"মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান........."
মহাকবি কাশীরাম দাসই প্রথম বাংলা ভাষায় মহাভারতের ভাবানুবাদ করেছিলেন বাংলার এক ছোট্ট গ্রাম সিঙ্গিতে বসে। এতো গেলো ইতিহাসের কথা কিন্তু যে বেক্তিটি আমাদের কাছে সিঙ্গি গ্রাম কে নতুন করে চিনিয়েছেন সে সম্রাট দার কথা না বললে সিঙ্গিড় কথাই পূর্ণই হবে না। দাদা না থাকলে হয়ত সিঙ্গি গ্রাম থাকতোই কিন্তু আমরা এতো সুন্দর গ্রামের পরিবেশ ও তার পারিপারশিক কে এতো ভালো করে হয়ত জান্তেই পারতাম না। অদম্য ইছা থাকলে যে কোনও কিছুই অসম্ভম নয় সেতা আবার প্রমানিত করলো দাদা। ২০১৬ সালে তিনি নতুন করে সিঙ্গি কে চেনাতে সাহায্য করালেন তার শান্তিনিকেতনের মাধমে................
কেন আসবেন এই অজানা, অচেনা গ্রামে :
১) পরিবারের সদস্যদের সাথে, বন্ধুদের সাথে অথবা নিজের সাথে একলা হতে।
২) ফুসফুস ভরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে।
৩) মুখরোচক অথচ ১০০% বিষমুক্ত খাবারের স্বাদ নিতে।
কি করবেনএখানে এসে :
১) গ্রামের পথে হাঁটবেন।
২) পরিষ্কার রাতের আকাশে চন্দ্রোদয় আর ধানক্ষেতের মধ্যে সূর্যাস্তের সাক্ষী হবেন।
৩) ইচ্ছে হলে বাড়ির সদস্যদের সাথে তেল, ঘি তৈরি করতে, বাগানের কাজে হাত লাগাবেন।
৪) ১০০% বিষমুক্ত, সুস্বাদু বাঙালি খাবারের স্বাদ নেবেন।
৫) পাখি দেখায় আগ্রহ থাকলে ক্যামেরা আর বাইনোকুলার নিয়ে চলে আসতে পারেন। সারাবছরই এখানে শামুকখোল(Asian open billede stork), মানিকজোড় (Woolly naked stork), কাস্তেচড়া (Black headed ibis), বাঁশপাতি (Green bee eater) ছাড়াও তিন রকম মাছরাঙার দেখা পাওয়া যায়। ফিঙে, মৌটুসী, বুলবুলি, প্যাঁচা, খঞ্জন, ছাতারে, এরা তো আছেই।
৬) পৌরাণিক কাহিনীতে আগ্রহ থাকলে চলুন
ক) যোগাদ্যা সতীপীঠ(সিঙ্গি থেকে ১৮কিলোমিটার) ।
খ) উজানি সতীপীঠ (সিঙ্গি থেকে ৪৫ কিলোমিটার) ।
গ) অট্টহাস সতীপীঠ (সিঙ্গি থেকে ৪০কিলোমিটার) ।
ঘ) বহুলা সতীপীঠ (সিঙ্গি থেকে ৩৩ কিলোমিটার) ।
৭) ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ঐতিহাসিক শহর কাটোয়া(সিঙ্গি থেকে ১৯ কিলোমিটার) ।
৮) পুরাতত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহ থাকলে জগদানন্দপুরের রাধাগোবিন্দ জিউর অসম্ভব সুন্দর পাথরের মন্দির(সিঙ্গি থেকে ১২ কিলোমিটার) আর শ্রীবাটি গ্রামের তিনটি অসাধারণ টেরাকোটার কারুকার্যসমৃদ্ধ মন্দির(সিঙ্গি থেকে ২কিলোমিটার) আপনার অপেক্ষায় আছে।
৯) হস্তশিল্পে আগ্রহ থাকলে কাঠের প্যাঁচা শিল্পীদের গ্রাম, নতুনগ্রাম(সিঙ্গি থেকে ১৩ কিলোমিটার) যেতেই হবে।
১০) পরিযায়ী পাখিদের দেখতে চাইলে শীতকালে যেতে হবে চুপির চর(সিঙ্গি থেকে ২৪ কিলোমিটার) ।
১১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তৈরি এক গোপন বিমানবন্দর দেখতে হলে যাওয়া যায় ওরগ্রামের জঙ্গলে (সিঙ্গি থেকে ৫৫ কিলোমিটার) ।
১২) বিষাক্ত সরীসৃপের বিষয়ে আগ্রহী? তাহলে চলুন ঝাংলাই কেউটে সাপের গ্রাম মুশারু, ছোট পোষলা, বড়ো পোষলা এবং পলসোনা(সিঙ্গি থেকে ২৬ কিলোমিটার) গ্রামে। নিজের চোখে দেখবেন বিষধর সাপের সাথে ওই চারটি গ্রামের বাসিন্দাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
১৩) পছন্দের বই আর গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শান্তিনিকেতন হোমস্টের ওপেন টেরেস অথবা বাগানে বসে/শুয়ে শুধুমাত্র ছুটি কাটাবেন।
যাতায়াত : কোলকাতা থেকে সিঙ্গি পৌঁছনোর অনেকগুলো উপায় আছে।
হাওড়া বা শিয়ালদা স্টেশন থেকে কাটোয়া লাইনের যে কোনো ট্রেন ধরে কাটোয়ার তিনটে স্টেশন আগে পাটুলি স্টেশনে(শুধুমাত্র লোকাল ট্রেন থামে, মেল/এক্সপ্রেসে এলে কাটোয়া জংশনে নামতে হয়) নেমে শেয়ারিং বেসিসে ম্যাজিক/অটো/টোটো চড়ে আসতে পারেন, ভাড়া : জনপ্রতি ১৫/২০ টাকা। হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে পাটুলি স্টেশন পৌঁছতে সময় লাগে পৌনে তিন ঘন্টা। ভাড়া : জনপ্রতি ৩০ টাকা।
*শিয়ালদা থেকে কাটোয়া লাইনের ট্রেনের সংখ্যা কম, তুলনায় হাওড়া থেকে অনেক বেশি।
*বর্তমানে করোনার কারনে যাবতীয় লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
নিজের গাড়িতে এলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মেমারি, সেখান থেকে সাতগাছিয়া, মন্তেশ্বর, মালডাঙা, মেঝিরি, সিঙ্গির মোড় হয়ে সিঙ্গি। কোলকাতার শ্যামবাজার থেকে এপথে দূরত্ব ১৩৩ কিলোমিটার। সময় লাগে মোটামুটি ৩ ঘন্টা।
এছাড়া ডানকুনি থেকে পুরোনো দিল্লী রোড ধরে মগরা হয়ে কালনা, নবদ্বীপ, পারুলিয়া ছুঁয়ে(শ্যামবাজার থেকে মোটামুটি ১৪৪ কিলোমিটার) এবং বর্ধমান শহর হয়ে বলগোনা, কৈচর, কৈথন, সিঙ্গির মোড় ছুঁয়েও (শ্যামবাজার থেকে মোটামুটি ১৫৫কিলোমিটার) সিঙ্গি আসা যায়।
থাকা খাওয়া : সিঙ্গি গ্রামে আছে হোমস্টে।
সিঙ্গি গ্রামে সারা বছরই আসা যায়। এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি গ্রীষ্ম, সেই সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বেশ গরম পড়লেও বিকেলের পর থেকে অনেকটা কমে যায় তাপমাত্রা। বিশেষ করে যেদিন সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টি হয়, সেদিন রাতে ভালো রকম শীত বোধ হয়।
জুনের শেষ থেকে আগস্টের শেষ ভরা বর্ষা। গ্রাম বাংলার সবুজ রূপ দেখার সেরা সময়।
অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এখানে শীতের শুরু। চলে কমবেশি মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ডিসেম্বর/জানুয়ারি মাসে রাতের দিকে তাপমাত্রা মাঝে মাঝেই ৬ডিগ্রীর নীচে নেমে আসে।
নোটঃ তথ্য ও ফটো সম্রাট দা ................কলমে দেব.