ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই...

Tripoto
Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 1/8 by Surjatapa Adak

আচ্ছা আপনি বলুন তো ট্রেকিং এর সাহায্যে প্রাকৃতিক রহস্যসন্ধানের মধ্যে কখনও দৈবিক অনুভূতি বা আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ খুঁজে পেয়েছেন? এক্ষেত্রে উত্তরটা ইতিবাচক হলে, আপনার ট্রেকিং এর স্থানটি অবশ্যই হিমালয় অঞ্চল হবে। তাই তো? হিমালয়ের তুষারশুভ্র দৃশ্যপট, শান্ত পরিবেশ, নদীর উৎপত্তি ইত্যাদি তো পর্যটকদের মুগ্ধ করেই ; এছাড়াও সব মিলিয়ে এখানে দৈবিক অনুভূতির সান্নিধ্য পাওয়া যায়।

এই হিমালয় ট্রেকের সাহায্যে হিন্দু মন্দির, বৌদ্ধ মনেস্ট্রি কিংবা গুরুদ্বারা ছাড়াও পবিত্র জলাধারের সন্ধান পাওয়া যায় । তাই এই ট্রেকিং এর হাত ধরে ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতির ও সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।

ভারতের সেরা ৭টি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং- এর ঠিকানা -

১. জম্মু কাশ্মীরের অমরনাথ

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 2/8 by Surjatapa Adak

জম্মু কাশ্মীর অঞ্চলের বিখ্যাত যাত্রা হল অমরনাথ যাত্রা। একটি বিশাল গুহার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত বরফের শিবলিঙ্গ দর্শনের জন্য প্রতি বছর বহু ভক্তদের আগমন হয়।

লোককথা অনুসারে জানা যায়, ভগবান শিব দেবী পার্বতীকে জীবন এবং মৃত্যুর গোপন রহস্যের কথা বলার জন্য এই গুহাকে বেছে নেন। সেই সময় এই যাত্রাটি খুবই কঠিন ছিল। শিব নন্দীর পিঠে চেপে পহেলগাঁও থেকে যাত্রা শুরু করেন, চন্দনওয়াড়িতে তাঁর মাথায় থাকা চাঁদকে , লেক শেষনাগে তাঁর গলায় ধারণ করা সাপকে এবং পঞ্চতারিণীতে তিনি তাঁর জীবনের বিশেষ পাঁচটি জিনিসকে পরিত্যাগ করেন। এছাড়া সব শেষে তিনি তাঁর পুত্র গনেশকে মহাগুণ অঞ্চলে রেখে দেন। এই কারণে ভক্তদের কাছে অমরনাথ যাত্রাটি খুবই পবিত্র মনে করা হয়।

পথনির্দেশ -

• পহেলগাঁও থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমদিন পৌঁছে যান চন্দনওয়াড়ি।

• দ্বিতীয় দিনে চন্দনওয়াড়ি থেকে পৌঁছে যান শেষনাগ লেকে।

• তৃতীয় দিনে শেষনাগ থেকে পঞ্চতারিণী মহাগুন পাস হয়ে দর্শন করে নিন অমরনাথ এবং ফিরে আসুন পঞ্চতারিণী।

কাঠিন্যতা - মোটামুটি সহজসাধ্য

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - অমরনাথে ট্রেকিং এর জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হল জুলাই - অগাস্ট মাস।

২. হিমাচল প্রদেশের শ্রীখণ্ড মহাদেব কৈলাশ

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 3/8 by Surjatapa Adak

শ্রীখণ্ড মহাদেব কৈলাশ ট্রেকটি কঠিন ট্রেকগুলির মধ্যে অন্যতম। হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত এই হিমালয় রেঞ্জের মুখ্য দর্শনীয় বিষয়বস্তু হল প্রায় ৭৫ ফিট উচ্চতা সম্পন্ন পাথরের তৈরি শ্রীখণ্ড মহাদেব। প্রায় ৩২ কিমি এই ট্রেক যাত্রায় রয়েছে কঠিন পাথরের রাস্তা, ঘন জঙ্গল, এবং তুষারস্রোত।

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ভস্মাসুর ( এক রাক্ষস যার হাতের ছোঁয়ায় সবকিছু পুড়ে যেত ) শিব দর্শনের জন্য বহু বছর ধরে ধ্যান করেন। একদা শিব তুষ্ঠ হয়ে তাকে ভস্ম কঙ্গন প্রদান করেন।মনে করা হয় ভস্মাসুরকে আশীর্বাদ করার পর মহাদেব এখানে গুহার মধ্যেই উধাও হয়ে যান এবং পরবর্তী কালে পাহাড়ের চূড়ায় তাঁর আবির্ভাব হয়। এই শিবলিঙ্গের সামনের অংশটি ভাঙা রয়েছে। তাই এই শিব লিঙ্গের নামকরণ করা হয় শ্রীখণ্ড মহাদেব ।

পথ নির্দেশ

• প্রথম দিন যাওন গ্রাম থেকে পৌঁছে যান সিঁঙ্ঘাদ গ্রাম।

• দ্বিতীয় দিনে সিঁঙ্ঘাদ গ্রাম থেকে পৌঁছে যান বাড়হাতি নালা।

• তৃতীয় দিনে বাড়হাতি নালা থেকে পৌঁছে যান থাছরু।

• চতুর্থ দিন থাছরু থেকে পৌঁছে যান কালী ঘাটি।

• পঞ্চম দিনে কালী ঘাটি থেকে পৌঁছে যান ভীম দুয়ারী।

• ষষ্ঠ দিনে ভীম দুয়ারী থেকে পৌঁছে যান পার্বতী বাগিচা।

• সপ্তম দিনে পার্বতী বাগিচা থেকে পৌঁছে যান নয়ন সরোবর।

• অষ্টম দিনে নয়ন সরোবর থেকে পৌঁছে যান শ্রীখণ্ড মহাদেব পিক।

কাঠিন্যতা - কষ্টসাধ্য এবং কঠিন।

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - শ্রীখণ্ড মহাদেব পিক দর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় জুলাই- অগাস্ট মাস।

৩. লাদাখ মনেস্ট্রি

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 4/8 by Surjatapa Adak

বৌদ্ধধর্মকে বিশদে জানতে লাদাখ মনেস্ট্রি ট্রেকে অংশগ্রহণ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই যাত্রার ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি প্রসঙ্গে ও অনেক তথ্য জেনে নিতে পারেন। প্রায় ১০ম - ১১শ শতকে নির্মিত এই মনেস্ট্রিটি তুষারাবৃত শৃঙের কাছেই অবস্থিত।

প্রায় ১৩ দিনের এই ট্রেক যাত্রায় আপনি দেখে নিতে পারেন সে এবং ঠিকসে মনেস্ট্রি, লামায়ূরু মনেস্ট্রি, পৃইংকৃতি লা, হিংজু, অলচি মনেস্ট্রি ইত্যাদি।

কাঠিন্যতা - তুলনামূলকভাবে কঠিন।

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - লাদাখ মনেস্ট্রি দর্শনের জন্য এপ্রিল থেকে জুন মাসটি আদর্শ সময়।

৪. উত্তরাখণ্ডের হেমকুণ্ড সাহেব

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 5/8 by Surjatapa Adak

এই গুরুদ্বারাটি উচ্চতম গুরুদ্বারা নামে পরিচিত। উত্তরাখণ্ডের চামলী জেলায় অবস্থিত হেমকুণ্ড সাহেব থেকে তুষারাবৃত হিমালয়ের একটা অপরূপ রূপের দর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও স্বচ্ছ হেমকুণ্ডসহ এই গুরুদ্বারাটি শিখদের কাছে একটি পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।

পথনির্দেশ

• প্রথম দিন গোবিন্দঘাট থেকে পৌঁছে যান ঘনগরিয়া।

• দ্বিতীয় দিনে ঘনগরিয়া থেকে পৌঁছে যান হেমকুণ্ড সাহেব।

কাঠিন্যতা - সহজসাধ্য

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - হেমকুণ্ড সাহেব ট্রেকের জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হল - জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ।

৫. উত্তরাখণ্ডের গোমুখ

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 6/8 by Surjatapa Adak

হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান চারধাম যাত্রার একটি যাত্রা হল গঙ্গোত্রী, গোমুখ। আমরা সকলেই জানি গঙ্গা নদীর উৎপত্তি গোমূখ থেকে থেকে। তাই এই ট্রেকে গোমুখ থেকে গঙ্গোত্রী হিমবাহ দর্শন করে দৈবিক অনুভূতিকে উপলদ্ধি করতে পারেন।

পথনির্দেশ -

• প্রথম দিন গঙ্গোত্রী থেকে পৌঁছে যান ভোজবাসা।

• দ্বিতীয় দিন ভোজবাসা থেকে পৌঁছে যান গোমুখ।

কাঠিন্যতা - তুলনায় সহজসাধ্য।

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - গোমুখ যাত্রার জন্য শ্রেষ্ঠ সময় হল-মে থেকে অক্টোবর মাস।

৬. উত্তরাখণ্ডের আদি কৈলাশ

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 7/8 by Surjatapa Adak

ট্রেকিং প্ৰিয় মানুষের কাছে আদি কৈলাশ ট্রেকটি বেশ জনপ্রিয়। উত্তরাখণ্ডের পিঠরগড় জেলার ভারত-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত এই আদি কৈলাশ লিঙ্গ ছোট কৈলাশ, বাবা কৈলাশ, শিব কৈলাশ বা জংলিংকং পিক নামে পরিচিত। এখান থেকে আপনি অন্নপূর্ণা পিকের একটা সুন্দর দৃশ্য এর সাক্ষী থাকতে পারেন।

পথনির্দেশ

• প্রথম দিন লক্ষণপুর থেকে পৌঁছে যান লামারী।

• দ্বিতীয় দিন লামারী থেকে বুদি হয়ে পৌঁছে যান নাবি।

• তৃতীয় দিন নাবি থেকে নাম্পা হয়ে পৌঁছে যান কুট্টি।

• চতুর্থ দিন কুট্টি থেকে পৌঁছে যান জংলিংকং।

কাঠিন্যতা - কঠিন এবং শ্রমসাধ্য।

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - আদি কৈলাশ ট্রেকের জন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসটি আদৰ্শ।

৭. হিমাচল প্রদেশের কিন্নর- কৈলাশ

Photo of ভারতের সেরা সাতটি আধ্যাত্মিক ট্রেকিং-এর গাইড, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই... 8/8 by Surjatapa Adak

হিমাচল প্রদেশের কিন্নর কৈলাশ যাত্রাটি যে কোনও পর্যটকের কাছে একটা স্বপ্নের মতো। কিন্নর- কৈলাশ যাত্রাটা অর্থাৎ মহাদেবের দেখা পাওয়ার বিষয়টা বেশ রহস্যময়। এই যাত্রায় তুষারাবৃত পাহাড় তো রয়েছেই এছাড়াও সবুজ তৃণভূমি, হিমবাহ, সরু পথ এবং ছোট ছোট নদীর দেখা পাবেন। এখানে হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের সংমিশ্রণ খুঁজে পাবেন এবং প্যাগোদা স্টাইলে নির্মিত মনেস্ট্রির দেখা পাবেন।

পথনির্দেশ

• প্রথমদিন টাঙলিং থেকে পৌঁছে যান আশিক পার্ক ।

• দ্বিতীয় দিন আশিক পার্ক থেকে পৌঁছে যান ভীম দ্বার।

• তৃতীয় দিন ভীম দ্বার থেকে পৌঁছে যান পার্বতী কুণ্ড।

• চতুর্থ দিন পার্বতী কুণ্ড থেকে পৌঁছে যান কিন্নর- কৈলাশ।

কাঠিন্যতা - বেশ কঠিন।

ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় - কিন্নর- কৈলাশ দর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল - মে- জুন মাস অথবা অক্টোবর মাস।

আপনিও কী এই ধরণের আধ্যাত্মিক ট্রেকিং - এ অংশগ্রহণ করেছেন? তাহলে ট্রিপোটো বাংলার সাথে সেই অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনিগুলি শেয়ার করতে কিন্তু ভুলবেন না।

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads