আমাদের ভারতবর্ষে এত রকমের খাবারের সম্ভার রয়েছে, যে কোনটা ছেড়ে কোনটা খাব বুঝে উঠতে উঠতেই জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়। আমরা কখনও কখনও খুব স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকি আবার কখনও বড়া পাও, সিঙ্গারা, মসলা স্যান্ডউইচ দেখলে নিজেদের ডায়েটের কথা ভুলে গিয়ে সেগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। তবে বাড়ির খাবার কিন্তু সবসময় স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। কারণ বাড়িতে যদি পকোড়া ভাজা হয় তবে সেই তেল পুনঃরায় ব্যবহার করা হয় না। বাড়িতে তৈরি তেলেভাজা খাওয়া কিন্তু মোটামুটি ভাল।
আজ আমি আপনাদের কাছে ঠিক মায়ের রান্না ঘরের মতোই কিছু গ্রামের বিভিন্ন রকমের খাবারের সংস্করণ তুলে ধরব। এই খাবারগুলি সম্বন্ধে জানা প্রায় অসম্ভব। কারণ এই খাবারগুলির রন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা। কোনটি ধীর আগুনে রান্না করা হয়, কোনটি আবার স্থানীয় কাঁচা উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে যাই হোক না কেন, প্রতিটি খাবারের সাথে সেখানকার মানুষদের যে আবেগ-ভালবাসা জড়িয়ে আছে তার হয়তো আলাদা কোন স্থান হয় না। তাই অন্তত এই খাবারগুলির স্বাদ একবার গ্রহণ করাই উচিত। এই রকমই দশটি অনন্য সুস্বাদু খাবারের খোঁজ দেওয়া হল।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই খাবারগুলি খোঁজ আমি স্থানীয় জায়গা থেকে শুরু করেছি। যেখানে খাবারের তালিকার মধ্যে তাদের সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতার স্পর্শ রয়েছে।
১. দস্তুক (লাদাখ)
যারা লাদাকে ভ্রমণ করেছেন তাদের কাছে হয়তো দস্তুকের নাম খুব পরিচিত। যদি আপনি লাদাখের কোন স্থানীয় হোস্টেলে থাকেন, তবে এই খাবারটি অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। এটি চালের গুঁড়ো, লঙ্কা, লবণ, মাখন এবং কিমা করা ক্যাপার্স দিয়ে তৈরি।এই খাবারটি খেতে যতটা সুস্বাদু তার থেকেও বেশি পুষ্টিকর। তাই শীতকালে উষ্ণ প্রাতঃরাশে এই খাবারটি উপভোগ করা যায়।
২. পা সা (অরুণাচল প্রদেশ)
অরুণাচল প্রদেশের খাম্পটি রন্ধনপ্রণালী দ্বারা নির্মিত একটি অসাধারণ খাবার হল এই পা সা। এটি একরকম পুষ্টিকর স্যুপ, যা পূর্বে যোদ্ধাদের জন্য তৈরি করা হত। এই খাবারটি তৈরি করা হয় মিষ্টি জলের মাছ, রসুন, আদা, লঙ্কা, মাকাত, পি ছিম খিম ( এক ধরনের সুগন্ধি মসলা পাতা), ওরিয়ামের পাতার রস (খুম্পাট) দিয়ে।
৩. পাঞ্জিরি (পাঞ্জাব)
পাঞ্জাবের ঐতিহ্যবাহী উষ্ণতর শীতের একটি জলখাবার হলো পাঞ্জিরি। এটি তৈরি করা হয় শুকনো খেঁজুর, আখরোট, বাদাম, দেশি ঘি, ভাজা শুকনো সুজির মিশ্রণে। সদ্য প্রসবকালীন মহিলাদের জন্য পুষ্টিকর একটি খাবার। তবে বর্তমানে আগের মিশ্রণগুলির সঙ্গে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে ওটস ও ধনে মেশানো হয়।
৪. কিসমুড়ি (কর্ণাটক)
কিসমুড়ি কঙ্কন স্পেশাল খাবার হলেও বর্তমানে কর্ণাটকে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাঁধাকপি, ইয়াম, করলা, গাজর, ভাজা এবং শুকনো চিংড়ি মাছ, নারকেল, তেঁতুল, কুচি করে কাটা লঙ্কা, পিঁয়াজ দিয়ে এই মুখরোচক খাবারটি পরিবেশন করা হয়।
৫. সিড্ডু (হিমাচল প্রদেশ)
হিমাচল প্রদেশের কুলুতে উৎপত্তি এই প্রাতঃরাশ প্রধান খাবারটিকে মোমোর বড় ভাই বলে ডাকা হয়। নরম ময়দার মন্ডর ভেতর পোস্ত, বাদাম, আখরোটের পুর দিয়ে তৈরি এই খাবারটি ঘি এবং পুদিনার চাটনি, ডাল প্রভৃতির সাথে পরিবেশন করা হয়।
৬. পুলাসা পুলুসু (অন্ধ্রপ্রদেশ)
যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই খাবারটি একেবারে স্বর্গ। বাঙালিদের জনপ্রিয় মাছ ইলিশ দিয়ে এই রান্নাটি করা হয়। ইলিশ মাছ, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুনের গ্রেভি দিয়ে তৈরী পুলুসু নামের খাবারটি গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। রান্নাটি সম্পূর্ণ কাঠ-কয়লা এবং মাটির পাত্রে করা হয়।
৭. লাপসি (গুজরাট)
লাপসি প্রধানত রাজস্থান গুজরাটের মধ্যপ্রদেশের খাবার। এই মিষ্টি খাবারটি তৈরি করা হয় ডালিয়া, গুড়, ঘি দিয়ে। মন ভালো করার জন্য এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে লাপসি কিন্তু একদম সঠিক একটি খাবার।
৮. রাবদি (রাজস্থান)
রাবদি হল একটি মাড়োয়ারি খাবার, যা তৈরি করার পাঁপড় বা শুকনো কর্নব্রেড দিয়ে। পুরু করে পেঁয়াজ কেটে তার সঙ্গে মাথানিয়া লঙ্কা, জিরে এবং ঘন টক দইয়ের গ্রেভির মিশ্রণটি খাবারটি পরিবেশন করা হয়। রাজস্থান এইরকম বিভিন্ন খাবারের খোঁজ মেলে। রাজস্থানের পরিবেশ গরম ও শুষ্ক হওয়ায় এখানকার খাবার-দাবারের উপর তার প্রভাব কিছুটা দেখতে পাওয়া যায়। পিট রন্ধনপ্রণালী মাধ্যমে গাছ থেকে ফল তুলে এনে বা ফসল কেটে তার মধ্যে লঙ্কা ব্যবহার করে রান্না করা হয়। এই খাবারগুলির স্বাদ অত্যন্ত লোভনীয় এবং স্বাস্থ্যকর।
৯. রামেশ্বরম পকেট রাইস (তামিলনাড়ু)
সস্তায় মধ্যাহ্নভোজনের জন্য এই রামেশ্বরম পকেট রাইস একবারে উপযুক্ত। যদিও খাবারটি উৎপত্তি হয় উপকূলীয় তীর্থ শহর থেকে, তবে কলা পাতায় মোড়া নারকেলের দুধে রান্না করা ভাত কিন্তু হয়ে ওঠে স্থানীয় কৃষকদের দুপুরের খাবার। এই খাবারটি সাধারণত খাসির মাংস, ডিম, মুরগির মাংস, বিভিন্ন রকমের ভাজা এবং আমের আচারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এই খাবারটি আপনাকে নাসি গরেং- এর স্বাদের কথা মনে করিয়ে দেবে।
১০. চাইনসু (উত্তরাখণ্ড)
চাইনসু একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ স্যুপ, যা মসুর ডাল ভাজা, টমেটো, রসুনের পেস্ট দিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়। পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারী গারোয়ালিদের ঘরে এই ধরনের ভাজা বা সুস্বাদু স্যুপ তৈরি হয়। খাবারটি স্বাদ এবং গুণগত মান উন্নত করার জন্য এটি উপরের ঘি এবং জাখিয়া বাঘার যোগ করা হয়। স্থানীয়রা আরডি চালের ভাতের সঙ্গে হাত দিয়ে মেখে এই খাবারটি খান।
তাহলে আমি তো আমার অভিজ্ঞতার কথা জানলাম। এবার আপনাদের কাছেও যদি এরকম কোন অনন্য খাবারের খোঁজ থাকে তবে নীচে মন্তব্যে আমাদেরকে অবশ্যই জানাবেন। আমি সেগুলির স্বাদ গ্রহণ করে দেখতে চাই!