মেয়েদের প্রায়ই দূরে ঘুরতে যাওয়া উচিত। আমরা মেয়েরা প্রতিদিনের কাজে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ি যে অনেক সময়ে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুগুলোকেও ঠিকমতো সময় দিয়ে উঠতে পারি না, একপ্রকার অবহেলা করতে থাকি। মহিলাদের বন্ধুত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিবিড়, সংবেদনশীল এবং দীর্ঘজীবী হয়। আর আপনি যদি এইরকম বন্ধুত্বকে অবহেলা করে থাকেন, তাহলে শুধু মহিলাদের রোড ট্রিপ আপনার এই বন্ধুত্বকে পুনরুদ্ধার করে দেবে, এমনটা বেশ জোরের সঙ্গেই বলতে পারি।
তাহলে আর অপেক্ষা না করে ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলুন আর বেড়িয়ে পড়ুন আপনার মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে। খুঁজে ফেলার চেষ্টা করুন হারানো মেয়েবেলাটুকু... আনন্দ করতে আপনাকে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না, যেহেতু ভারতেই প্রচুর সুন্দর রাস্তা আছে যেখানেই আপনি বেশ স্বচ্ছন্দে রোড ট্রিপের কোনও প্ল্যান করে ফেলতে পারবেন।
এখানে আমার প্রিয় মেয়েদের ভ্রমণের গন্তব্যগুলোর একটি তালিকা দিলাম।
দিল্লী থেকে জয়সলমীর
উপযুক্ত : আপনাদের মধ্যে যারা সংস্স্কৃতি ভালোবাসেন এবং পাহাড় যাদের বেশ পছন্দের তাদের জন্য এই ভ্রমণ হতে পারে উপযুক্ত।
পথ : দিল্লী থেকে জয়সলমীরে যাওয়ার মোট তিনটে রাস্তা আছে, সব থেকে ভাল রাস্তা হচ্ছে NH11 আলওয়ার দিয়ে। তারপর জয়পুর পেরিয়ে ধরতে হবে NH48 যোধপুর পর্যন্ত। তারপর NH25 আর NH11 ধরে পোখরান হয়ে পৌঁছাতে হবে জয়সলমীরে।
রাস্তায় কী দেখবেন: আলওয়ার (আপনি আলওয়ার দুর্গটি দেখতে পারেন), জয়পুর (আধুনিকতা ও রাজকীয়তার জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ) এবং যোধপুর (মেহেরনগড় দুর্গের পটভূমিতে একটি সুন্দর নীল শহর দেখার জন্য) রাস্তায় থামতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : মধুবন - একটি ঐতিহ্যবহুল বাড়ী, জুয়েল প্যালেস হাভেলি - যোধপুরে এবং দা সূর্য পেয়িং গেস্ট হাউস - জয়সলমীর।
আরও বিস্তারিত বিবরণের জন্য ট্রিপোটো-র পর্যটক দেবব্রত দাস -এর লেখা, জয়পুর যোধপুর এবং জয়সলমীর ভ্রমণ বর্ণনার গল্পটি পড়ুন।
ইন্ডিয়া থেকে থাইল্যান্ড
উপযুক্ত : ২৫ বা বেশি বয়সের মেয়েদের জন্য আর যারা জীবনকে পুরোদমে উপভোগ করতে চান তাদের জন্য এইস্থানটি বিশেষ করে উপযোগী।
পথ : ভারতবর্ষ থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার রাস্তাটি গত ২ বছর আগে খুলেছে, যেটা রোড ট্রিপের জন্য একদম উপযুক্ত। যাত্রা শুরু করার আগে ইম্ফল পৌঁছতে হবে। এখান থেকে বাগান যেতে হবে, সেখানে পৌঁছলে NH37 ধরে সোজা মায়ানমারে ইনলে লেক-এ পৌঁছতে হবে। এরপর ইয়াঙ্গুন ( রেঙ্গুন ) থেকে রুট ৩ ধরে ব্যাংকক পৌঁছতে হবে তাক অতিক্রম করে। থাইল্যান্ডের প্যাকেজ বুক করুতে চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
রাস্তায় কী দেখবেন: ইম্ফলে, লোকতক লেকে রয়েছে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান, সেটি দেখতে পারেন। বাগান থামতে পারেন বাগান মন্দির এবং থারাবার দেখার জন্য। ইয়াঙ্গুন, যেটি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র তা অবশ্যই দেখতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : শালোম লজ ইম্ফলে, স্কাই ভিউ হোটেল বাগান, ২০ স্ট্রিট হোস্টেল ইয়াঙ্গুনে এবং রাম্বুটরি ভিলেজ প্লাজা ব্যাংককে।
আরও বিশদ বিবরণের জন্য ট্রিপোটো-র সঞ্জয় মাদানের ভ্রমণ কাহিনিটি পড়ুন, দিল্লি থেকে ব্যাংকক রোড ট্রিপ।
মুম্বই থেকে গোয়া
উপযুক্ত : মুম্বইয়ের প্রতিটি মহিলা যার জীবনের এখন প্রধান হচ্ছে একটা সাময়িক বিরতি, তার জন্য এই ট্রিপটি বিশেষভাবে উপযুক্ত।
পথ : মুম্বই থেকে কলকাতা যাওয়ার দুটো রাস্তা আছে। একটা রাস্তা জনপ্রিয় হিল স্টেশন খান্ডালা আর লোনাভালা দিয়ে যায়, আরেকটা রাস্তা কোলাদ এবং মহাবালেশ্বর দিয়ে যায়। মুম্বই - বেঙ্গালোর টোল রোড অতিক্রম করে সিন্ধান্ত নিতে হবে কোন রাস্তা ধরবেন। দুটো রাস্তায় সাঁতারতে এসে মেলে , যেখান থেকে গোয়া ৬ ঘণ্টার পথ।
রাস্তায় কী দেখবেন: খন্ডালা এবং লোনাভলা, এই কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়গুলো এখানে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কোলাদে, কুণ্ডলিকা নদীর তীরে সাদা জলের রিভার রাফটিংয়ে যেতে পারেন । মহাবালেশ্বর যা ভারতের স্ট্রবেরি রাজধানী সেখানে থাকতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : গেইল অ্যান'স ভিল্লা লোনাভালাতে, মিসটি হিলস লজ মহাবালেশ্বরে এবং হসপেদারিয়া আব্রিগ দে বটেলঃ গোয়াতে।
আরও বিশদ বিবরণের জন্য ট্রিপোটো-র আকাঙ্ক্ষা বিশ্বা, দ্য আলটিমেট মুম্বাই-গোয়া রোডের ভ্রমণের গল্প পড়ুন।
ইস্ট কোস্ট রোড
উপযুক্ত : যে মহিলারা বিশ্বাস করেন যে অবিস্মরণীয় ভ্রমণের রহস্য অফবিট ট্র্যাক ঘোরার মধ্যে রয়েছে। তাদের জন্য একেবারে উপযুক্ত হল এই রোড ট্রিপটি।
পথ : ইস্ট কোস্ট রোড অথবা স্টেট হাইওয়ে ৪৯, বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে চেন্নাই থেকে কাড্ডালোর হয়ে পন্ডিচেরিকে যুক্ত করে। এই রাস্তাটি আপনাকে ভারতের পূর্ব উপকূলের সেরা সৈকত এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণগুলির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে যেমন সিরকলি, আক্কুর, থারাগামবাদী, কড়াইকাল, নাগোর, নাগপট্টিনাম, তিরুথুরাইপুন্দি, মহাবালীপুরম, মনোরা, মানামেলকুড়ি, রামানাথাপুরাম, কুডানকুলাম এবং কন্যাকুমারীতে গিয়ে শেষ হয়।
রাস্তায় কী দেখবেন: মারুন্দেশ্বর মন্দির ও আদায়ারের নিকটে কোভলং, চেন্নাইয়ের নিকটবর্তী চোলমণ্ডল শিল্পীদের গ্রাম, কোভালামের নিকটে থমিম আনসারি দরগা, মমল্লাপুরামের বাঘের গুহা, কাদাপাক্কামের নিকটে আলামপাড়াই দুর্গ এবং পন্ডিচেরির উপনিবেশ সৈকত শহর দেখার আছে।
কোথায় থাকবেন : ডাফনে হোটেল মহাবলীপুরম এবং লা মেসন রাধা পন্ডিচেরিতে থাকুন।
আরও বিশদ বিবরণের জন্য ট্রিপোটো-র আদিত্য সিভারমন, বাইক ট্রিপ টু পন্ডিচেরি অলং দা ইস্ট কোস্ট রোড ভ্রমণের গল্প পড়ুন।
বাগডোগরা থেকে গ্যাংটক
উপযুক্ত : অনভিজ্ঞ আন্ডারগ্রাজুয়েটরা যারা এখনও বিশ্বাস করেন যে সিকিম 'ভারতের সাত বোনদের' একজন। তারা অবশ্যই এই ট্রিপের প্ল্যান করতে পারেন।
পথ : বাগডোগরা থেকে গ্যাংটক যাওয়ার সেরা এবং একমাত্র রাস্তা হলো NH১০ শিলিগুড়ি থেকে। তারপর রঙ্গলি থেকে দক্ষিণ সিকিম ঢুকতে হবে, আর জুলুকের দিকে এগোতে হবে। জুলুক অতিক্রম করে আরও কিছু ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে এগোলে পৌঁছে যাবেন নাথাং ভ্যালি, এখান থেকে গ্যাংটকের দিকে এগিয়ে যান সংমো লেক পার হয়ে।
রাস্তায় কি দেখবেন: রঙ্গলি বা রংলি, যদি ক্ষুদ্র সিকিমি গ্রামগুলিতে থাকার ইচ্ছে থাকলে। জুলুক, দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম্য জীবন উপলব্ধি করার জন্য।
কোথায় থাকবেন : লিলি ফ্লোরা রেসিডেন্সি রংলিতে , চিল এন্ড ওআরমথ হোমস্টে জুলুকে এবং দ্য রয়্যাল ওকস গ্যাংটকে।
আরও বিশদ বিবরণের জন্য হাউ টু এক্সপেরিয়েন্স দ্য বেস্ট অফ ইস্ট সিকিম এন্ড দার্জিলিং ইন জাস্ট ফাইভ ডেজস, পড়ুন।
দিল্লী থেকে খাজুরাহো ওরচা হয়ে
উপযুক্ত : অল্প বয়স্ক যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী এবং কাসলের বিকল্প কোনও গন্তব্য খুঁজছেন, তাঁদের জন্য উপযুক্ত হল এই রোড ট্রিপ।
পথ : যদিও দুটো রাস্তা আছে দিল্লী থেকে খাজুরাহো যাওয়ার, তবে সবচেয়ে ভালো রাস্তাটি হল তাজ এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে আগ্রার দিকে এগিয়ে যাওয়া। যখন গোয়ালিয়র আসবে তখন NH৪৪ ধরে ওরচা পৌঁছে যাবেন। তারপর NH৩৯ ধরে ছত্রপুর হয়ে খাজুরাহো পৌঁছে যাবেন।
রাস্তায় কি দেখবেন: আগ্রা, বিশ্বের প্রিয় ভালবাসার স্মৃতিস্তম্ভকে শ্রদ্ধা জানাতে। ঐতিহাসিক নিরিবিলি শহরের সত্যিকারের অভিজ্ঞতার জন্য ওরচা।
কোথায় থাকবেন : অউরা মুমতাজ মহল আগ্রাতে, দ্য ওরচা রিসোর্ট ওরচাতে এবং ক্লার্কস খাজুরাহো, খাজুরাহোতে।
ট্রিপটো পর্যটক দিশা কাপকটির ভ্রমণের গল্পটি পড়ুন, গেস হোয়াট? দ্যি মোস্ট কনভেনিয়েন্ট উইকেন্ড গেটওয়ে ফ্রম দিল্লী ইস ডিস টাউন ইন মধ্য প্রদেশ।
স্পিতি ভ্যালি সার্কিট
উপযুক্ত : যে সকল মহিলা পুরুষদের উপরে কোনও কারণে বিশ্বাস হারিয়েছেন। তাঁরা অবশ্যই রোড ট্রিপের মধ্যে দিয়ে নিজেদের হারানো বিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করুন।
পথ : স্পিতি দেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়টি হল একটি অর্ধ চন্দ্রাকৃতির পথে চলা। আপনি যদি মানালি থেকে শুরু করে থাকেন তবে আপনি বাতাল ও লোসার থেকে কাজ়া পৌঁছে যাবেন। সিমলার দিক থেকে আপনি রামনগর থেকে শুরু করে রেকং পেও,পুহ এবং তাবো থেকে কাজ়া পৌঁছবেন।
রাস্তায় কী দেখবেন: চন্দ্রতাল হ্রদ (হ্রদে শিবির স্থাপনের অনুমতি নেই) প্রকৃতির সৌন্দর্যের সামনে নিজেকে সম্পূর্ণ তুচ্ছ মনে হবে। কী মঠ, ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় মঠের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অবশ্যই থামবেন। কিব্বার, আপনার তালিকার বাইরে ভারতের সর্বোচ্চ (ধারাবাহিকভাবে বসবাস করা) গ্রামটি ঘুরে দেখতে। ধাঙ্কার, প্রাচীন ও আধুনিক বৌদ্ধ রীতিগুলি এক ঝলকের দেখা পাওয়ার জন্য যাওয়া উচিত।
কোথায় থাকবেন : কাজ়ার হোস্টেল-এ, হোটেল সুমিত - লে রোয়াল শিমলাতে এবং হোটেল মাউন্টেন ট্রেইল মানালিতে।
ট্রিপটোর পর্যটক সাবিখি সৌরভের ভ্রমণের গল্পটি পড়ুন, গেস হোয়াট? দ্য স্পিটি ট্রাভেলগে।
দিল্লি থেকে নেপাল
উপযুক্ত : যে সকল মহিলা বেশি দু: সাহসিক কাজ করতে পছন্দ করেন না এবং যারা বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে যেতে চাননা।
পথ : যদিও ভারত থেকে নেপাল পৌঁছনোর জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রুট রয়েছে তবে সবচেয়ে ভাল হল দিল্লি থেকে নৈনিতাল পর্যন্ত NH৯ নেওয়া। নৈনিতাল থেকে NH৭৩০ সুনৌলির দিকে যান, সেখান থেকে নেপালের সীমা থেকে অতিক্রম করা সবচেয়ে সহজ। এমনকী আপনি সানৌলির পথে একটি অন্য পথ নিয়ে নিতে পারেন যেটি পালিয়া কালানের দিকে যায়, দুধওয়া জাতীয় উদ্যানটি দেখার জন্য।
রাস্তায় কী দেখবেন: নৈনিতাল, এই হিল স্টেশনটির সবার ভালোবাসার কেন্দ্র হয়ে উঠবে। পলিয়া কালান, দুধওয়া জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার জন্য।
কোথায় থাকবেন : নৈনিতালে বব্স প্লেস-এ থাকবেন।
ট্রিপটো পর্যটক দিক্সিত খুরানার ভ্রমণের গল্পটি পড়ুন, রোড ট্রিপ তো নেপাল।
এখন Covid -19এর জন্য আমরা আপনাদের ঘুরতে যেতে বলছিনা, এখন আপনারা ভবিষ্যতের ঘোরার পরিকল্পনা করতে পারেন। এখন বেড়াতে যাওয়া ঠিক হবে না। সাবধানে থাকবেন।
নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।
বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যাবহার করুন।
(এটি একটি অনুবাদকৃত আর্টিকেল। আসল আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন!)