দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ...

Tripoto
Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 1/7 by Deya Das
বিশ্বাস পরিবারের অন্দরে (ছবি সংগৃহীত)

আঠারো শতকের প্রথম দিকে উড়িষ্যা থেকে শ্রী জগমোহন বিশ্বাস হুগলি জেলার প্রসিদ্ধ টেরাকোটা গ্রাম এই দশঘরাতে এসে উপস্থিত হন। এরপর তাঁর হাত ধরেই এই দশঘরা জমিদারবাড়ি বা বিশ্বাস বাড়ি গড়ে ওঠে। প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই বিশ্বাস বাড়ির দুর্গা পুজোর বেশকিছু ইতিহাস রয়েছে।

Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 2/7 by Deya Das
জীর্ণ এবং ভগ্নপ্রায় অলিন্দ (ছবি সংগৃহীত)

শোনা যায়, প্রায় ৫০০ বছর আগে এই বিশ্বাস পরিবার হরিদ্বারে বসবাস করতেন। তখন তাঁদের পদবী ছিল ‘দেব’। সেই জন্য উড়িষ্যার রাজা যযাতি কিশোর দের তাঁদের রাজ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে রাজার কাছ থেকে এই পরিবার ‘বিশ্বাস’ উপাধি গ্রহণ করেন। এরপর তাঁরা ধনেখালির দশঘরা এসে বসবাস শুরু করেন এবং তখন থেকে দেবী চণ্ডী হয়ে ওঠেন তাঁদের পরিবারের আরাধ্য দেবতা। পূর্বে বাড়িতে চণ্ডি মন্দির থাকলেও পরবর্তীতে বৃন্দাবন তীর্থের পর কষ্টিপাথরের গোপীনাথ জিউর, অষ্টধাতুর রাধারানী মূর্তি নিয়ে আসেন এই বিশ্বাস পরিবার। ১৭২৯ সালে বাড়িতে গোপীনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হলে বাড়ির চণ্ডি প্রতিমাকে গোস্বামী মালিপাড়া গুরুগৃহে রেখে আসা হয়। এরপরে রাজশাহীর দালানে বৈদিক মতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। দশঘরা বিশ্বাস বাড়ির দেবী দশভূজা নন বরং চতুর্ভূজা।

Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 3/7 by Deya Das
দেবীপ্রতিমা (ছবি সংগৃহীত)

কারণে এই দুর্গা প্রতিমাটি উড়িষ্যার জয়দুর্গা মূর্তির আদলে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পুজোর জন্য এই বাড়িতে সমস্ত ঐতিহ্য এবং নিয়মনিষ্ঠা ৩০০ বছর ধরে একই রয়েছে। দুর্গা মায়ের চার হাতে থাকে তরোয়াল, ঢাল, সাপ ও খোঁচ। মায়ের দেবী মূর্তির কাছে থাকে কার্তিক-গণেশ এবং লক্ষ্মী-সরস্বতী থাকে একটু দূরে। দেবী মা শাক্ত মতো এখানে পূজিত হন। তাই এই বাড়িতে বলির প্রচলন রয়েছে।

Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 4/7 by Deya Das
ঠাকুর দালানের ভিতরে (ছবি সংগৃহীত)

তবে বলি নিয়ে নানারকম অদ্ভুত প্রথা এই বিশ্বাস বাড়িতে পালিত হয়। বিশ্বাস বাড়ির কুলদেবতা গোপীনাথ জিউর এবং রাধারানী।

Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 5/7 by Deya Das
গোপীনাথ জিউরের কথা (ছবি সংগৃহীত)

তাই এই জমিদার বাড়িতে গুপী সাগর রয়েছে, যেটি গোপীনাথ জিউরের মাহাত্ম্যের উপর নির্ভর করে তৈরি করা। বিশ্বাস বাড়িতে মহালয়ার পরের দিন দেবীর বোধন হয় এবং ষষ্ঠীর দিন থেকে শুরু হয় মূর্তিপূজা। তাই সপ্তমী অষ্টমী সন্ধিক্ষণে হয় পাঠা বলির নববীতে হয় জোড়া বলি। আর এর সঙ্গে ছাঁচি কুমড়ো, লেবু ,আখ বলি দেওয়ার প্রথা এই বাড়িতে রয়েছে। তবে যেই কারণে এই বিশ্বাস পরিবারের পুজো এত জনপ্রিয় সেই বলির বিশেষত্ব হল বলির সময় তাঁদের কুলদেবতা গোপীনাথ জিউর ও রাধারানীকে কানে তুলো দিয়ে শয়নে রাখা হয়। কারণ বলা হয় এই বলির আর্তনাদ নাকি বিশ্বাস পরিবারের কুলদেবতা সহ্য করতে পারেন না।

Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 6/7 by Deya Das
টেরাকোটার নিখুঁত কারিগরি শিল্প (ছবি সংগৃহীত)

এছাড়াও এই বিশ্বাস বাড়িতে রয়েছে দলমঞ্চ, যেখানে টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায় এবং প্রতিবছর দোল পূর্ণিমার দিন রাধাকৃষ্ণে এখানে পূজিত হন। দোল মঞ্চের পাশেই রয়েছে রাসমঞ্চ যেখানে কার্তিক পূর্ণিমা রাধাকৃষ্ণের পুজো করা হয়। কাছারি বাড়ির পাশে রয়েছে আটচালা শিবমন্দির। প্রতিটি মন্দিরের গায়ে অসম্ভব সুন্দর টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায়। পূর্বে বিশ্বাস বাড়ির দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রচলন ছিল। তবে বর্তমানে তা আর দেখতে পাওয়া যায় না।

Photo of দশঘরার এই জমিদার পরিবারের দুর্গাপুজোর রীতিনিয়ম নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ... 7/7 by Deya Das
বিশ্বাস পরিবারের আশপাশের পটচিত্র (ছবি সংগৃহীত)

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads