![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2019593/TripDocument/1603287205_cpve.jpg)
দুর্গাপুজোর এই মরসুমে চলুন একবার টুক করে একদিনের জন্য ইউরোপ ঘুরে আসি! কী বলছেন? ঠাট্টা করছি আপনাদের সঙ্গে? একদিনে মোটেই ইউরোপ যাওয়া যায় না? আছেন কোথায় মশাই? শনিবার বা একটা রবিবার দেখে দিব্যি ঘুরে আসা যায় ইউরোপ থেকে। না ! না ভুরুতে এত ভাঁজ ফেলার দরকার নেই। বিষয়টা এবার খোলসা করেই বলি। আমাদের এই কলকাতা শহর এবং সেখান থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা দূরত্বে এখনও রয়ে গেছে ইউরোপীয় কলোনির ছোঁয়া। কলকাতায় তো দীর্ঘদিন ব্রিটিশদের রাজধানী ছিল। তাছাড়াও, এখানে এসেছে ওলন্দাজ বা ডাচরা, এসেছে ফরাসি আর পর্তুগিজরাও। আর সব মিলিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গের বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো 'লিটল ইউরোপ' । যদিও অতিমারীর জেরে বেশি দূর যাতায়াতের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি তবে আনলকের উপর ভরসা রেখে একদিনের জন্য ঘুরে আসা যেতেই পারে। তাহলে দেরি কীসের? চলুন একবার ইউরোপ ঘুরে আসা যাক।
ব্রিটিশ ছোঁয়ায় ব্যারাকপুর
কীভাবে যাবেনঃ কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। ১৭৭২ সালে এখানে সেনারা ব্যারাক করে থাকত, সেখান থেকেই নামের উৎপত্তি। দমদম স্টেশন থেকে ব্যারাকপুরের ট্রেন ছাড়ে।কলকাতা থেকে বাসেও যাওয়া যায়।
কী কী দেখবেন
ব্যারাকপুর পার্ক
সুন্দর এই পার্কে রয়েছে লর্ড ওয়েলেসলির ডিজাইন এবং তৈরি করা বাড়ি।
মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কলকাতা থেকে ব্যান্ডেলের। হাওড়া স্টেশন থেকে অসংখ্য লোকাল ট্রেন আছে। কলকাতা থেকে গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়।
কী কী দেখবেন
![Photo of Bandel, West Bengal, India by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2019593/TripDocument/1603286924_bandel_church.jpg.webp)
কীভাবে যাবেনঃ কলকাতা থেকে শ্রীরামপুর যেতে ঘণ্টা দেড়েক লাগে। ১৭৫২ থেকে ১৮৪৫ পর্যন্ত এখানে ডেনিশ কলোনি ছিল। একসময় শ্রীরামপুরের নাম ছিল ফ্রেডরিক নগর। নামকরণ করা হয়েছিল ডেনিশ রাজা চতুর্থ ফ্রেডরিকের নামানুসারে।
কী কী দেখবেন
শ্রীরামপুর কলেজ
![Photo of Serampore, West Bengal, India by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2019593/TripDocument/1603287007_college.jpg.webp)
ডাচ টাচ যখন চুঁচুড়ায়
কীভাবে যাবেনঃ হাওড়া থেকে ট্রেন ছাড়ে। গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়। চুঁচুড়া বা সিনসুরা ছিল ডাচ বা ওলন্দাজদের অধীনে। ১৬১৫ থেকে ১৮২৫ পর্যন্ত এখানে ডাচ রাজত্ব ছিল। ১৮২৫ সালে সুমাত্রার একটি দ্বীপের বদলে চুঁচুড়া নিয়ে নেয় ব্রিটিশরা।
কী কী দেখবেন
ক্লক টাওয়ারঃ ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সম্রাট এডওয়ার্ডকে সম্মান জানাতে তৈরি হয়েছিল।
![Photo of Chinchura, West Bengal, India by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1603528577_1431935107_773_chinsurah6.jpg.webp)
ফরাসি সুবাস ছড়ায় চন্দননগর
কীভাবে যাবেনঃ সবশেষে আমরা এলাম চন্দননগর। এটি ছিল ফরাসি বা ফ্রেঞ্চদের ঘাঁটি। কলকাতা থেকে গাড়ি করে বা হাওড়া থেকে ট্রেনে যাওয়া যায়। ফরাসিদের আধিপত্য ছিল বলেই এই জায়গার নাম ছিল ফরাসডাঙা।
কী কী দেখবেন
ফরাসি গেট
একসময় দুটো ছিল উত্তর ও দক্ষিণে। উত্তরের গেটটি আর নেই। তবে দক্ষিণের গেটে এখনও খোদাই আছে বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ স্লোগান লিবার্টি, ইকুয়ালিটি, ফ্যাটারনিটির কথা বলে কিন্তু বাস্তিল দুর্গ পতনের সঙ্গে সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবেরও একপ্রকার সমাপ্তি ঘটে...
ফরাসি সেনানায়ক দুপ্লে বাড়ি
ফরাসি সেনানায়ক দুপ্লের বাড়িটি ঐতিহাসিকভাবে যেমন সমৃদ্ধ তেমনই উল্লেখযোগ্য এক পর্যটনকেন্দ্র...
দুর্গাচরণ রক্ষিত ও তাঁর তৈরি ব্যান্ড স্ট্যান্ড
![Photo of Chandannagar, West Bengal, India by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1603529207_chandanagar_strand.jpg.webp)
লেডি ক্যানিংয়ের সমাধি
ওয়েলেসলির বাড়ির কাছেই রয়েছে লেডি ক্যানিংয়ের সমাধি। অজানা জ্বরে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। সমাধিস্থ করা হয় এখানেই।
![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1603527543_barrackpore3.jpg.webp)
মেমোরিয়াল হল
কাছাকাছির মধ্যে আছে আর্ল অফ মিনটোর তৈরি করা মেমোরিয়াল হল। এই হলের স্থাপত্য নজরকাড়া বলতেই হবে।
![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1603527636_barrackpore4.jpg.webp)
ব্যান্ডেলে গেলে পাবেন এক টুকরো পর্তুগাল
কীভাবে যাবেন
এখানকার ল্যান্ডমার্ক হল ব্যান্ডেল চার্চ, যা ১৫৯৯ সালে পর্তুগিজদের তৈরি। অপূর্ব সুন্দর এই স্ট্যাচু অফ আওয়ার লেডি অফ দা হ্যাপি ভয়েজ চার্চ। চার্চ থেকে দেখা যায় হুগলি নদীর উপরে জুবিলি ব্রিজ। যা ১৮৮৭ সালে কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনের গোল্ডেন জুবিলিকে সম্মান জানাতে তৈরি হয়েছিল।
ডেনিশ ম্যাজিক শ্রীরামপুরে
শিক্ষাবিদ উইলিয়াম কেরির অনুপ্রেরণায় এই কলেজ গড়ে ওঠে। এই বিল্ডিংয়ের স্থাপত্যশৈলী খুব সুন্দর। কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই আছে কেরি সাহেবের বাড়ি। বর্তমানে সেটি একটি মিউজিয়াম। উৎসাহী পর্যটকেরা অবশ্যই ঘুরে দেখতে পারেন...
ব্যাপটিস্ট মিশন চার্চ ও সেন্ট ওলাভ চার্চ
![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2019593/TripDocument/1603287074_olav.jpg.webp)
দুটি খুব পুরনো গির্জা। ব্যাপটিস্ট মিশনের সিমেট্রিতে আছে উইলিয়াম কেরির সমাধি। চার্চের সামনে একটি ত্রিকোণ পার্কে রয়েছে প্রায় ১৫টি ডেনিশ কামান। উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যশৈলীর যা এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
গোস্বামীদের বাড়ি
এই বাড়িকে বাড়ি বলবেন নাকি কোনও রাজমহল বা রাজপ্রাসাদের সঙ্গে তুলনা টানবেন সেটা আপনার উপরেই ছেড়ে দেওয়া হল। ডেনমার্কের সঙ্গে ব্যবসা করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিলেন এই গোস্বামীরা।
ডেনমার্ক ট্যাভার্ন
এই মুহূর্তে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। ১৭৮৬ সালে এক জেমস পার নামে এক ব্রিটিশ এই রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন। ২৩২ বছরের পুরনো এই বাড়িটিকেই নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে একটি ক্যাফে খোলা হয়েছে। একবার না ঢুঁ মারলে কিন্তু পস্তাবেন না! সন্ধেবেলাতে বন্ধুদের সঙ্গে ভাল আড্ডাও জমতে পারে...
![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1603528169_danish_tavern.jpg.webp)
ডাচ গভর্নরের বাড়ি
ডাচ সিমেট্রি
সুসানা আন্নামারিয়ার সমাধি
![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2019593/TripDocument/1603287141_susana.jpg.webp)
বলা হয় সুসানা আনআমারিয়া দুবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথমবার এক ডাচ অফিসারকে আর দ্বিতিয়বার এক ব্রিটিশ অফিসারকে। এই সুসানাকে নিয়েই রাস্কিন বন্ড লিখেছিলেন সুসানাজ়াস সেভেন হাসবেন্ড...ছবিটির মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।
চন্দননগর যাবেন আর গঙ্গার ঘাটে গিয়ে একটু হাওয়া খাবেন না সেটা কি হতে পারে? আর গঙ্গার ঘাটে যখন যাচ্ছেনই তখন সেখানকার ব্যান্ড স্ট্যান্ড দেখবেন না সেটাও হতে পারে না। এই ব্যান্ড স্ট্যান্ড ও গঙ্গার জেটি তৈরি করেছিলেন দুর্গাচরণ রক্ষিত। ফ্রান্সের সর্বচ্চ সম্মান লিজিয় দ্য নর দ্বারা ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। শোনা যায় এই রক্ষিত নাম থেকেই নাকি সত্যজিত রায় তাঁর জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে র্যাক্সিট চরিত্রের নামকরণ করেছিলেন।
চন্দননগর আদালত
এছাড়াও আপনি ইচ্ছে করলে চন্দননগর আদালত ঘুরে দেখতে পারেন। ইতিহাসসমৃদ্ধ বহু নথিই আপনি পাবেন, এই স্থানে ঘোরার মধ্যে দিয়ে।
![Photo of কলকাতার বুকেই লুকিয়ে আছে এক টুকরো ‘লিটল ইউরোপ’ by Doyel Banerjee](https://static2.tripoto.com/media/filter/nl/img/2033349/TripDocument/1603529480_dsc_0021.jpg.webp)