'এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন '... মানুষ মাত্রই ভ্রমণবিলাসী । তাই বর্ষার দিনগুলোতে আমাদের সকলেরই মনে হয়, কদিন ছুটি নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে পড়ি । কিন্ত কোথায় যাবেন স্থির করতে পারছেন না তাই তো ? হ্যাঁ শুধুমাত্র আপনার জন্যই বৃষ্টিভেজা দিনের সেরা গন্তব্যস্থলের তালিকা নিয়ে হাজির হয়েছি । ব্লগটা শেষ পর্যন্ত পড়ে সমস্ত পরিকল্পনা সেরে ফেলুন ; আর বেড়িয়ে পড়ুন আপনার স্বপ্নের ডেস্টিনেশনে ।
কুর্গ অঞ্চলটি ঘন অরণ্যে পরিপূর্ন ; তাই এখানে বহু অচেনা উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় । তবে বর্ষায় কুর্গের জলপ্রপাতের মোহনীয় রূপ, লেকের মনভোলানো সৌন্দর্য সর্বোপরি বৃহৎ কফির বাগান ইত্যাদি আপনাকে মুগ্ধ করবেই । প্রকৃতির এমন আবেদনে সাড়া না দিয়ে কি থাকা যায়?
কী কী করবেন?
কুর্গের প্রকৃতির রূপদর্শন করা ছাড়াও ট্রেকিং, কফি বাগান পরিদর্শন করে নিতে পারেন, আর অচেনা প্রাণীদের সাথে ক্ষনিকের আলাপচারিতা সেরে ফেলতে পারেন ।
প্রধান আকর্ষণ - কুর্গের দর্শনীয় স্থান গুলি হলো - পুষ্পগিরি অভয়ারণ্য, কোটেবেট্টা পাহাড় এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম যোগ জলপ্রপাত ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যে কোনো শহর থেকে পৌঁছে যান মাইশোর বিমানবন্দর । বিমানবন্দর থেকে গাড়ি নিয়ে ১২০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান কুর্গ ।
রূপকথার রাজ্যে মেঘের দেশের গল্প তো অনেক শুনেছেন, তবে প্রকৃত মেঘের দেশ দর্শন করতে চাইলে মেঘালয়ের শিলং - এ আপনাকে স্বাগত । এই স্থান থেকে ভারতের উত্তর -পূর্ব অঞ্চলের গারো এবং খাসি পাহাড় এবং পাহাড়কে কেন্দ্র করে অগণিত ঝর্ণাধারা যে কোনও পর্যটককে আকৃষ্ট করবে ।
কী কী করবেন?
শিলং ভ্রমণে গিয়ে বোটিং, ট্রেকিং করতে পারেন ।
প্রধান আকর্ষণ - শিলং ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ হলো প্রাচীন ট্রেকিংয়ের পথ ডেভিড স্কট ট্রেইল পরিদর্শন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যেকোনো স্থান থেকে পৌঁছে যান গুয়াহাটি স্টেশন । স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে ১০০ কিমি পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান শিলং।
বর্ষাকালীন আবহাওয়া উপভোগ করার জন্য পশ্চিমঘাট পর্বতমালার লোনাভলা হিলস্টেশনটি আদর্শ । চারিদিকে সবুজে মোড়া পাহাড়, সুসজ্জিত জলপ্রপাত এবং মনোরম আবহাওয়া - সব মিলিয়ে লোনাভলাকে একটা রোমান্টিক গেটঅ্যাওয়ে হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
কী কী করবেন?
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শন ছাড়াও লোনাভলা ট্রেকিং, ক্যাম্পিংয়ের জন্য উপযুক্ত।
প্রধান আকর্ষণ - লোনাভলা ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ হল - বুশী ড্যাম নিকটবর্তী জলপ্রপাত এবং খ্রীস্টপূর্ব ৩০০ শতকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের দ্বারা নির্মিত কারলা গুহা ।
কীভাবে যাবেন?
মুম্বই বা পুনে শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছে যান লোনাভলা।
দক্ষিণ ভারতের সেরা ভ্রমণস্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো কোদাইকানাল । এখান থেকে ঘন সবুজে পরিপূর্ণ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা একটা সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায় ।
কী কী করবেন?
প্রকৃতিকে একান্তে উপভোগ করার জন্য ট্রেকিং করতে পারেন।
প্রধান আকর্ষণ - প্রকৃতির রূপদর্শন ছাড়াও বেড়িজাম লেক এবং কোদাই লেক দর্শন করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যেকোনো স্থান থেকে পৌঁছে যান মাদুরাই বিমানবন্দর । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে খুব সহজেই পৌঁছে যান কোদাইকানাল।
গৌরবময় ইতিহাসের স্মৃতি রোমন্থন করার জন্য উদয়পুর এক্কেবারে আদৰ্শ স্থান । তবে বর্ষায় এই লেক পরিবেষ্ঠিত রাজকীয় স্থান ভ্রমণ করার আমেজটা কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর হতে পারে ।
কী কী করবেন?
উদয়পুরের বিখ্যাত প্যালেস দর্শন এবং লেক বোটিংয়ের প্ল্যান করতে পারেন।
প্রধান আকর্ষণ - উদয়পুরের দর্শনীয় স্থান গুলি হলো - সিটি প্যালেস, লেক প্যালেস, ফতেহ সাগর লেক ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যেকোনো স্থান থেকে পৌঁছে যেতে পারেন উদয়পুর স্টেশন ।
উন্মত্ত নীলাভ সমুদ্রের অবিরাম আনাগোনা, সারি সারি হলুদ রঙা ভিলা এবং ঔপনিবেশিক স্মৃতি বিজড়িত পর্যটন স্থানের অপরনাম হলো পন্ডিচেরি ।
কী কী করবেন?
পন্ডিচেরি ভ্রমণে গিয়ে ক্যাফে হপিং, স্কুবা ডাইভিং করতে পারেন । আর এই শান্তিপ্ৰিয় জায়গায় মনের মধ্যে প্রশান্তি আনতে ধ্যানস্থ হতে পারেন ।
প্রধান আকর্ষণ - সমুদ্রতটে প্ৰিয় মানুষের সাথে রোমান্টিক সময় কাটাতে পারেন এবং সময় করে অরোভিল দর্শন করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
পন্ডিচেরি যাওয়ার জন্য প্রথমে পৌঁছে যান চেন্নাই বিমানবন্দর । সেখান গাড়ি নিয়ে ঘন্টা দুয়েক পথ অতিক্রম করে পৌঁছে যান গন্তব্যে ।
ঘন সবুজ অরণ্য এবং সিন্গ্ধ তুষারাছন্ন হিমালয়ের সৌন্দর্য দর্শন করতে পৌঁছে যান রানিক্ষেত।
কী কী করবেন?
রানিক্ষেতের প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করতে পারেন।
প্রধান আকর্ষণ - এখানকার আকর্ষণীয় স্থানগুলি হলো - ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স । তবে এখানে অনেক লুপ্তপ্রায় পশু এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ার, স্নো লেপার্ডের দর্শন পেতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যে কোনো স্থান থেকে পৌঁছে যান দেরাদুন, সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৩১৩ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান রানিক্ষেত ।
বর্ষায় শুধুমাত্র সমুদ্রের রূপ দর্শন করার জন্য পৌঁছে যেতে পারেন গোয়া। এই সময় পর্যটক কম থাকায়, গোয়ার প্রকৃতিকে একাকী উপভোগ করতে পারবেন ।
কী কী করবেন?
প্রকৃতি এবং সমুদ্র দর্শন করে নিতে পারেন । আবহাওয়া খারাপ থাকলে স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটির প্ল্যান থেকে বিরত থাকুন ।
প্রধান আকর্ষণ - গোয়ার দর্শনীয় স্থানগুলি হলো - দুধসাগর জলপ্রপাত, আগুন্ডা ফোর্ট, এবং প্রাচীন চার্চ ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যেকোনো স্থান থেকে পৌঁছে যান ডাবোলিম বিমানবন্দর । সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন গোয়ার মুখ্য স্থানগুলিতে ।
মুন্নার হিল স্টেশনটিও বর্ষায় ভ্রমণের জন্য আদৰ্শ । চিরহরিৎ বৃক্ষ পরিবেষ্ঠিত পাহাড়, সুবিশাল চা বাগান এই পার্বত্য অঞ্চলের মূল আধার ।
কী কী করবেন?
প্রকৃতি এবং চা বাগান পরিদর্শন ।
প্রধান আকর্ষণ -মুন্নারে অবস্থিত পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অনাইমুদিতে নানান লুপ্তপ্রায় প্রাণীর দেখা মেলে । এছাড়াও হাঁটা পথে দেবীকুলাম লেক এবং এট্টুকাল জলপ্রপাত দর্শন করে নিতে পারেন ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের যেকোনো স্থান থেকে পৌঁছে যান কোচিন বিমানবন্দর । সেখান থেকে গাড়ি সহযোগে ১১০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান মুন্নার ।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দার্জিলিং শহরটি কে বর্ষাকালীন গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে পারেন । তবে বর্ষার সময় এখানে অধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকে ।
কী কী করবেন?
দার্জিলিং-এর টয় ট্রেনে চেপে জয় রাইড এবং চা বাগান পরিদর্শন করতে পারেন ।
প্রধান আকর্ষণ - দার্জিলিং-এর প্রধান আকর্ষণ হল - পিস প্যাগোডা, চা বাগান, অ্যাডভেঞ্চার মিউজিয়াম, রঙ্গীত ভ্যালি রোপওয়ে ইত্যাদি ।
কীভাবে যাবেন?
ভারতের বড় শহরগুলি থেকে পৌঁছে যান নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘন্টা তিনেক দূরত্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যান গন্তব্যে ।