হিমাচলপ্রদেশের পাহাড়ি উপত্যকার আড়ালে লুকিয়ে থাকা তীর্থন ভ্যালিকে বলা হয় ভারতীয় ট্রেকিং সার্কিটের অন্যতম হিডেন জেম বা হিমাচলের বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পর্যায়ে ১৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই শুষ্ক অঞ্চলে প্রাণসিঞ্চন করে মোহময়ী তীর্থন নদী | সবথেকে বড় ব্যাপার হল, এই ভ্যালি থেকেই শুরু হয়েছে ভারতের অন্যতম নতুন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট - গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক বা বৃহৎ হিমালয় জাতীয় উদ্যান অঞ্চল | তীর্থন ভ্যালি বিগত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং তার অন্যতম কারণ হলো প্রতি সিজনেই পর্যটকরা তীর্থন ভ্যালির নতুন নতুন অঞ্চলে পা রাখছেন এবং নতুন নতুন স্পট ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে নিয়ে আসছেন |
পাথরের গায়ে মানুষের মুখ - লার্জির মানুষমুখো প্রস্তরখণ্ড
তীর্থন ভ্যালি থেকে একটু এগিয়ে এলেই পেয়ে যাবেন লাৰ্জি গ্রাম | যা গড়ে উঠেছে তীর্থন নদী এবং সাঁজ নদীর থেকে অল্প দূরে | লাৰ্জি গ্রামেরই এক প্রান্তে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন এক বিরাট বড় প্রস্তরখণ্ড যা আকারে আয়তনে এবং রূপে দেখতে একেবারে মানুষের মুখাবয়বের মতো | যেন স্পষ্ট দেখা যায় প্রশস্ত কপাল, টিকালো নাক, সুগঠিত থুতনি, সবমিলিয়ে যেন পাশ থেকে দেখতে পাওয়া এক সুপুরুষ মানুষের প্রোফাইল ভিউ | এই আশ্চর্য মানুষমুখী প্রস্তর খণ্ডের পিছনে কিন্তু নেই কোনও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গল্প বা মানুষের কেরামতি | প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার ফলেই কিন্তু হয়ে উঠেছে এই অসম্ভব সম্ভব |
বিগত কয়েক বছরে এই মূর্তির ফটো ক্রমশ পর্যটকদের একটি অংশের মধ্যে ভাইরাল হয়ে উঠেছে এবং মানালি এবং হিমাচল গামী ট্যুরিস্টদের একটি বড় অংশ চেষ্টা করেন এই মূর্তিটির সাক্ষাৎ পেতে | গুগল ম্যাপে স্ট্যাচু অফ লাৰ্জি নামে এই মূর্তিটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে এবং ক্রমেই এই অঞ্চলে ফোটোগ্রাফারস এবং ট্র্যাভেল ব্লগারদের ভিড় বেড়ে চলেছে | তবে সাবধানে, প্রকৃতিবিদরা পর্যটকদের সাবধান করেছেন যে এই অঞ্চলে একসিডেন্ট হওয়ার এবং পাহাড়ি রাস্তায় ওপর থেকে আলগা পাথর খসে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল | তাই পর্যটকদের এখানে যাওয়ার আগে সুরক্ষা বিষয়ক এই সাবধানবাণীগুলি মাথায় রাখা উচিত|
লাৰ্জি গ্রাম ও তীর্থন ভ্যালির অন্যান্য আকর্ষণ যা পর্যটকদের অবশ্যই দেখা উচিত
রিভার রিট্রিট : নদীর পার বরাবর তীর্থন ভ্যালি এবং লাৰ্জি গ্রাম উভয়েই রিভারসাইড রিট্রিট হলিডের জন্যে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে | পর্যটকরা এখানে পাবেন স্থানীয় ট্রাউট ফিশিং ফার্ম থেকে জ্যান্ত ট্রাউট ফার্ম কিনে খাওয়ার সুযোগ | লাৰ্জি গ্রামের ট্রাউটের খ্যাতি বর্তমানে ভারত জোড়া এবং খাদ্যরসিকদের জন্যে এই সুযোগ হারিয়ে ফেলা উচিত নয়|
বার্ড ওয়াচিং : নদীর বরাবর পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উঠতে উঠতে হঠাৎ করেই পর্যটকরা পৌঁছে যান মেঘে ঢাকা পর্বতচূড়াগুলির কাছে | ঘন পাইন আর কনিফেরাস গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলুন আনমনে | অপার শান্তি খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি বার্ড ওয়াচার বা পক্ষীপ্রেমীদের জন্যে এ এক সুবর্ণ সুযোগ |
সেরোলসার লেক : একটু এগিয়ে জালরি পাস্ থেকে ৬ কিলোমিটার মতো এগিয়ে এলে খুঁজে পাবেন পাহাড়ের বুকে লুকিয়ে থাকা সেরোলসার লেক, যার স্ফটিকস্বচ্ছ নীল জলে প্রতিফলিত হয় নীল আকাশ আর পাইন বোনের ঘন সবুজ রূপের ছটা | পাশেই রয়েছে বুদ্ধি নাগীন দেবীর মন্দির, যিনি হিমাচলের উপকথা অনুযায়ী ৬০ জন নাগ দেবতার জননী | যেতে পারেন একটু দূরের পরাশর লেকেও |
ওয়াটারফল ট্রেক : এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে দৃষ্টির অগোচরে লুকিয়ে থাকা অপরূপ জলপ্রপাতগুলির খোঁজে ট্রেক করতে বেরিয়ে পড়া | বন-বিভাগ থেকে অনুমতি পত্র আদায়ে করে চলে যেতে পারেন খড়লি পহির উদ্দ্যেশে, যেখানে ভাগ্য সহায় থাকলে দেখতে পাবেন বিখ্যাত মোনাল পাখিদের, তাদের নিজস্ব বাসস্থানে |
অ্যাঙ্গেলিং : পর্যটকদের প্রতি তীর্থন ভ্যালির আরেকটি উপহার হল এখানে অ্যাঙ্গেলিং বা শখের মৎস্যশিকারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেওয়া | এখানকার শীতল খরস্রোতা জলে দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে রেইনবো এবং ব্রাউন ট্রাউট মাছের সম্ভার | এখানকার জলের জীব বৈচিত্রের কারণে সরকার থেকে এই অঞ্চলকে বায়োস্ফিয়ার হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং নাকচ করা হয়েছে হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টের প্রস্তাব | তবে বনবিভাগ থেকে সাময়িক অনুমতিপত্র সংগ্রহ করে পর্যটকরা মন খুলে ট্রাউট ফিশিংয়ে মনসংযোগ করতে পারবেন!