গুহর বইয়ের পাতায় আপনি যখন প্রায় ডুবে গেছেন, আর আপনার মন পাড়ি দিয়েছে সুদূর জঙ্গলে, তখন বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গ আসবেই। আর বাঙালি মাত্রেই যে হুজুগে! তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই.... তবে এতদিন আপনি যতগুলো জঙ্গল আর উপত্যকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, এখন যে জায়গা নিয়ে আলোচনা করব তা কিন্তু অন্যান্য জঙ্গলগুলোর থেকে একেবারে আলাদা। এখানে গেলে আপনার মনে হবে আপনি বোধহয় স্বর্গের কাছাকাছি কোনও জায়গায় পৌঁছে গেছেন। প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্যের কারণে অবশ্যই... আমরা কথা বলছি অরুণাচলের লোহিত উপত্যকার কথা।

ভারতের একদম পূর্ব দিকে ঠিক যেখান থেকে ভারতের সীমানা শেষ হয়ে শুরু হচ্ছে চিনের ইউনান প্রভিন্স, ঠিক সেখানেই ৫,১৪০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত এই অদ্ভুত সুন্দর লোহিত উপত্যকা। ঝকঝকে নীল আকাশ আর তার মধ্যেই নেমে আসা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। আহা, মন যেন সুদূরের পিয়াসি হয়ে ওঠে নিমেষেই। রয়েছে ঘন জঙ্গলের হাতছানি, ফলের বাগান থেকে শুরু করে সবুজের গালিচা বিছানো বিস্তৃত উপত্যকা। তবে প্রকৃতি এখানে শুধু নিজেকে উজাড় করে দেয়নি। আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে আরও অনেক কিছু। এই অঞ্চলে বাস করে জেখ্রিং, খামটি, দেওরি, মনপা, মেম্বা, আহম, সিংপো, চাকমা ও মিশমি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন। ১৯৬০ সালের দিকে কিছু তিব্বতিও এখানে তাঁদের ডেরা জমিয়েছিল। আপনার ভাগ্য ভাল হলে এঁদের সঙ্গেও দেখাসাক্ষাত হতে পারে, আলাপ-পরিচয়টুকু সেরে রাখতে মন্দ কোথায় ?এতগুলো উপজাতি সম্প্রদায়ের অবস্থান মানেই এঁদের সঙ্গে জড়িত নানা সংস্কৃতি, গল্প গাথা ও কিংবদন্তির আস্বাদ। সঙ্গে থাকবে মিলেট দিয়ে তৈরি সুস্বাদু বিয়ারের গ্লাস। তাহলে আর দেরি কেন? লোহিত উপত্যকার সৌন্দর্য আরও বেশি করে উপভোগ করতে হারিয়ে যান ঝর্ণার গুনগুন শব্দ আর ঘাসের জঙ্গলে।

Photo of  নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় 1/6 by Doyel Banerjee
সবুজের গালিচা বিছানো উপত্যকা (ছবি মাইক প্রিন্স)

কেন যাবেন লোহিত উপত্যকায়?

কথা প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল এই অঞ্চলের আগে নাম ছিল মিশমি পাহাড়। পরে নাম হয় লোহিত। এই শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'লৌহিত্য' থেকে, যার অর্থ হল 'লাল'। একপাশ দিয়ে বয়ে চলা লালচে রঙের লোহিত নদীর জন্যই এমন নামকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত লালচে পাহাড়গুলোও তো আছে। যদি আপনি হিমালয় ভালবাসেন তাহলে বলে রাখি এই পাহাড়গুলো অভ্রভেদী হিমালয়েরই দক্ষিণের শাখা। তেজু, চৌকাম, নামসাই আর লেকাং ঘিরে আছে এই উপত্যকাকে।

উপত্যকার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ভৌগোলিক দিক থেকে দেখলে লোহিত উপত্যকার অবস্থান বেশ আকর্ষণীয়। ব্রহ্মপুত্র নদীর বিভিন্ন শাখা সৃষ্ট উপত্যকা, বরফ ঢাকা শৃঙ্গ, নিম্ন হিমালয় ও শিবালিক রেঞ্জের মাঝখানে এর অবস্থান। উনিশ শতকে এটাই ছিল শেষ জায়গা যা ব্রিটিশরা নিজেদের কুক্ষিগত করেছিল। ১৯৮০ সালে দিবাং উপত্যকা আলাদা হয়ে গেল লোহিত থেকে। আর ২০০৪ সালে উত্তর লোহিত থেকে আলাদা হয়ে তিব্বত আর মায়ানমারের সীমানা ঘেঁষে জন্ম নিল নতুন এক অঞ্চল, যার নাম হল আঞ্জ।

Photo of  নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় 2/6 by Doyel Banerjee
পাখির মিষ্টি ডাকে ঘুম ভাঙবে আপনার (ছবি ক্রিসমো১৫)

রুডইয়ার্ড কিপ্লিংয়ের বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে যেন

এই অঞ্চল ভারতের বৃহত্তম বায়ো ডাইভার্সিটি জ়োন। এখানে প্রাকৃতিক সম্ভার এত বেশি যে একে ভগবানের বাগান বা 'গার্ডেন অব গডস্'। যারা পাখি বিশারদ বা শখের বার্ড ওয়াচার তাঁদের জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ। কারণ এখানে প্রচুর রঙ বেরঙের পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে আছে স্কালাটার মোনাল, ওয়ার্ডস ট্রগন এবং স্থানীয় মিশমি রেন ব্যাবলার। পাখি দেখে আর পাখির ডাক শুনে মন ভরে গেলে বেরিয়ে পড়ুন জঙ্গল সাফারিতে। ভাগ্য ভাল থাকলে দেখতে পেয়ে যাবেন মার্বেল ও লেপার্ড বেড়াল, লাল প্যান্ডার, হুলক গিবন, হিমালয়ের কালো ভল্লুক, সুদর্শন মাস্ক হরিণ এবং অত্যন্ত দুর্লভ মিশমি টাকিন। তাছাড়া এসব বাদ দিয়েও জঙ্গলের আকর্ষণও বেশ মনোরম বলতেই হয়। সেটা বাদ দেবেন না। এখানে অনেক জাতীয় উদ্যান আছে সেগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।

Photo of  নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় 3/6 by Doyel Banerjee
উপত্যকা ঘেরা পাহাড়ি ফুল আর পড়ন্ত বিকেলের ছবি (সৌজন্য়ে আন্তন দারিয়ুস)

এখানে পড়ে সূর্যের প্রথম আলো

যে জায়গার নামই হল অরুণাচল সেখানেই যে সূর্যদেব তাঁর রশ্মি প্রথমে ছড়িয়ে দেবেন সেটা বলা বাহুল্য। এখানে ডং বলে একটি জায়গা আছে। ছোট্ট ট্রেকিং রুট। ভোর ভোর ট্রেক করে চলে যান ডং-এ আর দেখুন অপূর্ব সূর্যোদয়। যদি এইটুকু হেঁটে আপনার মন না ভরে তাহলেও কুছ পরোয়া নেই। চোংখাম ওয়াকরো রাস্তার ধারে তোয়াম গ্রাম থেকে ট্রেক করে চলে যান ওয়াকরোতে। ওখানে আছে গ্লো-লেক। বিস্তৃত এই হ্রদ দেখে ভাল না লেগে উপায় নেই। এত হাঁটাহাঁটি করেছেন যখন তখন খিদে পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাহলে চলে যান তেজু থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে হাওয়া ক্যাম্পে। এটা একটা জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। কেন জানেন? কারণ এখান থেকে মিশমি পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। আরেকটু এগিয়েই ভিমসাক নগর।ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্থানীয়রা বলেন এই নগর তৈরি করেছিলেন মহাবলী ভীম।

Photo of  নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় 4/6 by Doyel Banerjee
সবুজে ঘেরা উপত্যকা ভূমি (ছবি গোল্ডেনটাকিন)

ছড়িয়ে আছে উষ্ণতার স্রোত

লোহিত উপত্যকা হট স্প্রিং বা উষ্ণ প্রস্রবণে ভর্তি। চোখ বুজে চলে যান কিবিথু বা ওয়ালং-এ। এখানে এত কিছু করার আছে যে বলে শেষ করা যাবে না। ট্রেক করুন, পাহাড়ে চড়ুন বা মাছ ধরুন, অ্যাডভেঞ্চার ভরপুর রসদ পেয়ে যাবেন আপনি। যদি আপনি ডিসেম্বরে যান তাহলে ভুলেও সিয়াং নদী উৎসব মিস করবেন না। হাতি আর নৌকোর রেস, মিশমিদের লোকনৃত্য, হাতের কাজের প্রদর্শনী আর স্থানীয় অরুণাচলের বিশেষ খাবারের আকর্ষণ। এমন উৎসব কি ছেড়ে দেওয়া যায় বলুন?

খাওয়া দাওয়া

Photo of  নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় 5/6 by Doyel Banerjee
সেদ্ধ বাঁশের মূল এখানকার আকর্ষণীয় খাবার (ছবি বিলাসেং নামচুম)

নানা রকমের সবজি, যার বেশিরভাগই এর আগে আপনি খাননি আর মাংস হল এখানকার খাবারের মূল উপাদান। তবে এখানকার বাঁশের মূল সেদ্ধ হল সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। আর খাবার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যদি আপনার নেশা হয় তাহলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন আর নানা স্বাদের চাটনি, রাইস কেক খেয়ে দেখতে পারেন।

কখন যাবেন

এটা মোটামুটি নির্ভর করবে আপনার পছন্দের উপর। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মে মাস হল লোহিত উপত্যকা যাওয়ার প্রকৃত সময়। যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় পাখি আর নানা রঙের অর্কিড দেখতে চান তাহলে মার্চ আর এপ্রিল হল আদর্শ সময়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে নানা ট্রাইবাল উৎসব চলে, চাইলে সে সময়ও যাওয়া যায়।

Photo of  নৈসর্গিক অনুভূতি পেতে ঘুরে আসুন অরুণাচলের লোহিত উপত্যকায় 6/6 by Doyel Banerjee
এখানে মেঘ গাভীর মতো চড়ে (ছবি মাইক প্রিন্স)

কীভাবে যাবেন

লোহিতের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন হল ডিব্রুগড়। ডিব্রুগড় থেকে তিনসুকিয়া এবং ধোলাঘাট হয়ে যেতে হবে। ফেরি করে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে পড়বে সাদিয়া ঘাট। সেখান থেকে রোয়িঙ হয়ে মেহাউ স্যানচুইয়ারি। ওখান থেকেই এই উপত্যকা শুরু হয়।

মনে রাখবেন

এখানে যেতে গেলে পারমিট থাকা আবশ্যক। ফোটো আইডি সমেত অ্যাড্রেস প্রুফ লাগবে। প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকেরই এই ইনার লাইন পারমিট প্রয়োজন অরুণাচল যেতে গেলে। দিল্লির অরুণাচল ভবন বা কলকাতা, শিলং, গুয়াহাটির ডেপুটি রেসিডেন্ট কমিশনারের কাছ থেকে এই পারমিট পাওয়া যাবে। এই পারমিট তিন থেকে চার দিন বৈধ থাকে।

পৌঁছে যাওয়ার পর

ওখানে বাস, মিটার ছাড়া ট্যাক্সি, সাইকেল রিকশা, থ্রি হুইলার পেয়ে যাবেন আশে পাশে ঘোরার জন্য। সরকারি বাসও আছে দূরে কোথাও যাওয়ার জন্য।

কোথায় থাকবেন

নামেরি ন্যাশনাল পার্ক ও টাইগার রিজার্ভের কাছে বেশ ভাল একটা রেসর্ট আছে। অ্যাটাচড বাথরুম, লম্বা বারান্দা সহ কটেজের ভাড়া ৭৫০ টাকা থেকে শুরু। তবে ডরমেটরির ভাড়া প্রতি রাতে ৫০০ টাকা।

জিয়া ভোরালি রেসর্ট (ছবি বুকিং)

Photo of Jia Bhorali Wild Resort, Potasali by Doyel Banerjee

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন

(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)

Further Reads

Tagged:
#Potasali