"যাও পাখি বলো আলোছলো ছলো আবছায়া জানলার কাঁচ " কোনো এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে একাকী বসে থাকলে আবেগী মনে এই গানের কলিগুলি প্রায়ই ভেসে ওঠে । একঘেয়ে গ্রীষ্মের তীব্র দেবদাহের পর বর্ষার শীতলতা এক ধরণের প্রশান্তি এনে দেয় ।তবে কলকাতা শহরে থেকে বৃষ্টি উপভোগ করা অনুভূতিটা একটু অন্যরকম হতে পারে । কেন?তাহলে কলকাতার বৃষ্টি উপভোগ করার প্রধান ১০টি কারণ সম্পর্কে জেনে নিই।
১. ফুটবল
বাঙালিদের ফুটবল খেলার সাথে একটা আত্মিক যোগ রয়েছে । এই ফুটবলপ্রেমী মানুষরা যেমন রাত জেগে কোপা আমেরিকা বা ইউরো কাপ দেখতে ভালোবাসে, ঠিক তেমনি খোলা মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলায় সামিল হতে ভালোবাসে ।
২. কাগজের নৌকা
স্কুলজীবনে বৃষ্টির দিনে জলমগ্ন দুপুরে কাগজের নৌকা ভাসাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মনে হয় অসম্ভব । ছেলেবেলার শিশুসুলভ মনের মধ্যে এই কাগজের নৌকা ভেসে যাওয়া দেখে যে নিদারুন সুখানুভূতি হতো, তা ভাষায় ব্যক্ত করা সত্যিই অসম্ভব ।
৩. চপ-মুড়ি
কলকাতায় ভরা বর্ষার সন্ধ্যেটা চপ -মুড়ি ছাড়া উপভোগ করা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে । গরম গরম তেলেভাজার সাথে মুড়ির স্বাদটার মাহাত্ম্যটা একমাত্র বাঙালিরাই বোঝেন ।
৪. প্রিন্সেপ ঘাট
বর্ষায় দিনে রোমান্টিক সময় কাটানোর প্রধানস্থান হলো প্রিন্সেপ ঘাট । গঙ্গার বুকে বৃষ্টি জলের মিলন থেকে অন্যপাড়ের আবছা দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা কিংবা দূরের ব্যস্ততায় পরিপূর্ণ ব্রিজ দর্শন এই সব কিছু মিলিয়ে প্রকৃতির বিরল রূপদর্শনের সাক্ষী থাকতে পারেন ।
৫. ইলিশ মাছ
কলকাতায় বর্ষার খাদ্য তালিকায় বাঙালিরা ইলিশ মাছকে পাতে রাখতে ভোলেন না । এই মাছের প্রতি বাঙালিদের প্রেম চিরকালীন । তাই যতই দাম হোক না কেন, বৃষ্টির দুপুরে ইলিশের তেল, ইলিশের ডিম, ইলিশ ভাপা, ইলিশ ঝাল ইত্যাদি আরও নানান পদের সাহায্যে ভুঁড়িভোজ করতেই হবে ।
৬. ভূতের গল্প
ঝমঝম বৃষ্টির রাতে একটু রোমাঞ্চ না হলে কী ভালো লাগে? ছোটবেলায় এমনি বৃষ্টির দিনে ভূতের গল্প শোনার জন্য আমরা সকলেই দাদু - ঠাকুমার শরণাপন্ন হয়েছি । ছেলেবেলা কেন ভূতের গল্পের রোমাঞ্চকতা বড়ো বয়সে ও শিহরণ জাগিয়ে তোলে । বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে এক দারুন বৃষ্টির রাতে ভূতের গল্পের পডকাস্ট শুনে দেখুন ।
৭. খিচুড়ি
বর্ষার দিনে দুপুরে হোক কিংবা রাতে বাঙালির পাতে খিচুড়ি থাকবেই । গরম গরম খিচুড়ি সাথে বেগুন ভাজা কিংবা ডিমভাজা খাওয়ার মজাটাই আলাদা । তবে এই খাদ্যটির পুষ্টিগুণ ও যথেষ্ট ।
৮. রবীন্দ্র সরোবর
বৃষ্টির দুপুরে এই সরোবরের রূপের মধ্যে একটা মাদকতা রয়েছে । এই বিশাল সরোবরটি একটি দ্বীপের আকারে রয়েছে । এখানে সরোবরটি নানান পাখীদের প্রধান আস্তানা ।তাই হঠাৎ বৃষ্টির আগমনে রঙিন পাখীদের ঘরে ফেরার দৃশ্যর সাক্ষী থাকতে পারেন ।
৯. ক্ল্যাসিক গান -
'আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে ' কোন কাজে মন সংযোগ করতে না পারলে, গান শুনুন ।প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি গান এমন একটা মাধ্যম যা মনোসংযোগ বাড়ায়, মনকে শান্ত করে । আর ভরা বর্ষার দিনে বাংলা বা হিন্দি ক্ল্যাসিকাল গান আপনার একমাত্র সঙ্গী হতে পারে ।
১০. সাহিত্য পাঠ
বৃষ্টির ভেজা দিনে একা লাগছে? আপনি যদি বই প্রেমী মানুষ হন তাহলে তাহলে বাংলা বা ইংরেজি সাহিত্যমূলক বই আপনার সঙ্গী হতে পারে । মন কেমনের সময়কে ভাগ করে নিন সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে ।
তাহলে বর্ষা কিংবা বৃষ্টিকে উপভোগ করার জন্য কলকাতা ছাড়া অন্য কোন স্থান কী শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা দখল করতে পারে?