আপনি ভারতের বহু জায়গা ইতিমধ্যে ঘুরে ফেলেছেন , কিন্তু মাঝে মধ্যে তো এমনটা মনেও হতে পারে একটু ভবঘুরে হয়ে যাই। প্রতিদিনের কাজকে পিছনে ফেলে চলে যাই কোনও একটা নতুন জায়গায়, যেখানে জানা-শোনার পরিসর হবে সীমিত... অল্প। আপনি ছুতে যেতে চান এক অন্যান্য যায়গায় নতুন কিছু উপলব্ধি করার ইচ্ছায়।এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি হতে পারে আপনার একমাত্র সহায়, গুগলের মাধ্যমে নিমেষে পেয়ে যাবেন এক দীর্ঘ তালিকা, পেয়ে যাবেন ইতি-উতি ঘুরে বেড়ানোর হদিশও। বলা যায়, এই তালিকাটি বাকি পর্যটকদের চিন্তা সহজেই দূর করে দেয়, যে এইবার কোথায় ঘুরতে যাব? তবে নতুন কোনও জায়গা যে খুব একটা সহজেই পেয়ে যান এমনটা বলব না, বরং ঘুরে-ফিরে সেই একই কয়েকটা জায়গার কথা আপনার মোবাইলের মধ্যে ভেসে উঠতে থাকে।
যদিও ওই জায়গাগুলো পর্যটক বহুল, কিন্তু আপনি কোনও নতুন জায়গায় যেতে চান। এইরকম কিছু গন্তব্যস্থল যার মধ্যে রয়েছে অটুট সৌন্দর্য, যা আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। বলা যেতে পারে, সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি, খাবার দাবার, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং বন্যজীবন আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে বাধ্য করবে।
আপনি যদি এই রকমই কিছু চান তাহলে একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এখানে, আমরা ভারতের জনপ্রিয় গন্তব্যস্থান এবং কিছু উল্লেখযোগ্য বিকল্প বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।
১. দার্জিলিং-এর বদলে এবার মাওলিনং
দার্জিলিং বিখ্যাত টাইগার হিলের কারণে... অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয়ের জন্য এবং টয় ট্রেনে করে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। কিন্তু দিনে দিনে এত পর্যটকের ভিড় এখানে বেড়ে চলেছে যে আপনি যদি একটু শান্ত জায়গায় যেতে চান তাহলে আর আপনার মূল লক্ষ্য দার্জিলিং কিংবা তার আশ-পাশের জায়গাগুলো হবে না।
মাওলিনং, মেঘালয়ের একটি ছোট্ট গ্রাম, শান্ত-নিরিবিলি আপনার বেশ পছন্দ হতে পারে। নির্মল, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হওয়া ছাড়াও মাওলিনং এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম বলেও স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। এমন জায়গায় একটা দিন থাকার প্ল্যান করতেই পারেন!
কখন যাবেন : জুন থেকে সেপ্টেম্বরে মাওলিনং যাওয়া সবচাইতে ভাল হবে কারণ এই সময় বর্ষাকালের জন্য পুরো গ্রামটি সুন্দর সবুজে মুড়ে থাকে, এর চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য আপনার মনকে প্রশান্তি দেবেই।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম বিমানবন্দরটি শিলং-এ (প্রায় ৯২ কিমি) এবং নিকটতম রেলস্টেশনটি গুয়াহাটিতে (প্রায় ১০৪ কিমি)। শিলং এবং গুয়াহাটি থেকে গ্রামে পৌঁছনোর জন্য আপনি গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন বা একটি বাসে করেও যেতে পারেন।
কী কী করবেন : পায়ে হেঁটে ছোট্ট গ্রামটি ঘুরে দেখুন এবং হাইকিং করতে যান। এছাড়াও, সুন্দর লিভিং রুট ব্রিজ, ব্যালেন্সিং পাথরের অপরূপ শিল্পকৃতি দেখে মুগ্ধ হন কারণ আপনার সাধারণ যুক্তি দিয়ে এই ব্যালেন্সিং-এর ধারণা আপনি ঠিক করতে পারবেন না এবং স্কাই-ওয়ার্ক অবজারভেটরির প্যানারমিক দৃশ্য উপভোগ করুন।
কোথায় থাকবেন : পাম্পকিন খারমসুন হোমস্টে এবং পাম্পকিন সাফি কটেজ।
২. ম্যাকলেয়ড গঞ্জের বদলে চলুন তাওয়াং
ম্যাকলয়েড গঞ্জ অনেকদিন ধরে উত্তর ভারতীয়দের উইকেন্ডে বেড়াতে যাওয়ার গন্তব্য। একটা কথা আমাদের কখনওই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে এই শহরটি সুন্দর এবং বছরের পর বছর পর্যটকদের আনন্দ দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে এই শহরটিও বদলে গেছে। ত্রিউন্ড ট্রেক এবং ভাগসুনাগ জলপ্রপাত এখন একটি ফ্যাকাশে ছায়ায় পরিণত হয়েছে। তো, এখন আমরা কোথায় যাব?
অরুণাচল প্রদেশে আছে তাওয়াং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬৭০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত তাওয়াং চিন ও ভুটানের সীমান্তবর্তী একটি চমকপ্রদ সুন্দর এক পাহাড়ি শহর। তুষার-আচ্ছাদিত হিমালয়ের চূড়া, দর্শনীয় উচ্চতার হ্রদ, লোভনীয় খাবার এবং দর্শনীয় স্থানগুলির সাথে স্থানীয়দের আপ্পায়ন, সম্ভবত তাওয়াংয়ে পৌঁছনোর পরে আপনি ম্যাকলিয়ড গঞ্জকে মিস করবেন না এমনটা বলতে পারি।
কখন যাবেন : মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরে তাওয়াং যাওয়ার পক্ষে সবথেকে ভাল সময় কারণ এই সময় বিদেশি পাখিগুলো উড়ে আসে পেঙ্গা-টেং-টস হ্রদে।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম বিমানবন্দর তেজপুরে (আনুমানিক ৩১৯ কিমি) এবং নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন (প্রায় ৩২৮ কিলোমিটার)।
ভালুকপং এবং উদালগুড়ি স্টেশনগুলি তুলনামূলকভাবে তাওয়াংয়ের কাছাকাছি, কিন্তু এখানথেকে তাওয়াং পৌঁছনোতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি ট্রেনে যাতায়াত বেছে নেন, তেজপুর বা গুয়াহাটিতে নামলে ভাল হয়। বাস এবং ট্যাক্সি দুটিই তেজপুর এবং গুয়াহাটি ট্রেন স্টেশন থেকে উপলব্ধ যেটা করে তাওয়াং পৌঁছে যাবেন অনায়াসেই।
কী কী করবেন : একবার আপনি তাওয়াং পৌঁছে গেলে ম্যাকলয়েডগঞ্জ আপনি যা করতে পারেন তার থেকে আরও অনেক কিছু করার এবং দেখার সুযোগ পাবেন। এই অঞ্চলের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে লিপ্ত হয়ে যাওয়া ছাড়াও আপনি এই জায়গার প্রেমে পড়েও যেতে পারেন... প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো তাওয়াং মঠ, তাওয়াং যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, মাধুরী হ্রদ এবং নুরানং ফলস ঘুরে দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : ডনড্রাম হোমস্টে এবং ভামুজ় ট্রেইল তাওয়াং
৩. জয়সলমীরের বদলে খিমসার গ্রাম
জয়সলমীর রোডট্রিপে যাওয়া সব বাঙালি-ই ভেবে থাকেন, সেই সোনার শহর আর সোনার কেল্লার প্রতি টানটা ফেলুদার সময় থেকে চলে আসছে। সোনার কেল্লা ছাড়াও এখানে রয়েছে থর মরুভূমি এবং গদিশার হ্রদ। আর যদি বলি এমন একটা জায়গা যার নাম কেউ শোনেনি পর্যটকদের ভিড় তেমন নেই কিন্তু প্রকৃত অর্থে রাজস্থানের প্রতিমূর্তি তাহলে কেমন লাগবে?
সেই জায়গাটি হল খিমসার গ্রাম, যেখানে পৌঁছতে গেলে আপনাকে জিপ, উট কিংবা ঘোড়ায় করে যেতে হবে। এখানে এলে বুঝতে পারবেন সীমাহীন মরুভূমি কেমন হয়। এখানে মাঝে মধ্যেই বালির টিলা নতুন আকার তৈরি করে, প্রশান্ত পরিবেশ এবং শব্দ যা আপনি কেবল মরুভূমিতেই শুনতে পাবেন। আপনি যদি আগেই জয়সলমীর এবং যোধপুর ঘুরে গিয়ে থাকেন বা ওখানে থাকার কোনও ইচ্ছা নেই তবে আপনি এখানে থাকতে পারেন। এবং হ্যাঁ, কিছুদূর এগিয়ে যান, আপনি মরুভূমিতে আক্ষরিক অর্থে মরুদ্যান দেখতে পাবেন।
কখন যাবেন : অক্টোবর থেকে মার্চ খিমসার যাওয়ার সবচাইতে ভাল সময় কারণ এই সময় খুব গরম থাকে না।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম বিমানবন্দর এবং রেলস্টেশন, উভয়ই যোধপুরে অবস্থিত, যা খিমসার থেকে প্রায় ৯৮ কিমি দূরে অবস্থিত। যোধপুর থেকে, ট্যাক্সি বা বাসে করে পৌঁছে যাবেন।
কী কী করবেন : খিমসার গ্রামে যাওয়ার রাস্তাটাই একটি দর্শনীয় জায়গা এছাড়াও আছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো খিমসার ফোর্ট যেটি এখন হোটেলে পরিণত হয়েছে। আপনি চাইলে উট বা জিপ সাফারিতে যেতে পারেন, রাত্রে তারার মাঝে ক্যাম্পিং-এ যেতে পারেন অথবা সত্যিকরে মরীচিকা দেখতে পারেন। কেমন মনে হচ্ছে না, এক্ষুনি ছুটে চলে যাই ?
কোথায় থাকবেন : খিমসার ফোর্ট অ্যান্ড দুনস এবং খিমসার স্যান্ড দুনস রিসোর্ট।
৪. মানালির বদলে চাকরতা
আপনার যদি পাহাড় খুব ভাল লাগে আর প্রত্যেক ট্রিপ প্ল্যান করা আগে বার বার মানালিকে সাইডে সরাচ্ছেন, তাহলে সত্যিই আপনার অন্য জায়গার প্রয়োজন। এই সুন্দর এবং জনপ্রিয় পাহাড়ি শহরটি সবার প্রিয় চিরকাল থাকবে, কিন্তু যদি আপনি এখানে অনেক উইকেন্ড কাটিয়ে থাকেন তাহলে বুঝে যাবেন যে জায়গাটি আজকাল অতিরিক্ত বেশি বাণিজ্যিকরণের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তবে, আপনি উত্তরাখণ্ডের আর একটি জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন যেখানে গেলে, সেই জায়গাটির প্রেমে পড়তে বাধ্য।
চাকরতা উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন জেলায় একটি ছোট পাহাড়ি এলাকা, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১১৮ মিটার উপরে অবস্থিত। যেখানে কোনও দিন বিশৃঙ্খলা, ট্র্যাফিক এবং শত শত পর্যটকদের ভিড় নেই। জলপ্রপাত, প্রাকৃতিক সূর্যাস্তের দৃশ্য, অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপ, প্রাচীন গুহা, মনোরম স্থানীয় সংস্কৃতি,আপনি এখানে প্রায় সমস্ত কিছুই পাবেন। পেয়ে যাবেন আপনার মনের মতো শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ...
কখন যাবেন : মার্চ থেকে জুন চাকরতার আবহাওয়া সবথেকে ভাল থাকে।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন এবং বিমানবন্দর উভয়ই দেরাদুনে অবস্থিত, যেটি চাকরতা থেকে যথাক্রমে ১১৩ কিলোমিটার এবং ৮৭ কিলোমিটার দূরে। দেরাদুন এবং আশেপাশের অন্যান্য শহরগুলি থেকে বাস এবং ট্যাক্সি পাওয়া যায়, তবে রাত হওয়ার আগে চাকরতা পৌঁছনোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
কী কী করবেন : চাকারতায় পর্যটকদের জন্য অনেক কিছু আছে। আপনি বিখ্যাত টাইগার জলপ্রপাত ঘুরে দেখতে পারেন, জলপ্রপাতের র্যাপেলিং উপভোগ করতে পারেন, চমৎকার সূর্যাস্তের দৃশ্যগুলি দেখার জন্য চিলমিরি নেকের উপরে উঠতে পারেন, রাতভর ক্যাম্পিং উপভোগ করতে পারেন, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে অবসর সময়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন এবং আরও অনেক কিছু করতে পারেন এই ছোট্ট পাহাড়ের শহরটা ঘুরে দেখার সময়ে। প্রাকৃতিক দৃশ্য এখানকার আপনার চোখ ধাঁধানোর ক্ষমতা রাখে, একথা একবাক্যে স্বীকার করতেই হবে।
কোথায় থাকবেন : এস্কেপ ট্রাইবাল ক্যাম্পস এবং গ্রিন হ্যাভেন রিসোর্টস।
৫. লাদাখের বদলে সিকিম
লাদাখের প্যাংগং সো -এর কথা মনে পরে যাওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়, এই রকমই অধিক উচ্চতায় অবস্থিত সুন্দর লেক সিকিমে একটা নয় অনেকগুলো আছে।
সিকিম ভারতের বাকি শহরগুলোর থেকে আলাদা বলা যেতে পারে। এখানকার পরিবেশ শান্ত, নিরিবিলি এবং শান্তিপূর্ণ... জনসংখ্যা সীমিত এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে প্রকৃতি জুড়েই। যে কোনও লাদাখভক্ত কিছু আলাদা দেখতে চাইলে এটা সব থেকে ভাল হবে, তবে এটি লাদাখ হওয়ার আগেই ঘুরে আসুন, আমাদের পরামর্শ।
কখন যাবেন : গ্যাংটকে ছুটি উপভোগ করার জন্য মার্চ থেকে মে মাস সেরা মাস। আপনি কারণটি ভেবে নিন কোনো ওই সময়? একেবারে মনোরম আবহাওয়া।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম রেলস্টেশনটি নিউ জলপাইগুড়িতে, যা গ্যাংটোক থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে। প্রায় ১২৪ কিলোমিটার দূরে বাগডোগরা বিমানবন্দরটি গাংটকের নিকটতম বিমানবন্দর। এই দুটো জায়গা থেকে, আপনি হয় ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন বা একটি বাসে করে গ্যাংটক পৌঁছাতে পারেন।
কী কী করবেন : গ্যাংটকে গেলে আপনি হোটেলে বসে থাকতে পারবেন না।মেনমেচো লেক, সমগো লেক, গুরুদোংমার লেক এবং সো লামো লেক (যা ভারতের সর্বোচ্চ হ্রদ) অনায়াসেই ঘুরে দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি রুমটেক মঠ, বাবা হরভজন সিং মন্দির, নামচি টপ এবং আরও অনেক কিছু দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : হোটেল ড্রাগন ইন এবং হোটেল শের-ই-পঞ্জাব।
৬. গোয়ার বদলে দমন দিউ
ভারতের কোনও সমুদ্রে গিয়ে মজা করার কথা মনে এলেই, গোয়ার নাম সর্বপ্রথম মাথায় আসে। গোয়ার ব্যাপারে এত লেখালিখি হয় যে এখন মনে হয় গতকালই পোর্তুগিজ এই শহর থেকে এলাম। যদি কোনও পিউরোস্কারের প্রতিযোগিতা হয় যে কম শহর সবচেয়ে বেশি চর্চিত গোয়া অবশ্যই প্রথম স্থানের জন্য লড়াই করবে। থামলে কোনও জায়গা কি আছ যা গোয়াকে টক্কর দিতে পারে।
আরব সাগর দিয়ে বিভক্ত দমন আর দিউ-তে নির্জন সমুদ্রসৈকত রয়েছে যা গোয়াতে পাওয়া কঠিন। প্রাকৃতিক সৈকত, প্রাচীন গুহা, অ্যাডভেঞ্চার ক্রিয়াকলাপ এবং মনোরম পরিবেশ সহ ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি গোয়ার ভক্তদের জন্য একটি আশ্চর্যজনক বিকল্প।
কখন যাবেন : নভেম্বর থেকে মার্চ সবচেয়ে ভাল সময় এখানে যাওয়ার নাহলে খুব গরম হবে।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম রেলস্টেশনগুলি হল ভাপি এবং ভেরাভাল, দমন থেকে ১৫ কিমি এবং দিউ থেকে ৯০ কিমি দূরে। খুব সহজে এই রেলস্টেশনগুলি থেকে ট্যাক্সি এবং বাস ভাড়া পাওয়া যায়। দমন এবং দিউ দুটোতেই বিমানবন্দর আছে যেখানে মুম্বই আর পুনে থেকে বিমান আসে। দমন এবং দিউ দুটোই রাস্তাপথেও গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়।
কী কী করবেন : আপনি যদি গোয়ান সমুদ্র সৈকতে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে থাকেন তবে আপনি কেবলমাত্র প্রচুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয় দমন ও দিউয়ের সাংস্কৃতিক দ্বারা অভিভূত হবেন। এখানে প্যারাসেলিংয়ের জন্য জাম্বোর বিচ, সূর্যাস্তের জন্য জলন্ধর বিচ, নায়দা গুহা, গঙ্গেশ্বর মন্দির এবং চক্রতীর্থ সৈকতের মতো জায়গাগুলো মিস করা উচিত নয়।
কোথায় থাকবেন : হোটেল আপার এবং হাৰ্ডিস ভিল্লা রিসোর্ট।
৭. হাম্পির বদলে মালুতি
ঐতিহাসিক বিভিন্ন তথ্যের নিরিখে নদীর পাশেই মূলত সমস্ত সভ্যতার শুরু হয়েছে, তারই একটা উদাহরণ হলো তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে গড়ে ওঠা শহর হাম্পি, উনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করেছেন... এটি বিজয়নগর রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। বর্তমানে জায়গাটা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে পর্যটকদের প্রায়শই আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়, যার ফলে আপনি বিরক্ত হতে পারেন। আরও বেশি করে যদি আপনি ঐতিহাসিক জায়গাটি নিরিবিলিতে দেখতে আর ছবি তুলতে গেছেন।
ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার একটি মন্দিরের গ্রাম যার কথা কেউ জানে না, নাম হল মালুতি। ১৫ শতাব্দীর বাজ বসন্ত রাজবংশের রাজধানী হল এই মালুতি গ্রাম। এই বংশের রাজারা রাজবাড়ি তৈরি করার বদলে মন্দির বানিয়ে গেছেন, ৭২টি মন্দিরের ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাবেন এখানে। যদি আপনি পর্যটন বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে ঐতিহাসিক গল্প খুঁজতে চান, তাহলে এই জায়গাটি আপনার জন্য একেবারেই উপযুক্ত বলতে পারি।
কখন যাবেন : অক্টোবর থেকে মার্চ বছরের সেরা সময় ঝাড়খণ্ডের এই অদ্ভুত ঐতিহাসিক মন্দির ধ্বংসাবশেষ ঘোরার জন্য।
কীভাবে যাবেন : মালুতি গ্রামের সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন হল পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট, এটি গ্রাম থেকে ১৬ কিমি দূরে অবস্থিত। রামপুরহাট স্টেশন থেকে বাসে করে মালুতি পৌঁছে যাবেন। সব থেকে কাছের বিমানবন্দরটি হল রাঁচি, মালুতি থেকে ২৫০ কিমি দূরে।
কী কী করবেন : মালুতিতে ঐতিহাসিক যাবতীয় দ্রষ্টব্য রয়েছে। অনেক পুরনো মন্দির, তার ভিতরের কারুকার্য, তার পিছনের গল্প , জঙ্গল এবং পাহাড় দেখার আছে। নদীর পাশে গ্রামটি শান্ত আর পর্যটকহীন,ফলে একটি শান্ত পরিবেশ দেবে, মনের প্রশান্তি পাবেন।
কোথায় থাকবেন : স্বাগতম ইন্টারন্যাশনাল এবং মা তারা প্যালেস।
৮. জিম করবেটের বদলে তাড়োবা
এটা সত্যি জিম করবেটে ভারতের সবচেয়ে বেশি সংখ্যার বাঘ আছে কিন্তু সেই বাঘ দেখার জন্য করবেটে মানুষের ঢল নেমে পরে। জিপের পর জিপ ভরে অতিরিক্ত উত্তেজিত জনতা যখন বাঘ খুঁজতে যায় তখন পুরো মজাটা নষ্ট হয়ে যায়।
আপনি যদি সত্যি জঙ্গলে বাঘ দেখতে চান তাহলে তাড়োবা আঁধারি রিসার্ভ -এ যান। মহারাষ্ট্রের সবচাইতে বড় টাইগার রিসার্ভ এটি কম জনাকীর্ণ এবং এখানে কেবল বাঘ নয় স্ট্রাইপড হায়েনা, ভল্লুক, ভারতীয় চিতাবাঘ এবং আরও অনেক বন্য প্রাণী দেখার সুযোগ পাবেন। বাঘের ছবি তোলার ইচ্ছা থাকলে এই পার্কের থেকে সেরা বিকল্প আর কিছুই নেই।
কখন যাবেন : গ্রীষ্মে মার্চ থেকে মে এবং শীতকালে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে তাড়োবা অন্ধারি টাইগার রিসার্ভে জঙ্গল সাফারিতে যাওয়া যায়। পার্কটি জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকে বর্ষার জন্য।
কীভাবে যাবেন : নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল চন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশন, যা বাঘ সংরক্ষণের থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে। নাগপুর বিমানবন্দর ১৪০ কিমি দূরে। ট্যাক্সি এবং বাস রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দর থেকে পাওয়া যায়। পার্কটি আসে পাশের শহরগুলির সাথে ভালভাবে সংযুক্ত, চিমুর বাসস্ট্যান্ডটি নিকটতম বাস স্টেশন।
কী কী করবেন : আপনি জঙ্গলে বন্য জন্তু জানোয়ার দেখার জন্য যাচ্ছেন তাই খোলা জিপে বসে তাই দেখে আনন্দ করুন।
কোথায় থাকবেন : তাড়োবা টাইগার রিসোর্ট এবং জয়শ্ৰীয়া মেডোস
৯. আলেপ্পির বদলে ভালিয়াপারাম্বা
আলেপ্পি এক শান্ত আর অবিস্মরণীয় পর্যটক স্থান। বিগত ১০ বছরে পর্যটকদের ক্রমশ ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ফলে সেই শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ এখানে আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। আগে যেমন হাউসবোটে করে নিরিবিলিতে ঘুরে বেড়ানো যেত এখন আলেপ্পি ব্যাকওয়াটার্স-এ বোর্টে এত মানুষের ভিড় যে আপনি একটা শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ খুঁজতে চাইবেন।
ভালিয়াপারাম্বা হল আপনার সেই বিকল্প। সুন্দর উপকূলীয় দ্বীপটি, এখনও নির্মল ও প্রশান্ত ব্যাকওয়াটার রয়েছে যেখানে সূর্যাস্তের সময় একটি হাউজবোটের যাত্রা আপনাকে ৯০-এর দশকের আলাপুজ্জাকে মনে করিয়ে দিতে পারে। শুধু ব্যাকওয়াটার কেন বেকাল কেল্লা এবং সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা সমুদ্র সৈকত আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে বাধ্য। ভালিয়াপারাম্বা দেখুন তাহলে বুঝবেন আমরা কেন এখানে যেতে বলছি।
কখন যাবেন : অক্টোবর থেকে মার্চই ভালিয়াপারাম্বা ভ্রমণের সেরা সময়, কারণ এই সময়ে আবহাওয় সবথেকে মনোরম থাকে।
কীভাবে যাবেন : চেরুভাতুর নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরটি নিকটতম বিমানবন্দর। চেরুভাতুর এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে সহজেই ট্যাক্সি এবং বাস পাওয়া যায়। আপনি ভালিয়াপারাম্বায় গাড়ি চালিয়েও যেতে পারেন, রাস্তাগুলো অবশ্যই খুব ভাল অবস্থায় রয়েছে।
কী কী করবেন : আপনি ভালিয়াপরাম্বাতে থাকাকালীন এখানে প্রচুর কাজ করতে পারেন। প্রাচীন বেকাল দুর্গ, বেকাল হোল অ্যাকোয়া পার্ক এবং অবশ্যই সত্যিকারের উপভোগযোগ্য ব্যাকওয়াটার ক্রুজ উপভোগ করতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : লেকভিউ বিচ হোমস্টে এবং আভিসা আইল্যান্ড।
১০. কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক বদলে গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক
কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ -এর উপর বন্যজীবন সংরক্ষণাগার – প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য পৃথিবীর সেরা স্থানগুলির মধ্যে একটি। তবে আপনি যদি ইতিমধ্যে কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক ঘুরে ফেলে থাকেন থামলে কি করবেন? আপনি আবার কোনও স্নো-লেপার্ড -এর ছবি তোলার কথা ভাবলে আপনি কোথায় যাবেন?
গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক তাহলে আপনার গন্তব্য হওয়া উচিত। সব ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার -দের জন্য এটা নয় এবং অনেকে আবার এর মধ্যেই অনন্য প্রকৃতির উদ্ভিদ বা বন্যজীবন দেখার ইচ্ছা রাখে তাদের জন্যও আদর্শ বলতে হবে। কিন্তু জেনে রাখবেন এটি একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
কখন যাবেন : মার্চ থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গরম কালে হিমালয় জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করার উপযুক্ত সময়, শীত কালে প্রচন্ড ঠান্ডা আর বর্ষাকালের পরিবেশ বিপদজ্জনক বলে এড়ানোই ভালো।
কিভাবে যাবেন : বিমানে যেতে চাইলে আপন ভুন্টার বিমানবন্দরে যেতে পারেন, দিল্লি থেকে প্রায় রোজই বিমান ওড়ে। পার্ক থেকে বিমানবন্দর ৬০ কিমি দূরে।
যদিও চন্ডীগড়ের নিকটতম প্রধান রেল স্টেশনটি ২৯৬ কিমি দূরে কিন্তু জগিন্দরনগর স্টেশন, যা পার্ক থেকে প্রায় ১৪২ কিলোমিটার দূরে আছে যেটি পাঠানকোট জংশনের সাথে সংযুক্ত। আপনি যদি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন, অট পৌঁছে যান এবং তারপরে বাঁঞ্জার ভ্যালির একটি লিঙ্ক রোড নিন। তবে গ্রেট হিমালয় জাতীয় উদ্যানের অফিশিয়াল ওয়েব পোর্টালটি দেখতে ভুলবেন না নিয়মিত আপডেট এবং হেল্পলাইন নম্বরগুলির জন্য।
কী কী করবেন : ট্রেক, বরফে ঘেরা পাহাড়, ছোট ছোট গ্রাম আর সাফারিতে যেতে পারেন।
মনে রাখবেন - পার্কে প্রবেশ করা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে। আরও জানার জন্য উপরে উল্লিখিত ওয়েবসাইটটি দেখুন।
কোথায় থাকবেন : এটি কোনো সাধারণ পার্ক নয় এটি হল হিমালয়ের পার্ক। যেখানে থাকার জায়গা খুব কম আছে সাইরোপাতে একটা সরকারি গেস্টহাউস আছে আর সস্তায় কিছু গ্রামে হোমস্টে পেয়ে যাবেন।
তাহলে বলুন কোন জায়গাটা আপনার সবচাইতে পছন্দ হল। নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানান। আর Tripto-র youtube চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না।
এখন Covid -19এর জন্য আমরা আপনাদের ঘুরতে যেতে বলছিনা, এখন আপনারা ভবিষ্যতের ঘোরার পরিকল্পনা করতে পারেন। এখন বেড়াতে যাওয়া ঠিক হবে না। সাবধানে থাকবেন।