কামরূপ কামাখ্যা এবং অম্বুবাচী বিষয়ে অজানা এই তথ্যগুলো জানুন

Tripoto
Photo of Kamrup kamakhya Devi mandir, Ayodhya Nagar Extension, Ayodhya Nagar, Bhopal, Madhya Pradesh, India by Deya Das

হিন্দুধর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্ষিক উৎসব হল অম্বুবাচী। কথায় আছে, কিসের বার কিসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী। আষাঢ় মাসের যে দিন যে সময়ে সূর্য মিথুন রাশিতে আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদে গমন করে সেই সময়কাল থেকে মাতৃরূপেণ এই পৃথিবী ঋতুমতী হয়; অর্থাৎ শুরু হয় অম্বুবাচীর কাল। সংস্কৃতে ‘অম্ব’ শব্দের অর্থ জল আর ‘বাচি’ শব্দের অর্থ হল বৃদ্ধি। বয়স্কা ঋতুমতী নারীরা যেমন সন্তান ধারণের ক্ষমতা রাখেন, ঠিক সেইভাবেই গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহের পর বৃষ্টির জল যখন ধরিত্রীকে সিক্ত করে তখন বীজের নবজাগরণ ঘটে। আর ঠিক এই সময়কেই অম্বুবাচী বলা হয়। অম্বুবাচী শুরু হওয়ার পর প্রথম ৩ দিন কোন মাঙ্গলিক কাজকর্ম করা যায় না। এই সময় সন্ন্যাসী এবং বিধবারা বিভিন্ন রকম আচার পালন করে থাকেন। গৃহস্থ পরিবারে গৃহপ্রবেশ,উপনয়ন, বিবাহ, অন্নপ্রাশনের মতো সব শুভ কাজ বন্ধ থাকে। কৃষিকাজ এবং মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে।

Photo of কামরূপ কামাখ্যা এবং অম্বুবাচী বিষয়ে অজানা এই তথ্যগুলো জানুন by Deya Das

তবে এই অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে অসমের কামাখ্যা মন্দিরে এক বিশাল উৎসব পালন করা হয়। এইসময় ঋতুময়ী দেবী দর্শনের জন্য ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে।

অম্বুবাচীকালে কামাখ্যা মন্দিরের ধর্মীয় অবস্থান-

Photo of কামরূপ কামাখ্যা এবং অম্বুবাচী বিষয়ে অজানা এই তথ্যগুলো জানুন by Deya Das

পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, সতী ছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবের স্ত্রী ও প্রজাপতি দক্ষের কন্যা। প্রজাপতি দক্ষ একবার ত্রিভুবনব্যাপী এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। সেখানে কন্যা সতী এবং জামাতা শিব ব্যতীত সকলকে তিনি নিমন্ত্রণ করেছিলেন। বিনা আমন্ত্রণে সেই যজ্ঞে সতী উপস্থিত হওয়ার পরে পিতার মুখে পতির নিন্দা ও কটুক্তির শুনে তিনি দেহত্যাগ করেন। শিব সতীর দেহত্যাগের খবর পেয়ে উন্মত্ত হয়ে দক্ষযজ্ঞ করেন এবং সতীর নিথর দেহ কাঁধে তুলে নিয়ে প্রলয়নৃত্য শুরু করেন। এরফলে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখে বিষ্ণু তাঁর নিজের সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহকে ৫১টি খণ্ডে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেন। এই প্রতিটি খন্ড ধরাতলের বিভিন্ন জায়গায় এসে পতিত হয়ে পাথরে পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে সেই সমস্ত স্থান মহাপীঠ নামে পরিচিত হয়। তবে এই একান্নটি মহাপীঠ ছাড়াও রয়েছে ২৬টি উপপীঠ। এরমধ্যে আসামের কামাখ্যা মন্দিরে দেবীর গর্ভ ও যোনি পতিত হয়; তাই এই স্থানকে যোনিপীঠ বা তীর্থচূড়ামণি বলা হয়। আর সেই কারণেই কামাখ্যা দেবীকে রক্তক্ষরণকারী দেবীও বলা হয়। কামাখ্যা মন্দির ৫১ পীঠের মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ পীঠ।

Photo of কামরূপ কামাখ্যা এবং অম্বুবাচী বিষয়ে অজানা এই তথ্যগুলো জানুন by Deya Das

অম্বুবাচী সময় রজঃস্বলা ধরিত্রীর প্রতিক হিসাবে কামাখ্যা মাকে পুজো করা হয়। সঙ্গে চলে তন্ত্র সাধনা। এই সময় কামরূপ কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে লাল রঙের এক রকম তরল পদার্থ নির্গত হয়। প্রাচীনকালে, কামাখ্যায় গারো এবং খাসি উপজাতিরা শূকোর বলি দিত। বর্তমানেও অনেক ভক্ত দেবীমায়ের উদ্দেশ্যে এখানে ছাগল বলি দিয়ে থাকেন। কথিত আছে, মন্ত্রতন্ত্র সাধনার এক রহস্যময় স্থান হল কামরূপ কামাখ্যা। পুরাকালে কোন পুরুষ এই সময় কামাখ্যা মন্দিরে প্রবেশ করলে, মন্ত্র বলে তাকে বশ করে রাখা হত। তাই এখনও মন্দির চত্বরে সাধু-সন্ন্যাসীদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় ৫০০ বছর ধরে মন্দির প্রাঙ্গণে এক মহামেলার আয়োজন করা হয়। অম্বুবাচীর প্রথম ৩ দিন মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাকে এবং চতুর্থ দিন সর্বসাধারণের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হয়।

Photo of কামরূপ কামাখ্যা এবং অম্বুবাচী বিষয়ে অজানা এই তথ্যগুলো জানুন by Deya Das

নিজের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা ট্রিপোটোর সঙ্গে ভাগ করে নিন আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য পর্যটকদের অনুপ্রাণিত করুন।

বিনামূল্যে বেড়াতে যেতে চান? ক্রেডিট জমা করুন আর ট্রিপোটোর হোটেল স্টে আর ভেকেশন প্যাকেজে সেগুলো ব্যবহার করুন।

Further Reads