দুজন পর্যটকের একান্ত প্রচেষ্টায় অরুণাচল প্রদেশের ৪৫ টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছিল...

Tripoto

অজানা-অদেখা বিষয়ের সন্ধানে আমরা অনেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। কিন্তু কিছু কিছু মুহূর্ত এমনভাবে জীবনে দাগ কেটে যায় সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা টানা সম্ভব হয় না। এমনই একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতার কাহিনি হল রাজীব ও মের্বিন-এর। অরুণাচল প্রদেশে তাঁদের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য এক অধ্যায় বলা চলে। তাঁরা কোনওদিন কল্পনাও করতে পারেননি যে, এই সফর তাঁদের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে আরও হাজার হাজার জীবনের দিশা বদলে দিতে পারে। এই দু'জন প্রাণোচ্ছল পর্যটক শহরের কৃত্রিমতা থেকে বেরিয়ে এসে উত্তর-পূর্বের ৫০টি প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। গ্রামের প্রায় ৪০০ টি বাড়িতে আলো জ্বালিয়েছিলেন তাঁরাই। আর যদি জিজ্ঞেস করেন ঠিক কীভাবে গ্রামবাসীদের জীবনে এত প্রভাবশালী পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে ! এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ উত্তর হয়তো হবে 'শুধু একটি মাত্র জীবন বদলে দেওয়ার ভাবনার' মাধ্যমে।

আরও কিছু তথ্য এই প্রসঙ্গে জেনে নেওয়া যাক

প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করার মতো এক পাহাড়প্রমাণ কাজ শুরু করার আগে রাজীব ইঙ্গিনিয়ারিং-এর ছাত্র ছিলেন এবং মের্বিন পেশাগত ভাবে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। এই দু'জনের পরিচয় একজন কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে হয়। দু'জনেরই বেড়ানোর প্রতি অগাধ নেশা থাকায় ধীরে ধীরে তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হতে থাকে। রাজীব ও মের্বিন একে ওপরের ট্রাভেল পার্টনার হয়ে যায় এবং এক সময় দু'জনেই অনুভব করে যে চিরাচরিত শহরের কংক্রিট জীবনযাত্রা তাঁদের ভীষণ রকম অপছন্দের।

বছরখানেক পর রাজীব কলেজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তাঁর নিজস্ব টেক্সটাইল ব্যবসা শুরু করে। অন্যদিকে ২০১০ সাল নাগাদ মের্বিনও আস্তে আস্তে তাঁর মৃতপ্রায়, নিস্তেজ কর্পোরেট জীবনে হাঁফিয়ে উঠতে থাকে। ইতিমধ্যে রাজীবও আর্থিকভাবে মোটামুটি স্বচ্ছল হওয়া সত্বেও তাঁর ব্যবসা বন্ধ করে দেয় । জীবনের এত কিছু ওঠানামার মধ্যে তাদের দু'জনেরই ভ্রমণের প্রতি অগাধ ভালবাসাতে এতটুকুও ভাটা পড়েনি। অবশেষে রাজীব ও মের্বিন দু'জনেরই বাধাহীন, অদম্য জীবনে জুড়ে রইল অজানাকে জানার ও অচেনাকে চেনার নেশা।

জীবন বদলে দেওয়া সেই যাত্রা

২০১০ সালে রাজীব ও মের্বিন একদিন ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে রওনা হলেন না দেখা অরুণাচলপ্রদেশকে আবিষ্কার করতে। যাত্রাপথে তাঁরা এসে পৌঁছলেন বিজয়নগর ও গান্ধিগ্রাম নামক দুটি গ্রামে- এমন গ্রাম যেখানে শুধু পাহাড়ের খাড়া চড়াই পেরিয়ে পৌঁছনো যায়। না আছে কোনও রাস্তা, না আছে কোনও যোগাযোগ মাধ্যম আর বিদ্যুতেরও কোনও চিহ্ন নেই সেখানে। এই বিরল অভিজ্ঞতা রাজীব ও মের্বিলকে বাধ্য করল জীবনকে নতুন করে ভাবতে, নতুন করে চিনতে।

ঠিক পরের বছর খ্রিস্টমাস উপলক্ষে এই দুই বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাল গান্ধিগ্রামের বাসিন্দারা। সাধারণ উপহার যেমন চকোলেট ও মিষ্টির বদলে তাঁরা ঠিক করলেন খ্রিস্টমাসে আলো উপহার দেবে গ্রামবাসীদের। অবশেষে জন্ম নিল 'বাত্তি' (Batti) প্রজেক্ট।

বাত্তি প্রজেক্ট আসলে কী ?

এই প্রজেক্টের প্রধান উদেশ্য ছিল দূর থেকে দূরান্তের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। প্রজেক্টের প্রথম ধাপ শুরু হল সেই গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে যেখানের জীবন বহু বছর ধরে অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে। এরপর আরও গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করা হল কোন গ্রামের নির্দিষ্টভাবে ঠিক কী কী প্রয়োজন। তারপর শুরু হল ফান্ড জোগাড় করার তোড়জোড়। ধীরে ধীরে যোগাযোগ করা হল শিল্পপতিদের সাথে যারা আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আস্তে প্রস্তুত ছিল। যথাযথ পরিমাণ ফান্ড জোগাড় হয়ে গেলে সরাসরি বাজারের প্রস্তুতকারকদের থেকে কিনে নেওয়া হল সোলার কিট। অবশেষে সোলার কিট গ্রামে পৌঁছে দিয়ে বিশেষ পারদর্শীদের সাহায্যে স্থাপন করে দেওয়া হল গ্রামে গ্রামে।

গ্রামবাসীরা ঠিক কীভাবে উপকৃত হয়েছে?

রাজীব ও মের্বিন-এর বক্তব্য অনুসারে এই বাত্তি কিটের মাধ্যমে তাঁরা একপ্রকার মজবুত ও টেকসই ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছে যা গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এই বাত্তি কিটের সাহায্যে প্রতিটি বাড়ি একটি করে ৩ ওয়াটের LED টিউবলাইট, একটি ২১ ওয়াটের প্যানেল এবং 20AH এর ব্যাটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং গ্রামবাসীদের কাছে তা পৌঁছে যায় বাজারের প্রায় দশ ভাগের একভাগ দামে।

তারতম্যের সূক্ষ্ম রেখা

এই বাত্তি প্রজেক্ট যাতে স্থানীয় গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাবেকি জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত না করে তার জন্য রাজীব ও মের্বিন এক অনন্য পন্থা অবলম্বন করেছেন। তাদের মতে কোন গ্রামবাসিদের ওপরেই জোর করে এই প্রজেক্ট চাপান হয়নি। শুধুমাত্র যারা এই সুবিধা পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে তাদেরকেই এই বাত্তি কিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।

(এটি একটি অনুবাদকৃত/অনুলিখিত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)

Further Reads